<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কমলগঞ্জ, ইসলামপুর, আদমপুর ও মাধবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মণিপুরি সম্প্রদায়ের বাস। যুগ যুগ ধরে বসবাসরত এই সম্প্রদায়ের মানুষ বাংলা ভাষায় লেখাপড়া করে। মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের সুযোগ নেই তাদের। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মণিপুরি শিশুদের বেশির ভাগেরই নিজস্ব বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয় নেই। সরকারিভাবেও নেই তাদের ভাষার বই। অথচ এই ভাষার রয়েছে নিজস্ব লিপি। আছে সুপ্রাচীন ঐতিহ্য।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="মণিপুরি ভাষা রক্ষায় বৃন্দা রানীর সংগ্রাম" height="416" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/02.February/19-02-2025/mk/kk-NEW-2-2025-02-21-42.jpg" style="float:left" width="273" />মণিপুরি সম্প্রদায়ের ভাষা টিকিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন একজন। যিনি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী মণিপুরি পরিবারেরই সন্তান। তাঁর নাম ওজা বৃন্দা রানী সিনহা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এই নারী অবসরে যান ২০২৩ সালের ৭ জুলাই। বাড়ি কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের হখতিয়ারখোলা গ্রামে। এলাকায় তিনি মাতৃভাষার ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচিত। নিজের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মণিপুরি ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। গত ছয় বছরে শতাধিক শিশু ও নারীকে মাতৃভাষায় পাঠদান করেছেন তিনি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০১৯ সালে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মণিপুরি ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রতিষ্ঠা করেন বৃন্দা রানী সিনহা। হকতিয়ারখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করার পাশাপাশি তিনি প্রতি শুক্রবার সকালে মাতৃভাষা স্কুলে ক্লাস নিতেন। প্রথমে তৃতীয়-ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হলেও এখন মধ্য বয়সী নারীরাও নিজস্ব ভাষা শিখতে হাজির হন বৃন্দা রানীর মণিপুরি মাতৃভাষা স্কুলে। বর্তমানে মোট ৩৫ জন নিয়মিত শিশু শিক্ষার্থী এবং নানা বয়সের ২৫ জন নারীকেও পাঠদান করছেন। প্রতিবছর ডিসেম্বরে বার্ষিক মূল্যায়ন ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তা ছাড়া শিক্ষা সফর অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দুই বছর শিক্ষার্থীদের নাশতার ব্যবস্থা করলেও আর্থিক সংকটে এখন তা বন্ধ।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই স্কুল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে অনেকের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে মণিপুরি বর্ণমালা শেখার। দুয়ার খুলেছে গবেষণারও। তাঁর এমন উদ্যোগ সারা ফেলেছে মণিপুরি সমাজে। অনেকেই আগ্রহী হয়ে তাঁদের সন্তানকে মাতৃভাষা শেখাতে এই শিখন স্কুলে পাঠাচ্ছেন। আদমপুরের নয়াপত্তন গ্রামবাসীর আগ্রহে ১০ কিলোমিটার দূরে বৃন্দা রানী নিজেও আরেকটি স্কুল পরিচালনা করছেন। সেখানেও প্রতি শনিবার সময় দেন। সেখানকার একজন নারী সহযোগিতা করেন তাঁকে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুক্রবার স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শিশুরা খাতা-কলম নিয়ে হাজির হয়েছে বৃন্দা রানীর উঠানে। সঙ্গে আছেন অনেক মণিপুরি নারী। ঘরের বারান্দায় চটি বিছিয়ে সারিবদ্ধভাবে বসে আছেন সবাই। বৃন্দা রানী ব্ল্যাকবোর্ডে বর্ণ লিখে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। মণিপুরি ভাষার বর্ণের সঙ্গে বাংলা স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জন বর্ণের উচ্চারণ শেখাচ্ছেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওজা বৃন্দা রানী সিনহা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে মণিপুরি ভাষার প্রায়োগিক ক্ষেত্র যেমন নেই, তেমনি নেই এর প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা ও শিক্ষা লাভের কোনো সুযোগ। সেটা রক্ষায় মনের তাড়নায় স্বামী সুখময় সিংহকে সঙ্গে নিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নতুন প্রজন্মের কাছে ভাষাটি পৌঁছানোর জন্য মণিপুরি ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মণিপুরি জাতি হিসেবে নিজেকে নিয়ে গর্ব করেন মণিপুরি ভাষা কেন্দ্রের শিক্ষার্থী রিতা রানী দেবী। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রতি শুক্রবার মণিপুরি ভাষা কেন্দ্রে আমাদের মাতৃভাষার বর্ণমালা ভালোভাবে শিখতে পারছি। গর্ব করে বলতে পারি, আমি একজন মণিপুুর। বৃন্দা রানীর স্কুল সীমিত সুযোগের মধ্যে আমাদের শিক্ষার্থীদের মণিপুুর ভাষায় আলোকিত করে যাচ্ছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ মণিপুুর মুসলিম এডুকেশন ট্রাস্টের সভাপতি লেখক ও গবেষক সাজ্জাদুল হক স্বপন বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জাতীয় শিক্ষানীতির অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দ্রুত মণিপুরসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের নিজ নিজ ভাষায় পাঠদান চালু করা জরুরি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কমলগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকারিভাবে মণিপুরি নৃগোষ্ঠীর কোনো বই নেই। একজন নারী মণিপুরি ভাষা কেন্দ্র চালু করে নিজস্ব ভাষায় পাঠদান করাচ্ছেন। বিষয়টি উচ্চ মহলে জানিয়েছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p>
