<p>শীত শেষে প্রকৃতির বসন্ত আমাদের পুলকিত করে। তবে শরীরে যখন বসন্ত রোগ হয় তখন তা মোটেও সুখকর কোনো অনুভূতি হয় না। ভেরিওলা ও ভেরিসেলা নামক দুটি ভাইরাস এই রোগের জন্য দায়ী।</p> <p>বসন্ত রোগ সাধারণত দুই ধরনের। একটি জলবসন্ত, অন্যটি গুটিবসন্ত। বর্তমানে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয় জলবসন্তে। টিকাকরণের মাধ্যমে গুটিবসন্ত রোগটি এখন সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত বলা চলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৮০ সালে গুটিবসন্তকে বিশ্বব্যাপী বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। অথচ এই ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্তে রোগটি কাঁপিয়ে দিয়ে গেছে সারা বিশ্বকে, বিশেষ করে ভারতকে। ১৯৭৪ সালে শুরু হওয়া গুটিবসন্তে উত্তর প্রদেশ ও বিহারে এক লাখ ১০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। মারা গিয়েছিল ২০ হাজারের মতো। ওই সময় এক লাখ ৩৫ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী ছয় লাখ গ্রামের ১২ কোটি বাড়িতে গিয়ে গুটিবসন্তের রোগীর সন্ধান করে টিকা প্রদান করেছিলেন। ব্রিটিশ ডাক্তার এডওয়ার্ড জেনার ১৭৯৬ সালে গুটিবসন্তের টিকা আবিষ্কার করেন। এই টিকা সারা ভারতে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে প্রদান করা হয়। তবে কিছু এলাকায় টিকাটি ঠিকমতো পৌঁছায়নি। তাদের থেকেই এই মহামারির সূচনা।</p> <p>কয়েক শ বছর ধরে গুটিবসন্ত ছিল পুরো পৃথিবীর মানুষের কাছে এক মহা আতঙ্কের নাম। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে গেছে গুটিবসন্তের কারণে। পুরো পৃথিবীতে শুধু বিশ শতকেই এ রোগে মারা যায় আনুমানিক ৩০ কোটি মানুষ!</p> <p>ভয়ংকর গুটিবসন্ত পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হলেও জলবসন্ত এখনো টিকে আছে বহাল তবিয়তে। তবে জলবসন্তকে খুব একটা জটিল রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না আমাদের দেশে। এমনকি এই রোগে চিকিৎসকরা সাধারণত কোনো প্রতিষেধক ব্যবস্থা নিতেও অনুৎসাহিত করেন। ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ১০-১২ দিনের মধ্যেই জলবসন্তের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এরপর সাধারণত দুই সপ্তাহ স্থায়ী থাকে ভাইরাসটি। সংক্রমণের শুরুতে শরীর ম্যাজম্যাজ, হালকা ব্যথা, অল্প জ্বর থাকে ও গায়ে ছোট ছোট র‍্যাশের দেখা মেলে। ত্বকে জীবাণু সংক্রমণ হয়ে গর্তের সৃষ্টি করতে পারে জলবসন্তে। বসন্তের দুটি ভ্যারিয়েন্টই অত্যন্ত ছোঁয়াচে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি, ত্বকের সংস্পর্শ ও ব্যবহৃত পোশাকের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটে রোগটির। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা করে রাখাটাই যথোপযুক্ত। একবার বসন্তে আক্রান্ত হলে সাধারণত আবার সংক্রমণ ঘটে না।</p> <p> </p> <p>♦ আল সানি</p>