২০ বছর ধরে চোখে দেখতে পান না বিরামপুরের আব্দুর রহমান। তখন থেকেই কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। ছোট ছেলের রোজগার দিয়ে স্ত্রীসহ দুই ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছোট ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করে।
‘এইলা ত্রাণে কয় দিন পেট ভরি খাবা পারিম বায়’
- দিনাজপুরে ত্রাণ পেল আরো ১২০০ জন
এমদাদুল হক মিলন, গোলাম মোস্তাফিজার রহমান মিলন, মাহাবুর রহমান ও নাজমুল হুদা, দিনাজপুর থেকে

গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় দিনাজপুরের বিরামপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে, সকাল ১১টায় নবাবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের মাঠে, দুপুর ১২টায় হাকিমপুর বাংলা হিলি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এবং দুপুর ২টায় ঘোড়াঘাট কে সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় এক হাজার ২০০ হতদরিদ্র ও করোনায় ক্ষতিগ্রস্তের হাতে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন কালের কণ্ঠ শুভসংঘের সদস্যরা।
ত্রাণ নিতে আসা জাকিরুল ইসলাম সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারিয়েছেন। স্ত্রীসহ মা ও দুই মেয়ে নিয়ে কষ্টে আছেন তিনিও।
ত্রাণ সহায়তা পেয়ে নবাবগঞ্জের হাশেম আলী বলেন, ‘হামার বয়স হইছে কাম করবা পারু না। একটা ছুয়া আছে, হোটোলত কাম করে।
বৃদ্ধ বয়সে নিঃসঙ্গ জীবন চলছে গৌরবালার। স্বামী, ছেলে-মেয়ে নেই। নেই নিজের কোনো ভিটা। ভিক্ষাবৃত্তি করেই জীবনের শেষ সময়টা পার করছেন। ত্রাণ পেয়ে তিনি বলেন, ‘মোর বাড়িঘর কিছু নাই। মানুষের দ্বারে দ্বারে বেড়াও খাই বাবা। তোমরা হামাক চাল-ডাল দিলা। ওটায় হামি অনেক দিন খামু বাবা। কারো ধারে যামু না।’
হাকিমপুরের দুই বোন বেবি খাতুন ও মরিয়ম আক্তার। শারীরিকভাবে খাটো আকৃতির হলেও স্বপ্ন দেখেন বড় হওয়ার। প্রতিবন্ধী বাবাও মারা গেছেন এক দশক আগে। মায়ের সঙ্গী হয়ে স্বপ্ন ছুঁতে জীবনসংগ্রামে লড়াই করছেন তাঁরা। কাঠখড়ির দোকান করেই চলে তাঁদের সংসার। হাকিমপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজে বড় বোন মরিয়ম পড়ছেন দ্বাদশ শ্রেণিতে আর বেবি পড়ছেন একাদশে। উপবৃত্তির মাধ্যমেই তাঁদের এই পড়াশোনার খরচ চলে। সব মিলিয়ে টানাপড়েনের জীবন তাঁদের। হাকিমপুর উপজেলার বাংলাহিলি পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে তাঁদের হাতে ত্রাণ তুলে দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ পেয়ে খুশি মনে মুখ ফুটে তাঁরা বলেন, ‘আমাদের পাশে থাকিয়েন আপনারা। আমরা বড় হতে চাই। আপনাদের এই খাবার দিয়ে আমরা অনেক দিন খেতে পারব। আমাদের খুব উপকার হইল।’
ত্রাণ সহায়তা পেয়ে সাইফুল ইসলাম নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘টানাটানির সংসার চলিছে, কোনো কামকাইজ নাই। তোমার ত্রাণ পায় খুব উপকার হইল। বসুন্ধরার তানে হামি কৃতজ্ঞ হইলাম।’
ঘোড়াঘাটে ত্রাণ নিতে আসা কাসিদা খাতুন নামের এক বৃদ্ধা বলেন, ‘হামার ছইলপইল কেউ নাই বাবা। কামাই-রোজগার নাই। তোমার ত্রাণ পায়য়া হামরা খুব খুশি। আল্লাহ তোমাল্লার ভালো করুক। এলা ত্রাণ দিয়া হামার ঢেইল্লা দিন চলি যাইবে।’
বদিরুল আরিফিন নামের আরেক উপকারভোগী বলেন, ‘হামার এই দিকে কেউ এসব ত্রাণ দেয় না। হামার খোঁজখবর কেউ নেয় না। এইলা ত্রাণ পায়া হামার খুব উপকার হইল। কদিন পেট ভরি খাবা পারিম বায়।’
রহিম উদ্দিন বলেন, ‘হামার বয়স হয় গেইছে। কাজকামও করার বল নাই। করোনায় ছুয়াডাও কাজ পায় না। বসুন্ধরা গ্রুপ হামাক খাবারদাবার দিল, খুব উপকার হইল হামার।’
ত্রাণ বিতরণে অংশ নিয়ে বিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খাইরুল আলম রাজু বলেন, ‘দিনাজপুরের অসহায় এবং করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানাই। বসুন্ধরা যেন তাদের এই মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখে, সেই প্রত্যাশা করি।’
ত্রাণ বিতরণে অংশ নিয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, ‘করোনার কারণে গোটা বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়েছে। মহামারির এই সময় সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং সামাজিক সংগঠন অতিদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় বসুন্ধরা গ্রুপ আজকে আপনাদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে। এ কারণে আমি বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা আশা করি, কালের কণ্ঠ শুভসংঘের মাধ্যমে তাদের এই মানবিক কার্যক্রম চলমান থাকবে। আমাদের অনুরোধ, আপনারা আজ যাঁরা ত্রাণ পেলেন, তাঁরা কেউ ঘর থেকে বের হবেন না। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। করোনা মোকাবেলা করতে সহযোগিতা করবেন।’
ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন হাকিমপুর উপজেলার চেয়ারম্যান হারুন-উর রশিদ। তিনি বলেন, ‘করোনার মধ্যে এত দূর থেকে দিনাজপুর জেলায় ত্রাণ সহায়তা দেওয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপকে এবং কালের কণ্ঠ শুভসংঘকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। দুর্যোগ মুহূর্তে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মনোভাবকে আমরা সম্মান জানাই। করোনার মধ্যে আপনারা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। সবাই মাস্ক পরবেন।’
ত্রাণ বিতরণে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফিউল আলম বলেন, ‘সরকারের পাশাপাশি বসুন্ধরা গ্রুপের মতো শিল্পপতি ও বিত্তবানরা এগিয়ে এলে এই করোনাকালে মানুষের কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হবে। আমি বসুন্ধরা গ্রুপ ও কালের কণ্ঠ শুভসংঘকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।’
বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট—এই চার উপজেলায় ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান। তিনি দেশের শীর্ষ শিল্পগ্রুপ বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের জন্য দোয়া চেয়ে তাঁর বার্তা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান সবার কাছে পৌঁছে দেন।
বিরামপুরে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল কুমার সরকার, থানার ওসি সুমন কুমার মহন্ত, বিরামপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আরমান হোসেন, বিরামপুর উপজেলার সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম তানিমসহ আবু সাঈদ মণ্ডল, মশিউর রহমান, মতিউর রহমান, নূর মোহাম্মদ, বিপ্লব হোসেন, মাহবুবুর রহমান ও মনজুর কাদের পলাশ।
নবাবগঞ্জে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ সোম, নবাবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল কাদির, শুভসংঘের নবাবগঞ্জ উপজেলার আহ্বায়ক আকাশ কুমার পাল, সদস্যসচিব ইসমাইল হোসেনসহ সদস্য সাব্বির মাহমুদ, সাব্বির আহমেদ, হাসিবুল ইসলাম, হাসিবুর রহমান, রাব্বি আল তৌহিদ, কে ও মৃদুল, আতাহার নাইফ, সাদিক মাহমুদ, নাজমুস সাকিব ও আল মুসাব্বির আহমেদ।
হাকিমপুরে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরে আলম, পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজি, থানার ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহীন রেজা শাহিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহরাব হোসেন প্রতাব মল্লিক, হাকিমপুর উপজেলা শুভসংঘের সাধারণ সম্পাদক নাসিম বাবুসহ শুভসংঘের মোস্তাফিজুর, শোভন, নিলয়, এন্তাদুল, আরিফ, হাসান, জীবন, রাহুল, পলাশ তরিকুল, মুন্না, ফরহাদ, সাব্বির, মাসুম, আবির, আনিকা, মিতু ও শোভা। ঘোড়াঘাটে ত্রাণ বিতরণে উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র আব্দুস সাত্তার মিলন।
চার উপজেলায় ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শুভসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামীম আল মামুন, সদস্য শরীফ মাহ্দী আশরাফ জীবন, শুভসংঘের দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি রাসেল ইসলামসহ রশিদুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম শরিফ, ইয়াসির আরাফাত রাফি, দিনাজপুর সরকারি কলেজ শাখার হুমায়ুন পারভেজ প্রমুখ।
সম্পর্কিত খবর

যানজটের সৃষ্টি


ঢাকায় ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনি দুজন নিহত
নিজস্ব প্রতিবেদক ও কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি

ঢাকার চকবাজার ও কেরানীগঞ্জে গতকাল শুক্রবার ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে আরো দুজন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চকবাজার চম্পাতলী সোয়ারীঘাট এলাকায় এক ছিনতাইকারী নিহত হয়।
চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, কেরানীগঞ্জ ফেরিঘাট এলাকায় ছিনতাই করার সময় স্থানীয় লোকজন ধাওয়া দেয়। এ সময় ছিনতাইকারী দলের এক সদস্য পালিয়ে যায়। অন্য তিনজন নদীতে ঝাঁপ দেয়। তারা সাঁতার কেটে চকবাজার চম্পাতলী ঘাটে এলে স্থানীয় জনতা তাদের পিটুনি দেয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. আবুল খায়ের বলেন, সিআইডির সহযোগিতায় জানা গেছে, নদীর এপারে মারা যাওয়া একজনের নাম আসিফ।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কেরানীগঞ্জে পিটুনিতে একজন নিহত : গণপিটুনি দিয়ে বুড়িগঙ্গা পানিতে ফেলে দেওয়ার পর হাসান মাঝি নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে বরিশুর নৌ পুলিশ। নিহত হাসান বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সুলতানি গ্রামের মানিক মাঝির ছেলে।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন জিনজিরা নামাবাড়ি এলাকায় নাদু ব্যাপারীর ঘাট থেকে লাশটি উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বরিশুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মোক্তার হোসেন জানান, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা লাশ উদ্ধার করি। সুরতহালের সময় লাশের গায়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গণপিটুনির একটা ঘটনার কথা শুনেছি তবে কেউ সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়নি। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

হিমাগার মালিকদের স্লিপ কারসাজি প্রতারিত লাখো আলু চাষি
সাইদ শাহীন ও তামজিদ হাসান তুরাগ

সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় কৃষকের আলু রাখছেন না হিমাগার মালিকরা। কারসাজির মাধ্যমে নামে-বেনামে, আত্মীয়-স্বজন ও পরিজনদের নামে আগে থেকেই স্লিপ কেটে রেখেছেন মালিকরা। ফলে কৃষক আলু রাখতে গেলে তাঁদের বলা হচ্ছে হিমাগারে জায়গা নেই। হিমাগারে জায়গা না থাকায় গুটিকয়েক ব্যবসায়ী ছাড়া কোনো ক্রেতা আলু কিনতেও পারছেন না।
এভাবেই সারা দেশে হিমাগার মালিকদের স্লিপ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন লাখো আলু চাষি। অবশ্য দিশাহারা কৃষকদের পাশে কৌশলে দাঁড়াচ্ছেন হিমাগারের কর্মকর্তারা। তাঁরা গোপনে বলে দিচ্ছেন, ‘অমুকের স্লিপ নেওয়া আছে, সেখানে আলু বিক্রি করতে পারবেন।’ আসলে অমুক ব্যক্তিটাই হলো হিমাগার মালিকের এজেন্ট।
কুড়িগ্রাম জেলা শহরের আলু চাষি মকবুল আলমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এ মৌসুমে আলু তোলা হয়েছে এক হাজার ২০০ বস্তা। কিন্তু তিনি আলু রাখতে পেরেছেন মাত্র ৬০০ বস্তা।
নাম প্রকাশ না করে এক চাষি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিটি কোল্ড স্টোরেজের মালিক নামে-বেনামে স্লিপ দিয়ে জায়গা দখল করে রাখেন। পরে হয় তাঁরা নিজেরাই আলু রাখেন, না হয় বস্তাপ্রতি বেশি দাম রাখেন। কারণ আলু রাখতে পারলেই লাভ। আবার এটা অঘোষিত নিয়ম হয়ে গেছে, হিমাগারে আলুর ধারণক্ষমতা যতটুকু তার ১০ শতাংশ বস্তা মালিকরা নিজের নামে রাখে।’
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে আলুর ফলন ভালো হলেও হতাশ চাষিরা। একদিকে তাঁরা আলুর ভালো দাম পাচ্ছেন না, অন্যদিকে হিমাগারে সিন্ডিকেট করে নেওয়ার কারণে জায়গার সংকট। সব মিলিয়ে প্রান্তিক কৃষকের গলার কাঁটা মাঠের আলু। এবারে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণে বাজারে আলুর দাম কমে গেছে। এ ছাড়া হিমাগারে কৃষকরা আলু রাখতে না পারার কারণে একই সঙ্গে বাজারে আলুর সরবরাহ বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতি কেজি আলু ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। অথচ তাঁদের উৎপাদন খরচ হয়েছে ১৯-২০ টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন লক্ষামাত্রা এক কোটি ১৩ লাখ ৮৭ হাজার টন, যা গত অর্থবছরে ছিল এক কোটি ৯ লাখ ৬৫ হাজার টন।
আলুর কম দামের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হবেন হিমাগার মালিকরা। মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এক কেজি আলু যেখানে রাখতে হিমাগারে খরচ হয় ৪.৫ থেকে ৬ টাকা, সেই আলু রাখার জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ৬.৭৫ টাকা। এর পরও হিমাগারে জায়গা পাচ্ছেন না কৃষক। কারসাজির মাধ্যমে হিমাগার ভরে গেছে দেখিয়ে কম দামে আলু কিনছেন মূলত হিমাগার মালিকরা। এসব আলু ক্রয়মূল্যসহ তিন মাস পরেই অফ সিজনে ন্যূনতম ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে পারবেন তাঁরা। অথচ হিমাগার মালিকদের সব ধরনের খরচ মিলিয়ে মোট খরচ হবে ২২ থেকে ২৫ টাকা। আর যদি অফ সিজনে আলুর দাম আরো বেশি ওঠে তাহলে হিমাগার মালিকরা লালে লাল হবেন।
সরেজিমনে রংপুর বিভাগের একাধিক আলু হিমাগার ঘুরে দেখা গেছে, হিমাগারগুলোর সামনে সারি সারি আলুভর্তি বস্তা। তবে হতাশা কৃষকের মুখে। তার অন্যতম প্রধান কারণ কৃষকরা তাঁদের প্রয়োজন মতো আলু হিমাগারে রাখতে পারছেন না। ফলে তাঁদের বাধ্য হয়ে কম দামে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ী মারুফ আহমেদ বলেন, ‘হিমাগারগুলোর মধ্যে এখনো কিছু জায়গা খালি আছে। কিন্তু তারা সিন্ডিকেট করে আলুর দাম কমানোর জন্য কূটকৌশল করছেন এবং এই সুবাদে তাঁরা কিছু মাল কিনে কোল্ড স্টোরেজে কম্পানির নামে মাল রাখার ধান্দা করছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এখনো ৬.৭৫ পয়সা ভাড়া মানি না। সামনে বড়সড় আন্দোলনে যাব।’
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের বাবর কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের ম্যানেজার শামীম আল মাসুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের কোল্ড স্টোরেজের ধারণক্ষমতা ১১ হাজার মেট্রিক টন, যা পুরোপুরি বুকিং হয়েছে। আমরা সবাইকে স্লিপ দিয়েছি। কে কৃষক কে ব্যবসায়ী আমরা তা দেখিনি।’
মোস্তফা হিমাগারের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কুড়িগ্রামের চারটি হিমাগারের মোট আলু সংরক্ষণক্ষমতা ৪৮ হাজার টন। কিন্তু এ বছর উৎপাদন বেশি হওয়ায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেককে আলু ফেরত নিয়ে যেতে হচ্ছে।’

পল্লবীতে শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা
- রায়পুরায় সংঘর্ষ গুলি, নিহত ২
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর মিরপুরে পল্লবী এলাকায় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সেলিম (৩৫) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরিবারের দাবি, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। নিহত সেলিম পোশাকের কারচুপির কারখানায় কাজ করতেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেলিমকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা মেডিক্যালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. ফারুক বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।
নিহতের আত্মীয় আশিকুর রহমান জানান, গতকাল ইফতারের পর সেলিম বাড়ির পাশে ওয়াপদা বিল্ডিংয়ের পাশের মাঠে যান। সেখানে শত্রুতার জেরে সেলিমকে কুপিয়ে ফেলে রাখা হয়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের খালা ইয়াসমিনের ভাষ্য, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী পারভিন, রনি, জনি, সীমা, রানীসহ আরো বেশ কয়েকজন শত্রুতার জেরে সেলিমকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
নিহত সেলিম এক সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে মিরপুর-১১ পল্লবীর বিহারি ক্যাম্প ওয়াপদা কলোনি বিল্ডিংয়ে থাকতেন। ঘটনার পর ঘটনাস্থলে যান পুলিশ কর্মকর্তারা।
পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে গেছেন।
রায়পুরায় আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষে গুলি, নিহত ২ : রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই প্রবাসফেরত ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এক নারীসহ চারজন আহত হয়েছে। গতকাল ভোরে উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের মোহিনীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন মোহিনীপুর এলাকার খোরশেদ মিয়ার ছেলে আমিন মিয়া ও আব্দুল বারিকের ছেলে বাশার মিয়া।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মোহিনীপুর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম ও চানপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সামসু মিয়ার অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। ছয় মাস আগে সংঘর্ষের পর সালামের অনুসারীরা এলাকা ছেড়ে পাশের একটি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে তারা বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিলে সামসু মেম্বারের অনুসারীরা দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে সালামের অনুসারী আমিন ও বাশার মারা যান।
নিহত আমিনের বাবা খোরশেদ মিয়ার অভিযোগ, ‘সামসু মেম্বারের হামলা ও নির্যাতনের ভয়ে আমরা গ্রাম ছেড়েছিলাম। ঈদের আগে বাড়ি ফিরতে গেলে তারা হামলা চালায়। আমার ছেলের বাঁ পায়ে গুলি করে এবং শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়। এ সময় আমার স্ত্রী আহত হয়।’
বাশারের স্বজনরা জানায়, ঘটনার আগে রাতে সামসু মেম্বারের অনুসারীদের মধ্যে দুজন হামলা করতে এসে অস্ত্রসহ আটক হয়। পরে তাদের ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরই ভোরে সালামের অনুসারীদের ওপর হামলা হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাশার মারা যান।
রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রাবেয়া সুলতানা জানান, মৃত অবস্থায় দুজনকে হাসপাতালে আনা হয়। আমিনের বাঁ পায়ে এবং বাশারের বুক, পাসহ শরীরে গুলির আঘাত ছিল।
এ বিষয়ে চানপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সামসু মিয়া বলেন, ‘সংঘর্ষের সময় আমার পক্ষের তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। প্রতিপক্ষের দুজন নিহত হয়েছে বলে শুনেছি।’
রায়পুরা থানার ওসি আদিল মাহমুদ জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখনো নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি।