<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্মরণকালের ভয়াবহ আকস্মিক বন্যায় ভাসছে কুমিল্লা জেলা। ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বেশ কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণে জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টিতেই বন্যা পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত ভয়াবহ হয়ে উঠছে। শুধু জেলা প্রশাসনের তথ্যেই জেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা অন্তত ১০ লাখ। এরই মধ্যে ভয়াবহ বন্যার কবল থেকে প্রাণ বাঁচাতে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে প্রায় ৬৭ হাজার মানুষ। বানভাসিদের জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সহায়তা গেলেও তীব্র খাদ্যসংকটে রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে থাকা শিশুরা। পাশাপাশি পানিবন্দি এলাকায়ও শিশুখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় গেলেই দেখা যাচ্ছে ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদছে শিশুরা। শিশুখাদ্য না পেয়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও এখন শিশুদের কান্নার রোল।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শুধু শুকনা বিস্কুট আর কলাই বর্তমানে শিশুদের সবচেয়ে ভালো খাদ্য। আর বেশির ভাই খাচ্ছে চিড়া-মুড়ি। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি ক্ষুধার্ত থাকছে বেশির ভাগ শিশু। খাবারের জন্য মা-বাবাকে বারবার জ্বালাচ্ছে শিশুরা। কিন্তু অসহায় মা-বাবা ছোট্ট সন্তাদের মুখে তুলে দিতে পারছেন না চাহিদামতো খাবার। এমন পরিস্থিতিতে বন্যাদুর্গত এলাকায় শিশুখাদ্য সরবরাহের দাবি উঠেছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বন্যার কবলে পড়া জেলার বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল এলাকার দিনমজুর কামাল হোসেন বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঘরের ভেতর কোমরপানি দেখে স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি। কিন্তু খাবার না থাকায় দুই বছরের মেয়েটা বারবার কান্না করছে। আশ্রয়কেনেন্দ্র চিড়া-মুড়ি দেয়। এসব মেয়েটা খেতে চায় না। টাকার অভাবে মেয়েটাকে একটু দুধও কিনে খাওয়াতে পারছি না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বুড়িচং উপজেলার ফকিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, এখানে বানভাসি দুই শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ১৫টি শিশু। তাদের মধ্যে এক থেকে তিন বছরের শিশু রয়েছে অন্তত ১০ জন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপজেলার বাকশিমুল গ্রাম থেকে বন্যার পানিতে বাড়িঘর ডুবে এই আশ্রয়কেন্দ্রে স্ত্রী ও দুই বছরের কন্যাসন্তান মরিয়মকে নিয়ে এসেছেন জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাস দুয়েক আগে মায়ের দুধ খাওয়া ছেড়েছে মরিয়ম। দুই বছর বয়সী মেয়েটা শক্ত কোনো খাবার খেতে চায় না। গরুর দুধ মিশিয়ে নরম ভাত ও সুজি খাওয়ানো হতো তাকে। কিন্তু গত তিন দিন মেয়েটা আমার অনেক কষ্টে আছে। চিড়া-মুড়ি দিলে খায় না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার মান্দুয়ারা গ্রামটি পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই গ্রামের বাবুল মিয়া স্ত্রী ও ২২ মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে এসেছেন স্থানীয় একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। কিন্তু এখানে শিশুদের কোনো খাদ্য দেওয়া হয় না।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জেলার চৌদ্দগ্রাম সদরের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা দিদার হোসেন বলেন, ছোট্ট দুটি শিশুসন্তানকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি চার দিন হলো। দুই দিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে দেওয়া খাবার খেতে চাচ্ছে না শিশুরা। বিভিন্ন মাধ্যমে বড়দের জন্য খাবার এলেও শিশুদের জন্য খাবার আসছে না।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জেলার বুড়িচং উপজেলার ভরাসার উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে এসছেন বানভাসি স্থানীয় ইছাপুরা এলাকার রুমা আক্তার ও জয়নাল আবেদীন। তাঁদের কোলে ১৬ মাসের পুত্রসন্তান আবদুল্লাহ। এই দম্পতি বলেন, আবদুল্লাহ এখনো মায়ের দুধ খায়। তিন দিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। এখানে ওঠার পর থেকে বুকের দুধ একেবারেই মুখে নিতে চাচ্ছে না ছেলেটা। আশ্রয়কেন্দ্রে অপরিচিত মানুষ আর মানুষের কোলাহল থাকে সব সময়। মানুষের কারণে যত্ন করে দুধ খাওয়ানোর সঠিক পরিবেশ থাকে না। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিশুদের খাদ্যসংকটের বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুকনা খাবারের পাশাপাশি আমরা খিচুড়ি বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছি। বন্যাদুর্গত এলাকায় মূল সমস্যা হলো নৌযান সংকট। নৌযান সংকটের কারণে রান্না করা খিচুড়ি সব জায়গায় পৌঁছানো যাচ্ছে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিশুদের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছি। বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে শুকনা খাবার, স্যালাইন ও ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>