<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দাওয়াত একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ ডাকা, আহ্বান করা। ইসলামে দাওয়াতের সারকথা হচ্ছে, মানুষকে দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির দিকে আহ্বান করা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইসলামের আবির্ভাব শুধু ব্যক্তির কল্যাণের জন্য নয়; গোটা মানবজাতির কল্যাণের জন্যই ইসলাম। আর ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের সৌভাগ্য দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সালাহ ও ইসলাহ। অর্থাৎ নিজে সংশোধন হওয়া এবং অন্যকে সংশোধন করা। দাওয়াতের কাজ ছাড়া যা কখনো সম্ভবপর নয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে এ পৃথিবীর বাসিন্দা বানিয়েছেন। তিনি তাদের কোনো কিছু ছাড়া ছেড়ে দেননি। বরং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার-পানীয় ও পোশাক সৃষ্টি করেছেন। যুগে যুগে তাদের চলার জন্য জীবনাদর্শ নাজিল করেছেন। সর্বকালে ও সর্বস্থানে আল্লাহর নাজিলকৃত আদর্শ অনুসরণ করার মধ্যে ও অন্য সব আদর্শ বর্জন করার মধ্যেই মানবজাতির কল্যাণ ও সুখ নিহিত আছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আর এ পথই আমার সরল পথ। কাজেই তোমরা এর অনুসরণ করো এবং অন্য পথ অনুসরণ করবে না, করলে তা তোমাদের তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দেন, যেন তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হও।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা আনআম, আয়াত : ১৫৩) </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইসলাম হচ্ছে সর্বশেষ আসমানি জীবনব্যবস্থা। আর কোরআন সর্বশেষ আসমানি কিতাব। মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী ও রাসুল। মহান আল্লাহ তাঁকে এ জীবন-বিধান সব মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ কোরআন আমার কাছে ওহি হিসেবে পাঠানো হয়েছে, যেন তোমাদের এবং যার কাছে তা পৌঁছবে তাদের এর দ্বারা সতর্ক করতে পারি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা আনআম, আয়াত : ১৯)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাই ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়া একটি উত্তম আমল। কেননা, এই দাওয়াত দানের মাধ্যমে মানুষ সরল পথের দিশা পায়। এর মাধ্যমে মানুষকে তার দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তির পথ দেখানো হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওই ব্যক্তির চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নেক আমল করে। আর বলে অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা হামিম আস-সাজদাহ, আয়াত : ৩৩)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইসলামের দিকে আহ্বান করা নবী-রাসুলদের কাজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বলে দাও, এটাই আমার পথ, আমি জেনে-বুঝে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকি, আমি এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারা। আর আল্লাহ কতই না পবিত্র এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ১০৮)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাধারণভাবে সব মুসলমান এবং বিশেষভাবে আলেমসমাজকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল যেন থাকে, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে; আর তারাই সফলকাম।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা আলে-ইমরান, আয়াত : ১০৪)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাসুল (সা.) বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও মানুষের কাছে পৌঁছে দাও।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (বুখারি, হাদিস : ৩৪৬১)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দাঈ তথা যিনি ইসলামের দিকে দাওয়াত দেবেন, তিনি বিশেষ গুণে গুণান্বিত হবেন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটাই স্বাভাবিক। সে গুণগুলো হলো</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইলম, ফিকহ, ধৈর্য, সহনশীলতা, কোমলতা, দয়া, জান-মালের ত্যাগ, নানা পরিবেশ-পরিস্থিতি ও মানুষের আচার-অভ্যাস ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আপনি মানুষকে দাওয়াত দিন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আপনার রবের পথে হিকমত ও উত্তম কথার মাধ্যমে এবং তাদের সঙ্গে তর্ক করুন উত্তম পদ্ধতিতে। নিশ্চয়ই আপনার রব, তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়েছে, সে সম্বন্ধে তিনি বেশি জানেন এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি ভালোভাবেই জানেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা নাহল, আয়াত : ১২৫)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আল্লাহর দিকে দাওয়াতে আছে অফুরন্ত প্রতিদান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কেউ হিদায়াতের দিকে আহ্বান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করবে তাদের সওয়াবের কোনো কমতি হবে না। আর কেউ ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান পাপের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করবে তাদেরও পাপের কোনো কমতি হবে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (মুসলিম, হাদিস : ২৬৭৪)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈষয়িক কোনো কিছুর ভিত তৈরি হয়ে পূর্ণতা পেতে যেমন পরিশ্রম ও ধৈর্যের প্রয়োজন, তেমনি মানুষের অন্তরগুলো গড়ে তুলতে এবং সেগুলোকে সত্যের পথে নিয়ে আসতে ধৈর্য ও ত্যাগের প্রয়োজন। রাসুল (সা.) ইসলামের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন এবং কাফের, ইহুদি ও মুনাফিকদের নির্যাতনের ওপর ধৈর্য ধারণ করেছেন। তারা তাঁর সঙ্গে উপহাস করেছে, মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, কষ্ট দিয়েছে, পাথর ছুড়ে মেরেছে। তারা তাঁকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। এসব কিছুর ওপর তিনি ধৈর্য ধারণ করেছেন। একপর্যায়ে আল্লাহ তাঁকে সাহায্য করেছেন, তাঁর ধর্মকে বিজয়ী করেছেন। তাই দাঈর কর্তব্য হচ্ছে, তাঁর অনুসরণ করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অতএব আপনি ধৈর্য ধারণ করুন, নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা সত্য। আর যারা দৃঢ় বিশ্বাসী নয়, তারা যেন আপনাকে বিচলিত করতে না পারে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা রুম, আয়াত : ৬০)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাই মুসলমানদের কর্তব্য হচ্ছে মহানবী (সা.)-এর অনুসরণ করা। তাঁর আদর্শে পথ চলা এবং আল্লাহর রাস্তায় কষ্টের মুখোমুখি হলে ধৈর্য ধারণ করা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই দ্বিনের অনুসরণ করা ছাড়া এ উম্মত সুখী হতে পারবে না, কল্যাণ অর্জন করতে পারবে না। এ জন্য আল্লাহ তাআলা সব মানুষের কাছে এ ধর্মকে প্রচার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটা মানুষের জন্য এক বার্তা, আর যাতে এটা দ্বারা তাদের সতর্ক করা হয় এবং তারা জানতে পারে যে তিনিই শুধু এক সত্য ইলাহ আর যাতে বুদ্ধিমানরা উপদেশ গ্রহণ করে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৫২)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">    লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক</span></span></span></span></p> <p> </p>