<p>ইরানের রাজধানী তেহরানে এক হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া। নিজ ভূখণ্ডে এমন হত্যার ঘটনা ইরানের জন্য লজ্জাজনক খবর হলেও বিশ্ববাসী এ বিষয়ে কতটুকু তথ্য জানবে তা বলতে গেলে শাসকগোষ্ঠীই নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশটির সরকারের অনুকূলে যেসব বিষয় কাজ করে তার মধ্যে এই তথ্য নিয়ন্ত্রণের দিকটিও রয়েছে। এখন পর্যন্ত ইরানের ভাষ্য, প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পর হানিয়া তেহরানের যে ভবনে অবস্থান করছিলেন, সেখানেই ‘গাইডেড মিসাইল’ ছুড়ে তাঁকে হত্যা করা হয়। এর চেয়ে বেশি তথ্য জানা যায়নি। ইসরায়েলও হত্যার দায় স্বীকার করেনি, যদিও আগে থেকেই তাঁকে হত্যার অঙ্গীকার করে এসেছে তেল আবিব। হানিয়া তেহরানের একটি সরকারি গেস্ট হাউসে অবস্থান করছিলেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে অবশ্য বলা হয়েছে, ইরানসহ কয়েকটি দেশের কর্মকর্তারা বলেছেন, দুই মাস আগেই  ভবনটিকে ইসরায়েল দূর নিয়ন্ত্রিত বোমা পেতে রেখেছিল।</p> <p>সত্য যা-ই হোক না কেন, হামলাটি স্পষ্টতই ইরানের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন এবং রাজধানী তেহরানের কথিত নিরাপত্তা ব্যবস্থার মুখে চপেটাঘাত। হানিয়া ছিলেন ইরান সরকারের অতিথি। তাই সফররত মিত্রদের সাধারণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে দেশটির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।</p> <p>অতীতেও এ ধরনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে ইরান। ২০২০ সালে দেশটির শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মহসিন ফখরিজাদেহ হত্যাকাণ্ডের জবাবে সীমিত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল তেহরান। এর কয়েক মাস আগে কুদস বাহিনীর কমান্ডার প্রভাবশালী সামরিক ব্যক্তিত্ব কাশেম সুলেইমানিকে হত্যার পর কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ইরান। যদিও মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘাঁটিতে হামলা করেই থেমে যায় ইরান। এবারও একই প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে দেশটি।<br /> হানিয়াকে হত্যার পর থেকে হুংকার দিয়ে আসছে ইরান।</p> <p>সবশেষ দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলে হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে ইরানের সামনের পথ সুগম নয়। এটা স্পষ্ট যে গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়াতে অনিচ্ছুক ছিল ইরান। কারণ এই ধরনের সংঘাত লেবানন ও ইসরায়েল—উভয়ের জন্য সমানভাবে ক্ষতিকর। এ ছাড়া হিজবুল্লাহ হলো ইরানের হুকুমের ‘এক্কা’, যা সম্ভবত একবারই ব্যবহার করতে পারবে তেহরান। পারমাণবিক কর্মসূচির উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং নিষেধাজ্ঞায় ক্ষয়িষ্ণু সেনাবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি কাটাতে হিজবুল্লাহকে সঠিক সময়ে উপস্থাপন করতে হবে ইরানকে।</p> <p>হানিয়া হত্যাকাণ্ডে ইরানের প্রতিক্রিয়া আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে দেশটির অবস্থান নির্ধারণ করে দেবে। আর যথেষ্ট শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে ইরানের পা পিছলে যাবে। ইরানের ভাবমূর্তির যে ক্ষতি হয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহ ক্রমাগত হামলা চালালেও তা কাটিয়ে ওঠা যাবে না।</p>