<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত দেড় দশকে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। ২০০৯ সালে বিদ্যুতের চাহিদা ও জোগানের ব্যবধান অনেক বেশি থাকায় প্রতিদিন বেশ কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হতো। তবে ২০২৪-এ এসে আমাদের অন্য সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকার পরও লোডশেডিং অনেকটা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন কমে যাওয়ায় শিল্প খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন শিল্পের সক্ষমতা পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গ্যাসের বর্ধিত চাহিদা বিবেচনায় বাংলাদেশকে ২০১৮ সালে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করতে হয়। এ ছাড়া তেল ও অন্যান্য জ্বালানির জন্য আমরা আমদানির ওপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীল। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির অস্থিরতা ও উচ্চমূল্যের দায় দেশকে নিতে হচ্ছে। এর প্রভাব যেমন বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিতিতে পড়ছে তেমনি বেসরকারি খাত থেকে কেনা বিদ্যুতের দেনা মেটাতে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় সরকার বেশ কয়েকবার জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে; তাতেও পর্যাপ্ত জ্বালানি বা বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জ্বালানি খাতের এ ধরনের উপসর্গ জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকি বলেই ধরা যায়। তবে অনেক দেশের মতোই জ্বালানি খাতে পুরোপুরি স্বনির্ভর হওয়া অত্যন্ত কঠিন হলেও পরিকল্পিত পদক্ষেপ আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আমাদের জ্বালানি খাতের নিরাপত্তা বাড়ানোর সঙ্গে অর্থনৈতিক চাপ অনেকটাই লাঘব করতে পারে।   </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ক্ষেত্রে আমাদের জ্বালানি ব্যবহারে দক্ষতা বাড়ানোর সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সম্কদ ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে। শিল্প খাত ও বাসাবাড়ি উভয় ক্ষেত্রেই জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমাদের সাম্ক্রতিক গবেষণা থেকে প্রতীয়মান হয়, গ্যাসচালিত জেনারেটরগুলোর দক্ষতা বাড়িয়ে এবং এদের থেকে নির্গত তাপ ব্যবহার করে শিল্প খাতে বার্ষিক প্রায় ২৩৮.৭২ বিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি কমানো সম্ভব। এতে প্রতিবছর আর্থিক সাশ্রয় হবে প্রায় ৪৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।    </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিল্প খাতে উৎপাদনব্যবস্থার বিভিন্ন অংশে জ্বালানি সাশ্রয়ের আরো সুযোগ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বয়লারের দক্ষ ব্যবহার এবং নতুন মডেলের সাশ্রয়ী মোটর স্থাপন করে জ্বালানির চাহিদা কমানো যেতে পারে। আবার বাসাবাড়িতে জ্বালানি সাশ্রয়ী বাতির ব্যবহার বেড়েছে। ক্রমেই জ্বালানি সাশ্রয়ী পাখা এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য যন্ত্র কেনার সময় জ্বালানি দক্ষতা বিবেচনায় নেওয়া হলে জ্বালানির ব্যবহার অনেকখানি কমানো সম্ভব হবে।   </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জ্বালানি দক্ষতার সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে পারলে আমাদের জ্বালানি আমদানি হ্রাস করা যাবে। গত এক বা দুই বছরে অংশীজনদের মাঝে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ বেড়েছে। এ সময় বেশ কয়েকটি নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রকল্প গ্রিডে যুক্ত হয়েছে এবং সফলতার সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। যেহেতু আমাদের বিদ্যুতের চাহিদার চেয়ে উৎপাদন সক্ষমতা অনেক বেশি, এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে আমদানিনির্ভর জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিমাণ খুব দ্রুত প্রসারে লাগাম টানার। সেই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুতের পরিমাণ বাড়ানোয় দিতে হবে মনোযোগ।     </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটাকে শুরু হিসেবে ধরা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় এ বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। মাত্র ১০ মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে এ টাকা খরচ হয়ে যাবে।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আগামী অর্থবছরে এই বরাদ্দ বাড়িয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা হলে নানাবিধ সুবিধা পাওয়া সম্ভব। এ বরাদ্দ থেকে যদি সঞ্চালন লাইন তৈরির খরচ মেটাতে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা দেওয়া যায়, নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুতের খরচ বেশ কমে আসবে। আবার সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে দিনের বেলা ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেনা কমিয়ে আর্থিক সাশ্রয় করা যাবে। ফলে জ্বালানি তেল আমদানিতেও রাশ টানা যেতে পারে।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গ্রীষ্মকালে সেচের জন্য প্রায় ১.২২ মিলিয়ন ডিজেলচালিত পাম্ক ব্যবহৃত হয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ডিসেম্বর ২০২৩-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেচে ব্যবহৃত ডিজেলচালিত পাম্কগুলো সৌরবিদ্যুত্চালিত পাম্ক দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হলে বছরে প্রায় ৩৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের ডিজেল আমদানি সাশ্রয় করা যাবে।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। এতে এলএনজি নির্ভরতা কমানো যাবে। আর তা করতে হলে জাতীয় বাজেটে জ্বালানি খাতের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। গতানুগতিক বাজেট যেখানে বিদ্যুৎ খাতের জন্য ৯০ শতাংশের বেশি বরাদ্দ থাকে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত দেড় দশকে বিদ্যুৎ খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হলেও জ্বালানি নিরাপত্তার মারাত্মক অভাবের ফলে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক ক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যুৎ ও অন্যান্য খাতে জ্বালানির চাহিদা ক্রমেই বাড়বে। লোডশেডিং কিংবা গ্যাস রেশনিং সমাধান হতে পারে না। কাজেই সময় এখন জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে দৃঢ়ভাবে কাজ করার। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লেখক : ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল অ্যানালিসিসের (আইইইএফএ) বাংলাদেশের জ্বালানি খাতবিষয়ক প্রধান বিশ্লেষক </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হিসেবে কর্মরত</span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p>