<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে একটি প্রধান বাধা বিদেশে অর্থপাচার। ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং তথা বাণিজ্যের ফাঁকফোকর দিয়ে, হুন্ডির মাধ্যমে কিংবা বিনিময়সহ অন্যান্য উপায়ে বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত মুদ্রাপাচার হয়ে আসছে। হুন্ডি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে রেমিট্যান্সপ্রবাহকে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বর্তমানে দেশে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ ২৫ বিলিয়ন ডলারের মতো। কেবল হুন্ডি বন্ধ করা গেলে এই রেমিট্যান্সের পরিমাণ দ্বিগুণ অর্থাৎ ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেত।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে মুদ্রাপাচার রোধ করা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, কিন্তু কাজের কাজ প্রায় কিছুই হয় না। সে কারণে ক্রমাগতভাবে বাড়ছে মুদ্রাপাচারের পরিমাণ। মুদ্রাপাচার রোধের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে গত ১৫ বছরে মুদ্রাপাচারের যে চিত্র পাওয়া যায়, তা রীতিমতো ভয়াবহ। এ সময়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতারা, আমলা ও সুবিধাভোগী কিছু ব্যবসায়ী ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এবং এর বেশির ভাগই বিদেশে পাচার করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানেও উঠে এসেছে এমন চিত্র। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইনটেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্যানুসারে, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে দেশ থেকে অন্তত ১৪ হাজার ৯২০ কোটি বা ১৪৯.২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় পাচার করা টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলারে ১১৮ টাকা ধরে)।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাধারণত ব্যবসায়ীরা রপ্তানি পণ্যের দাম প্রকৃত দামের চেয়ে কম দেখিয়ে (আন্ডার ইনভয়েসিং) কিছু অর্থ বিদেশে রেখে দেন এবং আমদানি পণ্যের দাম প্রকৃত দামের চেয়ে বেশি দেখিয়ে (ওভার ইনভয়েসিং) কিছু অর্থ বিদেশে পাঠিয়ে দেন। আর এই প্রক্রিয়ায় শুধু পাচারকারীরা দোষী নন। ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আরো অনেকেই অর্থের বিনিময়ে তাঁদের সহযোগিতা করেন। তাঁরাও সমানভাবে দায়ী এবং তাঁদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। বর্তমানে আরো একটি ধারা দেখা দিয়েছে মুদ্রাপাচারের সঙ্গে। সেটি হলো ক্ষমতা হারানো বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, নেতাকর্মী, আমলা, ব্যবসায়ীরা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন। সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। যাঁরা ধরা পড়ছেন, তাঁদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে লাখ লাখ ডলার। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিংবা বৈদেশিক মুদ্রার বাজার কোনোটাই স্বাভাবিক করা যাবে না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের মতে, রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতার কারণে অতীতে মুদ্রাপাচার বেশি হয়েছে। আবার রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে পাচার করা সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা এত দিন সম্ভব হয়নি। এর সঙ্গে দুদকসহ মুদ্রাপাচারবিরোধী অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়হীনতাও দায়ী। পাচারকৃত সেই অর্থ ফিরিয়ে আনার এখনই উপযুক্ত সময়। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনও মনে করেন, অবৈধ হুন্ডি বন্ধ হলে রেমিট্যান্স অনেক বাড়বে। এ বিষয়ে আমাদের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অতীতে বিভিন্ন আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে, যাদের বিরুদ্ধে তখন প্রায় কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা মনে করি, ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং, হুন্ডি ও অন্যান্য মাধ্যমে মুদ্রাপাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি অতীতে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণগুলো যাচাই করে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ থেকে মুদ্রাপাচার দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।</span></span></span></span></p> <p> </p>