বন্যপ্রাণী

বাদাবনের স্বর্ণমৃগ

  • ড. আ ন ম আমিনুর রহমান
শেয়ার
বাদাবনের স্বর্ণমৃগ
সুন্দরবনের কটকায় একটি সুদর্শন পুরুষ চিতাল বা স্বর্ণমৃগ। ছবি : লেখক

স্বর্ণমৃগ তৃণভোজী প্রাণী। সাধারণত ঘাস, লতাপাতা, গাছের পাতা ও বাকল খেয়ে জীবনধারণ করে। এরা সাধারণত সূর্য ওঠার আগে ও ডোবার পর খাবারের সন্ধানে বের হয়। বাকি সময় জঙ্গলে বিশ্রাম করে।

এদের দেহের দৈর্ঘ্য গড়ে ১.৫ মিটার এবং কাঁধ পর্যন্ত উচ্চতা ০.৬ থেকে ১.০ মিটার

 

বাঘ মামার সন্ধানে বহুবার সুন্দরবন গিয়েছি, কিন্তু দুর্ভাগ্য, বনের রাজাকে দেখার সুযোগ হয়নি; যদিও কয়েকবার ব্যাঘ্র দর্শনের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত বাঘ দর্শন ভাগ্যে জোটেনি। কাজেই সুন্দরবনে আমার ব্যাঘ্র দর্শন মামার পায়ের ছাপ ও মল দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অবশ্য ভারতের রাজস্থানের রণথাম্ভোর জাতীয় উদ্যানে ব্যাঘ্র দর্শন হয়েছে দুইবার।

ছবিও তুলেছি চমৎকার। তথ্য মতে, রণথাম্ভোর ও সুন্দরবনের বাঘের মধ্যে জিনগত মিল প্রায় ৯৭ শতাংশ। তবে সুন্দরবনে ব্যাঘ্র দর্শন না হলেও বাঘের নিয়মিত খাবার স্বর্ণমৃগের সঙ্গে দেখা হয় প্রতিবারই।

নাইকন ফ্যান ক্লাবের আমন্ত্রণে ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর রাতে আবারও সুন্দরবন রওনা হলাম বেঙ্গল অ্যাডভেঞ্চার (কটকা এক্সপ্রেস) লঞ্চযোগে।

পরের দিন ভোরে আন্ধারমানিক ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে পৌঁছে ঘণ্টা দেড়েক ওখানকার পাখি-প্রাণী দেখে ও ট্রেইলে হেঁটে কাটালাম। এরপর আবারও শ্যালা নদী দিয়ে কটকা এক্সপ্রেস ছুটে চলল বাঘের বৈঠকখানা খ্যাত কচিখালী অভয়ারণ্যের উদ্দেশে। দীর্ঘ সাড়ে আট ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে বিকেল সাড়ে ৪টায় কচিখালী পৌঁছলাম। দ্রুত লঞ্চের সঙ্গে নিয়ে আসা বোটে করে কচিখালী খালে ঢুকলাম। তবে বেশ কাছ থেকে বুনো শূকর দেখতে পারলেও অতি সুন্দর স্বর্ণমৃগকে কাছে পেলাম না।

কচিখালী পৌঁছতে দেরি হওয়ার কারণে ডিমের চর যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। ফলে ওখানে স্বর্ণমৃগের দেখা পেলাম না। পরদিন সকালে ছোটা কটকা খাল দিয়ে কটকা এক্সপ্রেস কটকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করল। তবে সরাসরি কটকায় না গিয়ে হোমরা/সুন্দরী খালে ক্যানেল ক্রুজ করে কটকায় গেলাম। ফলে কটকা অফিসপাড়ায় পৌঁছতে সকাল ১১টা বেজে গেল, কিন্তু তাতে খুব একটা ক্ষতি হলো না। কারণ আবহাওয়া চমৎকার। ঝলমলে রোদ। কটকা অফিসপাড়ায় নামার আগে লঞ্চের ডাইনিংয়ে চা পান করতে করতে আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে খানিকটা অবগাহন করছি। এমন সময় হঠাৎই আমার অনুসন্ধিত্সু চোখ নদীপারের শুলাময় কেওড়াগাছের দিকে গেল। কেওড়াগাছের নিচে দাঁড়ানো তিন বছর বয়সী এক সুদর্শন স্বর্ণমৃগে আমার চোখ আটকে গেল। আরে দুই দিন ধরে তো ওকেই খুঁজছি। আর যায় কোথায়? ক্যামেরাটি হাতের কাছেই ছিল। একমুহূর্ত দেরি না করে স্বর্ণমৃর্গের কয়েকটি ঝকঝকে ছবি তুলে নিলাম। বিকেলে বাঘের বাড়ি খ্যাত কটকা অভয়ারণ্যে প্রচুর স্বর্ণমৃগের দেখা পেলাম। নতুন বানানো কটকা টাওয়ার থেকে ওদের চমৎকার সব ছবি তুললাম।

রামায়ণের সীতা এই সাদা ফোঁটাযুক্ত গেরুয়া রঙের প্রাণীগুলোকে দেখেই মুগ্ধ হয়ে ধরে আনার জন্য রামকে অনুরোধ করেছিলেন। একসময় এ দেশের ব্যাপক এলাকাজুড়ে, বিশেষ করে সিলেট ও চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে এদের যথেষ্ট সংখ্যায় পাওয়া যেত। বর্তমানে প্রাকৃতিকভাবে সুন্দরবন ছাড়া কোথাও দেখা মেলে না। অবশ্য বাংলাদেশ বন বিভাগ সুন্দরবন থেকে ওদের কয়েকটিকে হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ ও চর কুকরিমুকরিতে ছেড়েছিল। ওখানে বাঘের মতো কোনো শিকারি প্রাণী না থাকায় এবং খাদ্যের প্রাচুর্যতায় ব্যাপকহারে বংশবৃদ্ধি ঘটেছিল। 

যা হোক. এতক্ষণ যে স্তন্যপায়ী প্র্রাণী স্বর্ণমৃগের কথা বললাম, ওরা হলো আমাদের অতি প্রিয় ও সচরাচর দৃশ্যমান বন্যপ্রাণী চিত্রা হরিণ বা চিতাল। স্বর্ণমৃগ এদেরই আরেকটি নাম। ইংরেজি নাম Spotted/Axis/Indian Spotted Deer. বিশ্বব্যাপী হরিণের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে স্বর্ণমৃগকেই সবচেয়ে সুন্দর বলে গণ্য করা হয়। তা ছাড়া বর্তমানে বংলাদেশের স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণীদের মধ্যে ওরাই সবচেয়ে সুন্দর বলে বিবেচিত। Cervidae  (সারভিডি) গোত্রের প্রাণীটির বৈজ্ঞানিক নাম অীরং ধীরং. বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানে দেখা মেলে।

স্বর্ণমৃগের দেহের দৈর্ঘ্য গড়ে ১.৫ মিটার এবং কাঁধ পর্যন্ত উচ্চতা ০.৬ থেকে ১.০ মিটার। হরিণের ওজন ৩০ থেকে ৭৫ কেজি এবং হরিণীর ২৫ থেকে ৪৫ কেজি। দেহের লোম লালচে, তার ওপর সাদা ফোঁটা। এই রং একদিকে যেমন শিকারি প্রাণীদের হাত থেকে ওদের আত্মগোপনে সাহায্য করে, তেমনি চোরা শিকারিদের লোভ-লালসার কারণও হয়। গলা ধবধবে সাদা। বুক ও দেহের নিচটা সাদাটে। হাঁটু থেকে পায়ের খুর পর্যন্ত হালকা সাদা বা ধূসর। হরিণের শিং অত্যন্ত সুন্দর, যা প্রতিবছর ঝরে পড়ে। হরিণীর শিং নেই। নবজাতকের গায়ের রং বাদামি। কয়েক মাস পর্যন্ত গায়ে কোনো ফোঁটা দেখা যায় না, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফোঁটা সৃষ্টি হতে থাকে।

সচরাচর ১০ থেকে ১৫টি স্বর্ণমৃগ মিলে দলবদ্ধভাবে থাকে। এরা তৃণভোজি প্রাণী। সাধারণত ঘাস, লতাপাতা, গাছের পাতা ও বাকল খেয়ে জীবনধারণ করে। সুন্দরবনের হরিণগুলো মূলত কেওড়া, বাইন, গেওয়া, গরান, গর্জন ও কাঁকড়া গাছের চারা, পাতা ও বাকল খেয়ে থাকে। চরে নতুন জেগে ওঠা ঘাসের মধ্যে দূর্বা, নলখাগড়া, হোগলা, মারিয়া ইত্যাদি বেশি পছন্দ করে। এরা সাধারণত সূর্য ওঠার আগে ও ডোবার পর খাবারের সন্ধানে বের হয়। বাকি সময় জঙ্গলে বিশ্রাম করে।

মে থেকে আগস্ট প্রজননকাল। তবে যেহেতু সারা বছরই দলে থাকে, তাই এদের মধ্যে মিলন বেশি হয় এবং সারা বছরই বাচ্চা জন্মায়। দলে দু-তিনটি শক্ত-সমর্থ হরিণ থাকে। প্রজননের আগে হরিণদের শক্তি পরীক্ষা চলে শিংয়ের গুঁতাগুঁতির মাধ্যমে। এ সময় কোনো কোনো হরিণের শিং খুলেও যেতে পারে। তবে দলের সবচেয়ে বলিষ্ঠ, শক্তিশালী ও দীপ্তিমান হরিণের হাতেই থাকে কর্তৃত্ব। দলের সব হরিণীর ওপর থাকে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। বাকি হরিণগুলো দলপতির একান্ত অনুগত হিসেবে থাকে। হরিণী সাত-আট মাস গর্ভধারণের পর একটি বাচ্চার জন্ম দেয়। সাধারণত বর্ষার আগে আগে যখন সবুজ ঘাসের সমারোহ ঘটে এবং গাছের চারা, ঘাস ও লতাপাতায় বন ছেয়ে যায়, তখন বেশির ভাগ হরিণীর বাচ্চা হয়। খাবারের প্রাচুর্য থাকায় এ সময় জন্মানো বাচ্চাগুলো বেশি তাজা থাকে। বুনো পরিবেশে স্বর্ণমৃগের আয়ুষ্কাল ৯ থেকে ১৩ বছর।

 লেখক : পাখি ও বন্যপ্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জবির অস্থায়ী হল

প্রস্তুত সংশোধিত ডিপিপি আজ চূড়ান্ত বৈঠক

মো. জুনায়েত শেখ
মো. জুনায়েত শেখ
শেয়ার
প্রস্তুত সংশোধিত ডিপিপি আজ চূড়ান্ত বৈঠক

আবাসন সংকট নিরসনে গত ১২ জানুয়ারি তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসসহ পুরান ঢাকায় দুটি অস্থায়ী আবাসন নির্মাণের কাজ গ্রহণ করে সেনাবাহিনী। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের চলমান কাজ পুনর্মূল্যায়ন ও আরডিপিপি প্রণয়নে এরই মধ্যে প্রায় তিন মাস পার হয়ে গেলেও তা প্রণয়ন হয়নি। ফলে দৃশ্যমান কাজ এখনো শুরু করতে পারেনি সেনাবাহিনী।

তবে আজ রবিবার পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান, ইউজিসি চেয়ারম্যান, জবি উপাচার্যসহ ১৪ সদস্য নিয়ে প্রস্তুতকৃত সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের জন্য একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে আরডিপিপি অনুমোদিত হলে দৃশ্যমান কাজে যেতে পারবে সেনাবাহিনী। 

জানা যায়, গত ১৬ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসনের চেষ্টার কমতি ছিল না।

যার কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যেই দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবে বাণী ভবন ও হাবিবুর রহমান হলে অস্থায়ী আবাসন নির্মাণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। আরডিপিপি প্রণয়ন হলে হল নির্মাণের কাজ দ্রুতই শুরু করবে সেনাবাহিনী।

জানা যায়, আবাসন সংকট সমাধানে বিভিন্ন সময় হলের জন্য আন্দোলন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

রাজপথে রক্ত দিয়েও এখনো স্থায়ী কোনো সমাধানে আসেনি। তবে ২০১৮ সালে আন্দোলনের মুখে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের অনুমোদন দেয় সরকার। তবে আট বছর পার হলেও ভূমি অধিগ্রহণ ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজই শেষ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। কাজের তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় জুলাই অভ্যুত্থানের পর পুনরায় তিন দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো, জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর; শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী আবাসন নির্মাণ ও স্থায়ী আবাসন নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ৭০ শতাংশ আবাসন ভাতা প্রদান।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রকল্প পরিচালক (বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগকৃত)  প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, দুটি অস্থায়ী হল নির্মাণের বিষয়টি আমরা সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) যুক্ত করেছি। যদি পরিকল্পনা কমিশন তথা মন্ত্রণালয়  অনুমোদন করে তাহলে দ্রুত সময়ের মধ্যে হল নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

সেনাবাহিনী থেকে নিযুক্ত দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) লে. কর্নেল ইফতেখার আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, চলমান প্রকল্পের কাজ পুনর্মূল্যায়ন, অ্যাসেসমেন্টসসহ যাবতীয় কার্যক্রম এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ডিপিপি সংশোধন করে আরডিপিপি প্রণয়নে আজ রবিবার পরিকল্পনা কমিশনে চূড়ান্ত মিটিং রাখা হয়েছে। চূড়ান্ত মিটিংয়ে আরডিপিপি অনুমোদন হলে সেনাবাহিনীর কাজ দৃশ্যমান দেখা যাবে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, রবিবার পরিকল্পনা কমিশনের মিটিং রয়েছে। সেখানে অনুমোদন হলেই অর্থ ছাড় হবে। দ্রুত কাজ শুরু হবে।

মন্তব্য
আজ চৈত্রসংক্রান্তি

রাজধানীজুড়ে বর্ষবিদায়ের নানা আয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রাজধানীজুড়ে বর্ষবিদায়ের নানা আয়োজন

আজ ১৪৩১ বঙ্গাব্দের শেষ দিনচৈত্রসংক্রান্তি। চৈত্র মাসের শেষ সূর্য ডুববে আজ। আগামীকাল সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হবে নতুন বাংলা বছর ১৪৩২।

চৈত্রসংক্রান্তি আর পহেলা বৈশাখএই দুই দিন বাঙালির জীবনে বয়ে যায় আনন্দধারা।

নানা রকম লোকাচার আর বর্ণাঢ্য আয়োজনে দিন দুটি উদযাপিত হয়।

বর্ষপঞ্জির শেষ দিন হিসেবে চৈত্রসংক্রান্তি বাঙালির জীবনে এক বিশেষ দিন। কৃষি সংস্কৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই দিনটি বাঙালিদের অনেকেই স্নান, দান, ব্রত, আচার ও বিশেষ খাবার গ্রহণের মাধ্যমে উদযাপন করে। অনেকাংশে এটি ধর্মীয় পর্বও, বাঙালি হিন্দুরা শিবের পূজা করে।

এ উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের উৎসব-অনুষ্ঠান ও মেলা হয়। আজ রাজধানীজুড়ে রয়েছে চৈত্রসংক্রান্তির নানা আয়োজন। দুপুর ২টা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রয়েছে চৈত্রসংক্রান্তির ব্যান্ড শো। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এ আয়োজন করছে শিল্পকলা একাডেমি।

এতে সমতল ও পাহাড়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড দলের পরিবেশনা থাকছে।

গত বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানিয়েছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকেল ৩টা থেকে গান গাইবে গারো সম্প্রদায়ের ব্যান্ড এফ মাইনর, মারমা সম্প্রদায়ের লা রং, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ইমাং, খাসিয়া সম্প্রদায়ের ইউনিটি, চাকমা সম্প্রদায়ের ইনভোকেশন, বাঙালির মাইলস, ওয়ারফেজ, ভাইকিংস, অ্যাভয়েড রাফা, দলছুট, স্টোনফ্রি।

সংস্কৃতি উপদেষ্টা আরো জানান, একই দিনে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে দেশের ১২ জেলায় হবে সাধুমেলা। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সেখানে সাধুসঙ্গ ও আধ্যাত্মিক গানের আসর বসবে। শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে বসবে চা শ্রমিকদের ফাগুয়া উৎসব।

রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ১৩ ও ১৪ এপ্রিল রয়েছে দিনব্যাপী ধামাইল নৃত্য, গান, ভিডিও প্রদর্শনী, সন্ধ্যায় বাউল গান ও সেমিনার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় চৈত্রসংক্রান্তির অনুষ্ঠান থাকবে। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ জানিয়েছেন, বিকেল ৪টা থেকে নাচ-গানের আয়োজন শুরু হবে। চারুকলার বর্তমান ও প্রাক্তনরা রাত ১০টা পর্যন্ত আয়োজন মাতিয়ে রাখবেন। 

সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাংলা বছরকে বিদায়ের অনুষ্ঠান করবে সংগীত শিক্ষার প্রতিষ্ঠান সুরের ধারা। এবার তাদের চৈত্রসংক্রান্তি ও বর্ষবরণের দুটি অনুষ্ঠানই হবে ধানমণ্ডির রবীন্দ্রসরোবরে। দুটি অনুষ্ঠানই সরাসরি সম্প্রচারের কথা রয়েছে চ্যানেল আইয়ের।

অন্যদিকে ভুলে যাই দ্বন্দ্ব কেটে যাক ভ্রান্তি, শুভ বার্তা আনুক চৈত্রসংক্রান্তি স্লোগানে লোকগানের আসর করবে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। বিকেল সাড়ে ৫টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীতে সত্যেন সেন চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে এ অনুষ্ঠান। থাকবে গান, আবৃত্তি, নৃত্যসহ নানা ধরনের পরিবেশনা।

গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কেও রয়েছে চৈত্রসংক্রান্তির আয়োজন। আজ বিকেল ৪টায় রয়েছে চারুকারু প্রদর্শনী, রাত ৮টায় ইসলাম উদ্দিন পালাকারের পালাগান, রাত ৯টায় আছে আলপনা আলাপ। রাত ১০টায় পার্কের সামনে থেকে গুলশান ২ মোড় পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে আলপনা আঁকা হবে। গুলশান সোসাইটির উদ্যোগে অলিগলি বর্ষবরণ বন্ধুগণ এ আয়োজন করছে।

মন্তব্য

নির্বাচিত সরকার না এলে বিনিয়োগে স্বস্তি ফিরবে না

    শান্তি-শৃঙ্খলা না থাকলে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠতে পারে না : আবদুল আউয়াল মিন্টু মার্কিন শুল্ক নিয়ে এখনো শঙ্কা কাটেনি : বিটিএমএ
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
নির্বাচিত সরকার না এলে বিনিয়োগে স্বস্তি ফিরবে না

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি নিয়ে এখনো শঙ্কা কাটেনি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। তিনি বলেছেন, নির্বাচিত সরকার না এলে বিনিয়োগে স্বস্তি ফিরবে না। অন্তত নির্বাচনের তারিখ জানা থাকলেও উদ্যোক্তাদের জন্য কিছুটা সুবিধা হতো। নির্বাচনের তারিখ জানা না থাকলে বিনিয়োগ করবেন না উদ্যোক্তারা।

বরং অনিশ্চয়তায় রাতারাতি শিল্প-কারখানা বন্ধ হবে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে বিটিএমএ আয়োজিত ইউএস ট্যারিফ অন বাংলাদেশজ এক্সপোর্ট : রিসিপ্রোক্যাল স্ট্র্যাটেজিক্যাল অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড ফর নেগোসিয়েশন শীর্ষক আলোচনাসভায় উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন শওকত আজিজ। এতে আরো বক্তব্য দেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ, বিজিএমইএ প্রশাসক আনোয়ার হোসেন, বিপিজিএমইএ সভাপতি শামিম আহমেদ প্রমুখ।

বিটিএমএ সভাপতি বলেন, আমাদের কী করা দরকার, কোন জায়গায় কী সুযোগ নিতে পারি, ট্রাম্প প্রশাসনকে কী প্রস্তাব দেওয়া যায়, এগুলো বিষয়ে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে।

বিশেষ করে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনকে সামনে রেখে কী করা দরকার সেটি নিয়ে আলোচনা দরকার।

মাসরুর রিয়াজ বলেন, এই ট্যারিফের ফলে আমাদের খাতভিত্তিক প্রভাব কী হবে, কী কী পয়েন্টে আমরা আলোচনা করব, এ থেকে উত্তরণের পথগুলো কী হবেএ বিষয়ে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে। আমাদের ইউএস রিটেইলারদের সঙ্গে বাড়তি খরচ ভাগ করে নেওয়ার জন্য আলোচনা শুরু করতে হবে।

বিটিএমএ সভাপতি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারকাজ করছে।

তবে চাইলেও তারা অনেক সংস্কার করতে পারবে না।

শিল্প-কারখানায় চাঁদাবাজি এবং আওয়ামী লীগের ডাকা হরতাল সম্পর্কে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, কর্মসংস্থান না থাকলে চাঁদাবাজি হয়। চাঁদা আদায়কেই ব্যবসা হিসেবে নেয় কিছু লোক। হরতালও এ কারণেই ডাকা হয়। কর্মসংস্থান থাকলে হরতাল করার লোক থাকে না।

ভারতীয় সুতার কারণে ক্ষতির মুখে দেশীয় বস্ত্রকলগুলো ক্ষতির মুখে উল্লেখ করে শওকত আজিজ রাসেল বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত ভারতীয় সুতা ডাম্পিং মূল্যে প্রবেশ করায় দেশীয় টেক্সটাইল মিলস ব্যাবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

বিটিএমএ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা রপ্তানি আয়ের প্রধান চালিকাশক্তি দেশের টেক্সটাইল সেক্টর দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের সংকট, ব্যাংক সুদের হার ১৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের শর্তাবলি পূরণের অজুহাতে রপ্তানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনার অস্বাভাবিক হ্রাস এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের সংকট ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার বিকল্প নেইআবদুল আউয়াল মিন্টু : এদিকে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, দেশে যদি শান্তি-শৃঙ্খলা না থাকে তাহলে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠতে পারে না। এ জন্য সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বর্তমান সরকার কাজ করবে বলে বিশ্বাস করি।

গতকাল শনিবার যশোর চেম্বার অব কমার্সের উদ্যোগে শহরের টাউন হল মাঠে মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলা উদ্বোধনের সময় তিনি এসব কথা বলেন। প্রায় এক যুগ বিরতির পর চেম্বারের উদ্যোগে মেলাটির আয়োজন করা হয়েছে বলে আয়োজকরা বলেন। মেলায় সারা দেশ থেকে দেড় শতাধিক স্টল অংশগ্রহণ করবে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু আরো বলেন, এই মেলার মাধ্যমে ভোক্তা ও উদ্যোক্তা দুই পক্ষই উপকৃত হবে। এমন উদ্যোগ অব্যাহত রাখার জন্য আয়োজকদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম, পুলিশ সুপার রনওক জাহান, জামায়েতের জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল, জেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য গোলাম রেজা দুলু, চেম্বার অব কমার্স আন্ড ইন্ডাস্ট্রি যশোরের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, সহসভাপতি সাজ্জাদুর রহমান সুজা, জাহিদ হাসান টুকুন, যুগ্ম সম্পাদক মকছেদ আলী ও এজাজ উদ্দিন টিপু প্রমুখ।

মন্তব্য
সেমিনারে সলিমুল্লাহ খান

’৭২-এর সংবিধান ফ্যাসিস্ট বাদ দেওয়া উচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
’৭২-এর সংবিধান ফ্যাসিস্ট বাদ দেওয়া উচিত

বাহাত্তরের সংবিধানের সমালোচনা করে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের যে মূল আদর্শ ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার; সেটাকে ১৯৭২ সালেই শহীদ করে দেওয়া হয়েছে। বাহাত্তরের সংবিধান অন্য কোনো কারণে নয়, শুধু এ কারণেই বাদ দেওয়া উচিত। বাহাত্তরের সংবিধান ফ্যাসিস্ট সংবিধান, এটা বুঝতে আমাদের ৫০ বছর লাগল? ছাত্ররা আন্দোলন করে ফ্যাসিস্ট সরকারকে না সরালে তো এটা বলার সাহস আমরা পেতাম না।  

গতকাল শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ইনিশিয়েটিভ ফর দ্য প্রমোশন অব লিবারেল ডেমোক্রেসি (আইপিএলডি) আয়োজিত বাংলাদেশে টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধকতা শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক শাসনব্যাবস্থা চালু করা এবং গুম, খুন, ক্রসফায়ার করাকে ফ্যাসিজমের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, অনেকে এখন হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন। ইউনূস মে বি ওয়ার্স্ট দ্যান হাসিনা, বাট হাসিনা ক্যান নট রিটার্ন (ইউনূস হাসিনার চেয়েও খারাপ হতে পারে, কিন্তু হাসিনা ফিরে আসতে পারবে না)। এই হাসিনাপ্রীতিটা এসেছে কোথা থেকে? বলে, হাসিনা তো মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারী। ফ্যাসিজমের অ্যাপিলটা (আবেদন) এখানেই তৈরি হচ্ছে যে আপনি এটাকে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত করছেন।

তিনি (শেখ হাসিনা) তো মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

সংখ্যালঘু নির্যাতন সম্পর্কে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ভারতীয়রা আমাদের বিরুদ্ধে যে প্রচারণা করছে খামোখা, যে এখানে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। ভারত যদি নিজেদের দিকে তাকাত, তাহলে উত্তরটা ভালো পেত। তারা (ভারত) নিজেদের ওপর যে ডায়াগনসিস করছে, সেটা আমাদের ওপর প্রক্ষেপ করেছে।

আমাদের এখানে (সংখ্যালঘু নির্যাতন) অনেক কম, তার পরও এখানে কখনো যে হয়নি, তা তো বলা যাবে না। ২০০১ সালে বলেন, অন্য সময় বা নানা সময় হয়েছে। এটাও একটা কনস্ট্যান্ট ভায়োলেন্সের (ধারাবাহিক সহিংসতা) মধ্যে আছে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সংখালঘুদের প্রতি এই সহিংসতা আরো তীব্র বলে মত দেন সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানের সংখ্যা কত শতাংশ? কেউ বলে ২০, কেউ বলে ২৫।

আমি যদি সংখ্যাতত্ত্ব বাদ দিয়েও বলি, সেখানে শিক্ষা বিভাগে, পুলিশ বিভাগে, সরকারি চাকরিতে মুসলমানদের সংখ্যা কত? আপনি ২ থেকে ৫ শতাংশও পাবেন না। এটা হচ্ছে স্ট্রাকচারাল ভায়োলেন্স (কাঠামোগত সহিংসতা)।

টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত এই লেখক বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটি প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে সর্বজনীন শিক্ষার অভাব। জাতীয় আয় বা জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ খরচ করা হয় শিক্ষায়। শ্রীলঙ্কার নতুন সরকার বলছে, তারা শিক্ষা খাতে ১০ শতাংশ ব্যয় করবে। বাংলাদেশ ১০ শতাংশ না পারলেও অন্তত ৬ শতাংশ করা উচিত। জাতিসংঘ ১৯৬৮ সালেই বলেছে, নিরক্ষরতা দূর করতে হলে একটি রাষ্ট্রকে তার জিডিপির কমপক্ষে ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করতে হবে।

বাংলাদেশে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলার চেয়ে ইংরেজিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার সমালোচনা করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, আমি মনে করি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে প্রথম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে এটিআমরা ইংরেজিতে চিন্তা করি, বাংলায় চিন্তা করতে এখনো সক্ষম হইনি। ইংরেজিতে নাম দিলে সংগঠনের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবেএ রকম একটা জিনিস আমাদের মাথায় কাজ করে। বাংলাদেশে ইংরেজি ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এখন আর ব্রিটেনের দরকার নেই। এটা আমেরিকানরা করছে। আমেরিকানদের দরকার নেই, বিশ্বব্যাংক করছে। সব বিশ্ববিদ্যালয় প্রাইভেট হবে, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি মাধ্যম হবে। শুধু তাই নয়, নিচের দিকে কিন্ডারগার্টেন পর্যন্ত ইংরেজি মাধ্যম চলে যাচ্ছে।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশকে ঔপনিবেশিক চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বলে মত দেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, এখানে কলোনিয়াল লিগ্যাসি (ঔপনিবেশিক পরম্পরা) এখনো শেষ হয়নি। আপনাকে কমনওয়েলথ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আপনাকে ওয়াশিংটন কনসেনসাস (ওয়াশিংটন ঐকমত্য-আইএমএফ প্রচারিত এক ধরনের মুক্তবাজার অর্থনৈতিক নীতি) থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সেটা বলার সাধ্য এক শ ইউনূসেরও নেই। হাসিনার তো ছিলই না। হাসিনা যেটা সবচেয়ে আমাদের ক্ষতি করেছে, পাশের দেশের (ভারত) চরম দাসে পরিণত করেছিল আমাদের। আমেরিকানদের দাসত্বটা দেখা যায় না, একটু দূরে তো।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র কতটা টেকসই তা বোঝার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে তাকানোর পরামর্শ দিয়ে এই লেখক-অধ্যাপক বলেন, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে যে ভায়োলেন্স (সহিংসতা) হচ্ছে ৫০ বছর ধরে, সেটা ধরলে পার্বত্য চট্টগ্রামে যদি আপনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন, তাহলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।...পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা যা করছি তা কলোনিয়াল ফ্যাসিজমের চেয়ে কম কিছু নয়।

শ্রমিকদের অমানবিক ও নিম্ন মজুরি প্রসঙ্গ তুলে ধরে সলিমুল্লাহ খান বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও ছাত্রদের নতুন দলও বিষয়টি নিয়ে ভাবছে না।

আইপিএলডির সভাপতি মোহাম্মদ ফজলুল আজিমের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন আইপিএলডির নির্বাহী সদস্য লেখক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, আইপিএলডির বোর্ড মেম্বার এহসান শামীম প্রমুখ।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ