<p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">আজ ২৯ মে, আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। এই দিনে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদান গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয়। বিশ্বের সংঘাতময় অঞ্চলগুলোতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালে জন্ম হয় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের। এ বছর তার ৭৬ বছর পূর্ণ হলো। বিশ্বজুড়ে ২০০৩ সাল থেকে প্রতিবছর ২৯ মে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস পালিত হয়। বিভিন্ন দেশের শান্তিরক্ষীদের মহান আত্মত্যাগকে স্মরণ করে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, এদিন নিউ ইয়র্ক শহরে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সম্মানসূচক </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্যাগ হ্যামারশোল্ড</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi"> পদক বিতরণ করা হয়।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইউক্রেনের শান্তিরক্ষী সংস্থা এবং ইউক্রেন সরকারের যৌথ প্রস্তাবে ২০০২ সালের ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী এই দিবসের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়। ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস প্রথম উদযাপন করা হয়। ২০০২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব উত্থাপনকারী ইউক্রেন এখন রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। ১৯৪৮ সালে সংঘটিত ইসরায়েলের যুদ্ধ চলাকালীন যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের জন্য গঠিত হয়েছিল জাতিসংঘ ট্রুস সুপারভিশন অর্গানাইজেশন (আন্টসো)। সেই দিনকে উপজীব্য করে ২৯ মে তারিখটি স্থির করা হয়েছে। আন্টসোই হচ্ছে প্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী। আজ ২৯ মে যখন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস পালিত হচ্ছে, তখন ইসরায়েল ফিলিস্তিনে যুদ্ধে লিপ্ত। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৮৮ সালে সেনাবাহিনীর ১৫ সদস্যের একটি পর্যবেক্ষকদল ইরাক-ইরান শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে যোগ দেয়। এর মাধ্যমে জাতিসংঘের পতাকাতলে শান্তি রক্ষা মিশনে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ। এক বছর পর ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ নামিবিয়ায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে যোগ দেয়। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী মোজাম্বিকে এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনী বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরবর্তী কয়েক বছর বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী বেশ সুনাম ও কৃতিত্বের সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে কাজ করে গেছে। সে সময় অর্থাৎ ১৯৯৩-৯৪ সালে সবচেয়ে আলোচিত রুয়ান্ডা, সোমালিয়া ও বসনিয়া</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই তিনটি শান্তি মিশনে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আলোচনার কেন্দ্রমূলে আসে। ২০০৯ সালে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষায় নারীদের অবদান ও ভূমিকার</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‌</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। শান্তি রক্ষায় নারীর ভূমিকা ও লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যেই মূলত এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই সর্বপ্রথম ২০১০ সালে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে পুলিশের নারী দল পাঠায়। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্থানীয় জনগণের আস্থা আর ভালোবাসাই জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশি সেনাদের মূলশক্তি। প্রতিটি মিশনেই বাংলাদেশিদের এই দক্ষতা জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের মুগ্ধ করেছে। ব্যক্তিগত শৃঙ্খলা, প্রশাসনিক আর সামরিক দক্ষতার জন্য যেকোনো সামরিক কমান্ডারের কাছে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকান সেনাপতিরা বাংলাদেশি সামরিক কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও সাহসিকতায় মুগ্ধ ও আস্থাশীল। ১৯৯৫ সালে ইউরোপের একমাত্র শান্তি মিশন বসনিয়ায় ফ্রান্স ব্যাটালিয়ন প্রত্যাহার করলে বাংলাদেশি সেনারা তাদের জায়গায় কাজ শুরু করেন। ৩৪টি দেশের সেনাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তখন বাংলাদেশের ব্যাটালিয়নকে শান্তি রক্ষার কাজে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়েছিল। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশি সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ছয়জন ফোর্স কমান্ডার ও সাতজন ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের গৌরব অর্জন করেন। শান্তি রক্ষায় অসামান্য অবদান রেখে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা বিশ্বব্যাপী দেশের গৌরব ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও তাঁরা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলছেন। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">৩৬ বছর ধরে শান্তি রক্ষা মিশনে সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছে সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ। পেশাদারি মনোভাব, অবদান ও আত্মত্যাগের ফলে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে নিজের অবস্থানও সুসংহত করেছে বাংলাদেশ।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী তাঁদের মিশন শেষ করেছেন। তা ছাড়া মিশন এলাকায় সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ১৬৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আহত হয়েছেন ২৬৬ জন। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমান শতাব্দীতে তৃতীয় প্রজন্মের শান্তি রক্ষা কার্যক্রম বহুমাত্রিক ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ জন্য আমাদের সশস্ত্র বাহিনী পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠার পরিচয় দিয়ে চলেছে। ভয়ভীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা শান্তির বার্তা নিয়ে সফলতার সঙ্গে বৈশ্বিক শান্তি রক্ষায় তাঁদের অবদানের কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">সশস্ত্র বাহিনীর জনসংযোগ বিভাগের ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী এ পর্যন্ত পৃথিবীর ৪৩টি মিশনে দায়িত্ব পালন করেছে। এখনো আমাদের ছয় হাজারের বেশি শান্তিরক্ষী বিভিন্ন মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সেনাদের অংশগ্রহণের ফলে বিশ্বের বুকে বেড়েছে বাঙালি ও বাংলা ভাষার পরিচিতি। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র, রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্মীয় বিশ্বাস, আঞ্চলিক বৈষম্যকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা নিজেদের উৎসর্গ করেছেন বিশ্বমানবতার মহান সেবায়। পেশাগত দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, সততা ও মানবিক আচরণের কারণে তাঁরা আজ সেসব দেশের মানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয় আদর্শ। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে অবদান রাখা দেশগুলোর অবস্থান সম্পর্কে জাতিসংঘের </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশনস</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রতিবেদন অনুসারে, এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সেনা প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সবার শীর্ষে। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক ও পরিচালক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর</span></span></span></span></span></span></p>