ক্রসকান্ট্রি হাইকিংয়ের পরিকল্পনা করা হয় গত ১৮ ডিসেম্বর। বের হয় পড়ি ২৫ ডিসেম্বরেই। মূলত প্রয়াত কবি হেলাল হাফিজকে উৎসর্গ করেই এই পরিকল্পনা। মূল অনুপ্রেরণা ছিল মৃত্যু, ভালোবাসা, হেলাল হাফিজ।
ক্রসকান্ট্রি হাইকিংয়ের পরিকল্পনা করা হয় গত ১৮ ডিসেম্বর। বের হয় পড়ি ২৫ ডিসেম্বরেই। মূলত প্রয়াত কবি হেলাল হাফিজকে উৎসর্গ করেই এই পরিকল্পনা। মূল অনুপ্রেরণা ছিল মৃত্যু, ভালোবাসা, হেলাল হাফিজ।
সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বের হওয়ার সময় আমার বন্ধু সায়েম শাহাদাতও আমার সঙ্গে বের হয়। আমরা একই ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা করেছি। দুজন একসঙ্গে থাকাতে অনেক কঠিন পরিস্থিতিও সহজ হয়ে যায়। সময়গুলো হয়ে ওঠে আরো আনন্দমুখর ও প্রাণবন্ত।
কত দিন সময় লেগেছে
আমাদের এই হাইকিংয়ে সর্বমোট ৩৭ দিন সময় লেগেছে। যদিও আরো কম সময়ে শেষ করা যেত, কিন্তু আমরা কোনো রেকর্ড কিংবা ইতিহাস করতে বের হইনি।
কত কিলোমিটার পথ হেঁটেছি
‘হেলথ অ্যাপ’-এর রেকর্ড অনুযায়ী, আমরা বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে শাহ পরীর দ্বীপ জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত মোট ১০০৩.৪৬ কিলোমিটার পথ হেঁটেছি।
রাত্রীযাপন
যেহেতু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ছিলাম তাই মোটামুটি সব জায়গায় আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত মানুষ ছিল। থাকা খাওয়া নিয়ে তেমন একটা অসুবিধা হয়নি। বাকিটা মানিয়ে নিয়েছি।
সর্বমোট কত টাকা খরচ হয়েছে
এটার সঠিক কোনো হিসাবে নেই। রাজশাহী থেকে ২৫ ডিসেম্বর বের হওয়ার সময় বিকাশে ১৫০০ টাকার মতো ছিল। আর ক্যাশ সম্ভবত ৫০০-৬০০ টাকা। বাকিটা পথে বের হওয়ার পর ম্যানেজ হয়ে গেছে। বিশেষ করে আমার ভাই বন্ধুরা দূর থেকে হলেও বিকাশ, নগদ, ব্যাংকের মাধ্যমে গিফট পাঠিয়েছেন। বিশেষ করে আমার নিজ বিভাগের বড় ভাই, বন্ধু, ছোট ভাইয়েরা। আর গত ৫ বছর ধরে আমার ব্যক্তিগত একটা অনলাইন বিজনেস আছে। বাকিটা সেখান থেকে খরচ হয়েছে।
কোনো শারীরিক সমস্যা হয়েছিল কি না
আলহামদুলিল্লাহ, পুরো পথে আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। সুস্থ, সুন্দর, প্রাণবন্তভাবেই শেষ করি। হাঁটতে গিয়ে প্রথম প্রথম একটু পা ফুলে যায়, ব্যথা করে, তবে ৮-১০ দিন যাওয়ার পর সব ফ্রি হয়ে গেছে। যদিও আমার সঙ্গে ১০ কেজির ব্যাকপ্যাক ছিল। তবু কোনো অসুবিধা হয়নি।
সারা দিন হাঁটার পর পায়ের যত্ন কিভাবে নেওয়া হতো
প্রথম দিকে ব্যথা বেশি ছিল। তাই হাইকিং শেষ করে, ঠাণ্ডা পানিতে কিছুক্ষণ পা চুবিয়ে রেখে। তারপর মুভ স্প্রে করতাম, তারপর ১০-১২ দিন পর থেকে শুধু ট্রেক শেষ করে ঠাণ্ডা পানিতে কিছুক্ষণ পা চুবিয়ে রাখতাম। তবে কেউ চাইলে সরিষা তেল গরম করেও ব্যথা নিরাময়ের কাজ করতে পারেন।
ছোটবেলায় গ্রামে বেড়ে উঠা তো, মা নানা রকম ন্যাচারাল জিনিস খাওয়ায়ে বড় করছে। তাই মনে হয় এত বড় লং জার্নি তে প্রেশার বা ধকল যায়নি তেমন। মনের জোরটা ছিল একশ একশ। তাই কঠিন পথও সহজ হয়ে গেছে।
মেহেদীর ভাবনা
ক্রসকান্ট্রি হাইকিং শেষ করে বন্ধু শাহাদাত তার গন্তব্যে ফিরে গেছে। আমার গন্তব্য বাকি ৪৯ জেলা পায়ে হেঁটে শেষ করা এবং একটা মেসেজ পৌঁছে দেওয়া ‘Be the source of your own essentials!’
আমরা প্রতিটা পরিবার যদি যথাসাধ্য নিজেদের প্রয়োজনীয় সব কিছু নিজেরা উৎপাদন করি, যে যতটুকু পারি নিজেদের রিসোর্স অনুযায়ী, তাহলেই প্রিয় পরিবারকে ফ্রেশ ও অর্গানিক খাদ্য সরবরাহ করা সম্ভব অন্যথায় বাণিজ্যিক ভাবে ডিপেন্ডেবল হয়ে গেলে মুখ থুবড়ে পড়বে ভেজাল নামক মরীচিকা।
যদিও উচ্চ শিক্ষিত অনেকেই অনলাইন বিজনেসের মাধ্যমে নির্ভেজাল পণ্য সবার মাঝে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। গত ৪-৫ বছর ধরে এ সংখ্যাটা দৃশ্যমান, তাদের সাধুবাদ জানাই। সেটা অফলাইনেও ছড়িয়ে পড়ুক দৃশ্যমানভাবে। সেই সঙ্গে আমরা সবাই যদি খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক হয়ে যাই, তাহলেই পৃথিবীতে সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশুকে আপনি আমি তার মৌলিক ও প্রধান চাহিদা স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিশ্চিত করতে পারি। অন্যথায় আমার মাঝেমধ্যে মনে হয় একটা নতুন প্রাণকে পৃথিবীতে আনার মানুষের কোনো অধিকার নেই।
আমরা বর্তমানে এমন একটা পৃথিবীতে বসবাস করছি যেখানে সব কিছুই বিষক্রিয়ায় ভরা। আমাদের মৌলিক চাহিদা অন্ন বলেন, শিক্ষা বলেন কিংবা চিকিৎসা—যেদিকেই তাকান, স্বস্তি পান? নিজেকে প্রশ্ন করলেই উত্তর পেয়ে যাই আমরা, তাই না? সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশুর জন্য আমি আপনি বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণের নিশ্চয়তা দিতে পারি না, বিশুদ্ধ খাবার মুখে তুলে দিতে পারি না। পুরো পৃথিবীটা আপনার আমার আবর্জনায় ভরপুর। এখানে সেখানে প্লাস্টিকের ছড়াছড়ি, একটু নিজ নিজ চারপাশে তাকালেই বুঝে যাই আমরা।
পায়ে হেঁটে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট তেতুলিয়া টু টেকনাফ শাহ পরীর দ্বীপ পর্যন্ত যেতে প্রতি ইঞ্চি ইঞ্চি জমিতে মনে হয় প্লাস্টিক,পলিথিন দেখেছি। আপনি একটু পর পর রাস্তার দুপাশে, জমিতে, হাট-বাজার থেকে শুরু করে মোটামুটি দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্ত সব যায়গায় কমন জিনিস পাবেন, সেগুলো হলো আমার আপনার ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক, পলিথিন।
এবার পুরো বাংলাদেশ ইমাজিনেশন করলে সর্বনাশটা বুঝে যাবেন। যেগুলো সমতল থেকে সর্বোচ্চ পর্বত পৌঁছে, এমনকি সমুদ্রের তল দেশ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছি মানব সভ্যতার কল্যাণে। অত্যন্ত আনন্দের বিষয় না, বলেন? সে আনন্দে একটা প্রশ্ন করি, সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া একটা প্রাণ এমন পৃথিবী চেয়েছিল বুঝি মানবসভ্যতার কাছে?
যেখানে জন্ম নেওয়ার পর থেকেই একটা প্রাণের শাস্তি শুরু হয়ে যায়, এমন পৃথিবীতে নিষ্পাপ প্রাণেরা আসতে চেয়েছিল কি? আমার জানা নেই।
তাই সবার কাছে আমার একটাই মেসেজ, নিজের চারপাশে প্রতিটা ইঞ্চি ইঞ্চি মাটিতে প্লাস্টিক নয়, পারলে নিজেরা খেতে পারেন, এমন কোনো শাক-সবজি, সেটা হোক একটা মরিচ গাছ কিংবা একটা লাউ গাছ লাগান। নিজেদের জন্য নিজেরা উৎপাদন করে খান, বাড়ির চারপাশে দেশীয় ফলগাছ লাগান, কাঠ গাছ দিয়ে ভরপুর করে দিয়েন না এবং পাবলিক প্লেস গুলোতেও কাঠ গাছ না লাগিয়ে ফল গাছ লাগান।
আমাদের কমন একটা ন্যাচারের কথা মনে পড়ল, পাবলিক প্লেসে কিংবা নিজের বাড়ি থেকে দূরের কোনো জমিতে ফল গাছ লাগালে ব্যক্তির লাভ নেই—এই ভেবে দূরের জমিগুলোতে দেখবেন কাঠ গাছ লাগায়। অথচ মানব সভ্যতার কল্যাণে এই যায়গা গুলোতে ফলগাছ লাগানো উচিত ছিল। একটা গাছ বীজ থেকে ফুটে চারা গাছ হয়ে তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফুল ফল ধরতেছে এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য কি হতে পারে। তারপর নিজে খেলেন, না পাখি খেল, না কোনো পথিক- তাতে কি আসে যায়।
তাই এখানে সেখানে যত্রতত্র প্লাস্টিক পলথিন না ফেলে আমার আপনার চারপাশের মাটিগুলো উৎপাদনমুখী করে তুলি। নয়তো বাণিজ্যিক খপ্পরে আটকে যাবে আপনার, আমার ও ভবিষ্যৎ শিশুর প্রাণ।
আমার জন্মস্থান কুমিল্লা। তেতুলিয়া টু টেকনাফ ক্রসকান্টি হাইকিংয়ে আমার ১৫টা জেলা কভার হয়ে গেছে। আমি আপাতত টেকনাফ আছি। আজকালের মধ্যেই বাকি ৪৯ জেলা পায়ে হেঁটে দেখতে বের হয়ে যাব। একদিন পুরো পৃথিবী। তা ছাড়া পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশনের জন্য দেশের বাইরে পাড়ি জমানোর প্ল্যান আছে। তাই ইচ্ছে পুরো বিশ্বে পদচিহ্ন রাখার আগে নিজের দেশে পদচিহ্ন এঁকে নিজেকে দেখে যাই।
সবার নিকট দোয়া ও ভালোবাসা কামনা করছি, যেন বাকি জেলাগুলো শেষ করে সুস্থ ও সুন্দরভাবে ফিরতে পারি মায়ের কাছে।
লেখক : সাবেক শিক্ষার্থী, মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
সম্পর্কিত খবর
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি দ্বীপ সন্দ্বীপ। এটি মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত। দেশের অত্যন্ত প্রাচীন এই দ্বীপ প্রায় ৫ লাখের মতো মানুষ বাস করে। দ্বীপটি ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫ থেকে ১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত।
দ্বীপের প্রত্যেকটি জায়গা দেখার মতো। ফসল ভরা মাঠ, সবুজ প্রকৃতি, হাট-বাজার সব কিছুই প্রকৃতির মতোই সুন্দর। দ্বীপের উত্তর থেকে দক্ষিণের সব প্রান্ত ঘুরে দেখতে পারেন অনায়াসে। দ্বীপের উত্তরে তাজমহলের আদলে নির্মিত শত বছরের পুরনো মরিয়ম বিবি সাহেবানী মসজিদ।
সন্দীপের দর্শনীয় স্থান
দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান জেটি
সন্দ্বীপ গুপ্তছড়া ঘাটে নির্মিত হয়েছে দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান জেটি। জেটির দুই পাশের ল্যাম্পপোস্টের আলোর সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হবেন। সাগরের গর্জনের শব্দের সঙ্গে সঙ্গে সাগরের শীতল হাওয়া আপনাকে এনে দিবে অনাবিল প্রশান্তি। এই জেটির দুই পাশে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন, যা জেটির সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
সমুদ্রসৈকত
সৈকতটি সন্দ্বীপের রহমতপুরে ইউনিয়নে অবস্থিত।
সবুজ চর
নাম শুনেই হয়তো অনেকটা অনুমান করতে পারছেন, কেন এই জাইগাটির নাম সবুজচর। স্থানীয় অনেকে এই স্থানটিকে গ্রিনল্যান্ডও বলে। এই স্থানটি সন্দ্বীপের দীঘাপাড় ইউনিয়নে অবস্থিত। প্রকৃতির শান্ত স্নিগ্ধরূপ, সবুজ ঘাসের গালিচায় মোড়ানো এই চরটি। যতদূর চোখ যাবে সবুজ আর সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্য আপনাকে উৎফুল্ল করবে।
এই চরে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন এবং এই বনে রয়েছে বক, চিল, মাছরাঙা, বালিহাঁস, ময়না, টিয়া, ঘুঘুসহ আরো অনেক রকম পাখি। শীতকালে অতিথি পাখির কলকাকলীতে মুখরিত হয়ে ওঠে এই গ্রীনল্যান্ডটি। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল, সিএনজি দিয়ে সন্দ্বীপ কমপ্লেক্স থেকে ৩০-৪০ মিনিটে মধ্যে পৌঁছে যাবেন সবুজ চর।
ভ্রমণের সেরা সময়
সন্দ্বীপ ভ্রমণ করার জন্য যদিও শীতকালকে সবচেয়ে উপযুক্ত ধরা হয়, তবে আপনি চাই বর্ষা ছাড়া অন্য যেকোনো ঘুরতে যেত পারেন। এ সময় আপনি চাইলে ক্যাম্পিং করতে পারবেন সেখানে।
খাবারের সুবিধা
সন্দ্বীপের স্থানীয় খাবার হোটেলে সাধারণ সকল খাবার পাবেন এবং খাবারের মানও স্বাভাবিক মানের হবে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান, চাইনিজসহ অনেকে ধরনের খাবারের রেস্টুরেন্ট পাবেন। শিবের হাট এলাকায় গেলে পাবেন প্রায় ৮০ বছরের ঐতিহ্য বিনয় সাহার ছানা মিষ্টি।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে স্টীমারে সন্দ্বীপ যেতে চাইলে প্রথমেই যেতে হবে সদরঘাট। সপ্তাহে তিন দিন এই সার্ভিস থাকে, যা সকাল ৯ টায় সদরঘাট ছেড়ে যায় সন্দ্বীপের উদ্দেশে।
সড়ক পথে যেতে চাইলে
সড়ক পথে যেতে চাইলে দেশের যেকোনো প্রান্ত হতে চট্টগ্রামগামী বাসে করে চলে যান সীতাকুণ্ডের কুমিরা স্টিমার ঘাট। সেখান থেকে ভাড়ায় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা করে চলে যাবেন স্টিমার ঘাটে। এই ঘাটের নাম কুমিরা-গুপ্তছরা ঘাট। এই প্রান্তে কুমিরা এবং অপর পাশে সন্দ্বীপের গুপ্তছরা।
কুমিরা থেকে সন্দ্বীপ যাওয়ার পথে পাবেন স্পীডবোট, ট্রলার এবং সি-ট্রাক। ট্রলার জোয়ারের সময় ছাড়ে, আর সি-ট্রাক বেলা বারোটার দিকে। তাই সবচেয়ে ভালো অপশন স্পীডবোট। তাই সেখানে পৌঁছেই কাউন্টারে গিয়ে নাম লিখিয়ে সিরিয়াল নিয়ে নেবেন। ওপারে পৌঁছে গুপ্তছরা ঘাট থেকে এনাম নাহার (মূল শহর) পর্যন্ত সিএনজি অটোরিকশা পাবেন। এ ছাড়া সরাসরি পশ্চিমপাড় ঘাট চলে গেলেও পারেন।
তবে সম্প্রতি চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ রুটি ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামের বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট থেকে গুপ্তছরা ফেরিঘাট পর্যন্ত যায় এই ফেরি। দিনে দুই আসা যাওয়া করে এই ফেরি। সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো। এ যাত্রায় ভাড়া পড়তে পারে ৮০-১০০টাকা। তবে ফেরির রুটটি নতুন হওয়ায় এখনো সময় নির্ধারণ করা হয়নি। তাই আপাতত অন্যপথে যাওয়াই ভালো হবে। তবে আশা করা যায় খুব শীঘ্রই পথটি এ পথে চলাচল করা মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে।
থাকার ব্যবস্থা
সন্দ্বীপ টাউন কমপ্লেক্সে পৌঁছে হোটেল নিয়ে নিন। এনাম নাহারে বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে থাকা যেতে পারে। এজন্য যোগাযোগ করতে হবে উপজেলা পরিষদে।
ক্যাম্পিং সুবিধা
যারা ক্যাম্পিং করতে চান তারা সন্দ্বীপ টাউন কমপ্লেক্সে পৌঁছে সরাসরি চলে যান দ্বীপের পশ্চিমে একেবারেই নদীর কিনার ঘেঁষে রহমতপুর বিচ। এক্ষেত্রে স্থানীয়দের সাহায্য নিতে পারেন। উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করে তাবু করে নিন। রাতের মিটিমিটি আলো, খোলা আকাশের নিচে নদীর কলকল ধ্বনি ঘন কুয়াশায় কয়েকটি রাত পার করে দিতে পারবেন একেবারেই অনায়াসে। এ ছাড়া কবির কফি হাউজ তো আছেই। যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই কবির কফি হাউজের দেখা মিলবে।
সূত্র : আদার ব্যাপারী
ঈদের টানা ছুটিতে পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ হাজার পর্যটকের ভিড় জমেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভ্রমণপিপাসুদের ঢল নামায় হোটেল-মোটেলের বুকিং ১০০% পূরণ হয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভারতের ভিসা জটিলতাকে কারণ হিসেবে দেখছেন স্থানীয় পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
বান্দরবানের বিজয়, কেউক্রাডং, নাফাখুম, দেবতা খুমের মতো পর্যটন স্পটগুলোতে উপচে পড়া ভিড়।
ঢাকার মোহুয়া রহমান বলেন, 'প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন ছুঁয়ে যায়। আগেও এসেছি, এবারও ছুটে এলাম।
গত বছর কুকিচিনের অস্থিরতায় ক্ষতি হলেও এবার ঈদে বুকিং ধরা দিয়েছে রেকর্ড পরিমাণে। হোটেল গার্ডেন সিটির মালিক জাফর উল্লাহ জানান, ২৫টি রুম আগাম বুক হয়েছে। আরণ্যক হোটেলের জসিম উদ্দিন বলেন, 'পর্যটকদের নিরাপত্তা ও আরামের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি।
জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি জানান, পর্যটন স্পটগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বাড়তি ভাড়া রোধে মোবাইল টিম কাজ করছে। বিদেশী পর্যটকদের জন্য অনলাইন সেবাও চালু রয়েছে। তিনি বলেন, 'এবারের ঈদে পর্যটকরা নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে সময় কাটাতে পারবেন।'
হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানান, ৬ হাজার পর্যটকের ধারণক্ষমতা সম্পূর্ণ ভরা রয়েছে।
সমুদ্রের কথা মনে পড়লে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে নীল জলরাশি, যা আছড়ে পড়ে সৈকতে। তবে কখনো কি ভেবেছেন কালো বালির সৈকত সম্পর্কে?
কালো বালির সৈকতগুলো এমন জায়গা, যেখানে বালির রঙ সাধারণত কালো বা ধূসর হয়ে থাকে। এগুলো বিশেষভাবে আগ্নেয়গিরির লাভা বা তুষারের অবশিষ্ট অংশ থেকে তৈরি হয়। সমুদ্রের নীল পানি কালো বালির উপর আছড়ে পড়লে তখন সাদা-কালোর এক অদ্ভুত ক্যানভাস সৃষ্টি হয়।
পুনালুউ সমুদ্র সৈকত, হাওয়াই
হাওয়াইয়ের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত পুনালুউ বিচ কালো বালির জন্য বিখ্যাত। এটি আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে তৈরি হয়েছে এবং এক অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপহার দিয়েছে। সৈকতটি তার শান্ত পরিবেশ ও বিশাল ঢেউয়ের জন্য জনপ্রিয়। এখানে পর্যটকরা সাঁতার কাটার জন্য আসেন।
রেইনিসফিয়ারা সমুদ্র সৈকত, আইসল্যান্ড
আইসল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত রেইনিসফিয়ারা সমুদ্র সৈকত একটি অসাধারণ কালো বালির সৈকত। যা আগ্নেয়গিরির লাভা প্রবাহের কারণে তৈরি হয়েছে। এখানে বিশাল আগ্নেয়গিরির পাথর ও নানা আকৃতির শিলা দেখতে পাওয়া যায়। এই সৈকতটি পেঙ্গুইন ও অন্যান্য প্রজাতির পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত।
লাভা সমুদ্র সৈকত, ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার লাভা সমুদ্র সৈকত বালি দ্বীপের উত্তরে অবস্থিত। যেখানে আগ্নেয়গিরির ধ্বংসাবশেষ থেকে তৈরি হওয়া কালো বালির দৃশ্য অসাধারণ। সৈকতের শান্ত পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখানে আসা পর্যটকদের কাছে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
সান্তিয়াগো সমুদ্র সৈকত, চিলি
চিলির সান্তিয়াগো কেন্দ্রীয় উপকূলে অবস্থিত এবং পর্যটকদের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ গন্তব্য হিসেবে পরিচিত। সৈকতের আশেপাশে রয়েছে কিছু জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট ও কফি শপ। যেখানে পর্যটকরা সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগ করতে করতে আরাম করতে পারেন।
এই কালো বালির সৈকতগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণপ্রেমীদের আকর্ষণ করে।
সূত্র : কলকাতা ২৪×৭
চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত পারকি সি-বিচ। একটা সময় সমুদ্রসৈকত বলতে শুধু কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত বোঝানো হলেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে এই পারকি সমুদ্রসৈকতও। একদিকে ঝাউবনের সবুজের সমারোহ, আরেক দিকে নীলাভ সমুদ্রের বিস্তৃত জলরাশি আপনাকে স্বাগত জানাবে।
এ ছাড়া সমুদ্র তীরের মৃদুমন্দ বাতাস আপনার মনকে আনন্দে পরিপূর্ণ করে দেবে নিমেষেই।
একটা সময় এই সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার রাস্তাটি খুব একটা ভালো ছিল না।
এ ছাড়া রয়েছে সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানোর জন্য স্পিডবোট, সমুদ্রতীরেই ঘুরে বেড়ানোর জন্য সি-বাইক আর ঘোড়া।
পারকি সি-বিচ যাওয়ার উপায়
বোটে যেতে চাইলে চট্টগ্রাম শহরের যেকোনো জায়গা থেকে যেতে হবে পতেঙ্গা ১৫ নম্বর যেটি। এ যাত্রায় যেতে পারেন সিএনজি বা অন্য যেকোনো বাহনে। সেখান থেকে বোটে করে কর্ণফুলী নদী পার হতে হবে। সেখানে অপেক্ষমাণ অটোরিকশা নিয়ে যেতে পারেন পারকি সৈকতে।
আরেকটি ভিন্ন পথ আছে। সেটি হচ্ছে কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু দিয়ে সরাসরি যেতে পারবেন পারকি সৈকতে। তবে সে ক্ষেত্রে সময় ও অর্থ দুই বেশি যাবে। এর জন্য চট্টগ্রাম শহরের যেকোনো স্থান থেকেই বাস অথবা টেম্পোতে করে চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতু বা তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর কাছে যেতে পারেন। সেখানে গেলেই আপনি বটতলী মোহসেন আউলিয়ার মাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখবেন। তবে খেয়াল রাখবেন, ভুলে যেন বাস কন্ডাক্টরের বৈলতলী উচ্চারণের সঙ্গে বটতলীকে গুলিয়ে ফেলবেন না। দুটি কিন্তু দুই জায়গা।
পারকি বিচে যেতে হলে আপনাকে বটতলী মোহসেন আউলিয়া মাজারগামী বাসে উঠতে হবে। প্রাচীন এই মাজারটি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত। বাসে উঠে কন্ডাকটরকে বলতে হবে যেন আপনাকে সেন্টার নামক স্থানে নামিয়ে দেয়। জায়গাটির প্রকৃত নাম মালখান বাজার, তবে এটি সেন্টার নামেই পরিচিত।
সেন্টারে নেমে বিচে যাবার জন্য রিজার্ভ নেওয়ার মতো সিএনজি পাবেন। বিচে যাওয়ার আগে খাবারদাবারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সেন্টার বাজার কিংবা কিছুটা দূরেই চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার হাউজিং কলোনী সংলগ্ন বাজার থেকে নিয়ে নিতে পারেন। বিচেও কিছু দোকানপাট রয়েছে। তবে তাতে সবকিছু নাও পেতে পারেন, পেলেও দাম কিছুটা বেশি হতে পারে। আর চাইলে চট্টগ্রাম শহর থেকেও সিএন জি রিজার্ভ করে যেতে পারেন।
সমুদ্রসৈকতের কাছেই রাঙ্গাদিয়া পুলিশ ফাঁড়ি। যেকোনো সমস্যায় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
সূত্র : আদার ব্যাপারী