আওয়ামী লীগের স্যুট ও খালেদা জিয়ার ভোট

মন্‌জুরুল ইসলাম
মন্‌জুরুল ইসলাম
শেয়ার
আওয়ামী লীগের স্যুট ও খালেদা জিয়ার ভোট
সংগৃহীত ছবি

যখন কোনো স্বৈরাচারের পতন হয়, তখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির বিজয় হয়। আর যখন কোনো ষড়যন্ত্র হয়, তখন বিএনপির পরাজয় হয়। নব্বইয়ের গণ আন্দোলন আর ওয়ান-ইলেভেনের ষড়যন্ত্র সেটাই প্রমাণ করে। সুতরাং জুলাই বিপ্লবের পর বর্তমান সময়ে বিএনপিকে অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

সেই সঙ্গে চোখ-কান খোলা রেখে হতে হবে সাবধান। একানব্বইয়ের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে যেমন ক্ষমতার ভাব চলে এসেছিল, তেমন ভাব যদি এখন বিএনপির মধ্যে আসে, তাহলে সমূহ সর্বনাশ। শহীদ জিয়ার আদর্শ আবারও ষড়যন্ত্রের কাছে ধুলায় লুটিয়ে পড়বে। বিএনপির একমাত্র সম্পদ হলো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ।
আর সেই জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রতীক হলেন বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান। এর বাইরে কেউ অন্য কিছু চিন্তা করলে, দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যদি ক্ষমতার আগাম ভাব চলে আসে, তাহলে সর্বনাশ কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একজন ভাগ্যবান দেশপ্রেমিক। অত্যন্ত সাহসী, মেধাবী, সৎ এই মানুষটি নিজে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।

স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এবং পরে দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে স্বাধীনতা-সংগ্রামীদের নামের তালিকা অনেক দীর্ঘ। তালিকা দীর্ঘ হলেও সৌভাগ্যবান একমাত্র জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতা-সংগ্রামে একজন মেজর যদি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিতেন তাহলে জাতি সঠিক দিকনির্দেশনা পেত কি না তা ভেবে দেখার বিষয়। কারণ তখন কার নেতৃত্বে যুদ্ধ প্রস্তুতি চলছিল, জাতি তা জানত না।
একজন মেজরের স্বাধীনতার ঘোষণাই সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের জন্মের আগাম বার্তা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। সে কারণে ইতিহাস থেকে ইচ্ছা করলেই মেজর জিয়াকে মুছে ফেলা যায়নি, যাবে না।

মেজর জিয়াকে জাতি আবার ত্রাণকর্তা হিসেবে পেয়েছিল যখন তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে তিনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সামরিক শাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ১৯ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে সারা দেশের মানুষের মন জয় করেছিলেন। দেশবাসীকে ১৯ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে নিজেই হাতে তুলে নিয়েছিলেন খাল খননের কোদাল। ১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল তিনি একটি রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচি ১৯ দফা ঘোষণা করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেন। এই ১৯ দফার উদ্দেশ্য ছিল দেশের উন্নয়ন। কৃষিসহ সব সেক্টরে উৎপাদন বাড়ানো। স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়তে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা। সম্পদের সুষম বণ্টন ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। তিনি বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে খাল খনন ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষি এবং পরিবেশে বিপ্লব সৃষ্টি করেছিলেন। সেই ১৯ দফার প্রথম দফাই ছিল দেশের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। একজন দেশপ্রেমিক, মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে তিনি দেশের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। ১৯তম দফাটি ছিল, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-নির্বিশেষে সব নাগরিকের অধিকার পূর্ণ সংরক্ষণ এবং জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুদৃঢ় করা। তিনি জীবনের সর্বক্ষেত্রে ১৯ দফায় ঘোষিত নীতি-আদর্শ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। সৎ মানুষ হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল সর্বজনবিদিত। তাঁর সততা নিয়ে প্রশ্ন করার দুঃসাহস শত্রুদেরও নেই।

আওয়ামী লীগের স্যুট ও খালেদা জিয়ার ভোটএক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি সাধারণ সদস্য হিসেবে বিএনপিতে যোগদান করেন গৃহবধূ বেগম খালেদা জিয়া। পরে ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে দলের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ১৯৮৪ সালের আগস্টে দলটি তাঁকে চেয়ারপারসন নির্বাচিত করে। এরপর থেকে চলতে থাকে তাঁর আপসহীন সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের ফসল ছিল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এরশাদের পতন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জয়লাভ করে। বাংলাদেশের মানুষ শহীদ জিয়ার আদর্শ ভালোবেসে খালেদা জিয়াকে বিজয়ী করে। ওই নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ছিল ফুরফুরে মেজাজে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাও মনে করেছিলেন তাঁর দল নিশ্চিত ক্ষমতায় আসছে এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের অনেকে নিজেকে সম্ভাব্য মন্ত্রিসভার সদস্য ভেবে নতুন স্যুট, মুজিব কোট বানিয়েছিলেন। চলনে-বলনে অনেকের মধ্যেই মন্ত্রী মন্ত্রী ভাব চলে এসেছিল। কিন্তু নির্বাচনে ফল হলো উল্টো। দেশের জনগণ ধানের শীষে ভোট দিয়ে ভোটের বাক্স ভরে দিয়েছিল। এরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে সৃষ্টি হয় ওয়ান-ইলেভেনের মতো একটি কালো অধ্যায়। আর সেই ষড়যন্ত্রে তিনি হেরে যান। মূলত হেরে যায় জাতীয়তাবাদী শক্তি।

শুরু হয় জাতীয়তাবাদী শক্তির নতুন লড়াই। এ লড়াই ছিল অস্তিত্বের লড়াই। এ লড়াইয়ে মায়ের সঙ্গে যুক্ত হলেন পুত্র তারেক রহমান। ২০০৭ থেকে শুরু হয় সেই যুদ্ধ। এই দীর্ঘ সময়ের লড়াইয়ে একজন স্ত্রী হারিয়েছেন তাঁর স্বামীর স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক মইনুল হোসেন সড়কের বাড়িটি। প্রতিহিংসার বুলডোজার যখন জাতীয়তাবাদী শক্তির আঁতুড়ঘরটি ভাঙে তখন কষ্টে ছটফট করছিলেন একজন। আরেকজন করেছিলেন পৈশাচিক উল্লাস। সংবাদ সম্মেলন করে অশালীনভাবে মানহানিকর অনেক বানোয়াট উপাত্ত প্রকাশ করা হয়। গোটা জাতি অবাক-বিস্ময়ে শুধু মিথ্যাচার ও প্রতিহিংসার ভয়াবহতা অবলোকন করেছিল। এই লড়াইয়ে একজন মা তাঁর এক সন্তানকে হারান, আরেক সন্তানের জীবন বাঁচাতে করেন দেশান্তর। দেশের লাখ লাখ নেতা-কর্মীকে রক্ষার জন্য তিনি কর্তৃত্ববাদী সরকারের সঙ্গে আপস না করে কারাবরণ করেন। অন্যদিকে লন্ডনে বসে নিজেকে তৈরি করেন তারেক রহমান। দেশে কারাবন্দি ও হাসপাতালের বিছানায় জীবনমৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বেগম খালেদা জিয়া জাতীয়তাবাদী শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করেন। জিয়াউর রহমানের আদর্শ, জাতীয়তাবাদী শক্তির জন্য জিয়া পরিবারকে কতটা অত্যাচার-নির্যাতন, অপমান সহ্য করতে হয়েছে ওই পরিবারের প্রতিজন সদস্য ছাড়া আর কেউ তা চিন্তাও করতে পারবে না। এমন এক দুঃসময়ে জিয়ার ১৯ দফার সঙ্গে আরও কিছু সময়োপযোগী দফা যোগ করে ৩১ দফা কর্মসূচি নিয়ে তৃণমূলে গেছেন তারেক রহমান। বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যমুক্ত স্বনির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে তিনি কাজ করছেন রাতদিন। কিন্তু জিয়া পরিবারের এত ত্যাগ, এত কষ্ট কি মাঠের নেতা-কর্মীরা উপলব্ধি করতে পারছেন? কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মামলা, হামলামুক্ত একটি স্বাধীন পরিবেশ পেয়েছেন। যারা এতদিন আত্মগোপনে ছিলেন তারা প্রকাশ্যে এসেছেন। যারা বাড়িঘর ছাড়া ছিলেন, তারা নিজ বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন। এ এক মহা-আনন্দের সময় এখন বিএনপির। কিন্তু অনেকেই অভিযোগ করছেন, একানব্বইয়ের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের মধ্যে যেমন নিশ্চিত ক্ষমতায় যাওয়ার ভাব চলে এসেছিল, তেমনি ভাবের মধ্যে আছেন এখন বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী। দেশের অনেক স্থানেই ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা চলছে। দলের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু সুযোগসন্ধানী বিএনপির নেতা পরিচয়ে চাঁদাবাজি দখলসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকার গুলশান থানায় মনির হত্যায় বিএনপির মহানগরের কিছু নেতা তার পিতা আবু জাফরকে দিয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় ১০৫ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী রয়েছেন। আসামির তালিকায় একজন হলেন যুবদলের কর্মী ও জিয়াউর রহমানের চিফ সিকিউরিটি অফিসারের পুত্র, যিনি জুলাই বিপ্লবেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাকে শুধু আসামিই করা হয়নি, পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে গ্রেপ্তারও করানো হয়। কয়েক মাস কারাভোগ করে তিনি জামিন পেয়েছেন। ব্যক্তিগত শত্রুতায় তাকে আসামি করে গ্রেপ্তার করানো হয়। যুবদলের ওই কর্মীর গ্রেপ্তারের খবর শুনে তার পিতা সাবেক সেনা কর্মকর্তা শুধু আফসোস করে বলেছিলেন, ‘আমি কার কাছে বিচার দেব।’ সেই মামলা থেকে তিনজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর নাম বাদ দেওয়ার জন্য মামলার নেপথ্যের বিএনপি নেতারা মামলার বাদীর মাধ্যমে ৬ কোটি টাকা দাবি করেছিলেন। কিন্তু যাদের নামে মামলা করা হয়েছে, তারা টাকা দিতে রাজি হননি। এভাবে মামলা-বাণিজ্যে একটি গ্রুপ বেপরোয়া হয়ে ওঠে। পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ১১ নম্বর বড় মাছুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মীর ছগিরের মতো চুনোপুঁটি নেতাও চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, মারপিট, হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের মতো কাজে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তৃণমূলের এই ছোট্ট নেতা অন্যের দোকান দখল করে বানিয়েছেন বিএনপির অফিস। দলের পক্ষ থেকে তার অপকর্মের তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে, কিন্তু এখনো তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে আখেরে লাভবান হবে সন্ত্রাসী, দখলবাজ, চাঁদাবাজরা। সর্বনাশ হবে জাতীয়তাবাদী ঐক্যের প্রতীক খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের। অবশ্য শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের ১২০০ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু তারপরও থামানো যাচ্ছে না দলের ভিতরের শত্রুদের।

এতদিন বিএনপির প্রকাশ্য প্রতিপক্ষ ছিল আওয়ামী লীগ। রাজনীতির মাঠে এখন আওয়ামী লীগ নেই। আগামী নির্বাচনে থাকবে কি না সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে আপাতত শেখ পরিবারের রাজনীতির অধ্যায় শেষ। আগামী নির্বাচনের মাঠে বিএনপিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে মিত্রদের সঙ্গেই। নির্বাচনি প্রতিযোগিতায় আরও নতুন নতুন খেলোয়াড়ও মাঠে থাকবে। আগামী নির্বাচন যে সহজ হবে না, সেটা ৩১ দফার প্রণেতা জিয়াউর রহমানের আদর্শের উত্তরসূরি তারেক রহমান লন্ডনে বসে বুঝতে পারছেন। সে জন্যই তিনি ক্লিন ইমেজের ভালো মানুষকে দলে আনার তাগিদ দিচ্ছেন। দলকে তিনি আবর্জনামুক্ত করতে চান। সেই উপলব্ধি থেকেই দলের সদস্যপদ নবায়ন অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, ‘শুভাকাক্সক্ষী থেকে সমর্থক, সমর্থক থেকে কর্মী, কর্মী থেকে নেতা বানাতে হবে। আমাদের ভালো মানুষ দরকার। আমাদের ইফেক্টিভ মানুষ দরকার। প্রোডাক্টিভ মানুষ আমাদের আগামীর দিনে দরকার। কারণ, এই পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার দেশকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে। ধ্বংস করে দিয়েছে বিভিন্ন জায়গা। কাজেই যদি পুনর্গঠন করতে হয়, আমাদের সেরকম মানুষ দরকার। সেরকম মানুষগুলোকে আমাদের খুঁজে বের করে নিয়ে আসতে হবে।’

তারেক রহমানের এ বক্তব্য দলের নেতা-কর্মীরা যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন, ততই দলের জন্য, জাতীয়তাবাদী আদর্শের জন্য মঙ্গল। সেটা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে যদি এখনই ক্ষমতার ভাব চলে আসে, তবে সর্বনাশ হয়ে যাবে। কারণ ওয়ান-ইলেভেনের সময় যারা মাইনাস টু ফর্মুলার উদ্ভাবক ছিল, তারা এখনো তৎপর। এখনো তারা নানা কলকাঠি নেড়ে পানি ঘোলা করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি নানা অপশক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয় রয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীসহ শেখ পরিবারের সবাই যেহেতু দেশ ছেড়ে পালিয়েছে এবং জনসমক্ষে আসার নৈতিক দৃঢ়তা হারিয়েছে, সে কারণে ওই মহলটির এখনকার টার্গেট শুধুই জিয়া পরিবার। বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দেরও এই কঠিন বাস্তবতা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখতে হবে।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবার ও সমাজের গুরুত্ব

নাইমুল রাজ্জাক
নাইমুল রাজ্জাক
শেয়ার
শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবার ও সমাজের গুরুত্ব
সংগৃহীত ছবি

শিশুর মানসিক বিকাশ সামাজিকীকরণ, পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক পরিবেশ এবং শিক্ষামূলক সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। পরিবার শিশুর প্রথম শিক্ষাগার, যেখানে সে ভালোবাসা, স্নেহ ও নিরাপত্তা অনুভব করে। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত ভাব বিনিময় শিশুর ভাষাগত দক্ষতা, আবেগগত ভারসাম্য এবং চিন্তাশক্তির বিকাশে সহায়তা করে। 

একটি সুস্থ ও অনুকূল পরিবেশ শিশুর মানসিক বিকাশের ভিত্তি তৈরি করে।

সমাজের ইতিবাচক প্রভাব শিশুকে সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন, মূল্যবোধ শেখা এবং সহিষ্ণুতা গড়ে তোলার সুযোগ দেয়। ভালো সামাজিক সমন্বয় শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং নৈতিক নীতিমালা মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করে। 
শিশুর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য নিরাপদ ও উপযুক্ত পরিবেশ অপরিহার্য। সুস্থ পরিবেশ শিশুর মনোযোগ ধরে রাখতে, শেখার আগ্রহ বাড়াতে এবং সৃজনশীলতাকে উন্মোচিত করতে সহায়ক হয়।
যখন শিশুরা নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশে বেড়ে ওঠে, তখন তাদের আবেগীয় স্থিতিশীলতা ও আত্মবিশ্বাস সুদৃঢ় হয়। 

পরিবেশের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড শিশুর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রকৃতির প্রতি সচেতনতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং নৈতিক মূল্যবোধ গঠনে পরিবেশগত শিক্ষা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি, সাহিত্য, সংগীত, নাটক ও চিত্রকলার মতো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড শিশুর সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে এবং আনন্দদায়ক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে।

 

একটি উদার ও সংবেদনশীল সমাজ শিশুদের আত্ম-উন্নয়ন, নেতৃত্বের দক্ষতা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ গঠনে সহায়তা করে। এটি তাদের মানসিক বিকাশকে সুসংহত করে এবং সমাজে কার্যকরভাবে মেলামেশার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

সর্বোপরি, একটি সুষ্ঠু পরিবেশ ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি শিশুর মানসিক বিকাশ ও সামাজিকীকরণের জন্য অপরিহার্য। সুস্থ ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনের জন্য শিশুদের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করা প্রয়োজন, যাতে তারা নৈতিকতা, মানবিকতা ও সৃজনশীলতাকে ধারণ করে ভবিষ্যতের পথচলা নিশ্চিত করতে পারে। শিশুর মানসিক বিকাশ ও সামাজিকীকরণে সুস্থ সমাজ ও পরিবেশ এর গুরুত্ব অপরিসীম

লেখক ও গবেষক

মন্তব্য

ঈদযাত্রায় ই-টিকিট : কিছু কথা

পার্থ সারথি দাস
পার্থ সারথি দাস
শেয়ার
ঈদযাত্রায় ই-টিকিট : কিছু কথা
সংগৃহীত ছবি

ঈদযাত্রায় দেড় দশক আগেও টিকিট নিয়ে জনভোগান্তির শেষ ছিল না। খুশির ঈদযাত্রায় ট্রেন, বাস কিংবা লঞ্চে বাড়ি ফেরার জন্য দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট করতে হতো। ভোগান্তি ছিল আকাশপথে বাড়ি ফেরার ক্ষেত্রেও। তবে সেই ভোগান্তি লাঘব করেছে ই-টিকিট পদ্ধতি।

যতই সময় গড়াচ্ছে দেশে ততই অনলাইন সেবার পরিধি বাড়ছে। ঘরে বসেই মানুষ বিভিন্ন সেবা পাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় মানুষ ঘরে বসে অনলাইনে টিকিটও করছেন। এতে অনেকটাই ভোগান্তি লাঘব হয়েছে।
 

এখন গাড়িচালক ঘরে বসেই ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করতে পারছেন। মিলছে ভূমিসংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা। জীবনের আরো আরো জরুরি সেবার জন্য আগের মতো ছুটতে হচ্ছে না অফিসে। দেশের পরিবহন খাতেও অনলাইনে বিভিন্ন সেবা পাওয়াকে সহজ করে দিয়েছে।

আগে টিকিটের জন্য রেলস্টেশন ও বাস কাউন্টারে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হত যাত্রীদের। জনভোগান্তির অন্তহীন সেই অবস্থার লাগাম টেনে ধরতে শুরু করে অনলাইন টিকেটিং ব্যবস্থা। ঘরে, অফিসে বা অন্য কোনো জায়গায় বসে এই টিকিট সংগ্রহ করা সহজ থেকে সহজতর হচ্ছে। এটা স্বীকার করতে হবে, তথ্যই শক্তি। তথ্য না জানলেই বহু বিপদ, বহু ভোগান্তি চারদিক থেকে ঘিরে ধরে।

কিন্তু অনেকে এখনো অনলাইনে কিভাবে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়-সেই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখেন না। 

না জানার কারণে, অভিজ্ঞতার অভাবে মনের মধ্যে ই-টিকেটিং নিয়ে তাই ভয়, বিভ্রান্তি কাজ করে। তৈরি হয় বিব্রতকর অবস্থা। দেখতে দেখতে পবিত্র রমজান মাস শেষের দিকে। সামনেই ঈদযাত্রার মূল স্রোত শুরু হবে সড়ক রেল ও নৌপথে। আকাশযানেও বাড়বে ভিড়। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিট সংগ্রহের জন্য রাত জেগে যুদ্ধ এবারও নেই। রাত জেগে টিকিট কেনার বিষয়টি এখন গল্পের মতো। এবার বাড়ি যাওয়ার আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে বাস-ট্রেন-লঞ্চের। আকাশযানের টিকিটও বিক্রি হচ্ছে। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য গত ১৪ মার্চ থেকে অনলাইনে ট্রেনের আগাম  টিকিট বিক্রি শুরু হয়। প্রথম দিনই সকাল ৮টা থেকে আধ ঘণ্টার মধ্যে ১৫ হাজার ৭৭৩টি টিকিটের বিপরীতে ২০ লাখ হিট পড়েছে বলে বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি। 

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৭ মার্চ ভ্রমণের জন্য অগ্রিম টিকিট কাটতে গত ১৭ মার্চ সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ১ কোটি ৫০ লাখ হিট বা টিকিট কাটার চেষ্টা করা হয়েছে। ২০ মার্চে ৩০ মার্চের টিকিট বিক্রির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ট্রেনে আগাম টিকিট বিক্রির জন্য অনলাইনে যুদ্ধ। রেলে শতভাগ টিকিট এবারও অনলাইনে  বিক্রির ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। ফলে রেলস্টেশনের কাউন্টারে ছিল না আগের ভিড়, ছিল না আগের ভোগান্তি।

একটু পেছন ফিরে দেখা যায়, ২০১২ সালের ২৯ মে সরকারিভাবে চালু হয় অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার ব্যবস্থা। এক যুগের ব্যবধানে বাংলাদেশ রেলওয়ের ডিজিটাল টিকিট পদ্ধতি পথ পরিক্রমায় আরো সহজ হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে সর্বোচ্চ ১০ দিন আগে থেকে ট্রেনের টিকিট কেনা যায়। প্রথমেই দরকার হবে সাইটটিতে নিবন্ধন করা। 

অভিজ্ঞরা জানেন, এই পর্যায়ে জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নাম্বার দিতে হয়। এরপর স্টেশন, ভ্রমণের তারিখ, ট্রেনের শ্রেণি নির্বাচন করতে হয়। এখানে বিদ্যমান আসনের ভিত্তিতে প্রদর্শিত আসনের তালিকা থেকে এক বা একাধিক আসন বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে। দাম পরিশোধের (পেমেন্টের) পদ্ধতিতে রয়েছে ক্রেডিট/ডেবিট বা বিকাশের মতো জনপ্রিয় মোবাইল পেমেন্ট গেটওয়েগুলো। টিকিটের দাম পরিশোধ শেষে প্রাপ্ত ই-টিকিটের প্রিন্ট নিয়ে রেল স্টেশনে যেতে হয়। ওয়েবসাইট ছাড়াও ট্রেনের টিকিট কেনার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব অ্যাপ 'রেল সেবা' আছে অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোন উভয় প্ল্যাটফর্মের জন্য।

তবে বাংলাদেশ রেলওয়ের আগেই বাংলাদেশ বিমানের আগাম টিকিট পাওয়ার সুবিধা শুরু হয়। সেটি শুরু হয় ২০১০ সাল থেকে। সংস্থার ওয়েবসাইটে গিয়ে ঘরে বসেই সম্পন্ন করা যায় টিকেট বুকিংয়ের কাজ। এখানে গন্তব্য, তারিখ, শ্রেণি নির্বাচন ও ই-মেইল আইডি ও মোবাইল নাম্বারসহ যাত্রীর বিস্তারিত তথ্য দিতে হয়। পরে ডিজিটাল ব্যাংকিং বা মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেমের মধ্যে যে কোনোটির মাধ্যমে পরিশোধ করা যায় টিকিটের মূল্য। অবশেষে ই-টিকিট প্রদান করা হয় যাত্রীদের ই-মেইলে। এছাড়াও আছে বিমান অ্যাপ।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবহণ মাধ্যমগুলোর ই-টিকিট পেতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে সহজ নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি। ট্রেনের টিকিটগুলো বিআরআইটিএসের (বাংলাদেশ রেলওয়ে ইন্টিগ্রেটেড টিকেটিং সিস্টেম) সঙ্গে যৌথভাবে ইস্যু করে এ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৪ সাল থেকে সহজ বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও বিমানে একক মঞ্চের আওতায় সেবা দেওয়া শুরু করে। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রতিটি পরিবহণ মাধ্যমের জন্য আলাদাভাবে রওনা হওয়ার স্থান, গন্তব্য, ও যাত্রার তারিখ দেওয়ার পদ্ধতি রয়েছে। এজন্য টিকিট সংগ্রহকারীকে সবসময় ব্যবহার করা হয় এমন  ইমেইল ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার সরবরাহ করতে হয়। মোবাইল বা ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে অর্থ প্রদানের পর টিকিটের সফট কপির লিঙ্ক পাওয়া যাবে ই-মেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে।এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা যাবে স্মার্টফোন থেকেও।

এছাড়াও অনলাইনে টিকিট সেবার জন্য গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি গোজায়ান ২০১৭ সাল থেকে দেশের ভেতরের ও বাইরের এয়ার ফ্লাইট কেন্দ্রিক টিকিট সেবাদান শুরু করে।  যদিও ই-টিকেটের পাশাপাশি এটি হোটেল, ট্যুর, এবং ভিসা সংক্রান্ত সুবিধাও প্রদান করে থাকে। এখান থেকে টিকিট অর্ডার করতে হলে প্রথমে অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে। এর অধীনে টিকিট প্রাপ্তি সহ ফ্লাইটের যাবতীয় আপডেট পাওয়া যায়। ওয়েবসাইটে ফ্লাইট সার্চের পাশাপাশি একাধিক ফ্লাইটের মধ্যে তুলনা করারও ফিচার রয়েছে। ব্যাংকিং ও মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেমগুলোর মধ্যে প্রায় সবগুলোই থাকায় সব শ্রেণির গ্রাহকরাই অকপটেই ব্যবহার করতে পারেন।

২০১৪ সাল থেকে শেয়ার ট্রিপ নামের প্রতিষ্ঠান দেশে প্রথমবারের মতো একযোগে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য অনলাইন টিকিট সেবা প্রদান করছে। যত প্রতিষ্ঠান বাড়ছে ততো সেবা পাওয়ায় সুযোগ বাড়ছে। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠান ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করছে কিনা, সেবাদানে ব্যতয় ঘটছে কিনা সেসব বিষয়ে মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা দরকার। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সড়ক পরিবহন খাতের বিভিন্ন দিক দেখভাল করে। অনলাইনে বাসের টিকিট বিক্রির বিষয়টি তারা মূল্যায়নের আওতায় আনতে পারে। এভাবে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা এককভাবে বা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করতে পারে সরকার।

মন্তব্য

চাপে চ্যাপটা শিল্পে খাঁড়ার ঘা

    মোস্তফা কামাল
শেয়ার
চাপে চ্যাপটা শিল্পে খাঁড়ার ঘা

হোক রুগ্ণদশা, পুঁজিপাট্টা ঠিক থাক না থাক, ঈদে কর্মচারীদের বেতন-বোনাস লাগবেই। শিল্পকারখানার মালিকদের তা শোধ করতেই হবে। এবার তাঁদের বড় দুশ্চিন্তার কারণ একই সময়ে দুই মাসের (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) মজুরি এবং ঈদ বোনাস নিয়ে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর আশঙ্কা এ বছর ৫০-৬০টি কারখানার মালিক মজুরি পরিশোধ নিয়ে আচ্ছা ঝামেলা পোহাচ্ছেন।

শ্রমিকনেতাদের কাছে এ-সংক্রান্ত আরও আপডেট তথ্য থাকলেও মাঠ গরম করার কাজে কোনো ছাড় দিতে নারাজ তাঁরা। এরই মধ্যে ২০ রমজানের মধ্যে বোনাস ও ঈদের ছুটি এবং এর আগে ওভারটাইমের পাওনা টাকা পরিশোধের বেদম চাপ তৈরির ক্যারিশমা দেখিয়েছেন তাঁরা।

এ প্রবণতা বেশি তৈরি পোশাকশিল্পে। হালবাস্তবতা জানার পরও শ্রমিকনেতাদের দাবি, এটি মালিকদের চাতুরি-কারসাজি।

উৎপাদন ব্যয়, বৈশ্বিক ক্রেতার চাহিদা এবং প্রতিযোগিতা সক্ষমতা থাকলেও উৎসবের সময় এলে শ্রমিকদের জিম্মি করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন শিল্পমালিকরা। কর্মসংস্থানের কথা বলে তাঁরা সরকারের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা হাতান। মাঠকাঁপানো না হলেও শ্রমিকদের খ্যাপাতে যথেষ্ট তাঁদের এ যুক্তি। তাঁরাও জানেন, রাজনৈতিক ঘটনার অনিবার্যতায় বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, অনেকগুলোতে প্রোডাকশন তলানিতে নেমে গেছে, তবে তা বিষয় নয় তাঁদের কাছে।
বিবেচ্যও নয়। ছোট বড় সব প্রতিষ্ঠানের জন্যই ঈদে বেতন-বোনাস দেওয়ার বাধ্যবাধকতা অবধারিত। গার্মেন্ট, নির্মাণসহ বিভিন্ন শিল্পে যার যার জায়গায় সমস্যার সমাধানে দিশাহারা অবস্থা। ঈদ সেখানে একটা ধাক্কা দিয়েছে।

ঈদের আগে চলতি মার্চ মাসের বেতন ও বোনাসের চাপ থাকা স্বাভাবিক।

শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ২০ রোজার মধ্যে পুরো মাসের বেতন, ২৫ রোজার মধ্যে বোনাস পরিশোধের দাবি তোলা বেতন-বোনাসহয়েছে। গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রায় প্রতিদিনই শ্রমিকরা নানা ইস্যুতে তেজি হয়ে উঠছেন। আর তেজি হওয়া মানে কাজ ক্ষান্ত রেখে রাস্তা আটকে কিছুক্ষণ হট্টগোল বাধানো। ততক্ষণে সড়ক-মহাসড়কে যে অবস্থা তৈরি হয় ভুক্তভোগী ছাড়া অন্যদের পক্ষে উপলব্ধি অসম্ভব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলপ্রয়োগ না করে বুঝিয়েশুনিয়ে তাঁদের কাজে ফেরাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলপ্রয়োগ করুক, গন্ডগোল পাকুক- সেই অপেক্ষা মহলবিশেষের। সরকার সেই সুযোগটা দিতে চায় না।

ঈদের আগে অস্থিরতা সৃষ্টির একটি আয়োজন সম্পর্কে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক-বিনিয়োগকারীরাও ওয়াকিবহাল। তাঁরা এ ব্যাপারে সরকারের দিক থেকে শক্ত পদক্ষেপ চান। কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত সেই পথে যেতে নারাজ। বিষয়টির সঙ্গে টাকার প্রশ্ন। শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন টাকার জন্য। টাকা দিলে আন্দোলন করবে না- তা সরকার জানে। বিজনেস কমিউনিটিও জানে। তারা ঈদের আগে বেতন-বোনাসের চাপে চ্যাপটাা থেকে বাঁচতে সরকারের কাছে নগদ সহায়তা চেয়েছে। সরকারের দেওয়া প্রণোদনার বড় অঙ্ক এখনো আটকে রয়েছে। সরকারের দিক থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে চুপ থাকার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। এ সংকটে ব্যাংকগুলোকেও পাশে চান ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বেশির ভাগ শিল্পকারখানা দুর্বল হয়ে পড়েছে। কমে গেছে উৎপাদন। সরকারি প্রকল্পগুলোও স্থবির হয়ে পড়ায় আয়-রোজগার কমে গেছে এসব প্রকল্পে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে যুক্তদের। বাঘা বাঘারা পালিয়েছেন রাজনৈতিক কারণে। তাঁদের মাধ্যমে টাকার যে ঘূর্ণি ঘটত সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। তৈরি পোশাকশিল্প কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও তাঁরা চ্যাপটা হয়ে চলছেন কাঁচামাল আমদানি ও জ্বালানিসংকটে। পোশাকশিল্পে অর্ডার বাড়লেও কিছু কারখানা লসে ডেলিভারি দিচ্ছে এমন তথ্য জানান দিচ্ছে বায়ারদের কাছে। এতে বিভিন্ন কারখানায় নগদ অর্থের সংকট দেখা দিয়েছে। এটিও একধরনের অসুস্থতা। যে পরিমাণ রপ্তানি হয়, সেই পরিমাণে টাকা আসছে না। তাই লাভের মার্জিন ঠিক থাকছে না। যন্ত্রণা সব দিকেই। কারখানা চালু রাখতে কর্মী দরকার। জ্বালানি বিশেষ করে গ্যাসও দরকার। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের আশ্বাস দিয়ে প্রতি ইউনিট ১১ থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। এর পরও গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে না। গ্যাসসংকটে ডিজেল দিয়ে ডায়িং কারখানায় উৎপাদন করা গেলেও স্ট্যান্ডার্ড ও ড্রাক করা যাচ্ছে না। আর ফ্যাব্রিকস ডায়িং করাতে না পেরে সুইং, ফিনিশিং, নিটিং অ্যান্ড প্রিন্টিং সেকশনের শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে। ভারতের আগ্রাসন ও সুতা অ্যান্টিডাম্পিং করার ফলে চলতি বছর রোজার ঈদে স্থানীয় বাজারে প্রায় দেড় শ কোটি ডলারের পণ্য অবিক্রীত থাকবে। ভারত সরকার তাদের উদ্যোক্তাদের সুতা উৎপাদনে ১৩ থেকে ১৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে ৩০ শতাংশ বেশি সুতা আমদানি করেছেন। এতে ডাম্পিং হচ্ছে দেশীয় সুতা। পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের অবস্থা আরও শোচনীয়। এই খাতের প্রায় দুই লাখ শ্রমিকের নিয়মিত মজুরিই পরিশোধ করা যাচ্ছে না। কেবল প্রবৃদ্ধি নয়, যেকোনো খাতের গতিশীলতা ধরে রাখতে শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া দরকার। নতুন বিনিয়োগ পরের ব্যাপার।

বিদ্যমান বিনিয়োগই হুমকিতে পড়লে আর ভরসা থাকে না। যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি নির্ভর করে শিল্প ও ব্যবসাবাণিজ্যের ওপর। প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের চালিকাশক্তি হচ্ছে বিনিয়োগ। হোক তা ব্যক্তি খাতে বা রাষ্ট্রীয় খাতে। সাম্প্রতিক বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরশীল ছোট বড় মাঝারি সব ব্যবসায়ীই কমবেশি আক্রান্ত। দেশের গোটা অর্থনীতিই নানা চ্যালেঞ্জে খাবি খাচ্ছে। ছোট-বড় সব ব্যবসাই বাড়তি ঝুঁকিতে। শিল্প, ব্যবসা, বিনিয়োগ- সবকিছুই স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলছে। স্বাভাবিকতা ফেরাতে ঋণের সুদহার কমানো, ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখা, ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনাসহ একগুচ্ছ দাবিতে অনেক দিন থেকে মাথা ঠুঁকছেন ব্যবসায়ীরা। গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চয়তাও পায়নি। ঋণের সুদের হার বাড়ানোর ফলে ব্যবসাবাণিজ্যের খরচ বেড়ে গেছে। এতে পণ্যের দামও বাড়ছে। ফলে বিক্রি কমে গেছে। এখনো এলসি খোলার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সমস্যা হচ্ছে। অনেক ব্যাংক এলসি খুলতে চাচ্ছে না। এলসি খোলার ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হচ্ছে। দেশের বাইরে ব্যবসায়িক কার্যালয় স্থাপন করতে গেলেও কঠোরতা। বিদ্যমান নীতিমালা কিছুটা হলেও শিথিল করা দরকার। এতে আমদানি-রপ্তানি ও বিনিয়োগ বাড়বে। এ ছাড়া দেশের সামগ্রিক আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়বদ্ধতা বাড়ানোর বিষয় রয়েছে।

দেশের টেক্সটাইল, গার্মেন্টস, প্লাস্টিক এক্সেসরিসসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা সেদিন কিছুটা  নির্ভয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে তাঁদের কিছু যন্ত্রণার কথা বলেছেন। বৈঠকে তাঁরা আমদানি-রপ্তানিতে নানা প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি ভ্যাট-ট্যাক্স ও আমদানি শুল্ক যৌক্তিক পর্যায়ে কমানোর প্রস্তাব দেন। বন্ড জটিলতা, চোরাচালানসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কাস্টমসের হয়রানি বন্ধ করার দাবিও জানান। জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অনিয়মের দুরারোগ্য ব্যাধি এত সহজে দূর হবে না। তবে কাজ উদ্ধারে ব্যবসায়ীদের এনবিআরের কর্মকর্তাদের অন্যায় আবদার না মানার পরামর্শ দেন তিনি। একপর্যায়ে ব্যবসায়িক স্বার্থ উদ্ধারে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ না দিয়ে তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। দুর্নীতির প্রমাণসহ কেউ হাতেনাতে ধরা পড়লে তদন্ত ছাড়াই এনবিআর কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার হুঁশিয়ারিও দেন। ব্যবসায়ীরা এনবিআর বা কোনো দপ্তরের কর্মকর্তাকে ধরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নেবে কেন? এটা তাঁদের কাজ নয়। তাঁরা চায় স্বস্তিতে-আনডিস্টার্বে বিনিয়োগ করতে। আর রাষ্ট্রর কাছে তাঁদের চাওয়া সেই বিনিয়োগ তথা পুঁজির নিশ্চয়তা।

বিনিয়োগ-ব্যবসা মিলিয়ে অর্থনীতির শিরায় রক্তপ্রবাহ না থাকলে রাজনীতি-গণতন্ত্র গতিময়তা পায় না। যুগে যুগে তা প্রমাণের বাকি নেই। আধুনিক বিশ্বে অর্থনীতি-গণতন্ত্র দুই চাকার সাইকেলের মতো। যেকোনো এক চাকায় সাইকেল চালানো যায় না। দেশ অর্থনীতিবান্ধব না হলে রাজনীতি গণতন্ত্রবান্ধব হবে না। কেবল বাংলাদেশ নয়, এটি গোটা বিশ্বের বাস্তবতা। নির্বাচনসহ চলমান রাজনীতি নিয়ে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের কারণ খোঁজা তাই জরুরি। এরপরই না বাদবাকি অন্য কিছু। ভঙ্গুর আর্থিক খাত, বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ এবং নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি নিয়ে এমনিতে বিপাকে অন্তর্বর্তী সরকার। তার ওপর রয়েছে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান। ছোট-বড় মিলিয়ে বিজনেস কমিউনিটিতে এ নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে। সরকার ও রাজনৈতিক মহলে নিশ্চয়ই এ বিশ্লেষণের মাত্রা যোগ আরও বেশি। বিশেষ করে অর্থযোগে চাপে চ্যাপটা হওয়ার লক্ষণ দেশ, রাজনীতি, গণতন্ত্রের জন্য আরও বেশি।

লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট
 

মন্তব্য

আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামো উন্নয়নে সেনাবাহিনীর অবদান

কর্নেল এ এস এম নাছের, পিএসসি, জি+
কর্নেল এ এস এম নাছের, পিএসসি, জি+
শেয়ার
আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামো উন্নয়নে সেনাবাহিনীর অবদান

‘সমরে আমরা, শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা দেশের তরে’— এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কাজের গুণগত ও কারিগরি মান নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর ওপর অর্পিত প্রকল্পগুলো বরাদ্দকৃত বাজেটের মধ্যে এবং প্রাক্কলিত সময়ের আগেই সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয় বিধায় দেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে সেনা সদস্যদের সম্পৃক্ততার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

শিক্ষার মানোন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদান প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত স্কুল, কলেজ (সাধারণ, চিকিৎসা ও ক্যাডেট) ও বিশ্ববিদ্যালয় (সাধারণ, কারিগরি ও বিশেষ) প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশকে আলোকিত করতে অবদান রাখছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৪৪টি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ এবং ১৯টি ইংলিশ মিডিয়াম/ভার্সনসহ সারা দেশে ১২টি ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করে শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ও ক্যাডেটরা জাতীয় পরীক্ষাগুলোতে ঈর্ষণীয় সাফল্যের পাশাপাশি চৌকস ও নেতৃত্বদানে পারদর্শী দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠছে।

উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও আধুনিক জ্ঞানচর্চার জন্য মিরপুর সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস। প্রকৌশল শিক্ষার ক্ষেত্র প্রসারিত করার লক্ষ্যে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং কুমিল্লা, সৈয়দপুর ও কাদিরাবাদ সেনানিবাসে তিনটি আর্মি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পেশায় দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করছে।

এ ছাড়া ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে শিক্ষা প্রসারে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নামে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাভার ও সিলেট সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেনা পরিবার কল্যাণ সমিতির পৃষ্ঠপোষকতায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে ১০টি বিশেষায়িত স্কুল (প্রয়াস) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। 

বাংলাদেশের যোগাযোগব্যবস্থায় আইকনিক মেগাপ্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণ চলাকালে সেনাবাহিনী জাজিরা ও মাওয়া অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ, নদীশাসন ও নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি ব্রিজ অ্যান্ড ফ্যাসিলিটিজ সার্ভিস এরিয়ার কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।

বর্তমানে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য সুপারভিশন পরামর্শক হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে সেনাবাহিনী। পদ্মা রেলওয়ে সেতু বাস্তবায়নের পর দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়। 

বর্তমানে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর উন্নয়নমূলক কাজ, ব্রিজ, ওভারব্রিজ, নদী ড্রেজিং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করা হচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প, চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর মহিপাল ফ্লাইওভার, ঢাকা শহরের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মিরপুর এয়ারপোর্ট রোডে ফ্লাইওভার, বনানী লেভেলক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণ, ৩০০ ফিট পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, ১০০ ফিট খাল খনন প্রকল্প, মেঘনা-গোমতী ব্রিজের মেরামতকাজ, পদ্মা নদী ড্রেজিং প্রকল্প, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা এলাকার নিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নয়নমূলক প্রকল্প এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন সড়ক উন্নয়ন নির্মাণের কাজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করা হচ্ছে। এ সবই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বাস্তবায়ন করা জাতি গঠনমূলক কর্মকাণ্ডের অন্যতম উদাহরণ।

 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় বিভিন্ন সড়ক নির্মাণ করার কারণে পাহাড়ি জনপদে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে, বাজার অর্থনীতি ও বিপণন সফলতার মুখ দেখেছে, স্বাস্থ্যসেবায় সূচক উন্নত হয়েছে, চাষাবাদ বেড়েছে, জীবনধারায় পরিবর্তন এসেছে এবং কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে দারিদ্র্যের হার কমেছে। সর্বোপরি পার্বত্য তিন জেলায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ে এসেছে উন্নয়ন ও প্রাণের স্পন্দন। বর্তমানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের দুর্গম সীমান্ত এলাকায় এক হাজার ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সড়ক নির্মাণের প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে পার্বত্য জেলাগুলোর সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি যোগাযোগব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য-প্রযুক্তি, পর্যটন ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বাংলাদেশের বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র মেগাপ্রজেক্টটি হাতে নেওয়া হয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ, রক্ষণাবেক্ষণ, পারমাণবিক জ্বালানি পরিবহন এবং প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, যা বাংলাদেশের মানুষের কাছে দেশের সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। সেনাবাহিনী অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র তথা ভোটার আইডি কার্ড, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এবং মেশিন রিডেবল ভিসা তৈরির ব্যাপারে সরকারের গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দেশে সর্বপ্রথম চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহনের প্রকল্পটি চলমান। প্রজেক্টটি সফল হলে জ্বালানি তেলের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। 

২০১৭ সাল থেকে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণের প্রকল্পটি সেনা সদস্যরা দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে চট্টগ্রাম নগরবাসী মুক্তি পাবে। উপরোক্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতি গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ দেশের উন্নয়নে অগ্রগামী ভূমিকা রাখারই উদাহরণ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, দেশের জনগণের জান-মাল ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার (কেপিআই) নিরাপত্তা প্রদানসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সম্মানিত সেনাবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে দেশের ৬২টি জেলায় সেনা সদস্যরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম এবং সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

অপারেশন উত্তরণের আওতায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার পাশাপাশি নানা ধরনের জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থেকে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়তা করছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে পাহাড়ি জনপদ একটি উন্নত জীবনযাত্রার দিকে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী কক্সবাজার জেলায় মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকায় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, চিকিত্সাসেবাসহ সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করে দেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করে তুলেছে।

জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে ১৯৮৮ সালে ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ মিশনে মাত্র ১৫ জন সেনা পর্যবেক্ষক প্রেরণের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা শান্তিরক্ষী পরিবারের সদস্য হন। আন্তর্জাতিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ, কর্মদক্ষতা, মানবিক মনোভাব ও পেশাদারির মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনছেন সম্মান ও মর্যাদা। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে সুনামের সঙ্গে কাজ করে শুধু সেসব দেশে শান্তি ফিরিয়েই আনেননি, আর্থ-সামজিক ক্ষেত্রসহ পুনর্বাসনক্ষেত্রে এনেছেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন, যা বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অত্যন্ত উজ্জ্বল করেছে। বিশ্বশান্তি রক্ষায় অদ্যাবধি সেনাবাহিনীর ১২৫ জন সদস্য প্রাণ দিয়েছেন।

চিকিৎসাসেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সিএমএইচ ঢাকা সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের (ক্যান্সার সেন্টার, বার্ন ইউনিট, ফার্টিলিটি সেন্টার) ফলে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আধুনিক চিকিৎসাসেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা সিএমএইচ থেকে বেসামরিক ব্যক্তিদের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে এবং চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্র প্রসারিত করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ (এএফএমসি) এবং পাঁচটি আর্মি মেডিক্যাল কলেজ বগুড়া, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর ও রংপুর সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে সেবিকাদের ঘাটতির বিষয় বিবেচনায় এনে বাংলাদেশের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা খাতে সুদক্ষ ও মানসম্পন্ন নার্স তৈরির জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে পাঁচটি আর্মি নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করার প্রশাসনিক অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়েছে এবং এরই মধ্যে দুটি আর্মি নার্সিং কলেজে এই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। 

বর্তমানে বিশ্ব বাস্তবতাকে অনুধাবন করে নারীশিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারী অফিসার এবং পরবর্তী সময়ে নারী সৈনিক নিয়োগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নারীর সামর্থ্য ও যোগ্যতাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যা নারীর ক্ষমতায়নে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বর্তমানে সেনাবাহিনীতে নারী অফিসাররা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করছেন। এ ছাড়া আর্মি মেডিক্যাল কোরের নারী অফিসাররা অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন। এর ফলে একদিকে যেমন নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন, অন্যদিকে তাঁরা তাঁদের মেধা ও প্রতিভা দিয়ে সামরিক বাহিনীর চ্যালেঞ্জিং কাজগুলো দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করছেন।

পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আর্তমানবতার সেবায় বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমি/পাহাড়/ভবন ধস, মহামারি ইত্যাদি বিভিন্ন দুর্যোগকবলিত অঞ্চলে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি রোধকল্পে সেনাবাহিনী যেভাবে আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তা দেশবাসীর কাছে প্রশংসিত হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারি চলাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিকিৎসকরা ও বিভিন্ন টহলদল সারা দেশে গণসচেতনতা বৃদ্ধি, চিকিত্সাসামগ্রী বিতরণ, লকডাউন নিশ্চিতকরণ, কোয়ারেন্টিন সুবিধা স্থাপন, কভিড আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিত্সা পরিচালনা করেছে। 

২০২৪ সালে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে বন্যা ও বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনা সদস্যরা আটকে পড়া বন্যাকবলিত মানুষের উদ্ধারকাজ পরিচালনা, ত্রাণ কার্যক্রম, খাদ্য ও পানি বিতরণ, চিকিত্সাসেবা পরিচালনা, বাঁধ নির্মাণে সহায়তা এবং পুনর্বাসনের মতো মানবিক সহায়তা প্রদান করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০০৭ সালে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ সালে আইলা ও অতি সম্প্রতি আম্ফানের সময় সেনাবাহিনীর ভূমিকা হয়েছে জনগণের কাছে প্রশংসিত। ২০১৭ সালের জুন মাসে পাহাড়ধসে পার্বত্য তিন জেলার যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সেনাবাহিনী কঠোর পরিশ্রম করে যোগাযোগব্যবস্থা পুনরুদ্ধার অভিযান, পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের খাবার, পানি ও চিকিত্সাসেবা প্রদান করে জনগণের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করে জাতীয় পরিমণ্ডলে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম অনেক দেশ যেমন— মায়ানমার, চীন, জাপান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, হাইতি, তুরস্ক, মিসর ও মালদ্বীপে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকবেলায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত হয়ে দক্ষতার সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবেলা করে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিরলস পরিশ্রমে পার্বত্য তিন জেলায় যোগাযোগ সুবিধা, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, অবকাঠামো নির্মাণ এবং রাত্রিযাপনের সুবিধা তৈরি হওয়ায় সৌন্দর্যপিপাসু হাজারো মানুষ এখন পার্বত্য তিন জেলায় বিভিন্ন দুর্গম স্থানে ভ্রমণ করার সুযোগ পাচ্ছে। সেনাবাহিনীর উদ্যোগে নির্মিত নীলগিরি, সাজেক, থানচি, রাঙামাটি ও কাপ্তাই লেকে রিসোর্ট এবং ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ অতি গুরুত্বপূর্ণ কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভটি পর্যটনশিল্প বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। রেমাক্রী, বড়পাথর, নাফাখুম জলপ্রপাত, শুভলং জলপ্রপাত, বগা লেক, আলুটিলা, চিম্বুক, স্বর্ণমন্দির প্রভৃতি এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তাবিধানের মাধ্যমে পর্যটনশিল্প অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালিদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে।

জাতীয় পর্যায়ে লোকসানি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) ২০০০ সালে এবং বাংলাদেশ ডিজেল প্লান্ট লিমিটেড ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পর কাজের গুণগত ও কারিগরি মান নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি যথাযথ তদারকির কারণে সেগুলো লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত সেনা কল্যাণ সংস্থা নির্ভেজাল দ্রব্য বাজারে সরবরাহ করে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে অবদান রাখছে। দরিদ্র ভূমিহীন জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্বল্প বাজেটের মধ্যে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে ব্যারাক নির্মাণ করে সুষ্ঠুভাবে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করায় জাতীয় পরিমণ্ডলে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান অগ্রযাত্রায় অবদান রাখার জন্য দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সদস্যরা বদ্ধপরিকর ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এরই মধ্যে আপামর জনসাধারণের হূদয়ে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর জন্য আছে দৃঢ় বিশ্বাস, ভরসা আর ভালোবাসা। এ অর্জন সত্যিই অতুলনীয়। দেশের সার্বিক উন্নয়নের অংশীদার হতে পেরে সেনা সদস্যরা গর্বিত ও আনন্দিত। সৃষ্টিকর্তার কাছে আমাদের প্রার্থনা, আমাদের উত্তরসূরিদের মতো জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে আমরা যেন হতে পারি জাতীয় আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক।

লেখক : কর্নেল এ এস এম নাছের, পিএসসি, জি+, সেনাবাহিনী কর্মকর্তা

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ