<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রে পদোন্নতি কিভাবে হয়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ বিষয়ে অনেকেরই সুনির্দিষ্ট ধারণা নেই। থাকার কথাও নয়। অথচ আপনি যদি রাষ্ট্রের মালিক হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনাকে রাষ্ট্রের কর্মীদের নিয়োগ ও পদোন্নতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে। সরকারি চাকরিতে নবম গ্রেড ও তার ওপরের গ্রেডের নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা যাক। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের সরকারি চাকরির রীতি অনুযায়ী নবম গ্রেডের পদকে প্রথম শ্রেণির পদ বলা হয়। অর্থাৎ একজন চাকরিপ্রত্যাশী যখন বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম শ্রেণির চাকরি লাভ করেন, তখন তিনি আসলে নবম গ্রেডে নিয়োগলাভ করেন। এ জন্য উপযুক্ত নাগরিকদের মধ্য থেকে অধিকতর যোগ্যদের বাছাই করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) নামক প্রতিষ্ঠানকে। পিএসসি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। পিএসসি নির্দিষ্টসংখ্যক প্রার্থীকে বাছাই করে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে প্রেরণ করে এবং রাষ্ট্রপতি তাঁদের নিয়োগ দেন। তবে এর আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে শূন্যপদের সংখ্যা উল্লেখ করে চাহিদা পাঠাতে হয়। এই চাহিদা অনুযায়ী পিএসসি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাষ্ট্রের কর্মে নিয়োগপ্রাপ্ত নবম গ্রেডের সব কর্মচারীকে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং করতে হয় এবং বিভাগীয় পরীক্ষা দিতে হয়। এই দুটি ধাপ সম্পাদিত হলে তাঁদের চাকরি স্থায়ী করা হয়। নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতির জন্য প্রত্যেক কর্মচারীকে চাকরি স্থায়ীকরণ হওয়ার পর পিএসসির অধীনে আরেকবার পরীক্ষা দিতে হয়। এর নাম সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে নবম গ্রেডের কোনো কর্মচারী ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পাবেন না। যাঁরা উল্লিখিত যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হন, তাঁরা ১৫ বছর পর প্রমার্জন পেয়ে এক ধরনের সান্ত্বনা পদোন্নতি পান। তবে সরকারি চাকরিতে প্রমার্জন একটি লজ্জাজনক বিষয় বলে বিবেচিত হয়। কাজেই প্রমার্জন বাদ দিলে নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতিই তাঁদের প্রথম পদোন্নতি। বাস্তবে এই পদোন্নতিটিই সবচেয়ে নিরপেক্ষ ও অবিতর্কিতভাবে হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিকীকরণ কিংবা দলীয়করণের কোনো অভিযোগ কখনো আসেনি। কারণ এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী নিজের যোগ্যতার ভিত্তিতেই পদোন্নতি পেয়ে থাকেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমলাতন্ত্রে পদোন্নতি নিয়ে যত ঝামেলা, যত বিতর্ক সবই ষষ্ঠ গ্রেড এবং তার ঊর্ধ্বতর স্তর থেকে শুরু। এর কারণ কী? এর কারণ হলো পরবর্তী ধাপের অস্বচ্ছ এবং বিতর্কিত পদোন্নতির প্রক্রিয়া। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উচ্চতর সরকারি পদ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বাদে রাষ্ট্রের ষষ্ঠ গ্রেডের পরবর্তী সব ধাপে পদোন্নতির জন্য একটি বোর্ড তৈরি করা হয়। এই বোর্ডকে বলা হয় </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিভাগীয় পদোন্নতি বোর্ড</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। এই বোর্ডের একটি কমিটি থাকে, যাকে সংক্ষেপে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডিপিসি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বলা হয়। এই কমিটি অত্যন্ত ক্ষমতাশালী একটি কমিটি। কারণ এই কমিটি ষষ্ঠ থেকে চতুর্থ গ্রেডের ক্যাডারভুক্ত ও ক্যাডারবহির্ভূত কর্মচারীদের পদোন্নতি দিয়ে থাকে। এই কমিটির সদস্য চারজন। তাঁরা হলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত বা যুগ্ম সচিব, অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত বা যুগ্ম সচিব এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থার প্রধান। সমস্যাটি এখানেই। কেন?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডিপিসির চারজন সদস্যের তিনজনই প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য। কেবল সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থার প্রধান তাঁর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একমাত্র প্রতিনিধি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশাসন ক্যাডারের অনুগ্রহ ছাড়া অন্য ক্যাডারের সদস্যদের পদোন্নতি অসম্ভব। ডিপিসির জন্য নির্দিষ্ট কোনো তারিখ নেই। প্রশাসন ক্যাডারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে কখন ডিপিসি বসবে কিংবা আদৌ বসবে কি না। কখনো ডিপিসির তারিখ নির্ধারণ করা হলেও এই তিন সদস্যের যে কারো একজনের অনুপস্থিতিতেই পুরো পদোন্নতিপ্রক্রিয়া থমকে যেতে পারে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সামগ্রিকভাবে পদোন্নতির জন্য গঠিত এই কমিটি, এই বিধি এবং এই পদ্ধতি অগ্রহণযোগ্য। স্বাভাবিক চিন্তাসম্পন্ন যেকোনো মানুষই বুঝতে পারবে এর অগ্রহণযোগ্যতার কারণ। বাংলাদেশে সব মিলিয়ে মোট ৪৪টি মন্ত্রণালয় আছে, আর এসব <img alt="প্রশাসনিক সংস্কার এবং আমলাতন্ত্রে পদোন্নতি " height="425" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/24-09-2024/56.jpg" style="float:left" width="500" />মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে ২৬টি ক্যাডার তৈরি করা হয়েছে। মর্যাদার দিক থেকে এরা সবাই সমান হওয়ার কথা। কিন্তু তথাকথিত এই ডিপিসির মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যদের কুলীন ক্যাডার হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। এবং এদের হাতে অন্য সব ক্যাডারের সদস্যদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি সামগ্রিকভাবে আমলাতন্ত্রের আন্ত সম্পর্কের জন্য অস্বাস্থ্যকর। একই সঙ্গে এটি অযৌক্তিক এবং অন্যায়ও বটে। এর সঙ্গে রয়েছে রাজনৈতিক অবৈধ হস্তক্ষেপের সুযোগ। মেধাবীদের বঞ্চিত রেখে নিজ দলীয় আদর্শে বিশ্বাসী এবং কুকর্মে সহায়তাকারীদের পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির এ দেশে রয়েছে। এমনকি প্রশাসন ক্যাডারেও এমন ঘটনা অহরহই ঘটে থাকে। ফলে পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষমতা প্রশাসন ক্যাডারের হাতে রাখা অন্য সব ক্যাডারের সদস্যদের জন্য যেমন ক্ষতিকর, প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যদের জন্যও সমান ক্ষতিকর।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কিভাবে এর প্রতিকার হতে পারে?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এর প্রতিকার খুব সহজ। এ জন্য মাত্র দুটি ছোট্ট সংস্কার করতে হবে। প্রথমটি হলো, পদোন্নতির প্রক্রিয়াটি মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে পিএসসির হাতে ন্যস্ত করতে হবে। কিন্তু পিএসসির হাতে পদোন্নতির সুপারিশ দেওয়ার ক্ষমতা কতটা যৌক্তিক?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পদোন্নতি আসলে এক ধরনের নিয়োগ। উচ্চতর পদে নিয়োগ। সরকারি চাকরির প্রথম শ্রেণিতে নিয়োগের সুপারিশ দেওয়ার ক্ষমতা সাংবিধানিকভাবে পিএসসির হাতেই ন্যস্ত। কাজেই উচ্চতর পদে নিয়োগের সুপারিশও কোনো নির্দিষ্ট ক্যাডারের হাতে না রেখে পিএসসির হাতে থাকাই অধিকতর যৌক্তিক। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রতিবছর পিএসসিতে পদোন্নতিযোগ্য কর্মচারীদের তালিকা পাঠাতে হবে। এই তালিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিগত দিনের কর্মকাণ্ডের বিবরণ, উদ্ভাবনী দক্ষতা এবং সামগ্রিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন থাকবে। পিএসসি এই প্রতিবেদনকে সর্টিং করে সংখ্যামানে রূপান্তর করবে। এর সঙ্গে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বর। লিখিত পরীক্ষার বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট সার্ভিসের আইনকানুন, বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা, ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা থেকে শুরু করে আরো অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। সরকারি কর্মচারীদের অতীত আমলনামা এবং লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের যোগফল থেকে প্রাপ্ত মেধাতালিকার মাধ্যমে পদোন্নতি দেওয়া হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আর দ্বিতীয়টি হলো পদোন্নতির জন্য একটি বার্ষিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করা। বিদ্যমান পদোন্নতিপ্রক্রিয়ায় কোন মন্ত্রণালয়ে কখন পদোন্নতি হবে সে সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকে না। ফলে এক মন্ত্রণালয়ে বছরে একাধিকবার পদোন্নতি হচ্ছে, আর অন্য মন্ত্রণালয়ে বছরের পর বছর পদোন্নতি বন্ধ থাকছে। ফলে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে প্রবল বৈষম্য বিরাজ করছে। এই বৈষম্য সরকারি কর্মচারীদের মনে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি করছে। এবং স্বাভাবিকভাবেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তাঁদের প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে। কাজেই পিএসসিকে সব ক্যাডার সদস্যের জন্য বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে পদোন্নতিপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। অর্থাৎ পিএসসিকে পদোন্নতি ক্যালেন্ডার তৈরি করতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রশাসনিক সংস্কারের আওতায় মাত্র এই দুটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করলে সমগ্র আমলাতন্ত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে বিশ্বাস করি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লেখক : শিক্ষক</span></span></span></span></p>