<p style="text-align:justify">জুনাইদ আহমেদ পলক। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। দুইবারের প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে পলকের বিরুদ্ধে। আইসিটি খাতের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে একাই বাগিয়ে নিতেন ১৫ শতাংশ কমিশন। </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সফরে আসছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/09/30/1727663410-86061aac3ca2c6d4ac7c5dbb4ae2d786.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সফরে আসছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/09/30/1430401" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">এসব অনিয়মের অর্থে দেশে বিদেশে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চলমান অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সংস্থাটি বলছে, সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এত এত অভিযোগ অনুসন্ধান করতেও সময় লাগবে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব এই অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হবে। </p> <p style="text-align:justify">দুদক সূত্রে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে সখ্য ছিল পলকের। সেই প্রভাব খাটিয়ে সরকারের আইসিটি বিভাগ একক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন তিনি। যেকোনো প্রকল্প থেকে মোটা অংকের কমিশন যেতো পলকের পকেটে। বিশেষ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ  তৈরি, এসপায়ার টু ইনোভেটেড (এ টু আই) প্রকল্প, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, হাইটেক পার্ক, আইটি পার্ক, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনসহ একাধিক প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয় শেখ হাসিনা সরকারের আমলে। বড় বাজেটের এসব প্রকল্প থেকেই মূলত অবৈধ খাত বের করতেন পলক। সূত্র আরো জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে আইসিটি বিভাগে এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছে দুদক।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="এখনো গ্রামে বাল্যবিবাহের শিকার ৯% কিশোরী" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/09/30/1727665166-e7b32c76ea63a66e2116398d282e6e4c.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>এখনো গ্রামে বাল্যবিবাহের শিকার ৯% কিশোরী</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/09/30/1430409" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">দুদকের অনুসন্ধান সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও দুবাইয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি। এ ছাড়া কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারের তথ্যও পাওয়া গেছে অনুসন্ধানে। তবে এসব পাচারকৃত অর্থের এখনো হদিস মেলাতে পারেনি দুদক। তাই বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বরাবর পলক ও তার পরিবারের ব্যাংক লেনদেনের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।</p> <p style="text-align:justify">নাম প্রকাশ না করা শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। বিশেষত আইসিটি খাতে নানা অনিয়মের তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর বড় একটা অভিযোগ হলো বিদেশে অর্থ পাচার। এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে আমরা বিএফআইইউ’র মাধ্যমে  ৫টি দেশে চিঠি পাঠিয়েছি। </p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো জানান, বিএফআইইউ’র কাছে পাঠানো চিঠিতে পলক ও তার স্ত্রীর নামে কোন কোন দেশে সম্পদ রয়েছে সেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংকের তথ্যও জানতে চাওয়া হয় চিঠিতে। </p> <p style="text-align:justify">সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নাটোর-৩ আসনের সাবেক এমপি পলকের গ্রামের বাড়ি সিংড়া উপজেলায়। সেখানে তেমন কোনো সম্পদ নেই বললেই চলে। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বাড়িটিও খুব সাদামাটা। তবে পলকের স্ত্রী আরিফা জেসমিন কণিকার নামে ও বেনামে অনেক সম্পদের তথ্য রয়েছে। এসব সম্পদের মধ্যে রাজধানীর গুলশান, ধানমণ্ডি, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৮টি ফ্ল্যাটের তথ্য পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া পূর্বাচলেও একাধিক প্লট রয়েছে বলে সংস্থাটির কাছে তথ্য রয়েছে। তবে এসব স্থাবর সম্পদের মালিকানা ও নথিপত্র নির্ণয় করতে এরই মধ্যে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছে দুদক। </p> <p style="text-align:justify">নাম প্রকাশ না করা শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন,  পলক ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ও বেনামে থাকা সম্পদের তথ্য জানতে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়, সিটি করপোরেশন, রাউজকসহ সব দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এসব চিঠির উত্তর পেলেই আমরা অনুসন্ধানের পরবর্তী ধাপে চলে যাবো। কারণ একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করতে গিয়ে সব ধরনের নথি পর্যালোচনা করা লাগে। তাহলে একটি সুন্দর প্রতিবেদন করা সম্ভব। </p> <p style="text-align:justify"><strong>নির্বাচনী হলফনামায় যা ছিল পলকের </strong></p> <p style="text-align:justify">নির্বাচনী হলফনামায় পলক জানিয়েছিলেন, ১৫ শতক কৃষিজমি, ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা এবং ৬০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে তার। এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে করেন নির্বাচন। এরপর তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী হয়ে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা। তাই জয়ের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পান পলক।</p> <p style="text-align:justify">২০০৮ সালে নাটোরের সিংড়া উপজেলা থেকে জুনাইদ আহমেদ পলক প্রথমবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৫ বছর দায়িত্ব পালনের পর পলকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও জয়ের সুপারিশে সব অভিযোগ থেকে বেঁচে যান তিনি। ফলে ৩ মেয়াদে অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর চেয়ার বদল হলেও পলক একই পদে থেকে যান।  </p> <p style="text-align:justify">সবশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় হলফনামায় দেওয়া তথ্যমতে, পলকের গেল ৫ বছরে সম্পদ ও আয় বাড়ে অস্বাভাবিক হারে। নিজের অবৈধ আয়ের অর্থ বৈধ করতে স্ত্রীকে বানিয়েছেন উদ্যোক্তা। তার স্ত্রীর নামে সিংড়ায় রয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ বিঘা জমি। </p> <p style="text-align:justify">অনুসন্ধানের বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, ১৩ই আগস্ট দুদক সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে। বর্তমানে একজন কর্মকর্তার অধীনে একটি টিম এই অনুসন্ধান পরিচালনা করছে। </p> <p style="text-align:justify"><strong>আইসিটির সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন পলক </strong></p> <p style="text-align:justify">সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে এমন প্রভাব খাটিয়ে আইসিটি বিভাগের সব কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন পলক। তার হাত ধরে বিভিন্ন প্রকল্পের পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক ও ইউটিউব পেজও দখলে ছিল। সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর পছন্দের লোক দিয়ে চালানো হতো এসব পেজ। </p> <p style="text-align:justify">তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলটি গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বন্ধ ছিল। এগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছিল সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের হাতে। পেজ এবং চ্যানেলগুলোর অ্যাডমিন (নিয়ন্ত্রক) পলকের মনোনীত ব্যক্তিরা ছিলেন। তারাই পেজগুলো বন্ধ রেখেছেন। </p> <p style="text-align:justify">আইসিটি বিভাগ সূত্র জানায়, বিভাগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করতো ঢাকা লাইভ নামের একটি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ও ডিজিটাল মার্কেটিং টিম। পাশাপাশি আইসিটি বিভাগের নানা আয়োজন সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের কাজও পেতো এই প্রতিষ্ঠানটি। এর সবকিছু এককভাবে তদারকি করতেন জুনাইদ আহমেদ পলক। </p> <p style="text-align:justify">অবশ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর সম্প্রতি ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল সচল করা হয়েছে। গতকাল পেজটি ঘুরে দেখা যায়, নাহিদ ইসলামের বিগত চারদিনের কার্যক্রম প্রকাশ করা হয়েছে। তবে ২০২৩ সালের ৩১শে অক্টোবরের পর থেকে  চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোনো পোস্ট নেই তাতে। </p> <p style="text-align:justify">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইসিটি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রীর লোকজনের নিয়ন্ত্রণে থাকায় মাঝের অনেক পোস্টই এখন পেজে নেই। ফেসবুক পেজে নিয়মিত কার্যক্রম প্রকাশ করা হতো। সেগুলো ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">সূত্র : মানবজমিন</p>