<p>গাজার উত্তরাঞ্চলের বেইত লাহিয়া শহরে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ৭৩ জন নিহত এবং আরো অনেকে আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজা উপত্যকার হামাস পরিচালিত কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সময় শনিবার গভীর রাতে বোমাবর্ষণের পর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে অনেকে এখনো আটকা পড়ে আছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।</p> <p>ইসরায়েল বলছে, তারা হতাহতের খবর যাচাই করে দেখছে। তবে তারা হামাসের দেওয়া তথ্যকে ‘অতিরঞ্জিত’ উল্লেখ করে বলেছে, এর সঙ্গে তাদের সামরিক বাহিনীর তথ্যের মিল নেই।</p> <p>শহরের ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে ইসরায়েলি সেনাদের ব্যাপক গোলাগুলির খবর প্রকাশের পরই সর্বশেষ বিমান হামলা চালানো হয়। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, ওই অঞ্চলের যোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেইত লাহিয়ায় উদ্ধার তৎপরতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।</p> <p>হামাস পরিচালিত সরকারের মিডিয়া অফিস বলছে, জনবহুল আবাসিক এলাকায় বোমা হামলা করা হয়েছে এবং এতে ৭৩ জন মারা গেছে। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থাও একই রকম তথ্য দিয়েছে। তবে স্বাধীনভাবে নিহতদের এই সংখ্যার তথ্য যাচাই করা যায়নি। ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, পুরো আবাসিক কমপ্লেক্সটি ওই হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।</p> <p>অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা ‘হামাসের সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে’ হামলা করেছে এবং ‘বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে তারা সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নিয়েছে’।</p> <p>ইসরায়েল অক্টোবরের শুরু থেকে নতুন করে গাজার উত্তরাঞ্চলে সামরিক অভিযান শুরু করেছে। তারা বলছে, হামাসের ওই এলাকায় পুনরায় সংগঠিত হওয়া থেকে হামাসকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে তারা। বিশেষ করে ইসরায়েলি বাহিনী ঘনবসতিপূর্ণ জাবালিয়া এলাকায় বোমাবর্ষণ করেছে। এর মধ্যে একটি শরণার্থীশিবিরও আছে। শুক্রবার সেখানে হামলায় ৩৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।</p> <p>সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ওই এলাকায় কোনো সহায়তা আসেনি। ইসরায়েলের নিজেদের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সেপ্টেম্বরের তুলনায় সার্বিকভাবে ধ্বসে পড়েছে। জাতিসংঘের শীর্ষ মানবিক সহায়তা কর্মকর্তা জয়সে এমসুয়া শনিবার বলেছেন, উত্তর গাজায় ফিলিস্তিনিরা ‘অবর্ণনীয় ভয়াবহতা’র মধ্যে রয়েছে এবং তিনি এসব নৃশংসতা বন্ধের আহবান জানিয়েছেন।</p> <p>ইসরায়েলের একজন মন্ত্রী আমিচাই চিকলি জানিয়েছেন, ইসরায়েল গাজার উত্তরাঞ্চলের একটি অংশ অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তিনি নিউজ আওয়ার প্রোগ্রামে বলেছেন, ‘আমরা বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদ এলাকায় যাওয়ার সুযোগ দিয়েছি এবং অবরুদ্ধ এলাকায় সব কিছু সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।’ আইডিএফ লোকজনকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করে দিয়েছে বলেও জানান তিনি। তার মতে, এটা করা হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে’।</p> <p>এদিকে গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না—এমন তথ্য ইসরায়েল বারবার প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে প্রবেশের সুযোগ বাড়ানোর কথা বলেছে, না হলে তাদের সামরিক সহযোগিতা কমে যাওয়ার ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছে তারা।</p> <p>গাজায় হামাস পরিচালিত কর্তৃপক্ষের হিসাবে, গত বছর অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সাড়ে ৪২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক লাখ মানুষ আহত হয়েছে। হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালালে এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়। পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় তারা। এর পর এ যুদ্ধ শুরু হয় এবং ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করে দেওয়ার অঙ্গীকার করে।</p> <p>সূত্র : বিবিসি</p>