আলোয় আলোয় সেজেছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক, বিপণিবিতান আর সুপারশপ। হেসেছে কৃত্রিম চাঁদ আর তারা। লাল-নীল বাতির ঝলমলে আলো মার্কেটগুলোতে তৈরি করেছিল আলাদা আকর্ষণ। ঈদের আগেই যেন ঈদের আমেজ ফুটে উঠেছিল রাজধানীজুড়ে।
আলোয় আলোয় সেজেছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক, বিপণিবিতান আর সুপারশপ। হেসেছে কৃত্রিম চাঁদ আর তারা। লাল-নীল বাতির ঝলমলে আলো মার্কেটগুলোতে তৈরি করেছিল আলাদা আকর্ষণ। ঈদের আগেই যেন ঈদের আমেজ ফুটে উঠেছিল রাজধানীজুড়ে।
নতুন পোশাকে নিজেকে সাজাতে প্রতিটি মার্কেটে ভিড় করেছে শিশু, নারী, তরুণ, যুবকসহ নানা বয়সের মানুষ। শপিংয়ের আনন্দ দ্বিগুণ করেছে ডিজিটাল পেমেন্টে হরেক রকম অফার। তাই তো এক বছরের ব্যবধানে অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে ডিজিটাল লেনদেন বেড়ে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ক্রেতারা কার্ড ও মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করে কেনাকাটা বাড়িয়েছেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, ক্যাশলেস পেমেন্টের বিভিন্ন সুবিধা ও নিরাপত্তা, সেই সঙ্গে ব্যাংক ও এমএফএসগুলোর দেওয়া ডিসকাউন্ট ও অফার ক্রমেই বাড়তে থাকাসহ বেশ কয়েকটি কারণে ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। তাঁরা বলছেন, করোনা মহামারির সময় থেকেই নগদবিহীন লেনদেন বেড়েছে আগের থেকে অনেক বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এটিএম, পিওএস, সিআরএম ও ই-কমার্সভিত্তিক লেনদেন ছিল ৪০ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। গত জানুয়ারিতে সেটি বেড়ে ৪৩ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
অন্যদিকে গত জুলাই মাসে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস বা এমএফএসের মাধ্যমে মোট এক লাখ ২২ হাজার ৯২৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। কিন্তু সাত মাসের ব্যবধানে তা ৩৯.৬৫ শতাংশ বেড়ে মোট লেনদেন এক লাখ ৭১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
ব্যাংকগুলো এখন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ঈদের পোশাক, জুতা, গয়নাসহ বিভিন্ন পণ্য কেনাকাটায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে।
রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ইনফিনিটি, রিচম্যান ও লুবনান শোরুমের ক্যাশিয়ার ফয়সাল আহমেদ কালের কণ্ঠকে জানান, এখানে বেশির ভাগ গ্রাহকই কার্ডে পেমেন্ট করেছেন। কেউ কেউ বিকাশ বা নগদে। ক্যাশ পেমেন্টের পরিমাণ খুবই কম। ৮০ শতাংশের বেশি গ্রাহক এখানে ডিজিটাল পেমেন্ট করেছেন।
একই এলাকায় অবস্থিত আরেক অভিজাত বিপণিবিতান আর্টিসান। কাপড়ের দোকান হিসেবে দেশজুড়ে খ্যাতি আছে তার। আর্টিসানের ম্যানেজার শাকিল খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের শোরুমে ৮০ শতাংশ গ্রাহকই ডিজিটাল পেমেন্ট করেছেন। যদিও আগের বছর এই হার আরো কম ছিল।’
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার জুলফিকার শাহীন বলেন, ‘কার্ডের কোনো বিকল্প নেই। নগদ টাকা বহনের ঝক্কি ঝামেলা করার চেয়ে কার্ডে পেমেন্ট করাই ভালো।’
তেজগাঁওয়ের আড়ংয়ের একজন বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, ‘আমাদের এখানে ৭০ শতাংশের বেশি অনলাইন পেমেন্ট হয়েছে।
সম্পর্কিত খবর
ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশের ওপর যে শুল্ক আরোপ করেছে, সেটি সামলে নেওয়া খুব বেশি কঠিন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন এই শুল্কনীতিতে বড় কোনো প্রভাব পড়বে না।
আজ রবিবার সচিবালয়ে ঈদ পরবর্তী প্রথম কার্যদিবসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে এবং যেকোনো বৈশ্বিক চাপে সরকার তা টিকে থাকতে সক্ষম হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের রপ্তানি বাজার বহুমুখী, সেই সঙ্গে উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে আছি।
ঈদ উপলক্ষে দেশে প্রবাসআয় বেড়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এবার মানুষ ভালোভাবে ঈদ কাটিয়েছে। মার্চ মাসে ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এতে রিজার্ভও বেড়েছে।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টানা ৯ দিনের ছুটি শেষে ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের অফিস আজ রবিবার খুলছে। আজ থেকে ব্যাংকের অফিস ও লেনদেনের সময়সূচি ফিরবে আগের অবস্থায়। ফলে ব্যাংক লেনদেন চলবে সকাল ১০টা থেকে বিকের ৪টা পর্যন্ত। তবে অফিস সূচি থাকবে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
রমজানে ব্যাংকে লেনদেনের নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। রোজার মাসে ব্যাংকে লেনদেন হয় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। রমজানে ব্যাংকের অফিস সূচি ছিল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পথ খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে টেলিফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা ঘাটতি কমানোর সুযোগগুলো সক্রিয়ভাবে খতিয়ে দেখছি।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের ৪০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি শিল্পে বড় ধরনের আঘাত আসতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই তৈরি পোশাক। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পোশাক ক্রেতা। ফলে এই শিল্পের ওপর আঘাত লাগলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা ব্লুমবার্গকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে ধার্য হওয়া শুল্ক কমাতে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত কমানোর উপায় খুঁজছে বাংলাদেশ। ট্রাম্প প্রশাসন যে কয়েকটি দেশের ওপর সর্বোচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এই পদক্ষেপ বস্ত্র রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ঝাঁকুনি দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত নতুন শুল্ক পণ্যভিত্তিক মানদণ্ডের পরিবর্তে দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতির ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়েছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, এই পদ্ধতি বাংলাদেশের মতো বাণিজ্য উদ্বৃত্ত থাকা অনেক ছোট অর্থনীতির দেশের জন্য অন্যায্য।
শুল্কের প্রভাব মূল্যায়ন করতে বাংলাদেশ সরকার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোসহ মূল অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলাসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি বাড়ানো।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএ—এর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন ব্লুমবার্গকে বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলার আমদানি বাড়াতে পারি, তবে আমেরিকান তুলার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
এর আগে, গত ১৭ মার্চ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান, কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির পরিকল্পনা করছে।
তিনি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। বাংলাদেশ আগেই শুল্কের আওতায় রপ্তানি করলেও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঝুঁকি সব সময় থাকে। আমরা যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করি এবং সেই তুলা দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি করি, তাহলে তারা আমাদের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হবে।’
গত ২৭ মার্চ দেশীয় সুতাশিল্পের সুরক্ষায় স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ওয়ালমার্ট এবং গ্যাপ ইনকর্পোরেটেডের মতো বড় মার্কিন খুচরা বিক্রেতারা প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক কেনে। আনোয়ার হোসেনের মতে, শুল্ক বৃদ্ধি তাদের ক্রয় কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ তথা বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির রপ্তানি দেড় শতাংশ কমে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
মুম্বাইয়ে ব্লুমবার্গ ইকোনমিকসের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক অর্থনীতিবিদ অঙ্কুর শুক্লা মনে করেন, এই শুল্কের কারণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য আইএমএফ নির্ধারিত ঋণ কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি লিখেছেন, ‘এটি এই দেশগুলোতে তহবিলের ঋণকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে—যা প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে।’
তবে বাংলাদেশের জন্য কিছুটা ইতিবাচক দিকও রয়েছে। পোশাক খাতে দেশের প্রতিদ্বন্দ্বী শ্রীলঙ্কা (৪৪ শতাংশ) এবং ভিয়েতনামের (৪৬ শতাংশ) তুলনায় বাংলাদেশের শুল্কের হার কম (৩৭ শতাংশ)। এ বিষয়ে অঙ্কুর শুক্লা বলেন, এটি ‘বাংলাদেশকে একটি তুলনামূলক সুবিধা দিতে পারে এবং কিছু বাজারের হিস্যা দখল করতে সাহায্য করতে পারে।’
কর্মকর্তারা বলছেন, পারস্পরিক বাণিজ্য আলোচনার অংশ হিসেবে শুল্ক সমন্বয়ের সুযোগ থাকতে পারে।
তবে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বশির উদ্দিনের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে ‘মেঘ জমেছে’। তিনি আরো বলেন, ‘এটি আর দ্বিপক্ষীয় বিষয় নয়—এটি একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সুনামি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
দেশে অর্থনৈতিক প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও খেলাপি ঋণ কমেছে। ২০২৪ সাল শেষে বেশির ভাগ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়লেও ভালো করেছে আটটি ব্যাংক। কারণ আগের বছরের তুলনায় তাদের খেলাপি ঋণ কমেছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে বিডিবিএল, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা, ওয়ান, উত্তরা, এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।
২০০৯ সালের পর থেকে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। আগের সব রেকর্ড ভেঙে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে ২০২৪ সাল শেষে। কারণ আওয়ামী সরকারের ওই ১৬ বছরে ২২ হাজার কোটি থেকে তিন লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ।
প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ভেঙে পড়ার কারণে এই সময়ের মধ্যে হলমার্ক, এননটেক্স, ক্রিসেন্ট, সাদ-মুসা, বেসিক ব্যাংক, এস আলম ও বেক্সিমকো কেলেঙ্কারির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে বাংলাদেশের। কমবেশি সব ব্যাংকেই খেলাপি ঋণের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর পরও কিছু ব্যাংক সেই খেলাপি ঋণের বেপরোয়া গতিকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, এগুলো নতুন কিছু না, বরং কার্পেটের নিচে লুকিয়ে থাকা খেলাপি এখন বের হয়ে আসছে।
এ ছাড়া এই সংকটকালে খেলাপি ঋণ কমার আরো একটি কারণ রয়েছে, তা হলো ঋণ বিতরণ কমে যাওয়া। যদি কোনো ব্যাংক নতুন করে ঋণ বিতরণ না করে শুধু আদায় করতে থাকে, তাহলে তার খেলাপিও কমবে।
আর ঋণ বিতরণ কমে বিনিয়োগ হ্রাসের সবচেয়ে বড় প্রমাণ ফেব্রুয়ারি মাসের বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি। কারণ ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭.১৫ শতাংশ, যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) খেলাপি ঋণ ৯৮২ থেকে ৯৫৩ কোটিতে নেমে এসেছে। ২০২৩ সাল থেকে ২৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমেছে ২০২৪ সালে। ওই সময়ে ব্র্যাক ব্যাংকের এক হাজার ৭৫০ থেকে এক হাজার ৬১৭ কোটি, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এক হাজার ৬৮৯ থেকে এক হাজার ৫৯০ কোটি, ওয়ান ব্যাংক দুই হাজার ৪৩৮ থেকে দুই হাজার ৩২৮ কোটি, উত্তরা ব্যাংক ৯৮৫ থেকে ৯৮০, এইচএসবিসি ৬৯৯ থেকে ৩২০ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ৯৬৪ থেকে ৮৩৬ কোটি এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এক হাজার ৫৩৪ থেকে এক হাজার ২৭৮ কোটি টাকায় খেলাপি ঋণ কমিয়ে এনেছে।
এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যেসব ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ভালো, তাদের ব্যাংক ভালোভাবে চলতে বাধ্য। যেমন—আমরা শুধু করপোরেট গ্রাহকের ওপর নির্ভরশীল নই। আমরা ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে বেশি মানুষের মধ্যে অর্থ বণ্টন করি। এতে ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। একই সঙ্গে আমাদের শক্তিশালী আদায় কমিটি (রিকভারি টিম) গঠন করা হয়েছে, যারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘অন্যদিকে যারা একই গ্রাহককে বেশি ঋণ দেয় আর যেকোনো কারণে সেটা খেলাপি হয়ে যায়, তখন পুরো ব্যাংক বিপাকে পড়ে। তাই ঋণ বিতরণের আগে খুব ভালোভাবে গ্রাহকের ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করা উচিত। পাশাপাশি বেশিসংখ্যক গ্রাহকের মধ্যে ঋণগুলো বিতরণ করলে খেলাপির ঝুঁকি কমে যায়।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য মতে, গত ডিসেম্বর শেষে এই খাতে মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ তিন লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ব্যাংক খাতের ২০.২০ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়েছে। ২২টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি আটটি ব্যাংকের খেলাপি ৬০ শতাংশের বেশি।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ও সমালোচিত গ্রুপগুলোর নামে-বেনামে যেসব ঋণ ছিল, তার প্রকৃত চিত্র এখন দেখাতে শুরু করেছে ব্যাংকগুলো। এতে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি বাড়ছে। দেশের ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণও বেশ বেড়েছে। পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ, এস আলম গ্রুপসহ কিছু বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ ঋণ বেনামি, যা অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছিল।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক মোহাইমিন পাটোয়ারী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশের খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছার অন্যতম কারণ সিস্টেমকে ডাউনপ্লে করে সুবিধা নেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। তাই ব্যাংক খাতের এই পরিণতি। এখন সেই ব্যাংকিং সিস্টেমের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে দুষ্কৃতকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে; যদিও কিছুটা উন্নতি হয়েছে, আরো উন্নতি প্রয়োজন। দীর্ঘ সময় অনিয়ম চর্চার কারণে বহু মানুষ (ব্যাংকার) খারাপ হয়ে গেছে। এখনো এসব মানুষই ব্যাংক চালাচ্ছে। তবে তাদের মানসিকতা বদলাতে হবে। তা না হলে উন্নতি সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, বিগত সময়ে সরকারি কার্যক্রম, রাজনীতি, টেন্ডার—সব কিছু টাকা দিয়ে কিনে নেওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। তাই ব্যাংক খাতেও সেই কাদা লাগবে—এটাই স্বাভাবিক। কারণ ব্যাংকিং সিস্টেম কিন্তু সমাজের বাইরে না। অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারলে ব্যাংক খাত আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।