সম্প্রতি একটি ওটিটি প্ল্যাটফরমে মুক্তি পেয়েছে ওয়েব ফিল্ম ‘আমলনামা’। এটি নির্মাণ করেছেন দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা রায়হান রাফী। অবশ্য ওয়েব ফিল্মটি মুক্তির পর বিতর্কের মুখে পড়েছেন রাফী। তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন ২০১৮ সালে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হকের স্ত্রী আয়েশা বেগম।
এ ছাড়া প্রথম আলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মানহানির মামলা করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
মূলত ‘আমলনামা’র একটি দৃশ্যে ২০১৮ সালের আলোচিত ঘটনা একরামুল হককে হত্যার সময়কার চিত্র তুলে ধরেন রাফী। সেই দৃশ্য নিয়েই চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
আজ রবিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেন আয়েশা বেগম।
প্রথম আলোর ওই ফটোকার্ডে লেখা, “অনেকে বলছেন, কথিত বন্ধুকযুদ্ধে টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়েই ‘আমলনামা’।”
ফটোকার্ডটি শেয়ার করে স্বামী একরামুল হকের বিষয়টি তুলে ধরে আয়েশা বেগম বলেন, ‘পরিচালক রায়হান রাফী একটি কাল্পনিক মুভি বানিয়েছেন, এই মুভিতে রায়হান রাফী নিজেই প্রথমে স্বীকার করেন যে মুভিটি কোনো সত্য ঘটনার সঙ্গে মিল নেই, তিনি তার মনমতো করে কাল্পনিকভাবে এই মুভিটি বানিয়েছেন। আর আপনারা আজ এই মুভি দেখে আমাদের দোষারোপ ও লজ্জিত করছেন। আপনারা এই মুভিটা আমার স্বামীর ঘটনা বলে অপপ্রচার করতেছেন, আমার স্বামী কোনো প্রকার মাদকদ্রব্যের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
আমার স্বামীকে খুনিরা পরিকল্পিতভাবে এবং নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আজ আপনারা এই মুভি দেখে আমার স্বামীর আসল ঘটনা বলে উল্লেখ করিতেছেন।’
তিনি রায়হান রাফীর উদ্দেশে বলেন, ‘রায়হান রাফী যদি বলেন যে এই মুভিটি একরামুল হকের সত্যি ঘটনার ওপর ভিত্তি করে বানানো হয়েছে, তাহলে তার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করতে বাধ্য হবো। আর আমি রায়হান রাফীকে বলব, এই মুভিটি একরামুল হকের আসল ঘটনার সঙ্গে কোনো মিল নেই এই কথাটা সবার সামনে বলার জন্য অনুরোধ করছি।’
এরপর আয়েশা প্রথম আলোকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘প্রথম আলো এই ঘটনাকে একরামুল হকের আসল ঘটনা বলে প্রচার করেছে, এই মুহূর্তে আমাকে ও আমার দুই মেয়েকে জাতির সামনে অপমান, লজ্জিত ও দোষারোপ করতেছে।
আর পুরো জাতি জানে আমার স্বামী কোনো রকম মাদকদ্রব্য ও অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি মাদকের বিরোধিতা করেছিলেন তাই খুনিরা আমার স্বামীকে অন্যায়ভাবে ও নাটকীয়ভাবে হত্যা করে।’
প্রথম আলোর উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, ‘আমি প্রথম আলোকে বলব তারা যা প্রচার করেছে তা ভুলবশত করেছে, আর যদি তারা তা স্বীকার না করে তাহলে আমি ও আমার দুই মেয়ে মিলে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করতে বাধ্য হবো। আর আমি প্রথম আলোকে অনুরোধ করছি, অতি শিগগিরই এই ঘটনা একরামুল হকের ঘটনার সঙ্গে যে কোনো মিল নেই, এই কথাটি সবার সামনে বলার জন্য।’
এদিকে আয়েশা বেগমের পোস্টটি নজরে এসেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরেরও। তিনি পোস্টটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আয়েশা বেগমের অভিযোগ গুরুতর। আশা করি, রায়হান রাফী এবং প্রথম আলো বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরবেন/সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করবেন।’
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৬ মে রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের নোয়াখালীপাড়ায় মাদকবিরোধী অভিযানে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন তিনবারের কাউন্সিলর একরামুল। ওই বছরের ৩১ মে কক্সবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে আয়েশা এ হত্যাকাণ্ডকে ঠাণ্ডা মাথার হত্যা উল্লেখ করে ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান। ক্রসফায়ারের সময় তার সেলফোনে রেকর্ডকৃত কথোপকথনের অডিও ক্লিপ তিনি সাংবাদিকদের দিয়েছিলেন। যা তোলপাড় ফেলে দেয় পুরো দেশে।