<p>হৃদরোগীদের জীবনদায়ী চিকিৎসার সামগ্রী করোনারি স্টেন্টের (হার্টের রিং) দাম বাড়িয়েছে সরকার।  ইউরোপ থেকে আমদানি করা ২৩ ধরনের স্টেন্টের দাম বেড়েছে ২ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। গতকাল মঙ্গলবার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর হৃদরোগের জরুরি স্টেন্টের দাম ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে স্বস্তির খবর দিয়েছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।  এর তিন মাস যেতে না যেতেই আবার স্টেন্টের দাম বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করেছে ডিজিডিএ।</p> <p>আদেশে বলা হয়, বাংলাদেশে ইউরোপীয় এবং অন্যান্য দেশের হার্টের রিংয়ের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বা প্রিন্সিপাল স্থানীয় প্রতিনিধি এবং ইন্টারভেনশন কার্ডিওলজিস্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন কম্পানির হার্টের রিংয়ের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিজিডিএর আদেশ অনুসারে, পোল্যান্ডের অ্যালেক্স প্লাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। এর আগে ডিসেম্বরে এর দাম নির্ধারণ করা হয়ছিল ৫৩ হাজার টাকা। জাপানের আলটিম্যাস্টার ৬০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৬ হাজার টাকা। ৫৫ হাজার টাকার ডিরেক্ট স্টেন্ট সিরোর নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৬ হাজার টাকা।</p> <p>সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে জানা গেছে, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৮৫ জনকে স্টেন্ট লাগানো হচ্ছে। হার্টের স্টেন্ট ব্যবসায়ীরা মোটা দাগে দুই ভাগে বিভক্ত। একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের তৈরি স্টেন্ট সরবরাহ করে। আরেকটি করে ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি স্টেন্ট। বর্তমানে বাজারে থাকা যেসব হার্টের স্টেন্টের খুচরা মূল্য সর্বোচ্চ এক লাখ ৪০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের। বর্তমানে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের স্টেন্টের চাহিদা রয়েছে।</p> <p>এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক সালাহউদ্দিন বলেন, হৃদরোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, হৃদরোগ চিকিৎসক ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে রিংয়ের দাম সমন্বয় হয়েছে। সব হাসপাতালে রিংয়ের দামের তালিকা টানিয়ে দিতে বলা হয়েছে, যাতে রোগী ও স্বজনরা নতুন দাম সম্পর্কে জানতে পারেন। রিংয়ের দাম তো বেড়েছে, কমছে বলছেন কেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ২০২১ সালে যে দাম ছিল তার চেয়ে এখন অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১২ ডিসেম্বর যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেড়েছে? তবে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।</p> <p>হার্টের রিংয়ের দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আমরা জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি। ওষুধ কিংবা মেডিক্যাল ডিভাইসের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। হার্টের রিংয়ের দামের বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে কার্ডিওলজিস্ট ও আমদানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করেই নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।’</p> <p>জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মীর জামাল উদ্দিন বলেন, ‘গত বছরের ডিসেম্বরে হার্ট রিংয়ের দাম কমানো হলে ইউরোপিয়ান রিং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আদালতের দারস্থ হয়েছিল। রিটের মীমাংসা হওয়ার পরে তাদের প্যারেন্ট কম্পানিদের নিয়ে আমরা বসেছিলাম। ওই দামে রিং বিক্রি করলে তাদের ক্ষতি হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছে। তাদের পক্ষে ওই দামে রিং সরবরাহ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে। বাজারে ৫০ শতাংশ রিং সরবরাহ করে ইউরোপিয়ান প্রতিষ্ঠান আর ৫০ শতাংশ আমেরিকান প্রতিষ্ঠান। দাম না বাড়ানোয় তারা ধর্মঘট ডাকলে বাজারে সংকট তৈরি হয়েছিল। শুধু আমেরিকান রিং দিয়ে রোগীদের সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ জন্য খুব অল্প পরিমাণে দাম বাড়ানো হয়েছে।’ রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি ২০টির বেশি হাসপাতালে রোগীদের স্টেন্ট পরানো হয়। এরপর সবচেয়ে বেশি পরানো হয় চট্টগ্রাম শহরে। চট্টগ্রামে ১০টি হাসপাতালে স্টেন্ট পরানো চলছে বলে চিকিৎসক ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া সিলেট, দিনাজপুর, খুলনা, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, বগুড়া ও কুমিল্লায় একটি বা দুটি করে হাসপাতালে এই চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে।</p>