<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সাংবিধানিক ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব অনেক বেশি। ন্যায়পাল সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার অন্যতম মাধ্যম। এই প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতার মাধ্যমে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির মধ্যে আনা সম্ভব। এমনকি ন্যায়পাল সরকারের প্রশাসনকেও শক্তিশালী করতে পারেন। প্রশাসনের অনিয়ম, অব্যবস্থা দূর করতে সংবিধানে ১৯৮০ সালে  ন্যায়পালের বিষয়টি সংস্থাপিত হলেও এখনো ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা বা প্রবর্তিত হয়নি। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার আলোকে ন্যায়পাল পদ সৃষ্টির জন্য আইন করা হলেও এবং বিভিন্ন সময়ে এই আইনের আলোকে ন্যায়পাল পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হলেও এগুলোকে আসলে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আইওয়াশ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> মনে হয়েছে। তা ছাড়া বিদ্যমান আইনে প্রদত্ত ক্ষমতা ও এখতিয়ার বলে কোনো ন্যায়পালের পক্ষে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনাও সম্ভব নয়। কেননা এই আইনের প্রয়োগ করে ন্যায়পাল আদতে কোনো ক্ষমতাই প্রয়োগ করতে পারবেন না। সুতরাং ন্যায়পাল পদ সৃষ্টির আগে এই আইন বাতিল বা সংশোধন করে সুইডেন, নরওয়ে, এমনকি ভারতের আদলে এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে, যারা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ যে কাউকে জবাবদিহির আওতায় আনতে পারবে। ন্যায়পাল যদি স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে না পারেন, তাহলে এ রকম একটি পদ সৃষ্টির কোনো মানে নেই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্বব্যাপী এটি এখন প্রতিষ্ঠিত বাস্তব যে গণতন্ত্র ও ন্যায়পালের পারস্পরিক সম্পর্ক প্রায় অবিভাজ্য। আধুনিক কালে ন্যায়পালপদ্ধতি প্রবর্তনের সূতিকাগার হিসেবে সুইডেন ও নরওয়ের উদ্যোগ সর্বজনস্বীকৃত। অন্য স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোও তাদের প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে বর্তমান ন্যায়পালের পদ সৃষ্টি করে। সব কল্যাণমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই তাদের নাগরিকের সব ধরনের অধিকার রক্ষায় ও প্রকৃত স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধানে সততই তৎপর। ন্যায়পাল সরকারগুলোর এই ঐকান্তিক প্রয়াসে প্রকৃত সহায়কের ভূমিকা পালন করেন এবং তাদের হাত শক্তিশালী করে থাকেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উল্লেখ্য, গণপরিষদ কর্তৃক প্রণীত ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে ন্যায়পাল পদ সৃষ্টির বিষয়টিকে সমধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৭৭ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১. সংসদ আইনের দ্বারা ন্যায়পালের পদ প্রতিষ্ঠার জন্য বিধান করিতে পারিবেন। ২. সংসদ আইনের দ্বারা ন্যায়পালকে কোনো মন্ত্রণালয়, সরকারী কর্মচারী বা সংবিধিবদ্ধ সরকারী কর্তৃপক্ষের যেকোনো কার্য সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতাসহ যেরূপ ক্ষমতা কিংবা যেরূপ দায়িত্ব প্রদান করিবেন, ন্যায়পাল সেইরূপ ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করিবেন। ৩. ন্যায়পাল তাঁহার দায়িত্ব পালন সম্পর্কে বাৎসরিক রিপোর্ট প্রণয়ন করিবেন এবং অনুরূপ রিপোর্ট সংসদে উপস্থাপিত হইবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কিন্তু দীর্ঘকাল গণতন্ত্রের চর্চা ও বিকাশের পথ ব্যাহত হওয়ায় সংবিধান মোতাবেক দেশে ন্যায়পাল পদটি সৃষ্টি হয়নি। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোসহ জনপ্রশাসনকে  সংস্কার করে গতিশীল করার জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। ফলে বেশ কিছু সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে কাজগুলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে রয়েছে ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা করা। কারণ সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে প্রশাসনের সব স্তরে জবাবদিহিমূলক পরিবেশ তৈরি করতে না পারলে ন্যায়পালের কাজ হলো নির্বাহী বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঠিকমতো কাজ করছেন কি না, সেটি তদারকি করা। কিন্তু আমাদের দেশের আমলারা এত শক্তিশালী যে তাঁরা নিজেদের ওপর কারো খবরদারি সহ্য করেন না। আর এ কারণেই গত ৫২ বছরেও ন্যায়পাল নিয়োগে উদ্যোগ নেয়নি সরকার। সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিকের মতে, বিষয়টি যেহেতু সময় দিয়ে বাধ্যতামূলক করা হয়নি, তাই এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে বিগত সব সরকার। আর আমলাতন্ত্রের দাপটের কারণে পরবর্তী সময়েও এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সবচেয়ে বড় কথা, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হতে গেলেও বিগত বছরগুলোতে যে রকম দলীয় আনুগত্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়েছে, সেখানে ন্যায়পাল নিয়োগের জন্য একজন দলনিরপেক্ষ লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল। কিন্ত পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে নিশ্চয়ই এমন একজন দক্ষ, সৎ, দেশপ্রেমিক ও নিরপেক্ষ এবং সর্বোপরি সাহসী মানুষকে পাওয়া কঠিন হবে না, যাঁর নেতৃত্বে ন্যায়পাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করা সম্ভব।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, ১৯৯০-পরবর্তী সময়ে দেশে কিছু বিষয়ে অতিমাত্রায় দলাদলি, স্বজনপ্রীতি, তদবির বাণিজ্যের অভিযোগ আমাদের সামনে এসেছে। বিভিন্ন দেশে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের স্বেচ্ছাচারিতা বা দুর্নীতি রোধ করতে এবং তাঁদের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়াসহ জবাবদিহি নিশ্চিত করতে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংসদ সদস্য আচরণ আইন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> রয়েছে। এমনকি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কার্যক্রমে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেও বিভিন্ন ধরনের আইন রয়েছে। বাংলাদেশেও এমন অসংখ্য আইন রয়েছে, কিন্তু সেগুলো যথাযথভাবে মানা হয় না। আর এই না মানার পেছনের অন্যতম কারণ হলো দেশে ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা না করা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাস্তবতা হলো, সংবিধানে এই বিধান যুক্ত থাকার পরও একজন ন্যায়পাল নিয়োগ করা হয়নি। দেশে এখন যে ন্যায়পাল পদ সৃষ্টির  বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং রাজনৈতিক সংস্কারের লক্ষ্যে প্রাসঙ্গিক। এই মুহূর্তে অধ্যাদেশ জারি করে ন্যায়পালকে সত্যি একজন ক্ষমতাবান ব্যক্তিতে পরিণত করার বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করে ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা করতে পারলে দেশে সুশাসনের যে আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তা পূরণে অনেকটাই সহায়ক হবে। আর এ কারণে ন্যায়পাল নিয়োগের বিষয়ে একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করা জরুরি। এমনকি ন্যায়পালের যে কাজ, তাতে এই পদে নিয়োগ দিতে হবে এমন একজন মানুষকে, যিনি দল-মত-নির্বিশেষে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, যাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের কোনো গুরুতর অভিযোগ নেই। যিনি রাষ্ট্রকাঠামো তথা প্রশাসনিক পদ্ধতিগুলো জানেন এবং ন্যায়পাল যেহেতু একজন বিচারক, অতএব তিনি হবেন এমন একজন ব্যক্তিত্ব, যিনি দল-মত, এমনকি আত্মীয়-পরিজন-নির্বিশেষে সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সক্ষম। </span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">sultanmahmud.rana@gmail.com</span></span></span></span></p> <p> </p>
