দান-সদকা মহান আল্লাহকে খুশি করার অন্যতম মাধ্যম। যারা মহান আল্লাহকে খুশি করার জন্য একনিষ্ঠভাবে দান-সদকা করে, মহান আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখিরাত সাজিয়ে দেন। তাদের জীবনে স্বস্তি দেন। বহু বিপদ থেকে তাদের রক্ষা করেন।
দান-সদকা মহান আল্লাহকে খুশি করার অন্যতম মাধ্যম। যারা মহান আল্লাহকে খুশি করার জন্য একনিষ্ঠভাবে দান-সদকা করে, মহান আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখিরাত সাজিয়ে দেন। তাদের জীবনে স্বস্তি দেন। বহু বিপদ থেকে তাদের রক্ষা করেন।
ইমাম ইবনে কায়্যিম (রহ.) বলেছেন, ‘দান-সদকা, ভালো কাজ ও অন্যের উপকারে আসার মধ্যে এমন এক আশ্চর্য শক্তি আছে, যা মানুষের মনকে প্রশস্ত করে এবং অন্তরকে প্রশান্তি এনে দেয়। উদার ও দয়ালু ব্যক্তি সবচেয়ে প্রশান্ত চিত্ত মানুষ, তাদের মন থাকে সবচেয়ে পবিত্র ও সুন্দর আর শান্তিময়। অন্যদিকে কৃপণ ব্যক্তি, যে কারো উপকার করে না, সে সবচেয়ে সংকীর্ণমনা, তার জীবন হয় বিষাদময়, আর দুশ্চিন্তায় থাকে সর্বদা পীড়িত।
তিনি আরো বলেছেন, ‘দান-সদকার এমন এক বিস্ময়কর প্রভাব আছে, যা বিভিন্ন ধরনের বিপদ-আপদ দূর করতে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। এমনকি দাতা যদি কোনো পাপী ব্যক্তি, জালিম, এমনকি কোনো অবিশ্বাসী
(কাফির)ও হয়, তবু আল্লাহ তাআলা এই দানের বরকতে তার অনেক বিপদ দূর করে দেন।
(আল-ওয়াবিলুস সাইয়্যিব, পৃষ্ঠা-৬৯)
সদকা শুধু দুনিয়ার দুঃখ-দুর্দশাই দূর করে না, বরং কোনো ঈমানদার যদি আল্লাহকে খুশি করার জন্য নীরবে সদকা করে যায় কঠিন কিয়ামতের দিনও মহান আল্লাহ তাকে আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, বিশ্বনবী (সা.) বলেন, যেদিন আল্লাহর (রহমতের) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেবেন।...সে ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করে যে তার ডান হাত যা খরচ করে বাঁ হাত তা জানে না,...।
এমনকি নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতদের আসমানি আজাব থেকে আত্মরক্ষার জন্যও সদকা করার পরামর্শ দিয়েছেন। ইরশাদ করেছেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। তাঁর মহত্ত্ব ঘোষণা করবে এবং নামাজ আদায় করবে ও সদকা প্রদান করবে।’
(বুখারি, হাদিস : ১০৪৪)
এমনকি জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি মাধ্যম হলো সদকা। তাই তো নবীজি (সা.) তাঁর প্রিয় উম্মতদের জাহান্নাম থেকে বাঁচতে সাধ্যমতো সদকা করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। আদি বিন হাতিম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই তার মহান প্রভু কথা বলবেন এবং তার ও প্রভুর মধ্যিখানে কোনো দোভাষী থাকবে না। সে তার ডান দিকে তাকালে তার কৃতকর্ম ছাড়া কিছুই দেখবে না। সে তার বাঁ দিকে তাকালে তার কৃতকর্ম ছাড়া কিছুই দেখবে না। সে তার সামনের দিকে তাকালে জাহান্নাম তাকে অভ্যর্থনা জানাবে। অতএব, কারো জাহান্নামের আগুন থেকে আত্মরক্ষা করার সামর্থ্য থাকলে সে যেন এক টুকরা খেজুর দান করে হলেও তাই করে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৮৫)
মহান আল্লাহ পবিত্র এই মাসে আমাদের সবাইকে সাধ্যমতো দান-সদকা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সম্পর্কিত খবর
আয়াতের অর্থ : ‘যখন তোমরা মুখে মুখে তা ছড়াচ্ছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারণ করছিলে, যার কোনো জ্ঞান তোমাদের ছিল না এবং তোমরা তাকে তুচ্ছ গণ্য করেছিলে, যদিও আল্লাহর কাছে তা ছিল গুরুতর বিষয়। আর তোমরা যখন তা শ্রবণ করলে তখন কেন বললে না, এ বিষয়ে বলাবলি করা আমাদের উচিত নয়। আল্লাহ পবিত্র, মহান...।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ১৫-১৮)
আয়াতগুলোতে অপপ্রচারের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
শিক্ষা ও বিধান
১. শোনা কথা যাচাই-বাছাই না করে প্রচার করা নিন্দনীয় এবং তা মিথ্যা বলার নামান্তর।
২. মানুষের সম্মান ও সম্ভ্রম আল্লাহর কাছে গুরুতর বিষয়। তাই মানুষের সম্মান নষ্ট হয় এমন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবে মুমিন। (তাফসিরে তাবারি : ৫/৪০৮)
৩. মানুষের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা এবং মানুষ সম্পর্কে মন্দ ধারণা করার আগে মুমিন ভাববে এমনটি আমার ব্যাপারে করা হলে কেমন লাগত!
৪. আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, মুমিন বহু সময় এমন মন্দ কথা বলে যা সে অন্তরে ধারণ করে না।
৫. একই ভুল ও অপরাধের পুনরাবৃত্তি করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। তারা ভুল হলে তাওবা করে এবং নিজেকে শুধরে নেয়। (আল-কোরআন তাদাব্বুর ওয়া আমল : ১৯/১০)
সুরা মারিয়াম
সুরা মারিয়াম হিজরতের আগে অবতীর্ণ হয়েছে। সুরা শুরু হয়েছে জাকারিয়া (আ.)-এর বৃদ্ধ বয়সে সন্তান জন্ম দেওয়ার ঘটনার মাধ্যমে। তাঁর সন্তানের নাম ইয়াহইয়া। এরপর আনা হয়েছে মারিয়াম (আ.)-এর ঘটনা।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. চুপি চুপি ও নীরবে দোয়া করা মুস্তাহাব। (আয়াত : ৩)
২. অনুচ্চ জিকিরই সর্বোত্তম এবং যথেষ্ট হয়ে যায় এমন জীবিকাই শ্রেষ্ঠ। (আয়াত : ৩)
৩. মুমিনের দোয়ায় তিনটি বিষয় উপস্থিত থাকা উত্তম : ক. নিজের অক্ষমতা প্রকাশ, খ. আল্লাহর প্রতি সুধারণা ও আশাবাদ, গ. প্রার্থিত বিষয়ে দ্বিনি কল্যাণ। (আয়াত : ৪-৫)
৪. মুমিন সন্তান কামনার সময়ও পরকালীন কল্যাণকে সামনে রাখবে।
৫. চরিত্রবান নারীর কাছে সম্ভ্রমের মূল্য জীবনের চেয়েও বেশি। (আয়াত : ২৩)
৬. সন্তানের ওপর পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব আছে।
(আয়াত : ২৮)
৭. নবজাতক ঈসা (আ.)-এর কথোপকথন ছিল তাঁর জন্য মুজিজা এবং তাঁর মায়ের পবিত্রতার প্রমাণ। (আয়াত : ২৯)
৮. আল্লাহ কোনো পাপের সন্তানকে নবী করেননি।
(আয়াত : ৩০)
৯. বাঁ হাতে আমলনামা পাওয়ার পর থেকে জাহান্নামিদের আক্ষেপ শুরু হবে। ‘পরকালে মৃত্যু নেই’ ঘোষণার পর তাদের আক্ষেপ বেড়ে যাবে। (আয়াত : ৩৯)
১০. দ্বিনি বিষয়ে প্রয়োজনে সন্তান পিতাকে উপদেশ দিতে পারে, সতর্ক করতে পারে। যদি সন্তান ধর্মীয় জ্ঞানে অগ্রগামী হয়। (আয়াত : ৪২)
১১. গুরুজনকে উপদেশ দেওয়ার সময় কল্যাণকামিতা ও শিষ্টাচার রক্ষা করা আবশ্যক। (আয়াত : ৪৩)
১২. মুশরিক মা-বাবার জন্য পাপ মার্জনার দোয়া করা বৈধ নয়। তবে তাদের হিদায়াতের দোয়া করা যাবে। (আয়াত : ৪৭)
১৩. মুসলমানরা পরস্পরের ভেতর সালাম বিনিময় করবে এবং অমুসলিমদের অন্য কোনো শব্দে অভিনন্দন জানাবে।
(আয়াত : ৪৭)
১৮. নবীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে বাড়াবাড়ি করা যাবে না এবং তাঁদের অসম্মানও করা যাবে না। (আয়াত : ৫৮)
১৯. কোরআন তিলাওয়াতের সময় কান্না করা নবী-রাসুলদের সুন্নত।
২০. নামাজ দ্বিনের স্তম্ভ এবং সবচেয়ে উত্তম আমল। নামাজে অবহেলা করলে তার পুরো দ্বিনদারিতে অবহেলা চলে আসে। (আয়াত : ৫৯)
২১. অসার কথা দ্বারা এমন উদ্দেশ্য, যা আল্লাহর জিকির শূন্য। (আয়াত : ৬২)
২২. প্রত্যেকে পুলসিরাত অতিক্রম করবে। মুমিন ঈমান ও আমলের মাত্রা অনুসারে দ্রুততার সঙ্গে তা অতিক্রম করবে।
(আয়াত : ৭১)
২৩. পাপী মুমিনরা শাস্তি ভোগের পর জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আয়াত : ৭২)
২৪. মেহমানের জন্য মেজবানের প্রতি সুধারণা পোষণ করা আবশ্যক। (আয়াত : ৮৫)
২৫. আল্লাহ কাউকে ভালোবাসলে আসমান-জমিনে তার ঘোষণা হয়। ফলে সৃষ্টিকুল তাকে ভালোবাসতে শুরু করে। (আয়াত : ৯৬)
গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান
ইবনে আসাকির একজন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও মুহাদ্দিস। তাঁর নাম ছিল মূলত আলী। উপনাম আবুল কাছিম। তিনি ইবনে আসাকির নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন।
তাঁর পিতা হাসান ইবনে হিবাতুল্লাহ একজন ন্যায়পরায়ণ, নেককার, ইলম ও আলেম প্রিয়, দ্বিন-ধর্ম ও ফিকহি মাসায়েলের প্রতি অধিক যত্নশীল ব্যক্তি। এমন সৌভাগ্যবান পিতার পরশে ইবনে আসাকির বেড়ে ওঠেন দ্বিনি ইলমের প্রবল আগ্রহ নিয়ে। দামেস্ক ও তার বাইরে অনেক দেশ ও অঞ্চল ঘুরে বেড়ান ইলমে দ্বিনের তৃষ্ণাতুর হয়ে।
প্রথমে তিনি দামেস্কের বড় বড় আলেমের কাছ থেকে ইলম অর্জন করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য বহিঃরাষ্ট্রে সফরের সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে ৫২০ হিজরি সনে বাগদাদে যান।
এক বছর পর ৫২১ হিজরি সনে বাগদাদ থেকে হজের উদ্দেশে মক্কা যান। হজের পাশাপাশি মক্কা, মিনা ও মদিনায় যেখানেই বড় আলেমের সাক্ষাত্ পেয়েছেন, ইলমের পেয়ালা ভরে নিয়েছেন। আবার ফিরে যান বাগদাদে। পাঁচ বছর পর চলে যান সিরিয়ায়। দ্বিতীয়বার সফর করেন অনারব দেশগুলোতে। এমন কঠোর সাধনা ও ত্যাগের বিনিময়ে তিনি পরিণত হন কালজয়ী বরেণ্য ব্যক্তিতে। এরপর বসে থাকেননি। দ্বিন ও ইসলামের মহান স্বার্থে জীবনের সবটুকু অংশ ওয়াকফ করে দেন শিক্ষকতা ও গ্রন্থনার কাজে। মুসলিম-উম্মাহর আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে যান ইলমের সুবিশাল ভাণ্ডার।
তাঁর অনেক রচনা রয়েছে। তন্মধ্যে ‘তারিখে দিমাশক আল কাবির’ জগদ্বিখ্যাত আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ, যা ‘তারিখে ইবনে আসাকির’ নামে প্রসিদ্ধ। বৈরুতের ‘দারুল ফিকর’ থেকে ৭৪ খণ্ডে তা ছাপা হয়। পরবর্তী সময়ে ইবনে মানযুর আল-আনসারি [জগদ্বিখ্যাত আরবি অভিধান ‘লিসানুল আরব’ এর লেখক (মৃত-৭১১ হি.)] তা সংক্ষিপ্ত করে লিখেন ‘মুখতাসারু তারিখে দিমাশক’, এটি দামেস্কের ‘দারুন নাশর’ থেকে ২৯ খণ্ডে ছাপা হয়। তাঁর রচিত আরো কয়েকটি গ্রন্থ হলো ‘গারায়িব মালিক’, ‘আল-মুজাম’, ‘মানাকিবুশ শুব্বান’, ‘ফাজায়িল আসহাবুল হাদিস’, ‘ফাজলুল জুমুয়া’, ‘আস-সুবায়িয়্যাত’, ‘মান ওয়াফাকাত কুনইয়াতুহু কুনইয়াতা জাওজাতিহি’, ‘আওয়ালিল-আওযায়ী ওয়া হালুহু’ ইত্যাদি।
ইবনে আসাকির ইলমের ময়দানে এত বিশাল খেদমতের পাশাপাশি ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আজকার, নফল নামাজ, তিলাওয়াত ইত্যাদিতে ছিলেন অগ্রজ। শত ব্যস্ততার মধ্যেও ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতেন। রমজানের বাইরে প্রতি সপ্তাহে, আর রমজানে প্রতিদিন কোরআন শরিফ খতম করতেন। বিশেষ বিশেষ রাতগুলো ইবাদাত-বন্দেগিতে কাটাতেন।
ইলমে দ্বিনের এই মহান বিদ্বান ইবনে আসাকির (রহ.) ৫৭১ হিজরির ১১ রজব সোমবার রাতে ইহকাল ত্যাগ করে চলে যান মহান প্রভুর সান্নিধ্যে। সুলতান সালাহুদ্দীন (রহ.) তাঁর জানাজায় শরিক হন। দামেস্কের বাবুস সগীর গোরস্তানে তাঁর পিতার পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ১৫/২৪৭-২৪৮, ২৪৯, ২৫০পৃ., ক্র.৫১৫৫; তারিখে দিমাশক : ১/১১-১৬ পৃ.; আল-আ’লাম : ৪/২৭৩ পৃ.)
রহমত, মাগফিরাত ও নামাজের মাস পবিত্র মাহে রমজান। প্রত্যেক মুমিনের উচিত এ মাসের ইবাদতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া। রোজার মহিমা ক্ষুণ্নকারী সব ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা। সর্বদা আল্লাহর সাহায্য চাওয়া।
নিম্নে রোজাকে পরিপূর্ণ ও অর্থবহ করে তোলার কিছু আমল তুলে ধরা হলো—
সাহরি খাওয়া : পবিত্র রমজানে সাহরি খাওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। এতে মহান আল্লাহ অফুরন্ত বরকত রেখেছেন। (বুখারি, হা: ১৯২৩)
তা ছাড়া সাহরি খাওয়ার মধ্য দিয়ে দিনের বেলা রোজা রাখা আরেকটু সহজ হয়।
(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৯৩)
সূর্যাস্ত নিশ্চিত হয়ে দ্রুত ইফতার করা : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘লোকেরা যত দিন ইফতার দ্রুত করবে তত দিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯৫৭)
অধিক পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত
করা : জিবরাইল (আ.) প্রতি রাতে নবী (সা.)-এর সঙ্গে কোরআন চর্চা করতেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ...রমজানের প্রতি রাতেই জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন এবং তাঁরা একে অপরকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন।
(বুখারি, হাদিস : ৬)
তাই আমাদেরও কোরআন অধ্যয়ন ও আমলে মনোযোগী হওয়া উচিত।
রাত জেগে ইবাদত করা : রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (বুখারি, হাদিস : ৩৭)
মিথ্যা ও গিবত থেকে বিরত থাকা : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার এই পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারি, হাদিস : ১৯০৩)
রাগান্বিত না হওয়া : রোজা মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখানোর জন্য। তাই রোজা অবস্থায় রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
(বুখারি, হাদিস : ১৮৯৪)
তাকওয়া অর্জন করা : কারণ রোজার মূল উদ্দেশ্যই হলো, তাকওয়া অর্জন করা। আল্লাহ বলেছেন, ‘যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩)
রমজানের শিক্ষা সারা বছর ধরে
রাখা : রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য শুধু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সংযম অনুশীলন করা নয়, বরং তাকওয়া ও আত্মনিয়ন্ত্রণের গুণ অর্জন করা, যা সারা বছর কাজে লাগানো।
সব ধরনের কুপ্রবৃত্তি থেকে বিরত রাখা : জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি রোজা রাখবে, তখন তোমার কান, চোখ ও জিহ্বা—সব কিছু যেন মিথ্যা ও গুনাহ থেকে রোজা রাখে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাঈবা : ৪/৮)
হালাল রিজিক আহার করা : হারাম থেকে বিরত থাকা সব সময়ই জরুরি, তবে রমজানে এটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রোজা রেখে হারাম উপার্জনের খাবারে ইফতার করা অর্থহীন।
দান-সদকা করা : রাসুল (সা.) সর্বদা দানশীল ছিলেন, তবে রমজানে তিনি আরো বেশি উদারতা দেখাতেন। (বুখারি, হাদিস : ৬)
ইফতারের সময় দোয়া করো : কারণ মহান আল্লাহ রোজাদারের দোয়া ফিরিয়ে দেন না।
মহান আল্লাহ উল্লিখিত আমলগুলোর মাধ্যমে আমাদের রোজাকে আরো প্রাণবন্ত ও অর্থবহ করে তোলার তাওফিক দান করুন। আমিন।