আগামী এক বছরের মধ্যে ডিজিটাল অর্থনীতিতে নতুন করে পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বিশ্ব অনলাইন বাজারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনশক্তি সরবরাহ করছে বাংলাদেশ, যা মোট সংখ্যার ১৬ শতাংশ। সম্প্রতি সৃষ্টিশীল ও মাল্টিমিডিয়া প্ল্যাটফর্মে দেশীয় তরুণদের সম্পৃক্ততা প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলে জানিয়েছে এই গবেষণা সংস্থাটি।
গতকাল ‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম : ইকোনমি ইন বাংলাদেশ’ বিষয়ে ভার্চুয়াল আলোচনাসভায় এসব তথ্য জানানো হয়।
আলোচনাটি সিপিডি এবং জার্মানির সমাজ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ফ্রিডরিচ-এবার্ট-স্টিফটুংয়ের বাংলাদেশ অফিসের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহকারী সৈয়দ ইউসুফ সাদাত।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গবেষক ড. মো. আসাদুজ্জামান, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, জার্মানির ফ্রিডরিচ এবার্ট স্টিফটুংয়ের (এফইএস) রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ ফেলিক্স কলবীজ, সেবা ডটএক্সওয়াইজেডের সিইও আদনান ইমতিয়াজ হালিম, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বিএএসআইএস) সিনিয়র সহসভাপতি ফারহানা এ. রহমান। মূল প্রবন্ধে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
এর মধ্যে রয়েছে বাজারভিত্তিক দক্ষ জনবল গড়ে তোলা, কোন কোন খাতে আর্থিক সম্ভাবনা আছে তা খুঁজে বের করা এবং ক্রেতা-বিক্রেতা সবার অধিকার রক্ষায় নীতিমালা গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। গবেষণায় বলা হয়, করোনাভাইরাসের মধ্যে বাংলাদেশে ই-কমার্স খাতে এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশে এখন ক্রিয়েটিভ ও মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন ১৯ হাজার ৫৫২ জন। ফেসবুককেন্দ্রিক উদ্যোক্তা ৫০ হাজার, ই-ক্যাবের সদস্য আছেন এক হাজার ৩০০ জন, ওয়েবসাইটভিত্তিক উদ্যোক্তার সংখ্যা দুই হাজার।
গবেষণায় বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরে বলা হয়েছে, ডিজিটাল অর্থনীতিতে পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা বেশ চ্যালেঞ্জের। এ ছাড়া সময় মতো পণ্যের ডেলিভারি করা এবং ব্যবস্থাপনাতে আরো ভালো করতে হবে।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে হাজার হাজার তরুণ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে আসছে। কিন্তু এই অর্থ দেশে গ্রহণের সঠিক কোনো উপায় নেই। তাই শেষ পর্যন্ত এই অর্থ অপ্রদর্শিত টাকা হিসেবে যুক্ত হচ্ছে।
আবার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় অনলাইন ক্রয়-বিক্রয়ে অনেক সময় ভোক্তাকে ঠকানো হচ্ছে।’
বিএএসআইএসের সিনিয়র সহসভাপতি ফারহানা এ. রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সারের দেশ। এই বিপুলসংখ্যক ফ্রিল্যান্সার বিদেশ থেকে পেপালের মাধ্যমে অর্থ নেন। কিন্তু আমাদের দেশ এখনো পেপাল থেকে অর্থ নেওয়ার অবকাঠামো উন্নয়ন করতে পারেনি। তাই ফ্রিল্যান্সারদের বিদেশ থেকে টাকা আনতে সমস্যা হচ্ছে।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলা করতে হলে আমাদের দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। বিশ্বে রেজিস্টার্ড অনলাইন কর্মী আছে প্রায় সাত কোটি। যার ১৬ শতাংশে জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল শ্রমিকরা কাজ করছেন বিলিয়ন ডলারের গ্লোবাল মার্কেটে।’