<p>যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো রাশিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। সূত্রকে উদ্ধৃত করে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এখন রাশিয়ার ভেতরে এই রকেট হামলার অনুমতি দিয়েছে। তবে হোয়াইট হাউস এখনো বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।</p> <p>বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএসের মতে, বিদায়ি বাইডেন প্রশাসন কিয়েভকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে সীমিত হামলার জন্য মার্কিন তৈরি ‘এটিএসিএমএস’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এই দূরপাল্লার রকেট যখন ইউক্রেনের হাতে তুলে দেয়, তখন আমেরিকার শর্ত ছিল, শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে তা ব্যবহার করতে হবে। রাশিয়ার ভেতরে এই রকেট ব্যবহার করা যাবে না।</p> <p>তখন ওয়াশিংটন এ ধরনের হামলার অনুমতি দেয়নি, কারণ আশঙ্কা ছিল এটি রাশিয়ার ভেতরে গিয়ে আঘাত করলে যুদ্ধের তীব্রতা অনেকটাই বেড়ে যাবে। সূত্র জানিয়েছে, এই এটিএসিএমএস রকেট ৩০৬ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দুই মাস আগে এমন অনুমতি দিল ইউক্রেনকে।</p> <p>ইউক্রেন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অধিকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে রাশিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম ব্যবহার করছে, যা সাধারণত এটিএসিএমএস নামে পরিচিত। তারা অধিকৃত ক্রিমিয়ান উপদ্বীপে বিমানঘাঁটি এবং জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে সামরিক অবস্থানে হামলার জন্য ‘এটিএসিএমএস’ ব্যবহার করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনোই কিয়েভকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে দেয়নি।</p> <p>লকহিড মার্টিন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে দেওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। যা ৩০০ কিলোমিটার (১৮৬ মাইল) পর্যন্ত ভ্রমণ করতে সক্ষম। ইউক্রেন যুক্তি দিয়েছিল, রাশিয়ার অভ্যন্তরে এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি না দেওয়া মানে, ‘পিঠের পেছনে এক হাত বেঁধে যুদ্ধ করতে বলা’।</p> <p>তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এখনো এই পদক্ষেপের বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। গতকাল রবিবার তিনি বলেছেন, ‘কথা দিয়ে হামলা করা হয় না... মিসাইল নিজেদের পক্ষে কথা বলবে।’</p> <p><strong>ক্ষেপণাস্ত্র কী প্রভাব ফেলবে?</strong></p> <p>ইউক্রেন এখন রাশিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এই হামলা সম্ভবত কুরর্স্ক অঞ্চলের আশপাশে হবে।</p> <p>মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন,  কিয়েভ রাশিয়ান এবং উত্তর কোরিয়ার সেনাদের সম্ভাব্য পাল্টা আক্রমণ রুখে দিতে এটিএসিএমএস রকেট ব্যবহার করতে পারবে। সেনা, অবকাঠামো এবং গোলাবারুদের গুদামসহ ইউক্রেনীয় বাহিনী এখন কুরর্স্কে রুশ অবস্থানে আঘাত হানতে সক্ষম হবে।  </p> <p>তবে এটিএসিএমএস রকেট ব্যবহার সম্ভবত যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে না। রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জাম, যেমন যুদ্ধবিমান ইতিমধ্যেই রাশিয়ার অভ্যন্তরে আরো অনেক বিমান ঘাঁটিতে স্থানান্তরিত হয়েছে এ ঘটনার পর। তবে অস্ত্রগুলো ইউক্রেনকে এমন সময়ে দেওয়া হয়েছে, যখন রাশিয়ান সেনারা দেশটির পূর্বে অবস্থান করছে এবং মনোবল অনেকটা ভেঙে পড়েছে। এই পরিস্থিতি ইউক্রেনকে কিছুটা সুবিধা দিতে পারে। </p> <p>বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক কিয়েভের একজন পশ্চিমা কূটনীতিক বিবিসিকে বলেছেন, <br /> ‘এটিএসিএমএস রকেট সিদ্ধান্ত রাশিয়ার জন্য যুদ্ধের খরচ বাড়াতে পারে।’ </p> <p>এদিকে ওবামা প্রশাসনে প্রতিরক্ষা উপ-সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ইভলিন ফারকাস বলেছেন, ‘ ইউক্রেনকে কী পরিমাণ গোলাবারুদ সরবরাহ করা হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘প্রশ্ন হলো, তাদের (আমেরিকা) কাছে কতটি ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে? আমরা শুনেছি, ইউক্রেনকে দেওয়ার মতো এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই তাদের কাছে নেই বলে পেন্টাগন সতর্ক করেছে।’</p> <p>ফারকাস বলেছেন, “এটিএসিএমএস রকেট ইউক্রেনে একটি ‘ইতিবাচক প্রভাব’ ফেলতে পারে। যদি তারা এটি ব্যবহার করে কের্চ ব্রিজের মতো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। যে সেতুটি ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।’</p> <p>মার্কিন এই অনুমোদনের আরো কিছু পরিণাম হতে পারে। তা হচ্ছে, রাশিয়ার অভ্যন্তরে স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের জন্য ইউক্রেনকে অনুমতি দিতে ইউকে এবং ফ্রান্সকে বাধ্য করা। স্টর্ম শ্যাডো হল একটি ফ্রাঙ্কো-ব্রিটিশ দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যা আমেরিকান এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্রের অনুরূপ ক্ষমতাসম্পন্ন। বাইডেন প্রশাসন কয়েক মাস ধরে সংঘাত বৃদ্ধির ভয়ে রাশিয়াকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত করার জন্য ইউক্রেনকে অনুমোদন দিচ্ছিল না।</p> <p>ন্যাটোতে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত কার্ট ভলকার বলেছেন, ‘ইউক্রেনের আমেরিকান অস্ত্র ব্যবহারের পরিসর সীমিত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অযৌক্তিকভাবে ইউক্রেনের আত্মরক্ষায় একতরফা বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার সীমিত করার সিদ্ধান্ত ‘সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচারী এবং রাশিয়াকে উসকানি দেওয়ার’ ভয়ে করা হয়েছিল।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="মণিপুরে এবার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, তিন জেলায় কারফিউ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/18/1731901693-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>মণিপুরে এবার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, তিন জেলায় কারফিউ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/world/2024/11/18/1447925" target="_blank"> </a></div> </div> <p>রাশিয়ার গভীরে আঘাত হানতে কিয়েভকে ওয়াশিংটনের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তে ইউক্রেইনের যুদ্ধ আরো তীব্র হবে, তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের দিকেও নিয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন একজন জ্যেষ্ঠ রুশ আইনপ্রণেতা।</p> <p>রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের বিষয়ে ওয়াশিংটনের বড় ধরনের নীতি পরিবর্তনের এই বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন দুইজন মার্কিন কর্মকর্তা ও একটি সূত্র যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রবিবার প্রকাশ করেছেন।</p> <p>এর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ সদস্য আন্দ্রি ক্লিশাস টেলিগ্রাম অ্যাপে বলেছেন, ‘পশ্চিমা সংঘাত এমন মাত্রার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তা সকালের মধ্যে ইউক্রেইন রাষ্ট্রকে সম্পূর্ণ ধ্বংসাবশেষে পরিণত করার মধ্য দিয়ে শেষ হতে পারে।’</p> <p>এদিকে পুতিন রাশিয়ার অভ্যন্তরে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিল। মস্কো এ ধরনের ঘটনাকে ইউক্রেনের যুদ্ধে ন্যাটো দেশগুলোর ‘সরাসরি অংশগ্রহণ’ হিসেবে দেখবে। পুতিন বলেন, ‘এটি সংঘাতের মূল চিত্র পাল্টে দিবে।’ </p> <p><strong>ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে?</strong></p> <p> ট্রাম্প ইউক্রেনের যুদ্ধের বিষয়ে কী নীতি গ্রহণ করবেন তা জানাননি। তবে সংঘাত শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।  ট্রাম্পের অনেক শীর্ষ কর্মকর্তা, যেমন নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, ইউক্রেনকে আর কোনো সামরিক সহায়তা দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু পরবর্তী ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যরা ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। </p> <p>জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টজ যুক্তি দিয়েছেন, রাশিয়াকে আলোচনায় বাধ্য করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ ত্বরান্বিত করতে পারে। তবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট কোন পথে যাবেন তা স্পষ্ট নয়। </p> <p>কিন্তু ইউক্রেনের অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্প এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্রসহ অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেবেন। ইউক্রেনের একজন সংসদ সদস্য ওলেক্সি গনচারেঙ্কো বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা আশঙ্কা করছি, ট্রাম্প যুদ্ধ নিয়ে যে কথা দিয়েছেন, তা ফিরিয়ে নেবেন না।’ </p> <p>জানুয়ারিতেই ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন। তার আগে এই খবর সামনে এলো। ট্রাম্প আগে বলেছিলেন, দায়িত্ব নেওয়ার আগেই তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করে দেবেন।</p> <p>সূত্র : বিবিসি</p>