বিদেশে বিপুল পরিমাণ পাচারকৃত অর্থ থেকে এই বছরের মধ্যে কিছু অংশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করব। এ জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির চেষ্টা চলছে।’ গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা জানান অর্থ উপদেষ্টা।
পাচার করা অর্থ ফেরত আনার পদক্ষেপের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। বিশাল অঙ্কের টাকা। সব অঙ্কের টাকা আনতে, তাদের আইডেনটিফাই করতে, বিভিন্ন দেশে আছে, এখানে কতগুলো আইনি পদক্ষেপ আছে, আবার সে আইনের পদক্ষেপগুলো বিদেশের সঙ্গে জড়িত। আমরা চেষ্টা করছি ইমিডিয়েটলি যেটা পারি আনতে।
অন্যগুলোও আনার চেষ্টা করছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, অ্যাট লিস্ট কিছুটা ইন্ডিকেশন আসুক। এ জন্য আইনের বিষয় আছে। আইন মানে কিছু অ্যাগ্রিমেন্ট করা বিদেশের সঙ্গে, এগুলো করব। আগামী মাসে আর একটু ভালোভাবে জানতে পারবেন।’
আপনারা কয়েক শ কোটি ডলার ফেরত আনার চেষ্টা করছেন। এটা কি সম্ভব, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘হ্যাঁ এটা সম্ভব। অনেক সময় দেখা যায় ১১-১২ জন দিয়েছে, ২০০ কোটি টাকার ওপরে অনেককে চিহ্নিত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে হয়তো আমরা আনতে পারব।
’ তিনি বলেন, ‘কিছু সেনসিটিভ কেসের (স্পর্শকাতর ব্যক্তির পাচার করা অর্থ) পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’ তবে এ সময় নতুন টাকা বাতিল করার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তার কোনো উত্তর দেননি অর্থ উপদেষ্টা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গত ১৫ বছরে যে টাকা পাচার করা হয়েছে, তা ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষ একটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। অধ্যাদেশ আকারে খুব শিগগির এই আইন করা হবে। গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। শ্বেতপত্রের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৯ থেকে গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার করা হয়।
পাচারের টাকা ফেরত দিতে অফার : পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ‘অনেকেই পাচার হওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে অফার করেছেন।’ গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রথম কর্মদিবসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব। আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা। যেসব স্থানে টাকা গেছে এতে সেসব দেশ উপকারভোগী। আন্তর্জাতিক আইন আছে যেহেতু তারা উপকারভোগী তাই সহজে তারা এটা ছাড়বে না। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টাকে তারাই অফার করছে এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য। আমরা দ্রুত কাজ করছি। আশা করছি, সফল হব।’
কারা অফার করেছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা বলা সম্ভব নয়। এগুলো বললে কাজে সমস্যা হবে। কিছু তো গোপনীয়তা মানতে হবে। যাঁরা টাকা নিয়ে গেছেন তাঁরা তো বসে নেই। এ জন্যই একটা গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। এর মধ্যে যতটুকু বলা সম্ভব সেটুকুই বলছি। এর বেশি বললে আমাদের কাজটা বন্ধ হয়ে যাবে।’