রাজনীতিতে এখন প্রতিহিংসা, আক্রমণ, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অসহিষ্ণু প্রবণতা বেড়েছে ভীষণ। পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ যেন লোপ পেয়েছে। রাজনীতির মাঠে এখন কুৎসিত নোংরামি এবং কাদা ছোড়াছুড়ির জয়জয়কার। সহনশীলতা শব্দটি যেন আজ বিলুপ্ত।
রাজনীতিতে এখন প্রতিহিংসা, আক্রমণ, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অসহিষ্ণু প্রবণতা বেড়েছে ভীষণ। পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ যেন লোপ পেয়েছে। রাজনীতির মাঠে এখন কুৎসিত নোংরামি এবং কাদা ছোড়াছুড়ির জয়জয়কার। সহনশীলতা শব্দটি যেন আজ বিলুপ্ত।
এক পক্ষ অন্য পক্ষকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করা, এমনকি প্রয়াত ব্যক্তিদের অসম্মান করার একটি রীতি আতঙ্কজনকভাবে বেড়ে গেছে। কিন্তু এটি প্রকৃত রাজনীতি নয়। এটি রাজনীতির শিক্ষাও নয়। রাজনীতি হলো রাষ্ট্র পরিচালনার কৌশল।
এই রাজনৈতিক শিষ্টাচারের জন্যই তাঁকে জনগণ শ্রদ্ধা ও সম্মান করে। তাঁরা অনুকরণীয় হন। কিন্তু কিছুদিন ধরে রাজনীতিতে যেমন বিভক্তি দেখা দিচ্ছে, বিভক্তির সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রতিহিংসা। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে নির্মমভাবে আক্রমণ, সুযোগ পেলেই প্রতিপক্ষকে নিঃশেষ করে দেওয়া এবং যেকোনো ভিন্নমত হলেই তাকে অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ ভাষায় দমন করা, কখনো কখনো পাশবিক শক্তি প্রয়োগের একটা হিংস্র প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। রাজনীতিতে হিংস্রতা এবং ভাষাজ্ঞানহীন কথাবার্তার প্রবণতা বাড়ছে। একজন প্রতিপক্ষের রাজনীতিবিদকে কী ভাষায় কথা বলতে হবে, ভিন্নমতের ব্যাপারে কী ধরনের শিষ্টাচার দেখাতে হবে, সেই বোধগুলো আমাদের রাজনীতি থেকে আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
এ রকম একটি অসহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিবেশে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম খালেদা জিয়া। তিনি রাজনীতিতে শিষ্টাচারের এক প্রতীক হয়ে উদ্ভাসিত হয়েছেন। বিশেষ করে ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি যখন প্রচণ্ড অসুস্থ অবস্থায় মুক্তিলাভ করেন, এর পর থেকে তাঁর প্রতিটি আচরণ এ দেশের মানুষকে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছে। দল-মত-নির্বিশেষে সবাই তাঁর প্রাজ্ঞ উদারতা, ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতায় মুগ্ধ। এই মুহূর্তে রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি খালেদা জিয়া। নিজের ব্যক্তিত্ব দিয়ে সব মানুষের হৃদয় জয় করেছেন তিনি। তাঁর পরিমিতিবোধ, ব্যবহার, আচার-আচরণ এবং সংযত কথাবার্তা এ দেশের শান্তিকামী মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। খালেদা জিয়া সেই বিরল রাজনীতিবিদদের একজন, যিনি জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য গৃহবধূ থেকে রাজনীতির মাঠে এসেছিলেন। তাঁর আপসহীন নেতৃত্ব, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ অবস্থান এবং জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধের কারণে বারবার নিপীড়িত-নির্যাতিত হয়েও তিনি তাঁর নীতি এবং আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন, কিন্তু সেই সমালোচনা কখনো শিষ্টাচারবহির্ভূত হয়নি। অশালীন নোংরামির পর্যায়ে যায়নি। তিনি কোনো সময় প্রয়াত রাজনীতিবিদদের অসম্মানসূচক, অসত্য, কুৎসিত ভাষায় গালাগালি করেননি, আক্রমণ করেননি। এই ধারাটি তিনি অব্যাহত রেখেছেন গোটা রাজনৈতিক জীবনে। রাজনীতিতে নিজের অবস্থান আদর্শ থেকে এতটুকু চ্যুত না হয়েও যে একজন রাজনীতিবিদ শিষ্টাচার মেনে চলতে পারেন, নম্র ভদ্রোচিত ভাষায় তীব্র সমালোচনা করতে পারেন, সেই নজির তিনি রেখেছেন তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে। জনগণের প্রয়োজনে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করতে কার্পণ্য করেননি। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ব্যক্তির চেয়ে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন সব সময়। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ২০০৭ সালে এক-এগারোর সময়। সে শিষ্টাচারের রাজনীতি এবং বেগম জিয়াসময় খালেদা জিয়াকে ড. ফখরুদ্দীন সরকার মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে। শুধু তাঁকে নয়, তাঁর দুই পুত্রকেও গ্রেপ্তার করা হয়। চলে চরিত্র হননের চেষ্টা। এই সময় খালেদা জিয়া আপস করেননি। কারাগার থেকে বেরিয়ে যখন তিনি আবার রাজনীতিতে এসেছেন, তখন এক-এগারোর কুশীলবদের সমালোচনা করেছেন, কিন্তু সেই সমালোচনাটা শালীনতার সীমা কখনো অতিক্রম করেনি। বেগম জিয়া সম্ভবত সাম্প্রতিক সময়ে একমাত্র রাজনীতিবিদ, যিনি অশালীন শব্দ প্রয়োগ ছাড়াই বিরোধী পক্ষের কঠোর সমালোচনা করেন। এক-এগারোর ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে একটি অসত্য, ভিত্তিহীন মিথ্যা মামলায় তাঁকে প্রহসনের বিচারে নজিরবিহীনভাবে আটকে রাখা হয় কারাগারে। দিনের পর দিন কারা প্রকোষ্ঠে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। এই অবস্থায় তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেকেই মনে করেছিলেন যে খালেদা জিয়া যদি কখনো সুযোগ পান, তাহলে হয়তো ভয়ংকর প্রতিশোধ নেবেন। কিন্তু বেগম জিয়া যেন তাঁর ওপর সব নিপীড়নের বিচারের ভার জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁর ওপর নিপীড়নের ব্যাপারে একটি কথাও বলেননি। ৫ আগস্ট মুক্ত হয়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে একটি কটূক্তিও করেননি। এমনকি তাঁর নামটি পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। নোংরা ভাষায় কথা বলেননি। তিনি শুধু বলেছেন, ‘আল্লাহ বাংলাদেশের জনগণকে এই দিনটি দেখালেন, আলহামদুলিল্লাহ।’ এর বেশি তিনি কোনো কথা বলেননি। অথচ বিগত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সবচেয়ে নিপীড়িত-নির্যাতিত ব্যক্তির নাম হলো খালেদা জিয়া। সাবেক সরকারের পাতি নেতারাও বেগম জিয়া সম্পর্কে যে কুৎসিত ভাষা প্রয়োগ করেছিলেন, তা চিন্তা করাও কুরুচির পরিচয় বহন করে। কিন্তু এসব অমার্জনীয় নোংরামির জবাব না দিয়ে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে। নীরবতাই তাঁর শক্তি। তাঁর প্রতিবাদহীনতাই যেন মানুষের ভালোবাসা। তাঁর তো সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ভাষা প্রয়োগ করার কথা ছিল, কিন্তু তাঁর পারিবারিক ও রাজনৈতিক এই শিক্ষা তাঁকে সেই স্বীকৃতি দেয়নি। বরং তিনি তাদের শুধু নীতির সমালোচনা করেছেন। তাদের ভোট চুরির সমালোচনা করেছেন। তাদের লুণ্ঠনের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু কোনো ব্যক্তিকে নোংরা, কুৎসিত ভাষায় তিনি আক্রমণ করেননি। খালেদা জিয়ার এই ধরনের রাজনৈতিক শিষ্টাচার আজকের দিনে সবার জন্য অনুকরণীয়।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে খালেদা জিয়ার বাড়ি থেকে তাঁকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল, যে বাড়িতে তাঁর প্রাণপ্রিয় স্বামী শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন। ক্যান্টনমেন্টে শহীদ মইনুল হোসেন সড়কের বাড়িটি কেবল একটি বাড়ি ছিল না, এটি ছিল ইতিহাসের একটি অংশ। সেই বাড়ি থেকে যখন তাঁকে এক কাপড়ে বের করে দেওয়া হয়, তখনো খালেদা জিয়া রাজনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে যাননি। নোংরা, কুৎসিত ভাষায় তিনি কথা বলেননি। এমনকি বাড়ি নিয়ে নজিরবিহীন অপপ্রচারে তিনি জবাব দেননি। খালেদা জিয়া মূলত এমন একজন ব্যক্তিত্ব, যিনি একজন আদর্শবান, জাতির অভিভাবকের মতোই আচরণ করেন। সবার ঐক্য, দেশের ভালো, দেশের মঙ্গল—এই বিষয়গুলো তাঁর সমস্ত বক্তব্যের মধ্যে উৎসারিত। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বেরিয়ে চিকিৎসার জন্য যান লন্ডনে, সেখানে ঈদ করেন তাঁর পুত্রের সঙ্গে। যুক্তরাজ্য থেকে তিনি ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে। সেখানেও তিনি বিভক্তির কথা বলেননি। অনৈক্যের কথা বলেননি, ধ্বংসাত্মক কথাবার্তা বলেননি, উসকানিমূলক বক্তব্য দেননি। এটিই একজন আদর্শ রাজনীতিবিদের বৈশিষ্ট্য। একজন রাজনীতিবিদ যে পরিশীলিত ভাষায় কথা বলেই জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন, তাঁর আদর্শের অবস্থানটা দৃঢ়ভাবে উচ্চারণ করার জন্য তাঁকে কোনো নোংরা বা অরুচিকর কথাবার্তা বলতে হয় না, তার প্রমাণ খালেদা জিয়া। আর এ কারণেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন উজ্জ্বল নক্ষত্র বেগম জিয়া। ৮০ বছর হতে চলল তাঁর। কিন্তু এখনো সাধারণ জনগণের মধ্যে তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা। বিশেষ করে এই সময় যখন রাজনীতিতে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে নিঃশেষ করে দিতে চায়, এক পক্ষ অন্য পক্ষের চরিত্র হননের জন্য অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করে, সেই সময় খালেদা জিয়া যেন জাতির এক আলোকবর্তিকা। তিনি সব রাজনীতিবিদের জন্য একজন শিক্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। কিভাবে রাজনীতিবিদদের কথা বলতে হয়, সমালোচনা করেও কিভাবে মানুষকে সম্মান জানাতে হয়, সেটির উদাহরণ হলেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া প্রতিশোধপ্রবণ নন। তিনি এক উদার গণতান্ত্রিক চেতনার ধারক-বাহক। এ কারণেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে অন্যায়-অবিচারগুলো করা হয়েছে, সেই অন্যায়-অবিচারগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার তিনি দিয়েছেন দেশের আপামর জনগণকে। তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে এ পর্যন্ত কিছু কথা বলেছেন জনগণের উদ্দেশে, কিন্তু একটিবারও নিজের কথা বলেননি। জনগণের কথা বলেছেন। বাংলাদেশের স্বপ্নের কথা বলেছেন, নতুন করে দেশ বিনির্মাণের কথা বলেছেন। এটি তাঁর মহত্ত্ব। আমাদের রাজনীতিতে এখন উদারতার বড় অভাব, মহত্ত্বের বড় অভাব। এ রকম অবস্থায় বেগম জিয়ার মতো একজন অনুকরণীয় উদাহরণ বড় প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ রাজনীতিতে প্রতিহিংসা, কুৎসিত আক্রমণ, গালাগালি ইত্যাদি পছন্দ করে না। আর পছন্দ করে না বলেই খালেদা জিয়া এখন অনিবার্যভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। তিনি নিজেকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, যেখানে দল-মত-নির্বিশেষে সব মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা করে। সব মানুষ মনে করে যে এ রকম একজন রাজনীতিবিদই যেন দেশের জন্য প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ মনে করে, এ দেশের হাল ধরার মতো সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি হলেন তিনি। তিনিই যেন বাংলাদেশের অভিভাবক। একজন মানুষের জনগণের প্রতি ভালোবাসা, দেশপ্রেম এবং পারিবারিক শিক্ষা যে তাঁকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে, বেগম জিয়া তার প্রমাণ। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম, যিনি প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করেন না, বরং জনগণের হাতে তার বিচারের ভার ছেড়ে দেন। জনগণের বিপুল জনপ্রিয়তায় তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে পরাজিত করেন। পেশিশক্তি প্রয়োগ বা কটূক্তি করে নয়, বরং জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে পরাজিত করেন।
লেখক : নাট্যকার ও কলাম লেখক
E-mail : auditekarim@gmail.com
সম্পর্কিত খবর
উন্নতির কাছে আমাদের প্রত্যাশাটা কী? অবশ্যই সুখ। কিন্তু উন্নয়ন কেবল যে নদীর গলা টিপে ধরছে বা বনভূমি উজাড় করে দিচ্ছে শুধু তা-ই নয়, নাগরিকদের সুখও কেড়ে নিচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় গত এক বছরে প্রাণ হারিয়েছে ৬ হাজার ৫২৪ জন। খবর রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের।
আশাবাদী হওয়াটা খুবই দরকার, আশাবাদী হতে যারা আগ্রহী করছে তারা উন্নতির বিষয়ে নিশ্চিন্তবোধ করতে পারেন এটা লক্ষ করে যে, দেশে বড় একটা ভোক্তা শ্রেণির উত্থান ঘটেছে। তাতে বাংলাদেশে পণ্যের চাহিদা বেশ বেড়েছে। আর পণ্যের চাহিদা বাড়া মানেই তো উৎপাদন বাড়া।
শিল্পোদ্যোক্তাদের একজনকে জানি, ব্যক্তিগতভাবে যিনি অত্যন্ত সজ্জন, পাচারে বিশ্বাসী নন; তিনি একটি বই লিখেছেন, যাতে দেশের যে উন্নতি হচ্ছে তার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রবৃদ্ধির।
নির্মম সত্যটা হলো, যতই উন্নতি ঘটছে ততই কমছে দেশপ্রেম। তাই বলে দেশপ্রেম কি একেবারেই নিঃশেষ হয়ে গেছে? না, মোটেই নয়। দেশপ্রেম অবশ্যই আছে। বিশেষভাবে আছে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে। তারা অন্য দেশে গিয়ে বসবাস করবে, এমনটা ভাবতেই পারে না। বেশির ভাগই দেশে থাকে। পরিশ্রম করে। এবং তাদের শ্রমের ফলেই দেশের যেটুকু উন্নতি তা সম্ভব হয়েছে। ভোক্তারা নয়, মেহনতিরাই হচ্ছে উন্নতির চাবিকাঠি। ঋণ করে, জায়গাজমি বেচে দিয়ে সুবিধাবঞ্চিতদের কেউ কেউ বিদেশে যায়; থাকার জন্য নয়, উপার্জন করে টাকা দেশে পাঠাবে বলে। বিদেশে গিয়ে অনেকেই অমানবিক জীবনযাপন করে, ‘অবৈধ’ পথে গিয়ে এবং প্রতারকদের কবলে পড়ে কেউ কেউ জেল পর্যন্ত খাটে। কিন্তু তারা বুক বাঁধে এ আশাতে যে দেশে তাদের আপনজনরা খেয়েপরে বাঁচতে পারবে। বিত্তবানরা যা ছড়ায় তাহলো হতাশা। এ দেশের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, এটাই তাদের স্থির বিশ্বাস। হতাশা কিন্তু তারাই সৃষ্টি করে। বিশেষ করে সম্পদ পাচার উন্নতির কাছে আমাদের প্রত্যাশাটা কী? অবশ্যই সুখ। কিন্তু উন্নয়ন কেবল যে নদীর গলা টিপে ধরছেকরার মধ্য দিয়ে। এই যে দেশে এখন ডলার সংকট চলছে, এবং যার ফলে সবকিছুর দাম বেড়েছে, তার প্রধান কারণ টাকা ডলারে রূপান্তরিত হয়ে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এটা বিত্তবানদের কাজ। তারাই হতাশা সৃষ্টি করে এবং দেশের ভবিষ্যৎহীনতার বিশ্বাস ক্রমাগত বলীয়ান হতে থাকে। এবং নিজেদের ওই হতাশা তারা যে কেবল নিজেদের মধ্যেই আটকে রাখে তা নয়, অন্যদের মধ্যেও সংক্রমিত করে দেয়। সেটাই স্বাভাবিক। কারণ হতাশা হচ্ছে একটি রোগ, শুধু রোগ নয়, সংক্রামক রোগ বটে। একাত্তরে যখন আমরা চরমতম বিপদের মধ্যে ছিলাম, মৃত্যুর শঙ্কায় দিবা-রাত সন্ত্রস্ত থাকতাম তখন অমন চরমতম বিপদ ও সীমাহীন অত্যাচারের মুখেও আমরা কিন্তু হতাশ হইনি; কারণ আমরা জানতাম আমরা কেউ একা নই, আমরা সবাই আছি একসঙ্গে এবং লড়ছি একত্র হয়ে। ১৬ ডিসেম্বরেই কিন্তু সেই ঐক্যটা ভাঙার লক্ষণ দেখা দিয়েছে; এবং কিছুদিনের মধ্যেই ভেঙে একেবারে খান খান হয়ে গেছে। সমষ্টি হারিয়ে গেছে, সত্য হয়েছে ব্যক্তিগতভাবে উন্নতি করা, না পারলে কোনোমতে বেঁচে থাকা।
এমনটা কেন ঘটল? ঘটল এ কারণে যে, উত্থান ঘটল লুণ্ঠনের, জবরদখলের, ব্যক্তিগত সুবিধা বৃদ্ধির। এবং এসবই প্রধান সত্য হয়ে দাঁড়াল। একাত্তরে আমরা সমাজতন্ত্রী হয়েছিলাম, বাহাত্তরে দেখা গেল সমাজতন্ত্র বিদায় নিচ্ছে, পুঁজিবাদ এসে গেছে। এবং পুঁজিবাদেরই অব্যাহত বিকাশ ঘটেছে এ বাংলাদেশে। দেখা গেছে পরের সরকার আগেরটির তুলনায় অধিক মাত্রায় পুঁজিবাদী, এবং একই সরকার যদি টিকে থাকে তবে আগেরবারের তুলনায় পরেরবার পুঁজিবাদের জন্য অধিকতর ছাড় দিচ্ছে। পুঁজিবাদের বিকাশের প্রয়োজনে রাস্তাঘাট পরিষ্কার করার জন্য তো আমরা যুদ্ধ করিনি; পুঁজিবাদের বিকাশ তো পাকিস্তান আমলে বেশ গোছগাছ করেই এগোচ্ছিল। আমরা চেয়েছিলাম সবার মুক্তি; চেয়েছিলাম প্রত্যেকেই যাতে মুক্তি পায়।
দেশের মানুষ বিদেশে শিক্ষার জন্য যেমন যায়, তেমনি যায় চিকিৎসার জন্যও। বাংলাদেশে ভালো চিকিৎসকের কি অভাব আছে? আধুনিক যন্ত্রপাতি কি নেই? আকাল পড়েছে কি চিকিৎসা বিষয়ে জ্ঞানের? না, অভাব এসবের কোনো কিছুরই নয়। অভাব ঘটেছে একটা জিনিসেরই, সেটা হলো আস্থা। রোগী আস্থা রাখতে অসমর্থ হয় দেশি চিকিৎসকের চিকিৎসায়। তাই যাদের সামর্থ্য আছে তারা পারলে সিঙ্গাপুরে বা ব্যাংককে যায়, অত খরচে যারা অপারগ তারা চেষ্টা করে ভারতে যাওয়ার। এবং হতাশা যেমন, অনাস্থাও তেমনি- ভীষণ রকমের সংক্রামক।
আস্থার এ অভাবের কারণটা কী? কারণ হচ্ছে দেশি চিকিৎসকদের অধিকাংশই রোগীকে সময় দিতে পারেন না, পর্যাপ্ত মনোযোগ দানেও ব্যর্থ হন। না দিতে পারার কারণ তাঁদের তাড়া করার জন্য ঘাড়ের ওপর বসে থাকে অর্থোপাজনের নিষ্ঠুর তাগিদ। যত বেশি রোগী দেখবেন তত বেশি আয় হবে। রোগ সারানোর জন্য খ্যাত হওয়ার চেয়ে আগ্রহটা থাকে অপরের তুলনায় অধিক আয় করার দিকে। আমাদের নতুন স্বাস্থ্য উপদেষ্টাও দেখলাম আস্থার এ অভাবের কথাটা স্বীকার করেছেন। কিন্তু আস্থা কীভাবে ফেরত আনা যাবে তা যে তিনি জানেন এমনটা ভরসা করা কঠিন। আর জানলেও তা কার্যকর করার উপায় তাঁর হাতে না থাকারই কথা। কারণ ব্যাপারটা একজন-দুজন চিকিৎসকের নয়, ব্যাপারটা এমনকি চিকিৎসাব্যবস্থাতেও সীমাবদ্ধ নয়, এটি ছড়িয়ে রয়েছে গোটা রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যবস্থাজুড়ে। সর্বত্রই আস্থাহীনতা বিরাজমান।
ভারতের পরিবর্তে চীনে চিকিৎসাসেবা গ্রহণের আলোচনা চলছে। বণিক চীন নাকি বিত্তবান বাংলাদেশিদের জন্য নিজ দেশে এবং বাংলাদেশেও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দেনদরবার করছে, সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে। অথচ দেশের সাধারণ মানুষের জন্য একমাত্র চিকিৎসার আশ্রয় সরকারি হাসপাতালগুলোর উন্নয়নে অতীতের সরকারের ন্যায় বর্তমান সরকারও উদাসীন। গরিবের পক্ষে থাকার সরকার দেশবাসী আজও পায়নি, তাই।
শুরুটা কিন্তু দেশের ভবিষ্যতের প্রতি আস্থার অভাব দিয়েই। সুবিধাপ্রাপ্ত লোকেরা মনে করে যে এদেশের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তাই অন্যত্র বসতি গড়তে পারলে ভালো। সেই চেষ্টাই তারা করতে থাকে। এবং চেষ্টার অংশ হিসেবে বৈধ-অবৈধ যে পথেই সম্ভব টাকাপয়সা যা সংগ্রহ করতে পারে তা পাচার করার পথ খোঁজে। তাদের এ আস্থাহীনতা অন্যদের মধ্যেও অতিসহজেই সংক্রমিত হয়ে যায়। এবং সংক্রমিত হয়ে যাচ্ছেও। কিন্তু আশা জাগানিয়ার পথ ক্রমাগত রুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে যদি গণতন্ত্রের সুবাতাস প্রবাহিত হয় তাহলে সেখানে মানুষের বাকস্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। আর যখন দেশে গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্বৈরতন্ত্রের আবির্ভাব ঘটে তখন মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। যুগে যুগে বিভিন্ন দেশে স্বৈরতন্ত্রের আবির্ভাব ঘটেছে এবং সেটাকে রোধ করার জন্য একজন মহান ব্যক্তির জন্ম হয়েছে, যার দক্ষ নেতৃত্বে স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটেছে।
একেবারে গৃহিণী থেকে কালের বিবর্তনে পরিপক্ব রাজনীতিবিদ। যার নামের আগে শোভা পায় দেশনেত্রী, আপসহীন নেত্রী, গণতন্ত্রের মানস কন্যা। যাকে কোনো লোভ-লালসা স্পর্শ করতে পারেনি।
বাঙালি জাতিকে হতাশায় ডুবিয়ে কোনো দিকনির্দেশনা না দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানে পাড়ি জমিয়েছিলেন, তখন বেগম খালেদা জিয়া পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত মেজর জিয়াউর রহমানের পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছিলেন। তিনিও স্ত্রী-পুত্রের মায়া না করে দেশকে ভালোবেসে কোনো আপস না করে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর দলের প্রয়োজনে তাকে দলের দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হয়। কখনো সম্মুখ সারিতে, কখনো আত্মগোপনে থেকে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে কঠিন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে দেশকে উপহার দিয়েছেন সোনালি সূর্য। এরশাদবিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ যখন সমগ্র বাংলাদেশ অগ্নিগর্ভ তখন তার ব্যক্তিত্ব, উদারতা, মননশীলতা, ধৈর্য, ত্যাগ বজ্রকঠিন সিদ্ধান্ত দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা অন্ধকারে আলোকবর্তিকা হিসেবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পাশে থেকে গন্তব্যে পৌঁছে গেছেন। পেয়েছেন সফলতা পাহাড়সম সম্মান, মর্যাদা। এরশাদ সরকারের ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে নামের আগে যুক্ত করেছেন আপসহীন নেত্রী অথচ শেখ হাসিনা তার অধীনে নির্বাচন করে খেতাব পেয়েছিলেন জাতীয় বেঈমানের। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। এমনভাবে বই-পুস্তক লেখা হয়েছে যাতে শেখ পরিবারের কথা ছাত্র-ছাত্রীরা মুখস্থ করতে করতে বড় হয়। স্বাধীনতার ঘোষক যে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেই কথা প্রমাণসহ আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতার বইয়ের মধ্যে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তার বড় সন্তান তারেক জিয়া, যার শ্বশুর নৌবাহিনীপ্রধান, তার স্ত্রী একজন দেশে এবং বিদেশে স্বনামধন্য চিকিৎসক। তার মেয়ে জায়মা রহমান একজন ব্যারিস্টার। বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান বাংলাদেশ ক্রিকেটের আধুনিক রূপকার। অথচ এই পরিবারকে ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী সহ্য করতে পারতেন না। ঈষান্বিত হয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অশালীন মন্তব্য সব সময় করতেন, যা দেশপ্রেমিক জনগণও সুশীল সমাজের নিকট কাম্য ছিল না।
বেগম জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেছেন, কী খেলে লিভার সিরোসিস হয়, মরার বয়স হয়েছে এখানো কেন মরে না, অথচ ৫ আগস্ট গণভবন থেকে বের হওয়ার পর অনেক মানুষের হাতে বিদেশি দামি মদের বোতল দেখা গেছে। গণতন্ত্রের অহংকার, স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ, তারুণ্যের অহংকার, কোটি মানুষের নয়নমণি তারেক জিয়াকে কুলাঙ্গার বলেছেন। অথচ তারেক জিয়া একবার গোপালগঞ্জে গেলে শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেছিলেন। এটা হলো জিয়া পরিবারের পারিবারিক শিক্ষা। ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী বলতেন, দশটা হুন্ডা, বিশটা গুণ্ডা, নির্বাচন ঠাণ্ডা।
ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী বলতেন, ‘আমার শুধু পাওয়ার চাই’। তিনি পাওয়ার নিয়েই ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সালে দিনের ভোট রাতে করে গণতন্ত্রকে হত্যা করে স্বৈরশাসক পদবি পেয়েছিলেন। তিনি দেশ এবং দেশের মানুষদের নিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে যা ইচ্ছা, তাই করেছিলেন, কিন্তু মানুষের মন জয় করতে পারেননি। তার আমলে কত মায়ের বুক খালি হয়েছে। হত্যা, খুন, গুম, জেল, জুলুম, আয়নাঘর সবই ফ্যাসিস্ট সরকারের অত্যাচারের জ্বলন্ত উদাহরণ। কত মায়ের বুক খালি হয়েছে, কত সন্তান বাবা হারিয়েছে, কত মা সন্তান হারিয়েছে, কত স্ত্রী স্বামী হারিয়েছেন। তাদের কান্না ও চোখের পানিতে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়েছে। অথচ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার হৃদয় গলেনি।
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের জননী তাকে বিনা দোষে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় যে টাকা তিনি স্পর্শ করেননি তাকে শেখ হাসিনা নাজিম উদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে মানবতার সব দিক বিসর্জন দিয়ে, মেরে ফেলার জন্য দিনের পর দিন বিনা চিকিৎসায় কারাগারে ফেলে রেখেছিলেন। আত্মীয়-স্বজন, চিকিৎসক—এমনকি আইনজীবীদের সঙ্গেও দেখা করতে দেননি। ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ছাড়ার সময় এবং কেন্দ্রীয় কারাগারে বেগম জিয়ার চোখের পানি আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছে অথচ শেখ হাসিনার হৃদয় গলেনি মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তার প্রমাণ শেখ হাসিনা নিজেই। কতটুকু হৃদয়হীন হলে শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়াকে বলতে পারেন, মরার বয়স হয়েছে এখনো মরে না কেন, পদ্মায় চুবানোর কথা বলেছেন। আমাদের বাড়িতে গেলে বসার জায়গা পেত না, মোড়ায় বসত। যা ছিল শিষ্টাচারবহির্ভূত। অথচ সর্বকালের সেরা রাষ্ট্রপতি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন।
বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার বহু ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। সব ষড়যন্ত্র থেকে তাকে রক্ষা করেছেন আল্লাহ এবং দেশের জনগণের ভালোবাসা। তিনি বলেছিলেন, বিদেশে আমার কোনো বাড়ি-ঘর নেই। এটাই আমার দেশ। তিনি দেশের জনগণকে প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছেন বলেই তাদের দোয়ায় তিনি বেঁচে আছেন। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, তত দিন তিনি দেশপ্রেমিক জনগণের মনের মণিকোঠায় অবিসংবাদিত নেত্রী হিসেবে গণতন্ত্রের মানস কন্যা হিসেবে ভালোবাসার প্রতীক হয়ে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে যথার্থই বলা যায়—
She is the man of honour, principle, mother of Democracy and humanity in a true sense.
লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান সমাজকর্ম বিভাগ, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ, ঢাকা।
আনিসুর বুলবুল
আজকের ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল মিডিয়া শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি হয়ে উঠেছে অর্থোপার্জনের হাতিয়ার, সমাজের রুচির দর্পণ, এমনকি নৈতিকতার মাপকাঠি। কিন্তু এই প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তা যখন কেবল অশালীনতা, ভাঁড়ামি আর সস্তা সেন্সেশনের উপর নির্ভর করে, তখন তা সমাজের জন্য এক ভয়াবহ সংকটের ইঙ্গিত দেয়। একজন নারী যখন টাওয়েল বা নাইটি পরে নাচলে লাখো ভিউ পায়, আর একজন গুণী কবি বা জ্ঞানী ব্যক্তির কথায় মানুষ নাক সিঁটকায়, তখন বুঝতে হবে আমাদের সমাজের মূল্যবোধ কোথায় হোঁচট খাচ্ছে।
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো আজ মনিটাইজেশনের লোভে মানুষের নৈতিকতা ও লজ্জাকে পণ্যে পরিণত করেছে।
কমেডির নামে আজ যা চলছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই অশ্লীলতা ও খিস্তির মিশেল। পাবলিক হাসছে, কিন্তু সেই হাসির পেছনে লুকিয়ে আছে আমাদেরই রুচির দৈন্য। আমরা ভুলে যাচ্ছি যে, সমাজের উন্নতি ঘটে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও নৈতিকতার মাধ্যমে, নাইটি বা শারীরিক প্রদর্শনের মাধ্যমে নয়। যখন একজন মা-বোন স্কুলের পড়া ছেড়ে রিলস বানাতে উৎসাহিত হন শুধু টাকার লোভে, তখন আমাদের ভাবতে হবে—আমরা আসলে কোন ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছি?
মনিটাইজেশনের এই উন্মত্ততা আমাদের নতুন প্রজন্মকে কী শিক্ষা দিচ্ছে? তারা শিখছে যে, পড়াশোনা বা সততার চেয়ে সস্তা সেলিব্রিটি হওয়াটাই বড় সাফল্য।
সময় এসেছে জেগে ওঠার। সোশ্যাল মিডিয়ার অপসংস্কৃতি রোধ করতে হবে। প্যারেন্টস, টিচার্স ও ইনফ্লুয়েন্সারদের এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে, পেট চালানোর জন্য নৈতিকতা বিক্রি করা কখনই সমাধান নয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে নতুন বাংলাদেশ গড়ার কামনায় রাষ্ট্র সংস্কারের প্রসঙ্গটি জোরালোভাবে সামনে আসে। সংস্কারের বাসনায় একে একে গঠন করা হয় সাতটি কমিশন। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন, সংবিধান সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন।
এর মধ্যে ১৮ নভেম্বর ১১ সদস্যের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।
কমিশনের সুপারিশমালার শুরুতেই গণমাধ্যমের মালিকানার কথা বলা হয়েছে। একই কোম্পানি, গোষ্ঠী, ব্যক্তি, পরিবার বা উদ্যোক্তা যাতে একই সঙ্গে একাধিক মাধ্যমের মালিক হতে না পারে, সেজন্য বিশ্বের বহু দেশে ‘ক্রস-ওনার শিপ’ (টেলিভিশনের মালিক সংবাদপত্রের মালিক হতে পারেন না বা সংবাদপত্রের মালিক টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক হতে পারেন না) নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কমিশন মনে করে, বাংলাদেশেও অচিরেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ক্রস-ওনার শিপ নিষিদ্ধ করে অধ্যাদেশ করা যায়। যেসব ক্ষেত্রে এটি বিদ্যমান সেগুলোয় পরিবর্তন আনার নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তাদের ব্যবসা পুনর্গঠনের লক্ষ্য ঠিক করে দেওয়া প্রয়োজন। এগুলো নানা পদ্ধতিতে হতে পারে।
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, একক মালিকানায় একই ভাষায় একাধিক দৈনিক পত্রিকা বা একাধিক টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট করে। সেই সঙ্গে গণমাধ্যমের যে প্রভাবক ক্ষমতা, তা নিজস্বার্থে কেন্দ্রীভূত করে। সে কারণে এ ব্যবস্থার অবসান হওয়া দরকার। বিদ্যমান এ ব্যবস্থার দ্রুত সমাধান করতে হবে।
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, একই সাবান একাধিক মোড়কে বাজারজাত করায় যেমন বাজারের প্রতিযোগিতা নষ্ট করে, একই মালিকানায় একই ভাষায় একাধিক দৈনিক পত্রিকাও গণমাধ্যমের প্রতিযোগিতা নষ্ট করে এবং পাঠক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টেলিভিশনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এজন্য ‘এক উদ্যোক্তার একটি গণমাধ্যম (ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়া)’ নীতি কার্যকর করাই গণমাধ্যমের কেন্দ্রীকরণ প্রতিরোধের সেরা উপায় বলে মনে করে কমিশন।
আর এ কথাগুলো পড়ার পরই অধমের চোখে খটকা লাগে। প্রতিবেদনটিও অনেকটাই বিশ্বাসযোগ্যতা ও পবিত্রতা হারায়। মুহূর্তেই ‘অনেক দুধের মধ্যে এক ফোঁটা গোমূত্র পড়ার’ চিত্রকল্পটাও ভেসে ওঠে। প্রতিবেদনটি পক্ষপাতদুষ্ট এক উদ্ভট যাচ্ছেতাই বালখিল্য বিষয়ে পরিণত হয়। বোঝা যায়, নেহাত দেশ ও জনগণ, গণমাধ্যম বা গণমাধ্যমকর্মীদের মঙ্গলাকাক্সক্ষা নয়, এখানেও গতানুগতিক অপরাজনীতি ও ঘৃণ্য গোষ্ঠীস্বার্থ কাজ করেছে। সেই ‘গোষ্ঠীস্বার্থ’ও আবার স্রেফ ‘ব্যবসায়িক বিদ্বেষতাড়িত’। হ্যাঁ, স্রেফ বিদ্বেষ আর প্রতিহিংসা থেকেই কমিশন এ আজগুবি ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়ার সুপারিশ করেছে এবং ক্রস-ওনার শিপের প্রসঙ্গ টেনেছে।
বিদ্বেষের তাড়নায় কখনোই সর্বজনীন ভালো কিছু হয় না। ফলে কমিশনের এ প্রতিবেদন গণমাধ্যমকে ইতিবাচক নতুন কিছু দেওয়া থাক দূরে, বরং আরও অস্থির ও অস্থিতিশীল করে তুলবে। অদৃশ্য অব্যক্ত অসংখ্য ক্ষত বয়ে চলা নাজুক গণমাধ্যমকর্মীদের জীবনে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ বা ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’ দেওয়ার প্রেসক্রিপশন দিয়েছে গণমাধ্যম কমিশন।
কোন প্রতিষ্ঠান কয়টা পত্রিকা বা টেলিভিশন চালু করতে পারবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করার কোনো বৈধ যুক্তি নেই। যার বৈধ টাকা আছে সে কেন পারবে না? কোনো একটি শিল্পগোষ্ঠীকে মাথায় রেখে এ সুপারিশ সামনে আনা হলে মূল উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠবে এবং সেটাই স্বাভাবিক।
কেননা এর বিপরীত চিত্রটাই পৃথিবীতে সবল সচল। চোখের সামনেই এর অনেক উদাহরণ রয়েছে। আনন্দবাজার পত্রিকা গ্রুপের কথা ধরুন। তাদের অনেক পত্রিকা রয়েছে। ভারত সরকার কি এ ব্যাপারে কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে?
রয়েছেন মিডিয়া মুঘল রুপার্ট মার্ডক, তাঁর কোম্পানি নিউজ করপোরেশন। তিনি বিশ্বজুড়ে শত শত স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বহুমুখী প্রকাশনা ও সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের মালিক। এ একই প্রতিষ্ঠানের অধীনে যুক্তরাজ্যে রয়েছে দ্য সান এবং দ্য টাইমস, অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ, হেরাল্ড সান এবং দি অস্ট্রেলিয়ান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং নিউইয়র্ক পোস্ট। এ ছাড়া তিনি টেলিভিশন চ্যানেল স্কাই নিউজ অস্ট্রেলিয়া এবং ফক্স নিউজ (ফক্স করপোরেশনের মাধ্যমে), টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরিস ফক্স এবং নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের (বর্তমানে বিলুপ্ত) মালিকও ছিলেন।
আছেন জন কার্ল মেলোন। এ আমেরিকান মিডিয়া মুঘল, যিনি লিবার্টি মিডিয়ার চেয়ারম্যান। তিনি ‘কেবল কাউবয়’ নামেও পরিচিত। তিনি বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ধরনের মিডিয়া, টেলিযোগাযোগ এবং বিনোদন প্রতিষ্ঠানের মালিক।
জন কার্ল মেলোন ১৯৯২ সালে ‘ফাইভ হানড্রেড চ্যানেল ইউনিভার্স’ ধারণাটি ব্যবহার করেন ভবিষ্যতের মিডিয়ার পরিবেশ-পরিস্থিতি বোঝানোর জন্য, যেখানে বিপুলসংখ্যক টিভি চ্যানেলের প্রয়োজনীয়তাকে তিনি ইঙ্গিত করেন। তাঁর ডিসকভারি কমিউনিকেশনস, যা এখন ডিসকভারি ইনকরপোরেটেড, এই এক প্রতিষ্ঠানের অধীনে রয়েছে ডিসকভারি চ্যানেল, টিএলসি (দ্য লার্নিং চ্যানেল), অ্যানিমেল প্ল্যানেট, এইচজিটিভি (হোম অ্যান্ড গার্ডেন টেলিভিশন), ফুড নেটওয়ার্ক, ওডব্লিউএন (অপরাহ উইনফ্রে নেটওয়ার্ক), ইউরোস্পোর্ট (ইউরোপীয় স্পোর্টস চ্যানেল নেটওয়ার্ক), কিউভিসি (গুণমান, মূল্য, সুবিধা; যা একটি হোম শপিং নেটওয়ার্ক যা সৌন্দর্য, ইলেকট্রনিক, ফ্যাশন এবং আরও অনেক কিছু বিপণন ও পণ্য সরবরাহ করে লাইভ শো সম্প্রচার করে। কিউভিসি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ একাধিক অঞ্চলে কাজ করে।)
লিবার্টি গ্লোবালের অধীনে রয়েছে ভার্জিন মিডিয়া, যা যুক্তরাজ্যের একটি প্রধান টেলিযোগাযোগ এবং মিডিয়া কোম্পানি, কেবল টেলিভিশন, ইন্টারনেট পরিষেবা এবং মোবাইল যোগাযোগ প্রদান করে। ইউপিসি, ইউনাইটেড প্যান-ইউরোপ কমিউনিকেশনস, রয়েছে টেলিনেট, যা বেলজিয়ামের একটি শীর্ষস্থানীয় টেলিযোগাযোগ প্রদানকারী, প্রাথমিকভাবে ইন্টারনেট, টেলিভিশন এবং টেলিফোন পরিষেবা প্রদানকারী।
লিবার্টি ল্যাটিন আমেরিকা, সিরিয়াসএক্সএম, ফর্মুলা ওয়ান, লাইভ নেশান, জিসিআই (জেনারেল কমিউনিকেশন, ইনকরপোরেটেড), লায়ন্সগেটসহ আরও অনেক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।
শুধু রুপার্ট মার্ডক বা জন কার্ল মেলোন নন, এ রকম এক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে অনেক মিডিয়া থাকা প্রতিষ্ঠানের তালিকা অনেক দীর্ঘ। এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজনের নাম আমরা উল্লেখ করছি, যাদের সব প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করলে এ লেখাটা প্রবন্ধ না হয়ে মহাভারত হয়ে যাবে। সে কারণে আমরা শুধু ব্যক্তি বা তার মূল প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করছি। আগ্রহী পাঠক চাইলে হাতের মুঠোয় পৃথিবীর সুবিধা নিয়ে এ মুহূর্তেই সেসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ধরুন, সামনার রেডস্টোন, ভায়াকমসিবিএস, যা বর্তমানে প্যারামাউন্ট গ্লোবাল; টেড টার্নার, টার্নার ব্রডকাস্টিং সিস্টেম, টিবিএস ও সিএনএন; জেফ বেজোস, অ্যামাজন, দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক; ওয়াল্ট ডিজনি, দ্য ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি, ডিজনি মিডিয়া নেটওয়ার্ক; ডেভিড গেফেন, গেফেন রেকর্ডস, ড্রিমওয়ার্কস এসকেজি; মাইকেল ব্লুমবার্গ, ব্লুমবার্গ এলপি, ব্লুমবার্গ নিউজ; ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রিন, গুগল, বর্তমানে যা অ্যালফাবেট, ইউটিউব এবং গুগল নিউজসহ।
প্রতিবেশী দেশে রয়েছেন সুভাষ চন্দ্র, জি এন্টারটেইনমেন্ট এন্টারপ্রাইজেস, জিটিভি; কালানিথি মরন, সান গ্রুপ, সান টিভি নেটওয়ার্ক, রেডিও এবং চলচ্চিত্র; রাঘব বাহল, নেটওয়ার্ক১৮ গ্রুপ, সিএনবিসি-টিভি১৮, সিএনএন-নিউজ১৮-এর মতো মিডিয়া আউটলেট এবং অন্যান্য বিভিন্ন ডিজিটাল ও টেলিভিশন সম্পত্তির মালিক; ম. কে. আলাগিরি, দ্য হিন্দু গ্রুপ, ভারতের অন্যতম সম্মানিত ইংরেজি ভাষার সংবাদপত্র দ্য হিন্দু এবং অন্যান্য প্রকাশনার মালিকানার সঙ্গে জড়িত। সম্বিত পাত্র, টাইমস অব ইন্ডিয়া, বেনেট, কোলম্যান অ্যান্ড কোং, আগরওয়াল পরিবারের নেতৃত্বে টাইমস গ্রুপ ভারতের বৃহত্তম মিডিয়া গ্রুপগুলোর মধ্যে একটি, যারা টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতো প্রধান সংবাদপত্র প্রকাশ করে এবং জুমের মতো টেলিভিশন নেটওয়ার্কের মালিক। রজত শর্মা, ইন্ডিয়া টিভি, হিন্দি ভাষার সংবাদ চ্যানেল ইন্ডিয়া টিভির প্রতিষ্ঠাতা এবং ভারতের মিডিয়া শিল্পের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। এন. আর. নারায়ণ মূর্তি, ইনফোসিস, যদিও প্রাথমিকভাবে একজন প্রযুক্তিসম্রাট, মূর্তির বিনিয়োগ মিডিয়া এবং বিনোদনেও বিস্তৃত। বিজয় মালিয়া, কিংফিশার, ইউবি গ্রুপ এবং মিডিয়া ভেঞ্চারস। কিংফিশার এয়ারলাইনসের জন্য পরিচিত, মালিয়ার কিংফিশার টিভি এবং অন্যান্য বিনোদন উদ্যোগসহ মিডিয়া কোম্পানিগুলোতেও অংশীদারি ছিল। শিব নাদার, এইচসিএল এবং মিডিয়া ইনভেস্টমেন্টস, এইচসিএলের প্রতিষ্ঠাতা। নীতা আম্বানি, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, নেটওয়ার্ক১৮, টিভি১৮, জিও প্ল্যাটফর্মের মালিক।
ডিজিটাল যুগে সংবাদমাধ্যম এমনিতেই কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী ছাপা পত্রিকা মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে। অনেক স্বনামখ্যাত বড় পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোনোটি বন্ধ হওয়ার পথে, কোনোটি রূপান্তরের মাধ্যমে টিকে থাকার চেষ্টা করছে।
তাই ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়া চিন্তার পেছনে জনহিতকর, গঠনমূলক বা ইতিবাচক কিছু নয়, বরং রয়েছে প্রতিহিংসাপরায়ণ কুচিন্তা ও কূটকৌশল। যাতে লাথি মারা হবে অসংখ্য মিডিয়াকর্মীর পেটে। তাতে বরং বেকারত্বের পাহাড় আরও উঁচু হবে, নানামুখী অসন্তোষ, সীমাহীন হতাশার আকাশ আরও মেঘকালো বা ভারী হবে।
মাহফুজ জুয়েল : কবি ও সাংবাদিক