<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে বিনা মূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ২০২৩ সালে ২৬৯ কোটি টাকার অনিয়ম পেয়েছে বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের অধীন শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর। আবার আওয়ামী শাসনামলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) যেসব কর্মকর্তা নিম্নমানের পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজে সহায়তা করেছেন, তাঁদের নিয়েই গঠন করা হয়েছে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সূত্র মতে, ২০২৪ সালে ৩৪ কোটি পাঠ্যপুস্তক ছাপতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৪৫ কোটি ৬৪ লাখ ২৮ হাজার ৭৭৩ টাকা। এর মধ্যে ২৬৯ কোটি ৬৮ লাখ ৯৪ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। বইয়ের মান, আকার কমিয়ে এবং নিউজপ্রিন্টে ছাপিয়ে লোপাট করা হয় ২৪৫ কোটি টাকা, আর অযাচিত বিল, অতিরিক্ত সম্মানি, আয়কর কর্তন না করা, অগ্রিম সমন্বয় না করাসহ নানা কারণ দেখিয়ে আরো প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০১৮ সালে টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে দীপু মনি শিক্ষামন্ত্রী হন। ওই সময় উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মহিবুল হাসান চৌধুরী চৌধুরী নওফেল। মূলত তখন থেকে নিউজপ্রিন্টে নিম্নমানের বই ছাপা শুরু হয়। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বই ছাপায় বড় অনিয়ম করা হয়। ২০২৩ সালের মতো অন্য পাঁচ বছরও গড়ে ২৫০ কোটি টাকার মতো লুটপাট করা হয়েছে। সে হিসাবে গত ছয় বছরে বিনা মূল্যের পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজে অন্তত এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সূত্র জানায়, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিয়ন জাহাঙ্গীরের আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার কাহিনি শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাহাঙ্গীর টেন্ডারবাজি করতেন। তাঁর টেন্ডারবাজির অন্যতম জায়গা ছিল এনসিটিবি। ছাপার কাজ পাইয়ে দিয়ে তিনি বড় অঙ্কের কমিশন নিতেন। যাঁরা বড় ধরনের ছাপার কাজ পেতেন তাঁদের সাবেক দুই শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও নওফেলকেও বড় অঙ্কের কমিশন দিতে হতো। এতে সহজে নিম্নমানের পাঠ্যপুস্তক ছাপার সুযোগ পাওয়া যেত। আর ইন্সপেকশন এজেন্টকেও টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হতো।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ পাঠ্য পুস্তক মুদ্রণ ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাঠ্যবই মুদ্রণকাজে প্রতিবছর ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা লুটপাট হতো, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। গত ছয়-সাত বছর বাধাহীন এ কাজ হয়েছে। নিম্নমানের নিউজপ্রিন্টে ছাপা হয়েছে পাঠ্যবই। জিএসএম, ব্রাইটনেস কিছুই ঠিক রাখা হয়নি। এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হতো, যে মানেরই হোক, বই দিয়েছে এটাই বড় কথা। আর এই সুযোগে একটি সিন্ডিকেট বিপুল টাকা-পয়সা বানিয়ে নিয়েছে। আমরা চাই এসব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসুক। এনসিটিবির যেসব কর্মকর্তা আগে মুদ্রণকাজে জড়িত ছিলেন তাঁরাই যদি শ্বেতপত্র প্রকাশের দায়িত্ব পান, তাহলে জাতি নিরপেক্ষ কিছু পাবে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অডিট অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের বই ছাপার কাজের ব্যাপারে বলা হয়, হুবহু একই স্পেসিফিকেশন এবং একই এস্টিমেটের বই একই সময়ে বিভিন্ন দরে মুদ্রণ করায় ২৩৫ কোটি ৩০ লাখ ৫৭ হাজার ৭৮৫ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ না দিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দরদাতাকে কাজ দেওয়ায় অতিরিক্ত ছয় কোটি ৫৩ লাখ ৪১ হাজার ২৮৭ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে ২৮০টি লটে বই ছাপা হয়। ৪৩টি লটের বই ছাপানো হয় দুই টাকা ৬৮ পয়সা করে। ২৩৭ লটের বই ছাপানো হয় এক টাকা ৬৩ পয়সা করে। দেখা গেছে, এই দুই লটের একই মানের বই ছাপা হয়েছে ভিন্ন দরে। পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতেই একই সময় বিভিন্ন দরে বই ছাপার কাজ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অডিট অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বই ছাপানোর কাজে গঠিত বিভিন্ন কমিটিকে ৬৪ লাখ ৭২ হাজার ৩০ টাকার বাড়তি সম্মানি দেওয়া হয়েছে। বাড়তি সম্মানিসহ ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রাপ্যতা না থাকলেও সম্মানি ও উদ্দীপনা ভাতা দেওয়া, আয়কর না কাটা, অতিরিক্ত হারে প্রশিক্ষণ-কর্মশালা ভাতা ও নির্দিষ্ট সীমার বাইরে অতিরিক্ত অর্থ অগ্রিম দেওয়ায় প্রায় ২৫ কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন উদ্দেশ্যে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত সাত কোটি ৫৫ লাখ আট হাজার ১১২ টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়েছে। সার্ভিস চার্জ এবং প্রদত্ত সম্মানি থেকে আয়কর না কাটায় পাঁচ কোটি ৮৮ লাখ ১৩ হাজার ৬৭৬ টাকা এবং ভ্যাট আদায় না করায় আট কোটি ৪৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৬৩ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। সেখানে তারা পাঠ্য পুস্তক ছাপায় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মুদ্রণকারীরা ঘাটে ঘাটে টাকা দিয়ে বই ছাপতেন। এ জন্য তাঁরাও বইয়ের আকার সূক্ষ্মভাবে ছোট করতেন। নিম্নমানের নিউজপ্রিন্টে ছাপতেন বই। কাগজের উজ্জ্বলতার নির্দিষ্ট মান কমিয়ে আনা হতো। বাঁধাইয়ের কাজেও নিম্নমানের সুতা ও আঠা ব্যবহার করতেন। এ ছাড়া শেষদিকে অনেক বই ঠিকমতো সরবরাহও করা হতো না। এতে মুদ্রণকারীরা কম দরে কাজ করলেও লাভ করতে পারতেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠানে বইয়ের মান নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের ছাপানো বইয়ের কাগজের মান খারাপ নয়, রং কিছুটা ভিন্ন হলেও তা নিউজপ্রিন্ট নয়। ছাপানো কাগজ অনেক বেশি সাদা হলে তা চোখের জন্য তত ভালো নয়। আমাদের দেশে সবাই মনে করে, বইয়ের কাগজ যত বেশি সাদা হবে তত বেশি ভালো, কিন্তু তা নয়। আমাদের বইয়ের কাগজের উজ্জ্বলতা কিছুটা কম হলেও তা নিউজপ্রিন্ট নয়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এনসিটিবির দুর্নীতির শ্বেতপত্র তৈরির দায়িত্বে অভিযুক্তরাই</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাঠ্য পুস্তক ছাপায় দুর্নীতির শ্বেতপত্র তৈরি করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত ২৪ অক্টোবর পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে এনসিটিবি। এ ছাড়া এসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করতে আরো চার কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাঁরা একটি প্রতিবেদনও জমা দিয়েছেন। যদিও অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী শাসনামলে যাঁরা দুর্নীতি করেছেন, তাঁদের নিয়েই এনসিটিবির দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে এনসিটিবির প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা প্রফেসর মো. নজরুল ইসলামকে। সদস্য করা হয়েছে উৎপাদন নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মোহাম্মদ আবু নাসের টুকু, ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ (প্রাথমিক) মো. আব্দুল মুমিন মোছাব্বির, বিতরণ নিয়ন্ত্রক মো. হাফিজুর রহমানকে। এ ছাড়া সদস্যসচিব হিসেবে আছেন বিশেষজ্ঞ (মাধ্যমিক) মীর রাহাত মাসুম।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করতে এনসিটিবির যে চার কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন, এনসিটিবির ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) সাইফা সুলতানা, গবেষণা কর্মকর্তা (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ (মাধ্যমিক) ড. প্রবীর চন্দ্র রায়, গবেষণা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক) শাহ মো. জুলফিকার রহমান। যিনি এই কমিটি গঠনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছেন তিনি এনসিটিবির সচিব শাহ মুহাম্মদ ফিরোজ আল ফেরদৌস। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এনসিটিবিতে উপসচিব (প্রশাসন) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সার্বিক বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি একটি রিপোর্ট দিয়েছে। আমরা সেই রিপোর্ট ধরে দেখব, কোথায় কোথায় অনিয়ম হয়েছে। আমরা যাঁরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এনসিটিবিতে এসেছি, তাঁদের কারো অনিয়মের ব্যাপারে গাফিলতি করার সুযোগ নেই। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত নতুন মুদ্রাকর তৈরি না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত পুরনোদের দিয়েই মুদ্রণের কাজ করাতে হচ্ছে। শুধু এটুকু বলতে পারি, এবার বইয়ের মানের ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স থাকবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>