<p>বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় মুখে গুলিবিদ্ধ হন সবজির আড়তের শ্রমিক মো. জামিল হোসেন (৩৯)। পরে শিক্ষার্থীরা তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ঘণ্টা দুয়েক রাখার পর তাঁকে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন চিকিৎসকরা। এর পর থেকে হাসপাতালটির সপ্তম তলায় চিকিৎসাধীন আন্দোলনে যোগ দেওয়া এই শ্রমিক। প্রায় দুই মাসজুড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। এর মধ্যে দুটি অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হলেও তিনি স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেন না। এদিকে আর্থিকভাবে দুর্দশায় থাকা তাঁর পরিবার চিকিৎসাসহ অন্যান্য খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে।</p> <p>জামিলের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায়। তবে ছোটবেলা থেকে তিনি থাকেন রাজধানী ঢাকায়। দুই ছেলে, এক মেয়ে, মা ও স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার। সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী জামিল।</p> <p>আক্ষেপ করে জামিলের স্ত্রী ফারজানা গতকাল রবিবার হাসপাতাল থেকে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজ দুই মাস ধরে হাসপাতালে স্বামীকে নিয়ে আছি। হাসপাতাল কিংবা সরকারে পক্ষ থেকে কোনো ধরনের চিকিৎসাসেবায় ছাড় পাইনি। এরই মধ্যে তিন লাখ টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে আমাদের। কারণ কোনো ওষুধপত্র-পরীক্ষায় মওকুফ পাইনি। প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে পরীক্ষাগুলো করাচ্ছি। শুনেছি, সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে যারা আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে, তাদের চিকিৎসা খরচ ফ্রি। কিন্তু আমরা তো তা পাচ্ছি না।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘একদিকে সন্তানদের পড়াশোনা ও আমাদের ভরণ-পোষণ, অন্যদিকে চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে পারছি না। এ সময়ে মধ্যে ধার-দেনাও হয়ে গেছে কিছু টাকা। তাই অনুরোধ, সরকার কিংবা বিত্তবানদের পক্ষ থেকে যদি আমাদের সহযোগিতা করা সম্ভব হয় যেন করে। তাহলে স্বামীকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে বাড়ি ফিরতে পারব।’</p> <p>ফারজানা বলেন, ‘(জামিলের) ঠোঁঠের কাছ দিয়ে মুখের ভেতরে গুলি লাগে। প্রথম অপারেশনে ২১ আগস্ট গুলি বের করতে পারেনি। পরে ৪ সেপ্টেম্বর আরেকটি অপারেশন করে গুলি বের করা হয়েছে। বর্তমানে সেলাই আছে। মাঝে বেশ কিছুদিন আইসিইউতে ছিল। তবে জামিলের কথা এখনো অস্পষ্ট।’ জামিলের কথা কোনো রকমে শুধু তাঁর স্ত্রী বোঝেন। প্রথম দুই সপ্তাহ কোনো কথা বলতে পারেননি জামিল।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামিল মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এরপর পরিবারের হাল ধরার চেষ্টায় কাজে নেমে পড়েন। দুই ছেলে মাদরাসায় পড়ে এবং ছোট মেয়েকে সামনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হবে। জামিল গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাঁর উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কষ্টের জীবন যাপন করছে পরিবারের সদস্যরা।</p> <p>জাামিলের স্বজন আলমগীর হোসেন বলেন, ছয়জনের পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি জামিল। সে এভাবে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় পুরো পরিবার অন্ধকারে। এই মুহূর্তে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সরকারিভাবে সহায়তা করে পাশে থাকলে পরিবারটি নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখবে। কারণ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জামিলের দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকা লাগতে পারে।</p> <p>গুলিবিদ্ধ জামিলের সঙ্গে এই প্রতিবেদক কথা বলতে চাইলে চেষ্টা করেও তিনি তেমন কোনো কথা বলতে পারেননি।</p> <p> </p>