<p>মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথা বলেছিলেন বিজেপি প্রার্থী সাবেক বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ‘নিচু পর্যায়ের ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি আদর্শ আচরণবিধি ভেঙেছেন। তাই তিনি বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রচার করতে পারবেন না।’</p> <p>কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পদ থেকে আগাম অবসর নিয়ে রাজনীতির ময়দানে নামেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যোগ দেন বিজেপিতে। দল তাকে তমলুকে প্রার্থী করেছে। গত ১৬ মে তৃণমূল কংগ্রেস তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানায়। ১৫ মে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় হলদিয়ার এক জনসভায় বলেছিলেন, ‘তৃণমূল বলছে, রেখা পাত্রকে কেনা হয়েছিল ২০০০ রুপিতে! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তুমি কত টাকায় বিক্রি হও? তোমার হাতে কেউ আট লাখ রুপি গুঁজে দিলে চাকরি হয়, কেউ ১০ লাখ রুপি দিলে রেশন হাওয়া হয়ে যায়! কেন তোমার দাম ১০ লাখ রুপি? তুমি কেয়া শেঠকে দিয়ে মুখে মেকআপ করাও বলে? আর রেখা পাত্র গরিব মানুষ, লোকের বাড়িতে কাজ করে, আমাদের প্রার্থী। সে জন্য তাকে দুই হাজার রুপিতে কেনা যায়?’</p> <p>সাবেক বিচারপতির করা এই বক্তৃতার ভিডিও প্রকাশ্যেও এসেছে। তবে তার সত্যতা যাচাই করা যায়নি। তবে নির্বাচন কমিশন তার নির্দেশে বলেছে, তারা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ওই আচরণের নিন্দা করছে, তিনি ২১ মে বিকেল ৫টা থেকে ২২ মে বিকেল পর্যন্ত প্রচার করতে পারবেন না। কমিশন তাকে কড়াভাবে জানাচ্ছে, তিনি যেন ভবিষ্যতে সতর্ক থাকেন এবং আদর্শ আচরণবিধি মেনে চলেন।</p> <p>এর আগে ১৭ মে নির্বাচন কমিশন সাবেক বিচারপতিকে শোকজ করে। তিনি সোমবার তার শোকজের জবাব দেন।</p> <p>কমিশন জানিয়েছে, ‘সাবেক বিচারপতি ও বিজেপি প্রার্থী যা বলেছেন, তা নারীদের প্রতি মর্যাদা হানিকর। কোনো নারীকেই এ ধরনের কথা বলা যায় না। আর অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ওই কথাগুলো বলেছেন এক প্রবীণ রাজনৈতিক নেত্রী ও সাংবিধানিক পদে থাকা নারীর বিরুদ্ধে। তার শিক্ষা ও কাজের পটভূমি দেখার পর তাকে বেনিফিট অব ডাউট দেওয়া যায় না।’</p> <p>অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘সাবেক বিচারপতি বিজেপির ভদ্রলোক-মুখ হতে গেছিলেন। কিন্তু প্রথম নির্বাচনেই তাকে নিন্দার মুখে পড়তে হলো। এটাই বিজেপির ভবিতব্য। বিজেপির প্রত্যেকেই একজন শুভেন্দু অধিকারী, মুখ খুললেই শুধু আবর্জনা বের হয়। কারো আগে, কারো পরে।’</p> <p>এদিকে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ অভিজিৎ এবিপি আনন্দকে জানিয়েছেন, কমিশনের এই নির্দেশে তার মানহানি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্য কমিশনে আরজি জানাবেন তিনি।</p> <p>সাবেক বিচারপতি বলেন, ‘আমি কমিশনকে জবাব দিতে গিয়ে বলেছিলাম, যদি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তার আগে যেন অতিরিক্ত জবাব (সাপ্লিমেন্টরি রিপ্লাই) দেওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু কোনো সুযোগ না দিয়েই কমিশন এই নির্দেশ দিয়েছে। অন্য লোকের মান আছে, রেখা পাত্রের মান নেই, আমার মান নেই, তা তো হতে পারে না! দরকারে কমিশনের এই নির্দেশ খারিজ করার আরজি জানিয়ে আমি আদালতে যাব।’</p> <p>এ ছাড়া অভিজিতের বিরুদ্ধে কমিশনের পদক্ষেপ নিয়ে ক্ষুব্ধ শুভেন্দু অধিকারীও। রাজ্যের বিরোধী এই দলনেতা বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিষাদলে এসে কী সব বলে গেছেন। তখন কি নির্বাচন কমিশন ঘুমোচ্ছিল? বাপ-বেটা, গাদ্দার—কত কী বলেছেন। ওদের জন্য এক নিয়ম আর অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্য আলাদা নিয়ম?’</p> <p>সূত্র : ডয়চে ভেলে, আনন্দবাজার পত্রিকা</p>