পূর্বসূরিদের মতো ভুল নীতিতেই চলছে ট্রাম্প প্রশাসন

শেয়ার
পূর্বসূরিদের মতো ভুল নীতিতেই চলছে ট্রাম্প প্রশাসন

চীন ও বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আসা পণ্যে একতরফা অযৌক্তিক শুল্কারোপের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকার তাদের পূর্বসূরির ভুল নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এ ধরনের পদক্ষেপগুলো কেবল সত্যকে বিকৃত করে এবং সাদা-কালো বিভাজন সৃষ্টি করে, বরং একতরফা অত্যাচারের উদাহরণ হিসেবে দাঁড়ায়। বিশ্বের একটি দায়িত্বশীল শীর্ষস্থানীয় দেশ হিসেবে চীন সবসময় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) কেন্দ্রে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে রক্ষা করেছে। এটি সব ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা ও অত্যাচারের কৌশলের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করে।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডগুলো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠিত নিয়ম ও বহুপাক্ষিকতার মূলনীতি থেকে ব্যাপকভাবে বিচ্যুত। একতরফা শুল্কারোপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব অর্থনীতি এবং বাণিজ্য নীতিমালাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এমনকি তারা বাজারের নীতিমালা এবং মুক্ত বাণিজ্যের মনোভাবকে অগ্রাহ্য করে এবং বৈশ্বিকীকরণের প্রবণতার বিরুদ্ধে যায়।

বহু বছর ধরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘জাতীয় নিরাপত্তার’ অজুহাতে ‘দীর্ঘমেয়াদী এখতিয়ার’ এবং একতরফা নিষেধাজ্ঞার অপব্যবহার করেছে, অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিষয়গুলোকে রাজনৈতিক, কৌশলগত এবং অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে।

এ ধরনের পদক্ষেপগুলো কেবল ডাব্লিউটিও-এর বৈষম্যবিহীনতার নীতিকে লঙ্ঘন করে না, বরং উন্নয়নশীল দেশগুলোরকে সুষ্ঠু বাণিজ্যের মাধ্যমে উন্নতি অর্জনের অধিকারকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।

চীন সবসময় আন্তর্জাতিক নিয়মের পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে এবং শূন্য-সমষ্টির প্রতিযোগিতার পরিবর্তে পার্থক্যগুলো আলোচনা ও পরামর্শের মাধ্যমে সমাধান করার পক্ষপাতী। বহুপাক্ষিকতা হচ্ছে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা করার একমাত্র পথ এবং কোনো দেশই আন্তর্জাতিক নিয়মের উপরে নিজেকে রাখতে পারে না। মার্কিন কর্মকর্তাদের নেওয়া পদক্ষেপগুলো বৈশ্বিক শিল্প ও সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন করে।

বৈশ্বিক শিল্প ও সরবরাহ চেইনের স্থিতিস্থাপকতা এবং স্থিতিশীলতা রক্ষা করা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সকল জাতির সম্মিলিত স্বার্থে কাজ করে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে, শান্তি বজায় রাখা, উন্নয়নকে উৎসাহিত করা এবং সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি প্রধান দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করা উচিত। দুর্ভাগ্যবশত, কিছু মার্কিন নীতি নির্ধারক ‘শক্তির অবস্থানে’ থেকে প্রযুক্তিগত বিনিময় বাধাগ্রস্ত করতে ‘একটি ছোট উঠানে উঁচু বেড়া’ নির্মাণের নীতি অনুসরণ করে চীনের শিল্প উন্নয়নকে ‘অতিরিক্ত ক্ষমতার’ ভিত্তিহীন অভিযোগের মাধ্যমে কলঙ্কিত করছেন, এবং ‘ডিকাপলিং এবং সরবরাহ চেইন বিচ্ছিন্ন করার’ নীতি জোরপূর্বক অনুসরণ করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপগুলো বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি এবং তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন করেছে, যা তাদের ‘মুক্ত প্রতিযোগিতার’ প্রতি আনুষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতির সম্পূর্ণ বিরোধী।

চীন ধারাবাহিকভাবে এবং উন্মুক্ততার সাথে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গ্রহণ করেছে, মানবতার জন্য একটি যৌথ ভবিষ্যৎ নির্মাণের পক্ষে কথা বলেছে এবং প্রতিবেশীদের প্রতি দয়া, সততা, পারস্পরিক লাভ এবং অন্তর্ভুক্তির নীতি অনুসরণ করেছে যা বৈশ্বিক শিল্প ও সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতার জন্য অবদান রেখেছে।

এই পদ্ধতিটি নতুন মার্কিন প্রশাসনের কর্মকাণ্ডের সম্পূর্ণ বিপরীত, যা আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলাকে ব্যাহত করে। এ ধরনের দ্বিমুখী কাজ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কিংবা পারস্পরিক বিশ্বাস প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভালো নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একদিকে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক এবং বাস্তবমুখী সহযোগিতা বৃদ্ধি কথা জনসম্মুখে দাবি করে, অন্যদিকে একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যা পারস্পরিক বিশ্বাসকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করে।

চীন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রকৃতি হচ্ছে পারস্পরিক সুবিধা এবং বিজয়ী-বিজয়ী সহযোগিতা। একপক্ষ সবসময় হেরে যাবে এবং অন্যপক্ষ সবসময় লাভবান হবে এমনটা হবে না। তথ্য-উপাত্ত সম্পূর্ণভাবে প্রমাণ করে যে, শুল্কের মাধ্যমে ‘দেয়াল তৈরি করা’ বাজারের আইন পরিবর্তন করতে বা সহযোগিতার গতি থামাতে পারবে না। ২০২৪ সালে চীন-মার্কিন বাণিজ্য ৬৮৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০১৭ সালের তুলনায় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের একটি রিপোর্টে দেখা গেছে যে অর্ধের বেশি মার্কিন প্রতিষ্ঠান ২০২৫ সালে চীনে তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে চায়। সহযোগিতা হচ্ছে চীন-মার্কিন সম্পর্কের জন্য একমাত্র সঠিক পথ। যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ভুল পথে চালিয়ে যায়, চীন সবসময় যথাযথ জবাব দিতে প্রস্তুত।

আজকের পৃথিবী অস্থিরতা এবং দুর্বল অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্মুখীন। তাই উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে একতা এবং সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। চীন এবং বাংলাদেশ উভয়ই বৈশ্বিকীকরণের উপকারভোগী এবং অবদানকারী, এবং তাদের মধ্যে সহযোগিতার উপর বিস্তৃত সহমত রয়েছে। গত বছর, উভয় দেশের নেতৃত্বের দিকনির্দেশনা এবং জনগণের দৃঢ় সমর্থনে, চীন-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সংকটপূর্ণ চ্যালেঞ্জের মধ্যে অসাধারণ স্থিতিস্থাপকতা এবং প্রাণশক্তি প্রদর্শন করেছে, যা দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশ্বের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিতে আরও অধিক নির্ভরযোগ্যতা প্রদান করেছে।

চীন এবং বাংলাদেশ উভয়ের জন্যই লাভজনক সহযোগিতা এবং মুক্ত বাণিজ্যের অনুকরণীয় সমর্থক হিসেবে কাজ করতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে, চীন ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে রয়েছে। চীনা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ৬০ মিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। 

এছাড়া বাংলাদেশ আগামী মে মাস থেকে চীনে তাজা আম রপ্তানি করবে, যা বাংলাদেশের ফল শিল্পে শক্তিশালী প্রেরণা সৃষ্টি করবে, এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আরও সুষম হবে। চীন বাংলাদেশকে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা রক্ষা করতে, একপাক্ষিকতার বিরোধিতা করতে, চীন-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা ত্বরান্বিত করতে এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সহযোগিতায় বাস্তব ফলাফল প্রচারের জন্য কাজ করবে। আমি জানি অনেক বাংলাদেশী উদ্যোক্তা চীনে ইলিশ মাছের মতো পণ্য রপ্তানি করতে চায় এবং আমরা দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির কাঠামোর মধ্যে তাদের ইচ্ছা পূরণ করতে পারি। চীন বাংলাদেশের উচ্চমানের পণ্যকে স্বাগত জানায় এবং চীনের দরজা আরো বিস্তৃত থেকে বিস্তৃততর হবে।

চীন এবং বাংলাদেশ শিল্প এবং সরবরাহ চেইনে বিনিয়োগ উত্সাহিত করতে এবং সহযোগিতা ত্বরান্বিত করতে অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারে। চীনের সুবিধাগুলি যেমন অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি, যোগাযোগ, টেক্সটাইল, পোশাক এবং সবুজ অর্থনীতি বাংলাদেশে উন্নয়ন কৌশল, শিল্প কাঠামো এবং জনগণের চাহিদার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেলে, যা চীনকে অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় এক অমূল্য অংশীদার করে তোলে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী এবং এখানে তাদের সম্পৃক্ততা গভীর করতে আগ্রহী। চীনা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মধ্যে, বাংলাদেশে চীনের বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগ (FDI) ৪.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা চীনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের
উৎস।

গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে অন্তত ১৪টি চীনা প্রতিষ্ঠান টেক্সটাইল ও পোশাক, সুটকেস, জুতা, পরচুলাসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশে ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। চীন এই সময়কালে বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিণত হয়েছে। এপ্রিল মাসে, বাংলাদেশ ২০২৫ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করবে। আমরা আরো চীনা প্রতিষ্ঠানকে এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করব এবং আরও ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের সমর্থন করব। চীন এবং বাংলাদেশ একে অপরের রাজনৈতিক পারস্পরিক বিশ্বাস এবং পারস্পরিক লাভের ভিত্তিতে প্রকল্প সহযোগিতার একটি সুন্দর উদাহরণ স্থাপন করতে পারে। রাজনৈতিক পারস্পরিক বিশ্বাস হলো সব প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের জন্য মূল ভিত্তি।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে চীনের সহযোগিতায় চলমান এবং নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলিকে চালু রাখার বিষয়ে একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছে যে চীনের সহযোগিতায় চলমান এবং নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি অপরিবর্তিত থাকবে এবং ইতিমধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলি কার্যকর থাকবে। এটি স্পষ্টতই দুই দেশের মধ্যে গভীর রাজনৈতিক পারস্পরিক আস্থার প্রতিফলন ঘটায়, সেইসাথে আমাদের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের প্রতি বিস্তৃত সামাজিক ও জনসাধারণের সমর্থনও প্রতিফলিত করে। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে আন্তঃসরকারি সহযোগিতা প্রকল্পগুলি সুষ্ঠুভাবে এবং কোনও বাধা ছাড়াই ত্বরান্বিত হচ্ছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এবং ডাবল পাইপ লাইনসহ সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং স্থাপন প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটের জন্য চীন-সহায়তা প্রকল্প এবং ঢাকা উত্তর শহরে ডব্লিউটিই পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্পও সফলভাবে শুরু হয়েছে। চীনা অর্থনৈতিক ও শিল্প অঞ্চল প্রকল্প শুরু হতে চলেছে। আগামীতে চীন বাংলাদেশের উন্নয়নকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের মাধ্যমে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আরও বেশি যুগান্তকারী প্রকল্প এবং ‘ছোট এবং সুন্দর’ জীবিকা প্রকল্প বাংলাদেশে নিয়ে আসবে। চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য অংশীদার থাকবে।

ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে যে, দেয়াল নির্মাণ কেবল একজনকে বিচ্ছিন্ন করে তোলে, অন্যদিকে উন্মুক্ততা ভাগাভাগি করে সমৃদ্ধি বর্ধন করবে। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের বছরটি উদযাপন করে, চীন বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক সমর্থন বজায় রাখবে, একে অপরকে সমানভাবে বিবেচনা করবে এবং লাভজনক সহযোগিতা চালিয়ে যাবে। 

লেখক: বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বিপ্লব থেকে রাজনৈতিক দল

    সামান্তা শারমিন
শেয়ার
বিপ্লব থেকে রাজনৈতিক দল
সামান্তা শারমিন

যে নতুন দেশ আমরা পেয়েছি সেটাকে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য তৈরি করে যেতে চাই। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের নামটা যেনো থাকে জ্বলজ্বলে প্রদীপের মতো সেটাই আমার, আমাদের একমাত্র চাওয়া...

ছাত্রজীবনে আন্দোলন-সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি। অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা এসেছে বারবার। পিছপা হইনি।

এরইমধ্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা ছাত্র-গণপ্রতিরোধের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা পালাতে বাধ্য হন। এতে নতুন এক বাংলাদেশ গঠনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সেটাকে পথ দেখাতে সম্পৃক্ত হয়েছি নতুন দলে। দেশ গঠনে আমাদের পথচলা মাত্র শুরু হয়েছে।
তাই জানি সামনের পথও মসৃন নয়। এসব মাথায় রেখেই এগিয়ে যেতে চাই। যে নতুন দেশ আমরা পেয়েছি সেটাকে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য তৈরি করে যেতে চাই। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের নামটা যেনো থাকে জ্বলজ্বলে প্রদীপের মতো সেটাই আমার, আমাদের একমাত্র চাওয়া।

আমার আজকের পথচলার স্পৃহা ছাত্রজীবন থেকেই। জন্ম ও বেড়ে উঠা ঢাকায় হওয়ায় অনেক আন্দোলনে নিজেকে সরাসরি সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ছাত্ররাজনীতির পথচলা শুরু সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কর্মী হিসেবে।

পরবর্তীতে দলীয় রাজনীতি থেকে বের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য যৌথ আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা এবং শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায়ে সমন্বিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার চেষ্টা করি। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ও ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানার দুটির অন্যতম সংগঠক হিসেবে কাজ করি। ২০১১-২০১৮ সাল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের প্রতিটি আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণসহ নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করি। এ সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সংঘটিত প্রতিটি সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিচারের দাবিতে লড়াই করেছি। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর দিয়ে মেট্রোরেল নির্মাণের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, তনু হত্যা প্রতিবাদে ঢাবির প্রতিবাদ কর্মসূচি এবং প্রাণ-প্রকৃতি বিনাশী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচিগুলোর প্রধানতম সংগঠক হিসেবে কাজ করি। ২০১৪-২০১৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দোর্দণ্ড প্রতাপের দিনগুলোতে আওয়ামী-ভারতীয় প্রকৃতিবিনাশী আগ্রাসী উন্নয়ননীতির বিরুদ্ধে অব্যাহত আন্দোলন চালিয়ে গেছি। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ২০১৬ সালে চারুকলা অনুষদে তৎকালীন ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের আগমনের প্রতিবাদে রাষ্ট্রদূতের গাড়িবহরের সামনে বিক্ষোভ মিছিল। প্রাণ প্রকৃতি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক অধিকার আদায়ের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মঞ্চ ‘সর্বপ্রাণ সাংস্কৃতিক শক্তির’ অন্যতম সংগঠক ছিলাম। হল প্রশাসনের অবহেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর মোল্লার মৃত্যু, ছাত্রলীগ কর্তৃক এহসান রফিকের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে মুখ্য অবদান রাখার চেষ্টা করি। ২০১৮ সালে ঢাবিতে ছাত্রলীগের যৌন নিপীড়নের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে ছাত্রলীগ কর্তৃক নির্মম আক্রমণের শিকার হই। ডাকসু নির্বাচনের দাবিতেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যতম একজন সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করি। ২০১৭ সালে ঢাবির উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দিন ডাকসু প্রতিনিধিবিহীন উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে সিন্ডিকেট ভবনের গেইটে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনকালে আমিসহ আরও অনেক শিক্ষার্থী আওয়ামীপন্থি শিক্ষার্থীদের হামলার শিকার হই। আওয়ামী লীগের গুম-খুন ও সন্ত্রাসের ফ্যাসিবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে আপোসহীন মনোভাবের কারণে ২০১৪ থেকে ২০১৮- এ সময়কালে ঢাবির গুরুত্বপূর্ণ ছাত্র নেতৃবৃন্দের একজনে পরিণত হই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন-পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালের দিকে কিছুকাল চাকরি করা হয়।। ওই সময়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ কিছুটা কমলেও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা আন্দোলন এবং আবরার ফাহাদ হত্যা প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনগুলোতে নানাভাবে সহযোগিতা করি। এ সময় রাষ্ট্রসংস্কারের তাত্ত্বিক কাঠামো নির্মাণে নিবেদিত চিন্তাসংগঠন ‘রাষ্ট্রচিন্তা’র সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালীনও এদেশের আপামর জনতার সঙ্গে মাঠে ছিলাম। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অনুপ্রেরণায় গঠিত ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করি। পরে নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেছি।

আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সবকিছুর ঊর্ধ্বে কোনো কিছুকে স্থান দেওয়া। এবারের আন্দোলনে আমরা সেটা করতে পেরেছি। বাংলাদেশকে আমরা বার বার বলছি এটা একটা আধুনিক রাষ্ট্র। কিন্তু এটা কোনোভাবেই রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠেছে কি না? এ জায়গাটা যদি আমরা ফোকাস করি তাহলে দেখব আমাদের যে নাগরিক মর্যাদা সেটা নেই এবং কখনো হওয়ারও ছিল না...

বলা যায়, ছাত্রজীবনের পুরোটাই একটা বিপ্লবী জীবনের মধ্য দিয়ে পার করেছি। এখন একটা রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকায় সুযোগ এসেছে এতদিনের আন্দোলনের ফসল হিসেবে দেশকে গড়ার। গতানুগতিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার কাঠামো ভেঙে সুস্থ রাজনীতির পরিবেশ তৈরি করার। আমি মনে করি, ১৫ বছরের শাসনের জগদ্দল পাথর থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি। তাই এখনই সময় দেশকে বদলানোর। এখনই সময় তরুণদের স্বপ্ন দেখানোর। এখনই সময় রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের মর্যাদাকে সমুন্নত করার।

আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সবকিছুর ঊর্ধ্বে কোনো কিছুকে স্থান দেওয়া। এবারের আন্দোলনে আমরা সেটা করতে পেরেছি। বাংলাদেশকে আমরা বার বার বলছি এটা একটা আধুনিক রাষ্ট্র। কিন্তু এটা কোনোভাবেই রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠেছে কি না? এ জায়গাটা যদি আমরা ফোকাস করি তাহলে দেখব আমাদের যে নাগরিক মর্যাদা সেটা নেই এবং কখনো হওয়ারও ছিল না...অনেক ধরনের জুলুমের মধ্য দিয়ে আমরা এসেছি। জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এসেছি। আমাদের অনেকেরই দীর্ঘ রাজনৈতিক লড়াই আছে। আমাদের অতীত দেখলে দেখা যাবে পুরোটাই ছিল অ্যান্টি ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে লড়াই করে উঠে আসা। প্রথমত, এটাকে একটা পরিক্রমা হিসেবে দেখছি। আমার রাজনৈতিক যে সংগ্রাম সেখানে এটাকে একটা দায়িত্ব হিসেবে দেখছি। স্বাভাবিকভাইে একটা পদের সঙ্গে জড়িত কিছু দায়িত্ব থাকে। রাষ্ট্রের দায়িত্বকে এখানে ক্ষমতা হিসেবে দেখা হয়। এই যে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি এটাকে পরিবর্তনের চেষ্টায় আছি। রাষ্ট্রের যে ক্ষমতা সেটাকে দায়িত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছি। তাহলে আমাদের যে পোস্ট বা পদবি আছে সেটাকেও ক্ষমতা হিসেবে না দেখে দায়িত্ব হিসেবে দেখতে চাচ্ছি। আমাদের এখন যে রাজনৈতিক কাঠামো আছে সেটাকে বলা হয় যে একদলকেন্দ্রিক। কিন্তু মোটা দাগে সেটা আসলে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক। এ কাঠামোটা পুরোপুরি জনবিরোধী। জনগণের পক্ষ থেকে এ নিয়ে আমাদের ওপর চাপ রয়েছে। এ কাঠামো আমূল পরিবর্তন করতে হবে। ৩৬ জুলাই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের একটা দায় আমাদের ওপর রয়েছে। সেই দায়টাও বোধ করি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে বড় ধরনের মেরুকরণ করা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটের বাইরে গিয়ে নাগরিক পার্টি নতুন একটি রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে বিবেচিত। আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সবকিছুর ঊর্ধ্বে কোনো কিছুকে স্থান দেওয়া। এবারের আন্দোলনে আমরা সেটা করতে পেরেছি। বাংলাদেশকে আমরা বার বার বলছি এটা একটা আধুনিক রাষ্ট্র। কিন্তু এটা কোনোভাবেই রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠেছে কি না? এ জায়গাটা যদি আমরা ফোকাস করি তাহলে দেখব আমাদের যে নাগরিক মর্যাদা সেটা নেই এবং কখনো হওয়ারও ছিল না। বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কোনো ধরনের পদক্ষেপ, গ্রহণযোগ্য কোনো কর্মসূচি, পরামর্শ কোনো দলই ওই অর্থে নেয়নি। প্রতিবেশী ভারতের সমস্ত রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম ওয়ার্কেবল। তারা পুরো বিশ্বের মানচিত্রে নিজেদের স্টেট হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের যে ভোটিং পাওয়ার অর্থাৎ কোন ইস্যুতে ভারত কী ভূমিকা নিচ্ছে সেটা বড় করে দেখা হয়। এখানে ভারত যে বড় দেশ সে হিসেবে নয় এরকম ছোট অনেক দেশ রয়েছে যাদের ভোটিং পাওয়ার থাকে।

আমাদের চেষ্টা থাকবে  এবার থেকেই যে লক্ষণীয় পরিবর্তনগুলো আনা দরকার সেটা এবারের নির্বাচন থেকেই হবে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ তিনটা অবৈধ নির্বাচন দেখেছে, সেই ট্রমা এখনো যায়নি। আরেকটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন এদেশের মানুষ সহ্য করতে পারবে না...

বাংলাদেশ এত স্ট্রাগলিং একটা দেশ, বিশেষ করে সাউথ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ হিসেবে দেখতে হবে। কিন্তু পুরো বিশ্বে আমাদের দেশের তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। রাজনৈতিকভাবে ও জিও পলিটিক্যালির কোনো গুরুত্ব নেই। পুরো রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তন করতে হলে ঐক্যবদ্ধতা খুবই জরুরি। আমার জায়গা থেকে এটা অবশ্যই একটা গুরু দায়িত্ব বলে মনে করি। পড়ন্ত প্রায় দুর্বল প্রকৃতির এ রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্য দিয়ে ছাত্ররা নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। এ অদম্য স্পিরিট শুধু জুলাই অভ্যুত্থান না, তার আগেও দেখা গেছে। বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় তাদের মূল্যায়নের কোনো সুযোগ নেয়নি। এ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমাদের সেই সুযোগটা এসেছে। তাদের নিয়ে পরিকল্পনা করা, তাদের রাজনৈতিক দিশা দেখানো, তারা যেন রাজনীতিতে আসে, তাদের মতামতগুলো যেন আমরা পাই সেটা নিশ্চিত করা আমাদের টপমোস্ট প্রায়োরিটি। দলগত হিসেবে তাদের গুরুত্ব আমাদের কাছে আরও বেশি। তরুণদের যদি মূল্যায়ন করতে না পারি তাহলে আমরা ব্যর্থ হব। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথম। কঠোর মতাদর্শ মেনে চলার পরিবর্তে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের অংশীদার জনগণকে একত্রিত করা আমাদের লক্ষ্য। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রবিন্দুতে তা আছে, এমনকি তাদের ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ থাকলেও। নতুন দল হিসেবে চাই এখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র থাকুক। তাহলে পার্লামেন্টে একচ্ছত্র আধিপত্য থাকবে না। দলগুলোর ভিতরে দক্ষতার বিষয়টি গুরুত্ব পায় না, রাজনৈতিক বিষয়টি গুরুত্ব পায়। আমরা এ জায়গাগুলোতে পরিবর্তনের কথা বলছি। আমাদের এ কথার প্রতিফলন সংসদে গিয়েও পড়বে যদি মানুষ আমাদের বিশ্বাস করে দেখে। পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর বিদ্যমান অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। এটা পরিবর্তন করে তারা মানুষের কাতারে আসুক। প্রান্তিক এলাকায় আমাদের দলটাকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করতে হবে। এ কাজের প্রতি বেশি মনোযোগী হব। বাংলাদেশের মানুষের কাছে যে অপশন এসেছে বা সম্ভাবনা এসেছে সেটা যেন সবার কাছে পৌঁছে। আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলছি। সংবিধান পরিবর্তন করা প্রয়োজন সেটা আমাদের সবাইকে একনলেজ করতে হবে। যারা এটা করছেন না, তারা অভ্যুত্থানকে একরকম অস্বীকার করছেন বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়। যদি এবার গণপরিষদ নির্বাচন না হয় তাহলে আমরা এসে সেটা করব। আমাদের চেষ্টা থাকবে এবার থেকেই যে লক্ষণীয় পরিবর্তনগুলো আনা দরকার সেটা এবারের নির্বাচন থেকেই হবে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ তিনটা অবৈধ নির্বাচন দেখেছে, সেই ট্রমা এখনো যায়নি। আরেকটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন এদেশের মানুষ সহ্য করতে পারবে না। সামনের যে নির্বাচন হবে সেটা এবসুলেট ফেয়ার হবে সেটা বার বার বলছি। সামনের নির্বাচনের মধ্য দিয়েই আমাদের রাজনীতির সংস্কৃতি নতুন ধারায় এগোবে।  

লেখক : সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

এক অজানা ভয় মিডিয়ার গতি রোধ করছে

    মতিউর রহমান চৌধুরী
শেয়ার
এক অজানা ভয় মিডিয়ার গতি রোধ করছে

সাংবাদিকদের বিবেকের ওপর চাপ না বাড়লে কোনো দিনই পরিস্থিতি পাল্টাবে না। মানুষ ভুল করে, ইতিহাস নয় কিন্তু। আমাদের রাজনীতিবিদরা যেভাবে সবকিছু ভুলে যান, ঠিক তেমনিভাবে আমরা সাংবাদিকরাও...

অস্থিরতা চারদিকে। রাজনীতি, অর্থনীতি থেকে শুরু করে সর্বত্র একই অবস্থা।

আমরা জানি, যেখানে ন্যায়বিচার, সেখানেই জয়। কিন্তু, দেশে ন্যায়বিচার প্রায় অনুপস্থিত। আগে ছিল টেলিফোন জাস্টিস। এখন কাবু করছে মব জাস্টিস।
মিডিয়া এর বাইরে নয়। আমরা প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত এক ধরনের নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সেলফ সেন্সরশিপ ঘিরে ধরেছে। আটকে দিচ্ছে মিডিয়ার স্বাভাবিক গতি।
তাই মিডিয়া নীরব, মাঝে-মধ্যে সরব হওয়ার চেষ্টা। কখনো কখনো উদ্দেশ্য খুঁজে গতি রোধ করা হচ্ছে। সেলফ সেন্সরশিপ এক ধরনের কালচারে পরিণত হয়েছে। এখন কেউ হয়তো এসে বলে না, কিংবা ফোন করে না- কোন খবর যাবে, কোনটা যাবে না। আমরা নিজ থেকেই সিদ্ধান্ত নিই, কাউকে কিছু বলি না।
খোলাসা করে বলা কঠিন। লেখা তো আরও ঝুঁকিপূর্ণ। অদৃশ্য শক্তি নয়, প্রকাশ্যেই এসব ঘটছে। কেউ প্রতিবাদ করে না। নীরবে মেনে নেয়। প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ায় না। বলে না- আমার প্রতি অবিচার হয়েছে। সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠনগুলো নিশ্চুপ। একদা এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ছিল এটাই মানুষ ভুলে গেছে। বিশেষ করে মিডিয়াকর্মীরা। অনেক সাংবাদিক চাকরি হারিয়ে নিঃস্ব। কারও কাছে অভিযোগ জানানোর সুযোগও নেই। আন্তর্জাতিক দু-একটা প্রতিষ্ঠান মাঝে-মধ্যে বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এটাইবা কম কীসের! আগে প্রাপ্তির কাছে আমরা নিজেদের সঁপে দিয়েছিলাম। নেমেছিলাম এক ধরনের প্রতিযোগিতায়। এখন এক অজানা ভয় পেছনে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। টকশোতেও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম ইতিহাস নিয়ে নতুন এক আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। দলীয় কর্মীরা যেভাবে দৌড়াচ্ছেন, ঠিক সেভাবে বিপুলসংখ্যক মিডিয়াকর্মীও চলে গেছেন আত্মগোপনে। অনেকে আবার জেলখানায়। কেউ কেউ বিদেশে। এর মধ্যে কারও কারও সাংবাদিকদের বিবেকের ওপর চাপ না বাড়লে কোনো দিনই পরিস্থিতি পাল্টাবে নাব্যাংক হিসাব চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এতে মানুষ বিরক্ত। মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সাংবাদিকদের ওপর থেকে। একদিকে বিভাজন, অন্যদিকে অজানা ভয় কাবু করে ফেলেছে গোটা মিডিয়াকে। প্রিন্ট বলুন বা ইলেকট্রনিক বলুন, সবখানেই একই অবস্থা। এ পরিস্থিতি হঠাৎ করে হয়নি। অনেক দিন থেকেই আমরা এর সঙ্গে বসবাস করছি। স্বাধীনতার পরপর আমরা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম। সামরিক জমানায় ছিলাম নির্বাক। এরপর এলো নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র। সেখানেও কমবেশি নিয়ন্ত্রণ। হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনে আমরা মিডিয়ার পরিচয় ভুলে গিয়েছিলাম। জনগণকে সাক্ষী রেখেই আমরা নিজেদের আত্মপরিচয় বিলুপ্ত করেছিলাম। এতে দেশবাসী লজ্জা পেলেও আমরা পাইনি। এখন এজন্য আমাদের কড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। তাদের কারণেই মিডিয়া আজ অনেকটা অস্তিত্ব সংকটে। এখন সত্য খবরের পেছনে কেউ ছোটে না। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিদায় নিতে চলেছে। অনেকেই এর পেছনে উদ্দেশ্য খোঁজেন। লাগিয়ে দেন ‘ট্যাগ’। এ কারণে খবরের পেছনের খবর খুঁজে বের করতে কেউ সাহসী হন না। মিডিয়া হাউসগুলো সময়ের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছে, অনেকটা অযৌক্তিকভাবে। ডিজিটাল, সাইবারসহ নানা আইনি-বেআইনি বেড়াজাল মিডিয়ার গতি রোধ করছে। এ পরিস্থিতির উন্নতি কি সম্ভব? কেউ কেউ বলেন, অবশ্যই সম্ভব। রাজনীতিবিদদের শুভ বুদ্ধির উদয় হলে রাতারাতি পরিস্থিতি পাল্টাবে। তবে কেন যেন মনে হয়, সাংবাদিকদের বিবেকের ওপর চাপ না বাড়লে কোনোদিনই পরিস্থিতি পাল্টাবে না। মানুষ ভুল করে, ইতিহাস নয় কিন্তু। আমাদের রাজনীতিবিদরা যেভাবে সবকিছু ভুলে যান, ঠিক তেমনিভাবে আমরা সাংবাদিকরাও। ৫৩ বছরের সাংবাদিকতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এমনটাই দেখা যায়। স্বাধীন দেশের সাংবাদিকতা এখানে বরাবরই অনুপস্থিত। এজন্য আমি রাজনীতিবিদদের এককভাবে দায়ী করি না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরাই নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছি। অন্যের কণ্ঠ রোধ করার খবরে হাততালি দিয়েছি। বিশেষ বিশেষ জায়গায় গিয়ে বলেছি, যা করেছেন ঠিক করেছেন।

লেখক : প্রধান সম্পাদক, মানবজমিন

মন্তব্য

প্রত্যাশা সমষ্টিগত মানুষের স্বাধীনতা ও মুক্তি

    সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
শেয়ার
প্রত্যাশা সমষ্টিগত মানুষের স্বাধীনতা ও মুক্তি

আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের জন্য জনগণের কাছে গেলেও তারা জনগণের ওপর নির্ভর করে না। ক্ষমতা, অস্ত্র, কালো টাকা ও সন্ত্রাসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে...

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বেশ ঘটনাবহুল। ছাত্রাবস্থায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দেখেছি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব দেখেছি, স্বাধীনতা আন্দোলন দেখেছি। তার পর পাকিস্তান হলো, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হলো।

যুক্তফ্রন্টের বিজয় এবং সামরিক শাসন দেখলাম। পরে শুরু হলো মানুষের বিক্ষোভ। ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান হলো, নির্বাচন হলো। ’৭১-এর যুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলো।
রাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে সমাজে পরিবর্তন আনয়ন সম্ভব হলো না। কিন্তু মানুষের জন্য সামাজিক পরিবর্তন ছিল আবশ্যক। অথচ সামাজিক পরিবর্তনের বিরুদ্ধে থেকেছে ব্রিটিশ আমলের রাষ্ট্র, পাকিস্তান রাষ্ট্র। এমনকি একাত্তরের স্বাধীনতার পরও যে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলো সেই রাষ্ট্রও সামাজিক পরিবর্তন তথা সমাজ-বিপ্লবের পক্ষে কাজ করল না।
এ রাষ্ট্র ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের মতোই একটি আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হয়ে রইল। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক আদর্শে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র এবং ব্যবস্থাপনায় আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের জন্য জনগণের কাছে গেলেও তারা জনগণের ওপর নির্ভর করে না। ক্ষমতা, অস্ত্র, কালো টাকা ও সন্ত্রাসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ক্ষমতায় থাকার জন্য তারা সাম্রাজ্যবাদের ওপর নির্ভর করে।
ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণে সরকারি ও বিরোধী দল সাম্রাজ্যবাদের কৃপালাভে সচেষ্ট। এসব বুর্জোয়া দলের বিপরীতে কোনো ভালো বিকল্প না পেয়ে জনগণ বুর্জোয়া দলকে পর্যায়ক্রমে ভোট দিয়ে এসেছে। কিন্তু জনগণের ভাগ্য তথৈবচ। বর্তমানে সেটাও কার্যকর নয়। জনমতের প্রতি উপেক্ষা করেই এই দুই দল সাম্প্রদায়িক দলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, এতে স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। অতীতে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং সাম্প্রতিক ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আমাদের দেশে সর্বজনীন হয়নি। বামপন্থি ও মৌলবাদীরা গণহত্যা ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তবু দৃষ্টিগ্রাহ্য প্রতিবাদ করেছে; বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ দেখা যায়নি। এতে বোঝা যায়, তারা কত বেশি সাম্রাজ্যবাদনির্ভর। সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে আপস ও তোষামোদ করে ক্ষমতায় থাকে এ দেশের শাসক দল। স্বাধীন এ রাষ্ট্রের বিকেন্দ্রীকরণ দরকার কেবল নয়, ছিল অতি আবশ্যিক। ক্ষমতা শুধু সচিবালয়ে কেন্দ্রীভূত না রেখে স্থানীয়ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত ছিল। নৈতিকতার উপাদানকে কাজে লাগাতে হবে, শক্তিশালী করতে হবে। এমন রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে যেখানে সাম্রাজ্যবাদের প্রতি আপস থাকবে না, সন্ত্রাসের লালন হবে না এবং সংখ্যালঘুর ওপর নিপীড়ন ও নিরাপত্তাহীনতা থাকবে না।

প্রয়োজন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন একটি বিকল্প ধারা। স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিক্রান্ত। সেটি পূরণ হলো না। অধরাই রয়ে গেল। যার সামনে লক্ষ্য হিসেবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা থাকবে। যে গণতন্ত্রে সমাজতন্ত্রের উপাদান আছে, যে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তি হলো ইহজাগতিকতা এবং যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদমুক্ত অঙ্গীকার আছে; সে ধরনের অঙ্গীকার নিয়ে রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের জন্য গণভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠন করা প্রয়োজন। আমাদের দুর্ভাগ্য, বাম দলগুলো সেই সুযোগ কাজে না লাগিয়ে দশকের পর দশক ব্যর্থ হয়েছে। বাম দলগুলো বড় দলের জোটভুক্ত হয়ে কিছুই করতে পারবে না। এসব দল ব্যর্থ হলেও তাদের প্রয়োজন আছে গণচেতনার সংগ্রামের জন্য। তবে তাদের অবশ্যই ক্ষমতার লেজুড়বৃত্তির মোহ ত্যাগ করতে হবে। তাদের প্রধান কাজই হবে জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছিল প্রধান দলগুলোর ব্যর্থতা ও দুর্বলতার কারণে। যারা নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে না-তারা দেশ চালাবে কী করে? রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আদর্শবাদিতা নিম্নস্তরে নেমে গেছে, স্বার্থবাদিতা প্রবল হয়েছে। ছাত্ররাজনীতিকে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের অভিমুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আগে ছাত্ররা রাজনীতি করত জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। এখন করে ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক মুনাফা ও লুণ্ঠনের অভিপ্রায়ে।

নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছে তিন জোটের রূপরেখাকে উপেক্ষা করে। একের পর এক সরকার ক্ষমতায় এসেছে কিন্তু এতে জনগণের কোনো মৌলিক পরিবর্তন ঘটেনি। বিপরীতে দলীয় রাজনীতির অনুকম্পায় অবাধ লুণ্ঠন-নৈরাজ্য চলে।

প্রত্যাশা সমষ্টিগত মানুষের স্বাধীনতা ও মুক্তিমানুষের জীবন-জীবিকার কোনো নিশ্চয়তা নেই। খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন এবং নিপীড়ন প্রবল হয়েছে। দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বেড়েছে, বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিরোধী দল দেশে থাকবে বলে মনে হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। দেশ দুর্নীতির শীর্ষে অবস্থান করছে, জনগণের গচ্ছিত টাকা ব্যাংক থেকে লোপাট হয়ে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার বেসুমার পাচারের ফলে রিজার্ভ ঘাটতিতে দেশের অর্থনীতি নাকাল হয়ে পড়েছে। ব্যাংকগুলো এলসি বন্ধ রেখেছে। ফলে আমদানিনির্ভর দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য অকল্পনীয় বৃদ্ধি পেয়ে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতিতে দেশ অতীতের সব আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি ম্লান হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের সমাজ মনুষ্য বসবাসের অযোগ্য, তা নরকে পরিণত হয়। এ দেশের বুর্জোয়া তথাকথিত জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল দেশবিরোধী, গণবিরোধী। রাষ্ট্রের চরিত্র বদলের জন্য তারা কিছুই করেনি। মৌলবাদের অন্ধকার থেকে, সাম্প্রদায়িকতার ছোবল থেকে, লুটেরা পুঁজির দুঃশাসন থেকে মুক্তির জন্য আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে প্রকৃত দেশপ্রেমিকদের। ক্ষমতা লাভে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও ক্ষমতাসীন দলের সর্বক্ষেত্রে লুণ্ঠনের সুযোগ ঘটে, আর ক্ষতি হয় দুর্বল শ্রেণির। ক্ষমতাসীনরা একচেটিয়া লুণ্ঠন করে। গণমাধ্যমকেও একচেটিয়াভাবে ভোগ করে চলে। ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতা ব্যবহার করে দখল, লুণ্ঠন ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য। দেশি-বিদেশি সুযোগ কুক্ষিগত করে তারা জনগণকে বঞ্চিত রাখে।

বাংলাদেশ জাতি-রাষ্ট্র নয়, মুসলিম রাষ্ট্রও নয়। এখানে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তা রয়েছে। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের জাতীয়তাবাদী বলে বড়াই করে। অথচ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার কোনো স্বীকৃতি দিতে চায় না। সচেতন আদর্শবাদী মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে সব জাতিসত্তার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে। ঘরে-বাইরে নৃশংসতা ও ভোগবাদিতা প্রবল হচ্ছে। সমাজ রূপান্তরের জন্য সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী স্থানীয় ও জাতীয় আন্দোলন গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

রাষ্ট্র ও রাজনীতির মাধ্যমেই সমাজ বদলাতে হবে। রাজনীতিকদের দুর্বলতা ও ব্যর্থতার কারণে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসে, সামরিক আমলারা ক্ষমতা গ্রহণ করে। অথচ আর্মি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, আমলারাও কোনো রাজনৈতিক দল নয়। জাতীয় উন্নয়নে রাষ্ট্রকেই উপায় বের করতে হবে। জনগুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও স্থানীয় ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করা দরকার অথচ বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলগুলো তা করে না। স্থানীয় পর্যায়ে সন্ত্রাস দমন, দুর্বল ও সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা বৃদ্ধি, যুব উন্নয়নে পাঠাগার স্থাপন, প্রশিক্ষণ দান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, দুর্যোগে-বিপদে সাহায্য-সহযোগিতা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নেই, শ্রমিকের কর্মসংস্থান নেই বরং চালু কল-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে নাকাল অসহায় মানুষ। মানুষের জীবিকার নিশ্চয়তা নেই। খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, নিপীড়ন ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংক থেকে জনগণের অর্থ লোপাট হলেও কারও যেন কিছু করার নেই। আবারও গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা চলছে। মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। এসব বিষয়ে এবং দুর্নীতিসহ প্রভৃতি জাতীয় পর্যায়ের প্রধান ইস্যু এখন। এসব জাতীয় ইস্যু নিয়ে আন্দোলনের বিকল্প কিছু নেই।

আন্দোলনের মাধ্যমে শক্তি বৃদ্ধি করা যায়। সব পর্যায়ে আন্দোলন প্রয়োজন। গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সংস্কৃতিকর্মী ও ছাত্ররা কাজ করবেন। এ ব্যাপারে আবৃত্তি, নাটক, গান, পাঠচক্র, আলোচনাসভা করা প্রয়োজন। নেতৃত্ব উপর থেকে আসবে না, স্থানীয় পর্যায় থেকে তা গঠন করতে হবে। ছাত্র ও সংস্কৃতি কর্মীকে আমরা গুরুত্ব দেব। শ্রেণিচ্যুতরা গরিবের পাশে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু আদর্শচ্যুতরা তা পারবে না। স্থানীয়, জাতীয় পর্যায়ে পেশাগতদের আন্দোলনে দরকার। স্থানীয় সরকার গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু করা দরকার স্থানীয় সরকারকে। সিভিল সোসাইটিকে আমি তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। তারা নিজেদের অরাজনৈতিক বলে ঘোষণা দেয়, কিন্তু কাজটা করে রাজনৈতিক। সিভিল সোসাইটি নতুন ধারণা, এটি আগে ছিল না। তারা দারিদ্র্যবিমোচনের কথা বলে; অথচ রাষ্ট্রের দায়িত্ব দারিদ্র্যবিমোচন করা, শিক্ষা বিস্তার করা। শিক্ষা দিয়ে কী হবে যদি শিক্ষিতদের কর্মসংস্থান করা না যায়? এনজিও বিস্তৃত হচ্ছে সরকারের ব্যর্থতা ও দুর্বলতার কারণে। দাতারা সরকারের পাশাপাশি এনজিওদের দিয়ে কাজ করায়। সরকারের কাছ থেকে ভালো কাজ না পেয়ে দাতারা এনজিওদের টাকা দেয়, নানামুখী তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়। সরকারের সমান্তরাল এনজিওর প্রতিনিধিদের বিদেশ ভ্রমণ করানো, তাদের প্রশংসা করা, পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের মতো এনজিওর এত তৎপরতা নেই। সেখানে আছে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা। এনজিওর কর্মকর্তাদের জীবনের সঙ্গে গরিবদের জীবনের কেন মিল নেই। সরকারি আমলার সমান্তরালে তাই এনজিও প্রতিনিধিদের দাঁড় করানো হয়েছে। সিভিল সোসাইটির লোকেরা এনজিওর প্রতিনিধি, তারা রাজনীতিক নয়।

জাতীয় উন্নয়নে রাষ্ট্রকেই উপায় বের করতে হবে। জনগুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও স্থানীয় ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করা দরকার অথচ বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলগুলো তা করে না। স্থানীয় পর্যায়ে সন্ত্রাস দমন, দুর্বল ও সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা বৃদ্ধি, যুব উন্নয়নে পাঠাগার স্থাপন, প্রশিক্ষণ দান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা...

এতদিন চালু ছিল আধুনিকতা মানে পাশ্চাত্যকরণ। আধুনিকতা মানেই আমেরিকান, ইউরোপীয় ভাবধারায় চালিত হওয়া। এ ধারণায় অতি দ্রুত পরিবর্তন ঘটেছে, মোহ ভেঙে গেছে। এখন আধুনিকতা বলতে আমেরিকান আধুনিকতাকে বোঝায় না। কারণ, আমেরিকান আধুনিকতার মধ্যে যে একটা বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা আছে সেটি লক্ষণীয়। আধুনিকতার প্রয়োজনে এখন দরকার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা, মাতৃভাষার চর্চা, নিজস্ব সংস্কৃতিকে বিকশিত করা। আর একটি দার্শনিক মতবাদ হলো উত্তরাধুনিকতাবাদ। এর মোহ এ দেশের তরুণ সমাজ কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। উত্তরাধুনিকতার প্রবণতা হলো খণ্ড-বিখণ্ডতা, বিচ্ছিন্নতা। এটি পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান, নারী-পুরুষ, ট্রেড ইউনিয়ন প্রভৃতির মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিচ্ছিন্নতার ধারণা ও তৎপরতাকে উসকে দিয়েছে। উত্তরাধুনিকতাবাদ বিশ্বায়ন ও সাম্রাজ্যবাদের দর্শন। বিশ্বায়ন মানেই আধিপত্য; সে আন্তর্জাতিকবাদের বিরোধী। আন্তর্জাতিকতাবাদে বহু জাতি ও বহু ভাষার অস্তিত্ব আছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নানা ভাষার অনুমোদন আছে। আমেরিকার নেতৃত্বে যে বিশ্বায়ন সৃষ্টি হয়েছে তার আধিপত্যবাদী হাতিয়ার হচ্ছে ইংরেজি ভাষা। সব রকমের আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এ ভাষা ব্যবহƒত হচ্ছে। কিন্তু ভাষার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের দাঁড়ানোর জায়গা হচ্ছে সংস্কৃতি। সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে মাতৃভাষার গুরুত্ব বেড়েছে। আমরা গণতান্ত্রিক বিশ্ব চাই; কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী, পুঁজিবাদী ও আধিপত্যবাদী বিশ্ব চাই না। আমরা এমন গণতান্ত্রিক বিশ্ব চাই, যেখানে সমঅধিকার ও সহমর্মিতা হবে সম্পর্কের ভিত্তি। রাষ্ট্রের অধীনে নাগরিকদের অধিকার সংহত থাকবে।

সাম্রাজ্যবাদ আকাশে থাকে না। তাদের প্রতিনিধিরাই দেশ শাসন করে। সাম্রাজ্যবাদ আধিপত্য বিস্তার করছে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির প্রভু হয়ে। সাম্রাজ্যবাদ তথাকথিত বিশ্বায়নের রূপ নিয়ে সব সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য বিলুপ্ত করে দিয়ে পদানত করতে চায় সারা বিশ্বকে। পৃথিবী এখন সাম্রাজ্যবাদ আর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এ দুইভাগে বিভক্ত। বাংলাদেশে যাঁরা উদারনীতির চর্চা করেছেন এবং যাঁরা ভেবেছেন উদারনীতির মাধ্যমে একটা ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তন আসবে আজ তাঁরাও বুঝতে পেরেছেন, সাম্রাজ্যবাদ কত নৃশংস ও আক্রমণাত্মক হতে পারে। আমাদের মাটির নিচে যে সামান্য প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, যে তেল ও গ্যাস আছে সাম্রাজ্যবাদের চোখ পড়েছে সেখানেও। তারা তা দখল করে নিতে পারে যে কোনো সময়। আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার কোনো মূল্য নেই তাদের কাছে। এ উপলব্ধিটা সর্বজনীন হয়েছে। জাতিসংঘ একটি অকার্যকর-ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান। তারা মার্কিনিদের সব হামলা-আগ্রাসনের বৈধতা দিয়ে এসেছে। কিন্তু আমাদের দাঁড়াতে হবে বড় শক্তি সেই সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। আমাদের স্থানীয়ভাবে কাজ করতে হবে, ক্ষুদ্র আন্দোলন করতে হবে মুক্তির জন্য। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বড় আন্দোলন প্রয়োজন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। গণমুক্তির লক্ষ্যে এ উপলব্ধিকে কাজে লাগাতে হবে। নয়তো আমাদের সমষ্টিগত মানুষের স্বাধীনতা ও মুক্তি নিশ্চিত হবে না।

লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

আমার মেয়ে নিরাপদ হবে কীভাবে?

মাহবুব কবির মিলন
মাহবুব কবির মিলন
শেয়ার
আমার মেয়ে নিরাপদ হবে কীভাবে?
অঙ্কন: বুশরা লাবিবা

একটি মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করা প্রতিটি বাবা-মায়ের জন্য স্বাভাবিক। বিশেষ করে আজকের এই সময়ে, যখন চারপাশে অসংখ্য অনিশ্চয়তা আর ঝুঁকি ঘিরে আছে। প্রতিদিনের জীবনযাপনে ছোট ছোট সতর্কতা অবলম্বন করলেই অনেক বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কীভাবে আমরা আমাদের মেয়েদের নিরাপদ রাখব? কীভাবে তাদের জন্য একটি সুরক্ষিত পরিবেশ তৈরি করব? আসুন, কিছু প্রায়োগিক ও মানবিক দিক থেকে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

বাড়ির ভেতরে ও বাইরে সতর্কতা

আপনি যদি ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকেন, বিশেষ করে অনেক উপরের তলায়, তাহলে আপনার মেয়ে একা সিঁড়ি বেয়ে বা লিফটে করে উঠানামা করলে তার নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন হোন। নিচের ফ্ল্যাটে অনেক মানুষ থাকলেও তাদের সবাইকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। মেয়েকে শেখান, অপরিচিত কারো সঙ্গে কথা বলার সময় সতর্ক থাকতে হবে এবং কোনো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে হবে। বাড়ির আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং মেয়েকে একা চলাফেরা করতে দেওয়ার আগে ভালোভাবে বুঝে নিন।

কোচিং সেন্টার ও স্কুলে নিরাপত্তা

মেয়ে যদি কোচিং সেন্টারে যায়, তাহলে সেখানে একা থাকার পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা করুন। কোচিং সেন্টার ফাঁকা থাকলে, বিশেষ করে যখন শুধু টিচার উপস্থিত থাকেন, তখন মেয়েকে একা পাঠানো থেকে বিরত থাকুন। স্কুলেও একই সতর্কতা মেনে চলুন। মেয়েকে এমন সময়ে স্কুলে পাঠাবেন না, যখন সে ক্লাসে বা স্কুলের কোনো জায়গায় একা হয়ে যেতে পারে।

স্কুল ও কোচিং সেন্টারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন এবং প্রয়োজনে শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।

বন্ধু বা আত্মীয়ের বাসায় সতর্কতা

মেয়েকে কোনো বান্ধবীর বাসায় থাকার জন্য পাঠানোর আগে ভালোভাবে জেনে নিন সেই পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে। বিশেষ করে যদি সেই বাসায় কোনো পুরুষ সদস্য থাকেন, তাহলে আরও বেশি সতর্ক হোন। বিবাহিত ভাই-বোনের বাসায়ও মেয়েকে পাঠানোর আগে ভাবুন। সেখানে অন্য পুরুষ সদস্য থাকলে মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করুন।

পরিবারের বাইরে কাউকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা যাবে না—এই মন্ত্রটি মনে রাখুন।

একা চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা

মেয়েকে একা অরক্ষিত জায়গায় পাঠানো থেকে বিরত থাকুন। লম্বা ফসলের ক্ষেত, যেমন পাট বা ইক্ষু ক্ষেতের পাশ দিয়ে একা হেঁটে যাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। এমন জায়গায় মেয়েকে একা যেতে দেবেন না। একইভাবে, অন্ধকার বা নির্জন রাস্তায় একা চলাফেরা করা থেকে মেয়েকে বিরত রাখুন। প্রতিটি পদক্ষেপে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।

সারাক্ষণ ট্র্যাকিং ও যোগাযোগ

মেয়ের গতিবিধি সম্পর্কে সর্বদা সচেতন থাকুন। তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন এবং তার অবস্থান সম্পর্কে আপডেটেড থাকুন। প্রযুক্তির সাহায্য নিন। মোবাইল ফোন বা ট্র্যাকিং অ্যাপের মাধ্যমে মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন। তবে শুধু প্রযুক্তির উপর নির্ভর না করে, মানবিক স্পর্শ বজায় রেখে মেয়ের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন। তাকে শেখান, কীভাবে বিপদ এড়াতে হয় এবং বিপদে পড়লে কী করতে হয়।

শেষ কথা

মেয়ের নিরাপত্তা শুধু একটি দায়িত্ব নয়, এটি একটি অঙ্গীকার। প্রতিটি পদক্ষেপে সতর্কতা অবলম্বন করলেই আমরা আমাদের মেয়েদের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি। মনে রাখবেন, মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু তার জন্য নয়, এটি আপনার নিজের শান্তি ও সুখের জন্যও। তাই আজই শুরু করুন, ছোট ছোট সতর্কতা মেনে চলুন এবং আপনার মেয়েকে একটি সুরক্ষিত ও সুন্দর জীবন উপহার দিন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দিন।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ