<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ধূসর বর্ণের কাগজের পাশগুলো অনেকটা পোকায় কাটা। তাতেই শোভা পাচ্ছে হাতের লেখা, যাতে রয়েছে মুনশিয়ানার নিপাট স্বাক্ষর। অবশ্য লেখার ভাষাটি প্রাকৃত, পালি না সংস্কৃত সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রাচীন এসব পাণ্ডুলিপির কথা শুনে বহু দফা বগুড়া ছুটে এসেছেন গবেষকরা। নেড়েচেড়ে সেসব পাণ্ডুলিপি দেখে ফিরেও গেছেন ফের আসবেন এমনটা জানান দিয়ে। কিন্তু কেউ ফিরে আসেননি। ফলে কাচের বাক্সে বন্দি তিনটি প্রাচীন পাণ্ডুলিপির আর পাঠোদ্ধার হয়নি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অবশ্য ওই তিন পাণ্ডুলিপির মাথায় বাংলায় লেখা রয়েছে পৃথক তিনটি নাম। সেই নামগুলো হলো</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পদ্মপুরাণ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গোবিন্দকথামৃত</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ও </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হিরণ্যকাশপুর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। তিনটি গ্রন্থে ব্যবহৃত কাগজের ধরন দেখে গ্রন্থাগার সংশ্লিষ্টদের ধারণা এসব তুলোট কাগজ। সেই হিসেবে ন্যূনতম ৩০০ বছরের পুরনো এসব পাণ্ডুলিপি। বগুড়া উডবার্ন সরকারি গণগ্রন্থাগারে রয়েছে দুর্লভ ও প্রাচীন এই তিনটি পাণ্ডুলিপি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ গণগ্রন্থাগারের সহকারী গ্রন্থাগারিক আমির হোসেন জানান, ১৪ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য এবং তিন ইঞ্চি প্রস্থের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পদ্মপুরাণ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এ রয়েছে ৮০০ পৃষ্ঠা। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গোবিন্দকথামৃত</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এক হাজার পৃষ্ঠার এবং </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হিরণ্যকাশপুর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> গ্রন্থটি ৭০০ পৃষ্ঠার। বিভিন্ন সময়ে গ্রন্থাগারে এসব প্রাচীন গ্রন্থ দেখতে আসা গবেষকদের কাছে তাঁরা জেনেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পদ্মপুরাণ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> গ্রন্থটি দেবী মনসার প্রশংসায় রচিত হতে পারে। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গোবিন্দকথামৃত</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লেখা হতে পারে প্রাচীন পুণ্ড্রনগরীর অন্যতম রাজা গৌড় গোবিন্দের গুণকীর্তন করে, আর ভারতের মেদিনীপুর জেলার হিরণ্যকাশপুরের গুণবর্ণনা থাকতে পারে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হিরণ্যকাশপুর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> গ্রন্থে। উপমহাদেশের আর কোথাও এসব পুথির অস্তিত্বের কথা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি বলে গবেষকরা গ্রন্থগারিকদের জানিয়েছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, গবেষকদের জন্য এই প্রাচীন গ্রন্থগুলো নিঃসন্দেহে মূল্যবান। এসবের পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হলে রচনার সময়কাল ছাড়াও এই অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে এই তিন গ্রন্থ থেকে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কিভাবে প্রাচীন এই গ্রন্থ এলো সরকারি এই গণগ্রন্থাগারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত সরকারি গণগ্রন্থাগার আর উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি পৃথকভাবে পরিচালিত হতো। উডবার্ন দেশের প্রাচীন গ্রন্থাগারগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৮৫৪ সালে এই পাবলিক লাইব্রেরির গোড়াপত্তন হয়। পরে ১৯০৮ সালে জেলা কালেক্টর জে এন গুপ্ত তদানীন্তন বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার জন উডবার্নের নামানুসারে এই লাইব্রেরির নাম রাখেন উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি। বগুড়ার নবাব সৈয়দ আবদুস সোবহান চৌধুরী ওই লাইব্রেরির জন্য একটি ভবন তৈরি করে দেন। বগুড়া অ্যাডওয়ার্ড পৌর পার্কের উত্তর-পূর্ব পাশের সেই ভবনেই চলত লাইব্রেরির কর্মকাণ্ড। সেটি ২০১২ সালে সরকারি গণগ্রন্থাগারের সঙ্গে একীভূত করা হলে দুর্লভ এই গ্রন্থ তাঁদের হাতে আসে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি জানান, আগে উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরিতে কর্মরত ছিলেন বর্তমানে তাঁর দপ্তরের অনিয়মিত কর্মচারী রেজওয়ানুল আলম রিপন। তাঁর কাছে জেনেছেন ১৯৯৭ সালে টাঙ্গাইল থেকে পদ্ম নামের এক ব্যক্তি উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরিতে ওই তিনটি গ্রন্থ দিয়ে যান। রিপনের মাধ্যমে পদ্ম নামের ওই ব্যক্তির ঠিকানা সংগ্রহ করে তিনি যোগাযোগ করে জানতে পারেন, বংশপরম্পরায় গ্রন্থ তিনটি তাঁর (পদ্ম) হাতে আসে। পরে তিনি তা উডবার্ন লাইব্রেরিতে দান করেন। সেই সময় থেকে পাণ্ডুলিপিগুলো অরক্ষিত ছিল। এ কারণে সেসবের চারধার পোকায় কেটে ফেলে। পরবর্তীকালে তিনি উদ্যোগ নিয়ে কাচের বাক্সে সেসব রেখেছেন। তুলোট কাগজের গ্রন্থ সংরক্ষণে বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন, কিন্তু তাঁদের কাছে সেই সুযোগ-সুবিধা নেই।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সহকারী গ্রন্থাগারিক আমির হোসেন জানান, শুধু যে ওই তিনটি প্রাচীন পাণ্ডুলিপি এই লাইব্রেরিতে আছে তা নয়, এখানে ১৮৫৫ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত লেখক চার্লস কিংলির দুষ্প্রাপ্য বই </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দি হিরোস অব গ্রিক ফেয়ারি টেলস</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, ১৯২৯ সালে প্রকাশিত শ্রী প্রভাসচন্দ্র সেনের লেখা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বগুড়ার ইতিহাস</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (বগুড়ার ইতিহাস জানতে সবচেয়ে প্রামাণ্য গ্রন্থ বলে বিবেচিত হয় এটি) এমন অনেক দুর্লভ বই রয়েছে। জনবল সংকটে সেসব বইয়ের ক্যাটালগিং করা যায়নি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, লাইব্রেরিতে ৯ জনের পদ থাকলেও তিনিসহ মাত্র তিনজন সব কাজ করছেন। পাঠক সামলানো এবং দাপ্তরিক অন্যান্য কাজ করতে গিয়ে একীভূত হওয়ার সময় উডবার্ন লাইব্রেরি থেকে পাওয়া আট হাজার বই নিয়ে তেমন কোনো কাজ করা সম্ভব হয়নি। সেটি করা গেলে আরো দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য বইয়ের সন্ধান মিলতে পারে বলে তিনি আশাবাদী।</span></span></span></span></p>