বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক পথে রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মনে করে—এমনটা জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল রবিবার ঢাকায় সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ তথ্য জানান।
উপদেষ্টা বলেন, আইএমএফের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে আশাবাদী বাংলাদেশ। ঋণ পাওয়ার জন্য তাদের শর্ত পূরণে যা যা করা দরকার, সব করছে সরকার।
দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে বলে আইএমএফ বৈঠকে জানিয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, তারা মনে করছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওদের (আইএমএফ) মূল ফোকাস ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরেকটু স্থিতিশীল করা, বাজেটে ঘাটতি কমানো।
এ ছাড়া ভ্যাটের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার যে বিষয়টি, সেটা আমরা চেষ্টা করছি। তবে ভ্যাট একবারে সিঙ্গেল রেটে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়।
’
আইএমএফ ঋণের কিস্তির বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘দুই কিস্তির অর্থ একবারে দেবে। ওরা এখন রিভিউ করবে। আমরা ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বাড়াব কিভাবে, মাত্র ৭ শতাংশ আছে। তারপর আমাদের ট্যাক্স কালেকশন কিভাবে করব।
ট্যাস্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন লিকেজ যেন না হয়। মূলত আইএমএফের কনসার্ন হলো, রাজস্ব সংগ্রহ, আমাদের বাজেট পুনর্গঠন করতে হবে, ডেফিসিট (ঘাটতি) করতে হবে, এগুলো নিয়ে আপাতত কথা হয়েছে। আমার সঙ্গে বিস্তারিত কথা হয়নি, এনবিআরের সঙ্গে কথা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা হবে লোন রেজুলেশন নিয়ে’ বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা, খেলাপিঋণ আদায়, এনবিআরের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়াব কিভাবে, কোন কোন ক্ষেত্রে বাড়াব—এগুলো নিয়ে আমার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।
সবার সঙ্গে ওরা আলাদাভাবে বসবে। তারপর আপনারা কয়েক দিন পরে জানতে পারবেন।’
আইএমএফ ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়ার বিষয়ে এর আগে আপনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন, এখন আপনাদের অবস্থান কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা আশাবাদী। ওরা বলেছেন, দেখব। ওরা যাওয়ার পর আগামী ১৯ এপ্রিল আমি যাব। তারপর মে-জুনের দিকে বৈঠক হবে। এই রিভিউর ওপরেই তাদের সুপারিশ।’
চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ঋণের ক্ষেত্রে উনাদের মূল ফোকাস কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরেকটু স্থিতিশীল করা, তারপর বাজেটে ঘাটতি কমানো এগুলো মেইন ফোকাস।
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে ওরা কী বলেছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওরা বলেছেন বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন মোটামুটি স্থিতিশীল, গতিশীল, সঠিক পথে আছে। কিন্তু রিভিউ করার পর আর একটু দেখবে। ওরা বলেছেন, ওরা সন্তুষ্ট, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন স্থিতিশীল আছে। তবে ওরা ডিটেইল জিনিসগুলো দেখবে।
কোন বিষয়গুলোতে কম্প্রোমাইজ করতে হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি সোজাসুজি বলেছি, আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার আমরা করার চেষ্টা করছি। অলরেডি আমাদের গুড ইনটেনশন দেখিয়েছি। ওদের দিক থেকে ওদের গুড ইনটেনশন দেখাক। দেন উই এনগেজ। আমরা আলাপ করব। হোপ অ্যাগ্রি।’
রাজস্ব খাতে কী করতে হবে, ওরা কী চায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও ৭.৫ শতাংশ। আমাদের জিডিপি নেপালের চেয়ে অনেক বড়, ওরা বলে নেপালের থেকে তোমাদের অনেক কম। ওদের (নেপাল) ১২-১৩ শতাংশ। ভারতে প্রায় ১৭-১৮ শতাংশ। ওরা বলছেন তোমাদের এটা (ট্যাক্স জিডিপি রেশিও কম) হওয়ার কারণ হলো নেট (আওতা) কম। লাখ লাখ লোক আছে, যারা জিরো ট্যাক্সে রিটার্ন দেয়, তাদের আয় আছে, কিন্তু তারা রিটার্ন দেয় না।’
ভ্যাট সিঙ্গেল রেটে নামিয়ে আনার বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘সিঙ্গেল রেটের বিষয়ে আমরা চেষ্টা করব। আমরা একবারে সিঙ্গেল রেটে পৌঁছাতে পারব না।’
ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করব।’