<p>ভারতের উত্তর প্রদেশের সাম্ভালে একটি মসজিদের সমীক্ষাকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় চারজন নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তত ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া সাতটি মামলায় ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সমাজবাদী পার্টির সাম্ভাল আসনের এমপি জিয়াউর রহমানকে মামলার আসামি করা হয়েছে। উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে সাম্ভাল এলাকায় ইন্টারনেট ও স্কুল বন্ধ করা হয়েছে।</p> <p>আদালতের নির্দেশে গত রবিবার সকালে সাম্ভালে মোগল আমলে নির্মিত শাহি জামে মসজিদে সমীক্ষা করতে আসেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ সময় স্থানীয় ও পুলিশের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয়। মসজিদটি একটি হিন্দু মন্দিরের জায়গায় নির্মিত হয়েছে বলে দাবি করে আসছে হিন্দুত্ববাদীরা। এ নিয়ে আইনি লড়াইও চলছে।</p> <p>গত রবিবার সংঘর্ষের সময় বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং পুলিশের দিকে পাথর ছোড়ে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে পুলিশ। সংঘর্ষে প্রায় ২০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। সাম্ভালের পুলিশ সুপার কৃষাণ কুমার বলেন, এমপি জিয়াউর রহমানের বক্তব্যের পর এখানকার পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।</p> <p>ড্রোন ফুটেজ ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের শনাক্ত করা হচ্ছে এবং তাদের জাতীয় নিরাপত্তা আইনে অভিযুক্ত করা হবে। এদিকে এমপি জিয়াউর রহমান সহিংসতার জন্য পুলিশকে দায়ী করেছেন এবং এটিকে ‘ষড়যন্ত্রের অংশ’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারণ তারা সরকারি অস্ত্র নয়, বরং ব্যক্তিগত অস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়েছেন। একটি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে হত্যা করা হয়েছে।</p> <p>সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবের অভিযোগ, সাম্ভালে পাথর নিক্ষেপের ঘটনাটি ছিল সরকার পরিচালিত দাঙ্গা। তিনি বলেন, ‘আমাদের এমপি জিয়াউর রহমান ঘটনার সময় সাম্ভালে ছিলেন না। তা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমাদের কাছে থাকা ভিডিও দেখে নিশ্চিত হয়েছি যে এটি সরকার পরিচালিত দাঙ্গা ছিল।’</p> <p>অখিলেশের অভিযোগ, নির্বাচনে হওয়া অনিয়ম থেকে মানুষের মনোযোগ সরাতে বিজেপি সরকার ও প্রশাসন এই সহিংসতার আয়োজন করেছে। সম্প্রতি উত্তর প্রদেশে ৯টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে বিজেপি ও আরএলডি সাতটি আসনে জেতার পর এমন অভিযোগ করলেন অখিলেশ যাদব।</p> <p>এদিকে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে সাম্ভালে ২৪ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেটসেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব ধরনের স্কুল গতকাল বন্ধ ছিল। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কোনো বহিরাগত, সামাজিক সংস্থা বা জনপ্রতিনিধিকে সাম্ভালে প্রবেশ করতে দেবে না প্রশাসন।</p> <p>সম্প্রতি একটি পিটিশনে দাবি করা হয়, ওই মসজিদের জায়গায় একসময় হরিহর মন্দির ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে জরিপের নির্দেশ দেন আদালত। এরপর গত মঙ্গলবার থেকে এ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে সাম্ভালে। ওই দিন জরিপ শেষ না করতে পেরে গত রবিবার সকালে জরিপের পরিকল্পনা করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।</p> <p>হিন্দুপক্ষের এক আইনজীবীর দাবি, ১৫২৯ সালে ওই মন্দিরটি ভেঙে দিয়েছিলেন মোগল সম্রাট বাবর। জরিপের সমর্থকদের যুক্তি, ঐতিহাসিক সত্য উন্মোচনে জরিপ একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি উসকানি এবং ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতার লঙ্ঘন। ১৯৯১ সালের একটি আইনের মাধ্যমে ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতার সুরক্ষা দেওয়া হয়। পিটিশনকারী আইনজীবী বিষ্ণু শংকর জৈন জানান, আগামী ২৯ নভেম্বরের মধ্যে জরিপের প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। </p> <p>সূত্র : এনডিটিভি</p>