<p>তিন মাস বয়সী ইমাম হাসান নামের এক শিশুকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) আসেন তার মা। প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছিল শিশুটি। হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি কেয়ার (জরুরি বিভাগ) থেকে ওই শিশুকে ৯ নম্বর শিশু স্বাস্থ্য ওয়ার্ডে ভর্তি দেওয়া হয়। জরুরি বিভাগ থেকে শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে সরাসরি দায়িত্বরত চিকিৎসকের কক্ষে যায় হাসান। এ সময় এক নারী চিকিৎসক ওষুধ লিখে দিয়ে বলেন, ‘এখন ভর্তি করা হবে না। আমাদের (চিকিৎসকদের) কর্মবিরতি চলছে।’</p> <p>স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদন্ডি এলাকা থেকে রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চমেক হাসপাতালে আসেন তারা। </p> <p>সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে ৯ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসকের কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসুস্থ শিশু ইমাম হোসেনের মা আনজুমান নাহার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শনিবার রাতে বাচ্চা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। শ্বাসকষ্ট ও কাশি কারণে সারারাত ঘুমাতে পারেনি। কিন্তু এখানে ডাক্তাররা বলছে, এখন ভর্তি করতে পারবে না। কোথায় যাব বুঝতে পারছি না।’ </p> <p>এ সময় ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসকের কক্ষে গেলে দেখা যায়, নারী চিকিৎসক এক শিশুকে দেখছেন। দেখার পর ব্যবস্থাপত্র লিখে দিচ্ছেন কিন্তু ভর্তি দিচ্ছেন না। চিকিৎসকের কক্ষে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে আসা মহরম আলী মিন্টু নামের এক যুবক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার পাঁচ মাস বয়সী বাচ্চার কাশি-সর্দি। ভর্তি করাতে এখানে এসেছি। এখন কোথায় যাব।’ </p> <p>নাম প্রকাশ না করার শর্তে চিকিৎসকদের একজন বলেন, ‘এখন নতুন করে রোগী ভর্তি বন্ধ থাকলেও সবাইকে তো দেখছি। ব্যবস্থাপত্র লিখে দিচ্ছি। কর্মসূচি স্থগিত হলে ভর্তি কার্যক্রম আবার শুরু হবে। এই পর্যন্ত অর্ধশতাধিক রোগী (শিশু) এসেছে। আমরা সবাইকে দেখেছি। আর ওয়ার্ডে ভর্তি আছে (পূর্বে) আড়াইশতাধিক শিশু রোগী।’ </p> <p>শুধু ওই দুই শিশুই নয়, এভাবে বেলা ২টা থেকে সারা দেশে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি কর্মসূচি ‘কমপ্লিট শাটউাউন’ শুরু থেকে সন্ধ্যায় কর্মসূচি স্থগিতের আগ পর্যন্ত চমেক হাসপাতালের ৯ নম্বর শিশু স্বাস্থ্য ওয়ার্ডে ভর্তি করাতে না পেরে অর্ধশতাধিক শিশুকে নিয়ে বিপাকে পড়েন অভিভাবকরা। এ সময় ওই ওয়ার্ডে দুইজন নারী চিকিৎসক ছিলেন। তবে কর্মসূচি চলাকালে ভর্তি বন্ধ রাখলেও সেখানে নিয়ে যাওয়া শিশুদের দেখে ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন তারা। </p> <p>এ ছাড়া জরুরি বিভাগে বেলা ২টা থেকে প্রায় চারটা পর্যন্ত রোগী দেখা ও ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। ওই সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, কর্মবিরতিতে থাকা চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকের এক পর্যায়ে বিকেল ৪টা থেকে জরুরি বিভাগে আবার রোগী দেখা ও ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলেও ইনডোরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসক ছিলেন না। এতে করে রোগী ও তাদের স্বজনরা সীমাহীন দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়েন। </p> <p>সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দেখা যায়, চিকিৎসক রোগী দেখছেন। এ সময় জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত ডা. মোমিন উল্লাহ ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জরুরি বিভাগে বেলা ২-৩টা ভর্তি সাময়িক বন্ধ ছিল। ৪টার আগেই আমরা আবার রোগী দেখছি ও ভর্তি দিচ্ছি। এখন তো কর্মসূচি স্থগিত হয়েছে।’ </p> <p>এর আগে কেন্দ্রীয়ভাবে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালগুলোতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। তবে বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা চলেছে। বিকেলে নগরের ন্যাশনাল হসপিটাল, ম্যাক্স হাসপাতাল, মেট্টো, মেট্টোপলিটন, সিএসসিআর, এপিকসহ আরো কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগসহ ইনডোরে ভর্তি স্বাভাবিক ছিল। </p>