টাকায় প্রশংসা কিনে বিপদে বলিউড

  • উপমহাদেশে তো বটেই, বিশ্বজুড়েও কম নয় বলিউডের প্রভাব। তবে ঝলমলে বলিউড নামক প্রদীপের নিচেও রয়েছে অন্ধকার। যার একটি পেইড রিভিউ বা টাকায় কেনা প্রশংসা। যেটা ক্রমে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলিউডকে। আল জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে লিখেছেন কামরুল ইসলাম
শেয়ার
টাকায় প্রশংসা কিনে বিপদে বলিউড
‘জিগরা’য় আলিয়া ভাট। ‘জিগরা’র ব্যর্থতা বুঝিয়ে দিয়েছে, বলিউড এখন তার নিজের তৈরি করা দানবের হাতে বন্দি!

বলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ধর্ম প্রোডাকশন। ৪৫ বছরের এ প্রতিষ্ঠান উপহার দিয়েছে অনেক কালজয়ী ও ব্যবসাসফল ছবি। তবে কয়েক বছর ধরে টিকে থাকার জন্য রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চারটি ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিয়েছিল তাঁরা।

মুনাফা করতে পেরেছে শুধু একটি। ২০২৩-এ প্রতিষ্ঠানটির আয় ছিল ১২ লাখ মার্কিন ডলার, সেটা গত বছর কমে দাঁড়ায় মাত্র ৬৮ হাজার ১৩৫ ডলারে! ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের বেতনও বাকি কয়েক মাসের। অবস্থা এমনই নাজুক।

গত বছরের অক্টোবরের ঘটনা, বসন বালার জিগরা মুক্তির তোড়জোড় করছিলেন করণ জোহর ও তাঁর দল।

তত দিনে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে কানাঘুষা শুরু হয়ে গিয়েছিল, ছবিটি বক্স অফিসে ব্যবসা করবে তো! তবে নিজেদের শঙ্কা লুকিয়ে রেখে প্রচারে কমতি রাখেননি তাঁরা। দর্শকের সামনে এমন ভাবমূর্তি বজায় রেখেছিল যে জিগরা বক্স অফিসে হিট হতে চলেছে। ছবির পোস্টার ও ট্রেলার প্রকাশের পর যত প্রশংসা দেখা গিয়েছিল, এর অধিকাংশই ছিল প্রতিষ্ঠানটির স্বার্থসংশ্লিষ্টদের!

৭ অক্টোবর করণ জোহর ঘোষণা দেন, এখন থেকে আর ধর্ম প্রোডাকশনের ছবির প্রি-রিলিজ স্ক্রিনিং [মুক্তি-পূর্ববর্তী প্রদর্শনী] হবে না। যেটা মূলত চলচ্চিত্র সমালোচক ও সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্য হয়ে থাকে।

ওই ঘোষণার মধ্য দিয়ে করণ পরোক্ষভাবে বলে দিয়েছেন, ছবির প্রশংসার জন্য ইউটিউবার, ভ্লগার, সমালোচকদের তিনি আর টাকা দেবেন না। এটাই বক্স অফিসে কাল হয়ে দাঁড়ায় জিগরার সামনে।

আরেক নামজাদা প্রতিষ্ঠান যশরাজ ফিল্মসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আল জাজিরাকে বলেন, বলিউডের ৭০-৮০ শতাংশ রিভিউ [প্রতিক্রিয়া] আসে টাকার বিনিময়ে। অন্য যেকোনো ব্যবসার চেয়ে সিনেমা ব্যবসায় পেইড রিভিউর চর্চা বেশি।

বলিউডের অন্তত ২০ জন পেশাদার, সমালোচক, পিআর কর্মকর্তা ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারের কাছ থেকেও জানা গেছে, ছবির প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য বড় অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয়।

যাঁরা করেন না, ছবির সাফল্যের জন্য তাঁদের রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়। যদিও অধিকাংশই মনে করেন, রিভিউ বা প্রতিক্রিয়া ছবির সাফল্য নির্ধারণ করে না। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ছবির ভাবমূর্তি তৈরিতে ভূমিকা রাখে। এমনকি প্রথম সপ্তাহে ছবির ব্যবসা কিংবা ব্যর্থতার প্রায় ১৫ শতাংশ নির্ভর করে এসব পেইড প্রতিক্রিয়ার ওপর।

২০২৩ সালে মুক্তি পায় টি-সিরিজের বিশাল বাজেটের ছবি আদিপুরুষ। সস্তা সংলাপ ও আনাড়ি ভিএফএক্সের কারণে ছবিটি সাধারণ দর্শক ও স্বাধীন সমালোচকদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিল। অথচ কিছু গণমাধ্যম ও নামজাদা সমালোচক ছবিটির ভূয়সী প্রশংসা করে এবং ৫-এর মধ্যে ৪ রেটিংও দিয়েছিল! অর্থ ছাড়া এমন প্রশংসা এককথায় অসম্ভব। এমনও শোনা যায়, টুইটারে নেতিবাচক রিভিউ সরানোর জন্য অনেককে অর্থপ্রদানের প্রস্তাবও দিয়েছিল টি-সিরিজ।

এসব রিভিউর জন্য রয়েছে মেন্যু কার্ড! যেখানে প্রত্যেক সমালোচক, ইনফ্লুয়েন্সার ও গণমাধ্যমের প্রতিক্রিয়ার দাম উল্লেখ আছে। যার যেটা প্রয়োজন, সেটা বেছে নিতে পারেন। গ্রহণযোগ্যতার নিরিখে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একেকটি পোস্টের দাম ৫০ হাজার থেকে চার লাখ ৫০ হাজার রুপি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ তালিকায় রয়েছে ভারতের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া থেকে শুরু করে হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে, এনডিটিভি, ফিল্মফেয়ার, বলিউড হাঙ্গামা, পিঙ্কভিলা, সমালোচক তরণ আদর্শ থেকে রমেশ বালা, জোগিন্দর তুতেজাসহ অনেকেই। ব্যক্তিবিশেষে এসব লেনদেন হয়ে থাকে নগদ অর্থে। ছবি ঘিরে মানুষের আগ্রহ যত কম, ফি তত বেশি! প্রিভিউর জন্য ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে রিভিউয়ার, ইনফ্লুয়েন্সারদের বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়ে আসা হয়, অভিজাত হোটেলে থাকার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ব্যবহারের জন্য আইফোনসবই দিয়ে থাকেন প্রযোজকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্মাতা বলেন, এটা এখন পরিষ্কার, আপনি যদি তাদের অর্থ না দেন, তাহলে তারা আপনার ছবির বদনাম করবে। এটা স্পষ্ট চাঁদাবাজি।

বর্ষীয়ান বক্স অফিস বিশ্লেষক ও সমালোচক কমল নাহতা জানান, ছবির প্রচারে তিনি প্রতিটি পোস্টের জন্য ৬০ থেকে ৭০ হাজার রুপি নিয়ে থাকেন। একটি ছবির জন্য কমবেশি ১৫টি পোস্টের জন্য চুক্তি হয়। সে ক্ষেত্রে তাঁর ফি দাঁড়ায় পাঁচ থেকে সাত লাখ রুপি। তবে তাঁর দাবি, অর্থের বিনিময়ে তিনি শুধু প্রচারণা করেন। এর বাইরে যেসব পোস্ট দেন, সেগুলো সততার সঙ্গেই দেন। তাঁর ভাষ্যে, আপনি আমাকে প্রচারণার জন্য অনেক টাকা দিতে পারেন, আমি প্রচারণা করব। তবে ছবি যদি ভালো না হয়, আমি সেটাও বলব।

এই চাঁদাবাজি ফাঁদ থেকে বের হতেই জিগরা মুক্তির আগে প্রিভিউ করেনি ধর্ম প্রোডাকশন। তবে প্রথম সারির গণমাধ্যম ও ফিল্ম ম্যাগাজিনগুলোতে ঠিকই আর্থিক চুক্তি বলবৎ রেখেছিল। শুধু তা-ই নয়, সিনেমা হলের টিকিটও অগ্রিম বুকিং করেছিল ধর্ম। যাতে মানুষ মনে করে, জিগরা দেখতে দর্শকের সমাগম হচ্ছে। তাতেও রক্ষা মেলেনি। শুধু বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ তুলতে পেরেছিল বক্স অফিস থেকে। কেউ কেউ বলেন, ছবির দুর্বলতার কারণেই এই ব্যর্থতা। বিপরীতে আরেক পক্ষের মতে, জিগরা বুঝিয়ে দিয়েছে, বলিউড এখন তার নিজের তৈরি করা দানবের হাতে বন্দি! ভুয়া প্রশংসার জন্য শুধু বলিউড ভুখা, এমন নয়। অন্তর্জালের এই সময়ে গোটা বিশ্বের শোবিজ জগতেই এই চর্চা চলছে। এমনকি বাংলাদেশের শোবিজেও পেইড রিভিউ এখন পোক্ত জায়গা করে নিয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছে বেশ।

এই রিভিউ-বাণিজ্য বন্ধের জন্য ধীরে ধীরে সরব হচ্ছেন অনেকে। গত বছর তামিলনাড়ুর কয়েকজন প্রযোজক আদালতে দাবি জানিয়েছিলেন, যেন ছবি মুক্তির প্রথম তিন দিনে কোনো রিভিউ না দেওয়া হয়। যদিও আদালত সে দাবি আমলে নেয়নি। বলিউডে প্রথম পদক্ষেপটা নিলেন করণ জোহর। যদিও অনেকের শঙ্কা, ধর্ম প্রোডাকশন এই সিদ্ধান্তে অটল থাকবে কি না।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

শুভ জন্মদিন

শেয়ার
শুভ জন্মদিন
শবনম ফারিয়া

সপ্তাহে যাঁদের জন্মদিন

[১৩-১৯ মার্চ]

 

আকরাম খান [১৩ মার্চ]

শবনম ফারিয়া, প্রাণ রায়,

সামিরা আব্বাসী [১৪ মার্চ]

আলী রাজ, সুজাত শিমুল [১৫ মার্চ]

 সুমিত সেনগুপ্ত [১৬ মার্চ]

নরেশ ভুঁইয়া, সাদিয়া আয়মান,

নিপা রিয়েলি [১৭ মার্চ]

নকীব খান, পল্লব চক্রবর্তী,

ডায়না [১৮ মার্চ]

 

মন্তব্য

আমির খান

শেয়ার
আমির খান

তাঁর ৬০তম জন্মদিন আগামীকাল। বিশেষ এই মাইলফলকের এক সপ্তাহ আগে থেকেই চর্চায় বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট। জাভেদ আখতারের সঙ্গে তাঁর ফিল্মি আড্ডা রীতিমতো ভাইরাল। এই জন্মদিন [১৪ মার্চ] থেকেই ভারতের প্রেক্ষাগৃহে নতুন করে মুক্তি পাবে আমির অভিনীত ৫ ছবি—‘লগান, দিল চাহতা হ্যায়, রঙ দে বাসন্তী, তারে জমিন পরপিকে

মন্তব্য

তাঁদেরও আছে ঈদ

    চলচ্চিত্র সমিতিগুলোর তালিকা অনুযায়ী বেকার শিল্পী-কলাকুশলীর সংখ্যা কয়েক হাজার। ঈদ সামনে রেখে তাঁদের অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন এফডিসিতে। যদি পাওয়া যায় কাজ বা আর্থিক সাহায্য—পরিবার নিয়ে ঈদটা তো অন্তত করতে হবে! লিখেছেন সুদীপ কুমার দীপ
শেয়ার
তাঁদেরও আছে ঈদ
এফডিসিতে ক্যান্টিনের পাশের বেঞ্চে বসে আছেন জুনিয়র শিল্পীরা ছবি : কালের কণ্ঠ

বিকেলবেলা। এফডিসির গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখা হলো সহকারী পরিচালক মিরাজের সঙ্গে। সর্বশেষ কাজ করেছেন মালেক আফসারীর অন্তর জ্বালায়। এরপর কত বছর পার হয়ে গেল, হাতে আসেনি নতুন ছবি।

চলচ্চিত্র ছাড়া আয়ের আর কোনো পথ নেই তাঁর। রমজান চলছে। সামনেই ঈদ। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।
চেহারাও বিমর্ষ। অনেক প্রযোজকের কাছে বকেয়া টাকা পাই। কেউ দিতে চাচ্ছে না। পকেটের অবস্থা এমন, মোবাইলের খরচ চালানোরও উপায় নেই’—বললেন মিরাজ।

চার নম্বর ফ্লোরে চোখ পড়ল মধ্যবয়সী নারীর দিকে। একটি প্রাডো গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। একটু পর গাড়িতে ওঠার জন্য এগিয়ে এলেন স্যুট পরা এক ব্যক্তি। মহিলা তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। কাছে যেতেই বিষয়টি স্পষ্ট হলো।

তিনি একজন প্রযোজক। তাঁর কাছে ইফতারির আবদার করেছেন মহিলা। পকেট থেকে পাঁচ শত টাকার একটি নোট বের করে দিলেন প্রযোজক। দারুণ খুশি হলেন মহিলা। মিরাজ সেটা দেখিয়ে বললেন, ওরা জুনিয়র শিল্পী। লোক-লজ্জা ভুলে হাত পাততে পারে। কিন্তু আমরা? প্রায় এক শ ছবির সহকারী আমি। রুবেল, মান্না থেকে শুরু করে শাকিব খানসহ সময়ের সব তারকার সঙ্গে কাজ করেছি। আমার নির্দেশে তাঁরা শট দিয়েছেন। এখন আমি তাঁদের কাছে গিয়ে কী করে হাত পাতি!

ক্যান্টিনে কথা হলো জুনিয়র শিল্পী রিমার সঙ্গে। ডিভোর্সি এই নারীর দিনাজপুরে এক মেয়ে আছে, কলেজে পড়ে। ঈদে নতুন জামা নেবে বলে এরই মধ্যে দুই দিন ফোন করেছে। নতুন কোনো ছবি হচ্ছে না। পুরনো যে পরিচালকদের কাজ করেছি তাঁদের ওপর ভরসা করেই এফডিসিতে এসেছি। ভাবছি কিছু টাকা দেওয়ার অনুরোধ করব। পরের কোনো ছবিতে হয়তো কাজ করে শোধ করে দেব’—বললেন রিমা।

শুধু রিমা নয়, দুই শতাধিক ছবির অভিনেতা কমল পাটেকারও বলেন একই কথা, এফডিসিতে এলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। আমি নিজেও সচ্ছল নই। অভিনয়ের বাইরে কিছু করি না। সহ-অভিনেতারা যখন তাঁদের অসহায়ত্বের কথা বলেন, পকেটে যা থাকে দিয়ে দিই। বুঝি, একটা মানুষ কতটা অসহায় হলে আরেকজনের কাছে হাত পাতে।

জনপ্রিয় কমেডি অভিনেতা চিকন আলী। ইউটিউবে চ্যানেল আছে তাঁর। ক্যামেরা আর কয়েকজন ছেলে-মেয়ে নিয়ে তৈরি করেছেন টিম। শর্ট ফিল্ম, কমেডি নাটিকা তৈরি করেন। চিকন আলীকে ঘিরে ধরেন অভিনেতা মাসুদ। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। তাঁকে কাস্ট করতেই হবে। দুই বছর কোনো কাজ করেননি। আগে বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন চিকনের সঙ্গে। আর তাই চিকনের চ্যানেলে কাজ করার অধিকার তাঁর আছে। চিকন বলেন, মাসুদ ভাইয়ের মতো অনেকেই আসেন আমার কাছে। এই রোজায় চাপটা বেশি। কাকে রেখে কাকে নেব! তা ছাড়া ইউটিউবে কী এমন টাকা পাওয়া যায় যে ওদের দেব! খুব লজ্জায় পড়ে যাই। ওদের ধারণা, আমি সিনেমা করছি না অথচ পকেটে টাকা আছে। তার মানে ইউটিউবে দারুণ ব্যবসা। সত্যি বলতে, আমি নিজেও কিন্তু কাজ খুঁজছি।

শিল্পী সমিতির রেজিস্ট্রার জাকির। দীর্ঘদিন ধরে এই দায়িত্ব পালন করছেন। জানালেন, দিন দিনই অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। রোজার প্রথমদিন থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে শিল্পীরা আসেন। বসে থাকেন চুপচাপ, কোনো কাজ নেই। জাকিরের মতে বেকার শিল্পী কয়েক শ। শিল্পী সমিতির তহবিল থেকে প্রতিবছর সাহায্য করা হয় তাঁদের। তবে সেটা দিয়ে কী আর ঈদ হয়? এঁদের অবস্থার উন্নতি করতে গেলে দরকার কাজ। জাকিরের মতো একই কথা বললেন দুই শতাধিক ছবির অভিনেতা বাদল, রাস্তায় বের হলেই লোকে চিনে ফেলে। অন্য কোনো কাজও যে করব তার উপায় নেই। মুখিয়ে থাকতে হয় শুটিংয়ের জন্য। কিন্তু নতুন ছবি শুরুই হয় না। এর মধ্যে যখন ঈদ বা অন্য কোনো উৎসব আসে, দিকহারা হয়ে পড়ার মতো অবস্থা হয়। আমার মতো অনেকেই আছেন, যাঁরা না পারছি কারো কাছে হাত পাততে, আবার না পারছি পরিবারকে খুশি করতে।

মন্তব্য

দেশ-বিদেশের সেলুলয়েডে মুক্তিযুদ্ধ

    মার্চ মাসেই মুক্তিযুদ্ধে নেমেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশে নির্মিত হয়েছে বেশ কিছু ছবি। শোবিজ তারকারা বলেছেন তাঁদের প্রিয় মুক্তিযুদ্ধের ছবির কথা, বলেছেন বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ছবি নিয়েও—
শেয়ার
দেশ-বিদেশের সেলুলয়েডে মুক্তিযুদ্ধ
‘আগুনের পরশমণি’ ছবির একটি দৃশ্য

ওরা ১১ জন ও ব্ল্যাক অ্যাঞ্জেল

সোহেল রানা

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের ভালো সিনেমা হয়নি। বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের ছবি ওরা ১১ জনর প্রযোজক হিসেবে আমি গর্ববোধ করতে পারি। বলা যেতে পারে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ওরা ১১ জন মাইলফলক। তবে এই সিনেমাকে আমি ডকুমেন্টারি ফিল্ম বলব, ফিচার ফিল্ম হিসেবে এটাকে ভালো ছবিই বলব না।

কারণ তখন আমরা নতুন ছিলাম। আমাদের চিন্তা-চেতনায় যেটা আসছে, সেভাবেই আমরা ছবি তোলার চেষ্টা করেছি। ছবির জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা দিয়েছেন। এখানে যে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোও রিয়েল।
সিনেমায় ওরা ১১ জন-এর মধ্যে ১০ জনই সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা। পৃথিবীর আর কোথাও এমন হয়েছে বলে জানা নেই। মুক্তিযুদ্ধের ছায়া অবলম্বনে অনেক সিনেমা হতে পারে। কিন্তু টোটাল যুদ্ধের সিনেমা তৈরি সম্ভব নয় বলেই মনে করি।

বাইরের দেশের ব্ল্যাক অ্যাঞ্জেল [১৯৪৬], দ্য ক্রেনস আর ফ্লাইং’—এগুলোও মনে রাখার মতো ছবি।

ওরা ১১ জন ও দ্য হরনেটস নেস্ট

আফজাল হোসেন

মুক্তিযুদ্ধের যত সিনেমাই নির্মাণ হয়ে থাকুক না কেন, এখন পর্যন্ত আমার ভালো লাগে ওরা ১১ জনঅরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষীও ভালো লাগে।

বিদেশি সিনেমার মধ্যে দ্য হরনেটস নেস্ট [২০১৪] সিনেমাটি বেশ ভালো লাগে। আফগান যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত ছবিটিতে যুদ্ধের আবহাওয়াটা অনেক বেশি উপস্থিত।

দুজন সাংবাদিককে নিয়ে গল্পটা। তাদের যুদ্ধে উপস্থিতি।

 

দ্য ক্রেনস আর ফ্লাইং ও

ওরা ১১ জন

তৌকীর আহমেদ

দ্য ক্রেনস আর ফ্লাইং [১৯৫৭], ছোটবেলায় দেখেছি এখনো ভুলিনি। রাশিয়ান নির্মাতা মিখাইল কালাতোজোভের একটা মাস্টারপিস এই ছবি। জীবন এবং জীবনের যে উদযাপন তা এখানে আছে। বেঁচে থাকার আকুতি, বিয়োগের ব্যথাসব মিলিয়েই অসাধারণ চলচ্চিত্র। যে একবার দেখবে সে আর ভুলবে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সিনেমার কথা বললে ওরা ১১ জনর [১৯৭২] কথা বলব। খুব সুন্দর ছবি। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আজ থেকে বিশ বছর পর হয়তো স্বাধীনতা দেখেছে এমন কেউ থাকবে না, তখন এই সব শিল্প-সাহিত্য, নাটক-সিনেমাই মুক্তিযুদ্ধকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেবে।

 

আগুনের পরশমণি ও

লাইফ ইজ বিউটিফুল

দেশ-বিদেশের সেলুলয়েডে মুক্তিযুদ্ধজয়া আহসান

প্রিয় বললে তো আমার অভিনীত গেরিলার [২০১১] কথা বলতেই হয়। তবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এ পর্যন্ত যত ছবি হয়েছে তার মধ্যে আগুনের পরশমণিকেই [১৯৯৪] শ্রেষ্ঠ বলব। কারণ এটা মানবিক এবং সুনির্মিত ছবি। দর্শককে যুদ্ধের খুব কাছাকাছি নিয়ে যেতে পেরেছে ছবিটা। যুদ্ধ যারা দেখেনি তারা ছবিটা দেখে ওই সময়টা অনুধাবন করতে পারবে। খুব বেশি আড়ম্বর নেই। গল্পের মূল জায়গাটা আমাকে খুব টাচ করে। মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষ যেভাবে এফেক্টেড হয়েছে, শুধু অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ নয়, মানসিক-মানবিক যুদ্ধও চলেছেসেটা ফুটে উঠেছে। আগুনের পরশমণি ভেরি সাকসেসফুল সিনেমা।

বিদেশি যুদ্ধের প্রিয় ছবির তালিকা অনেক বড়। ইতালিয়ান ছবি লাইফ ইজ বিউটিফুলর [১৯৯৭] কথা আলাদা করে বলতে চাই। আমার প্রিয় পরিচালক ও প্রিয় অভিনেতার [রবার্তো বেনিনি] ছবি। ভীষণ মানবিক গল্পের ছবি, প্রেম ও যুদ্ধের গল্প। যুদ্ধকে একটু অন্যভাবে উপস্থাপনের জন্য ছবিটার আবেদন কখনো ফুরাবে না। ছবিটা যতবার দেখি ততবার কাঁদি। কষ্ট আর দুঃখ পেয়েও যে মানুষ বিনোদিত হয়, এই ছবি তার প্রমাণ।

 

আগুনের পরশমণি ও

টার্টলস ক্যান ফ্লাই

গিয়াসউদ্দিন সেলিম

আগুনের পরশমণিকেই এগিয়ে রাখব। বাংলাদেশের যুদ্ধের প্লটটা কিন্তু ভিন্ন ছিল। একাত্তরের প্লটটাকে তুলে এনে সিনেমায় ফুটিয়ে
তুলতে অনেক বাজেটের দরকার। ছবিটায় যুদ্ধ অত না দেখালেও যুদ্ধের সময় মানুষের মনের অবস্থা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন পরিচালক। সাধারণ দর্শকের মনে গেঁথে আছে ছবিটা।
অনীল বাগচির একদিন
ভালো ছবি।

ইরাকি ছবি টার্টলস ক্যান ফ্লাই [২০০৪] আমার প্রিয় যুদ্ধের ছবি। এখানেও সম্মুখযুদ্ধ নয়, যুদ্ধের ইমপ্যাক্ট দেখানো হয়েছে। অপূর্ব মেকিং। যুদ্ধময় ইরাকের পটভূমিকে ঘিরে। ইরাকের মানুষ তখন যুদ্ধের খবরের জন্য পাগল। এমন ছোট্ট এক গ্রামে খবরের একমাত্র ভরসা ১৪ বছরের এক কিশোর। তার নাম স্যাটেলাইট। গ্রামের শিশু-কিশোরদের নিয়ে খোলা মাঠে পুঁতে রাখা মাইন অপসারণের কাজও করে। এই মাইন বিক্রি করে পয়সাও উপার্জন করে সে। সবগুলো চরিত্র গল্পের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে জড়িয়ে আছে। সিনেমাটা দেখলে মনে হয় ওই গল্পের মধ্যে আমিও কোনো না কোনো চরিত্র। যুদ্ধ কতটা অমানবিক তা দৃশ্যে দৃশ্যে ফিল করায়।

 

অনুলিখন : ইসমাত মুমু

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ