<p style="text-align:justify">স্বল্প আয়ের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণে ভরসা ডিম ও মুরগি। অসাধু ব্যবসায়ীরা এই দুটি খাদ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে ফায়দা লুটছেন। এক বিজ্ঞপ্তিতে এ অভিযোগ করে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) বলেছে,  ডিম ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে গত ২০ দিনে প্রায় ২৮০ কোটি টাকা লুট করেছেন করপোরেট ব্যবসায়ীরা।</p> <p style="text-align:justify">সংস্থাটি বলেছে, দাম বৃদ্ধিতে করপোরেট গ্রুপ ও তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ীদের আধিপত্য বিস্তারের কারণে ডিম ও মুরগির বাজারে অস্থিরতা। এই চক্র বারবার বাজারে কারসাজি করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিলেও তাদের শাস্তি হচ্ছে না। এ কারণে বাজারে অস্থিরতা বেড়েই চলেছে।</p> <p style="text-align:justify">গতকাল শনিবার বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিম-মুরগি উৎপাদনকারী প্রান্তিক খামারিদের মূল্য নির্ধারণ ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ’ কমিটিতে না রেখে শুধু করপোরেট গ্রুপগুলোর পরামর্শে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন থেকে ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">এতে বাজারে এই অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এই অস্থিরতার পেছনে ফিড, মুরগির বাচ্চার কম্পানি ও তাদের অ্যাসোসিয়েশনগুলো এবং তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতিসহ আরো অনেক শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করপোরেট গ্রুপ ও তাদের অ্যাসোসিয়েশনগুলোর সিন্ডিকেট শক্তিশালী হওয়ার কারণে বারবার একই পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম নির্ধারণ না করে, বিগত দিনের সিন্ডিকেটকারীদের সঙ্গে নিয়ে ডিম-মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়ে করপোরেট গ্রুপগুলোর সিন্ডিকেট করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এতে পুরনো সিন্ডিকেট মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। ফলে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে—এটাই স্বাভাবিক। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ডিম-মুরগির দাম নির্ধারণ করা হয়। যেখানে বলা হয়, উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিম ১০.৫৮ টাকায় বিক্রি করতে পারবে, যা ভোক্তা পর্যায়ে ১২ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু যাদের সঙ্গে নিয়ে দাম নির্ধারণ করা হলো, তারা কেউ সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করেনি।</p> <p style="text-align:justify">করপোরেট উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিম ১১.১ টাকায় বিক্রির কথা স্বীকার করলেও তারা প্রতারণার মাধ্যমে প্রতিটি ডিম বিক্রি করেছে ১১.৮০ থেকে ১২.৫০ টাকায়। যার ফলে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ টাকায়। প্রতিটি ডিমে দুই টাকা বেশি নিলে প্রতিদিন চার কোটি ডিমে আট কোটি টাকা হয়। গত ২০ দিনে ১৬০ কোটি টাকা ভোক্তাদের পকেট থেকে তারা হাতিয়ে নিয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে একই ব্রয়লার বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫৬ টাকায়। লেয়ার বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। প্রতিদিন ৩০ লাখ সব ধরনের মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয়। প্রতিটি বাচ্চায় যদি ২০ টাকা বেশি ধরা হয়, তাহলে প্রতিদিন ছয় কোটি টাকা হয়। গত ২০ দিনে প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে প্রতারণা করে ১২০ কোটি টাকা কম্পানিগুলো অতিরিক্ত মুনাফা করেছে।</p> <p style="text-align:justify">বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মুরগির বাচ্চার চাহিদার ১০০ শতাংশ ফিড করপোরেট অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত কম্পানিগুলো উৎপাদন করে। চাহিদার শতভাগ উৎপাদন করার ফলে তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে। বাজারে ডিম ও মুরগির চাহিদার ২০ শতাংশ উৎপাদন করে করপোরেট কম্পানিগুলো।  এর পরও তারা সুকৌশলে পুরো বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। অন্যদিকে বাজারে ডিম ও মুরগির চাহিদার ৮০ শতাংশই উৎপাদন করা উদ্যোক্তা প্রান্তিক খামারি ও ভোক্তারা এসব করপোরেট কম্পানির কাছে অসহায়। করপোরেট সিন্ডিকেটের যদি লাগাম টানা না যায়, তবে ভবিষ্যতে দেশের প্রান্তিক পোলট্রিশিল্পের জন্য অশনি সংকেত বয়ে আনবে।</p>