<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আবদুচ ছালাম সরকারের শীর্ষ পদ থেকে শুরু করে মন্ত্রী-আমলাদের ম্যানেজ করে প্লট, ফ্ল্যাট দিয়ে  টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এই ১০ বছর তাঁর কথাই ছিল সিডিএর আইন। অভিযোগ রয়েছে বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ছালামের আমলে। পছন্দের ঠিকাদারকে এসব কাজ দেওয়া, ধাপে ধাপে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোসহ নানা প্রক্রিয়ায় কোটি কোটি টাকার কমিশন ঢুকেছে তৎকালীন চউক চেয়ারম্যানের পকেটে। ১০ বছরে দুর্নীতি করে নিজে কামিয়েছেন বিপুল পরিমাণ টাকা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দীর্ঘ ১০ বছর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আবদুচ ছালাম ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক। রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সিডিএ দায়িত্বে থাকার সময় থেকেই আবদুচ ছালামের বিভিন্ন দুর্নীতির অনুসন্ধান করেছে দুদক। কিন্তু তৎকালীন সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় তাঁর কিছুই হয়নি। ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল অর্থ ব্যয় করে চট্টগ্রাম-৮ আসনে (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবদুচ ছালাম। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর থেকে পলাতক রয়েছেন তিনি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২-এর দুদকের উপপরিচালক আতিকুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আবদুচ ছালমের দুর্নীতির তদন্ত চলছে। তদন্তের একটি রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল ঢাকা অফিসে। ঢাকা থেকে একটি বিষয়ের অনুসন্ধানের জন্য আবার পাঠিয়েছিল। এই বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। ছালামের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ ছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতেই আমাদের অনুসন্ধান চলছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপেক্ষিত বিশেষজ্ঞ পরামর্শ : ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে প্রথম ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। এটি হলে ভবিষ্যতে নগরে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) ও মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) বাস্তবায়নের পথ রুদ্ধ হবে বলে দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলনে জানান নগর পরিকল্পনাবিদরা। কিন্তু এসব সেই সময়ে আমলে নেয়নি সিডিএ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সিডিএ চট্টগ্রামে এই পর্যন্ত  যে কাজগুলো করেছে সেটা হচ্ছে উন্নয়ন সন্ত্রাস। নীতিহীনভাবে কাজ করা হয়েছে। কাজে কোনো নীতি, পরিকল্পনা ছিল না। ম্যানেজমেন্টের নীতি ছিল না, এটাও কিন্তু দুর্নীতি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্লট বরাদ্দে অনিয়ম : আবদুচ ছালাম চেয়ারম্যান থাকাকালে নিয়ম না মেনেই তাঁর পছন্দের মানুষজনকে প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। সিডিএ সব অনিয়ম বৈধ হতো বোর্ডসভায়। এ জন্য নিজের পছন্দের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে করেন বোর্ড সদস্য। আবার এসব বোর্ড সদস্যও সিডিএ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন প্লট। এ ছাড়া সিডিএর অনুগত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও নেতাকর্মীদের নামে প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিজের ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সুবিধা দেওয়া : সিডিএ সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে নিজে চেয়ারম্যান থাকাকালে পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার। চট্টগ্রাম নগরীর ওআর নিজাম রোডে তাঁর মালিকানাধীন একটি আবাসিক ভবনকে বাণিজ্যিক ভবনে রূপান্তর করেন, যেটি বর্তমানে চার তারকাবিশিষ্ট হোটেল ওয়েলপার্ক হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজারের সাবস্টেশনের জায়গায় দোকান বরাদ্দ দিয়ে ওয়েলফুডের শোরুম স্থাপন করেছিলেন আবদুচ ছালাম। তিনি ওয়েলফুডের প্রতিষ্ঠাতা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ : চট্টগ্রাম নগরীতে তিনটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয় আবদুচ ছালামের আমলে। এ ছাড়া আউটার রিং রোড, লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজও শুরু হয় তাঁর আমলে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের বায়েজিদ থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মাণসহ বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ছালামের আমলে। অভিযোগ রয়েছে, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া, ধাপে ধাপে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোসহ নানা প্রক্রিয়ায় কোটি কোটি টাকার কমিশন ঢুকেছে তৎকালীন চউক চেয়ারম্যানের পকেটে। লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সিডিএ। সেই সময়কার চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে দরপত্রের শর্তে পরিবর্তন আনার অভিযোগ উঠেছিল।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ : ছালাম সিডিএ চেয়ারম্যান থাকাকালে আইন মানতেন না। তার একটি উদাহরণ হচ্ছে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি। এই সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ১৬টি পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। পাহাড় কাটায় সিডিএকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু দল ক্ষমতায় থাকায় পাহাড় কাটার নির্দেশদাতা হিসেবে চেয়ারম্যান ছালামের কিছুই হয়নি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হলফনামার তথ্য : চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুচ ছালাম। সেখানে নিজের বছরে আয় ৯৪ লাখ ৫২ হাজার ১৩৯ টাকা আর স্ত্রীর আয় ১৫ লাখ ৮১ হাজার ২৩০ টাকা দেখিয়েছিলেন। তিনি দুই কোটি ৬৮ লাখ ৬৩ হাজার ২৬৬ টাকার কৃষিজমির মালিক। অকৃষি জমির পরিমাণ ১৩৩.১৫ শতক। মূল্য এক কোটি ৪৭ লাখ ৯৮ হাজার ৪০০ টাকা। দালান, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের মূল্য তিন কোটি ১০ লাখ ৬৩ হাজার ১৪৯ টাকা। তিনি কৃষি খাত থেকে বছরে ২৯ হাজার ৮৫০ টাকা; বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকানসহ অন্যান্য খাত থেকে ভাড়া বাবদ বছরে আয় করেন ১১ লাখ ৯ হাজার ৩৩ টাকা। তিনি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের যৌথ অংশীদার হিসেবে আয় করেন ৮৩ লাখ ১২ হাজার ৪৪৯ টাকা, শেয়ার এবং ব্যাংক জামানত থেকে আয় ৮০৭ টাকা, এই খাত থেকে স্ত্রীর আয় এক কোটি ৪১ লাখ ২৩০ টাকা। আবদুচ ছালামের স্ত্রী সানজি টেক্সটাইল থেকে রিমুনেশন পান ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আবদুছ ছালাম ২০টি শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার ও অংশীদার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাঁর মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় এসব অভিযোগের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম চাইলে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে তদন্ত করতে পারে।</span></span></span></span></p>