মিডজার্নির নতুন মডেল ভি৭

  • এ মাসেই প্রকাশিত হয়েছে ছবি তৈরির এআই মিডজার্নির সপ্তম সংস্করণ। বাস্তবসম্মত ছবি তৈরির জন্য একই সঙ্গে নন্দিত এবং নিন্দিত এই সেবা। নতুন সংস্করণে থাকছে বেশ কিছু নতুন ফিচার। বিস্তারিত জানাচ্ছেন টি এইচ মাহির
শেয়ার
মিডজার্নির নতুন মডেল ভি৭
ত্বকের টেক্সচার আরো উন্নত করা হয়েছে নতুন এআই মডেলে

যুক্তরাষ্ট্রের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিডজার্নি তাদের ছবি তৈরির এআইয়ের নতুন সংস্করণ প্রকাশ করেছে। এবারের মডেলটির নাম ভার্সন ৭ বা ভি৭। প্রায় এক বছর পর এলো নতুন এই মডেল। এর পরীক্ষামূলক আলফা সংস্করণটি সব ব্যবহারকারীর জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে ৩ এপ্রিল।

২০২২ সালে চালু হওয়ার পরপরই মিডজার্নি এআই ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। সহজেই প্রম্পট করে চমৎকার মানের বাস্তবসম্মত ছবি তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল এই সেবা। এখন প্রায় প্রতিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই চলছে ওপেন এআইয়ের চ্যাটজিপিটিসহ অন্যান্য এআই সেবা দিয়ে জাপানের স্বনামধন্য এনিমেশন স্টুডিও জিবলির আদলে নিজের ছবি এডিট করার হিড়িক। এবার যেন অনেকটা সেই ট্রেন্ডকে কাজে লাগতে মিডজার্নি তাদের নতুন মডেল প্রকাশ করেছে।
যদিও এখন পর্যন্ত জিবলি স্টাইল এডিটে পুরোপুরি পারদর্শী নয় মিডজার্নি।

মিডজার্নি এআই ব্যবহার করে ছবি তৈরি করতে চাইলে জটিল প্রম্পটের প্রয়োজন হয় না। কথোপকথনের ভাষায় বর্ণনা দিলেই তৈরি করে ছবি। এখন পর্যন্ত অনলাইন যোগযোগ প্ল্যাটফরম  ডিসকর্ডের মিডজার্নি বটের সঙ্গে কথোপকথন চালিয়ে এটি ব্যবহার করা যায়।

ওয়েবভিত্তিক ইন্টারফেস তৈরির কাজ চলছে, তবে এখনো উন্মোচিত হয়নি। প্রকাশের পর এখন পর্যন্ত ছয়টি আপডেট প্রকাশ করেছে মিডজার্নি। বর্তমান সংস্করণটি যথেষ্ট মানসম্মত ছবি তৈরি করতে পারে। এটি ব্যবহৃত হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টার, ফটোকার্ড ও ডিজিটাল চিত্রশিল্প তৈরিসহ আরো বিভিন্ন ধরনের কাজে। তবে এখনকার মডেলেও আছে বেশ কিছু অসংগতি।
সেসব ত্রুটির সমাধান এবং আরো উন্নত মানের চিত্র তৈরি করতেই প্রকাশিত হয়েছে মিডজার্নি-এর ২০২৫ সংস্করণ ভি৭

নতুন মডেলের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন, ছবিতে জেনারেট করা মানুষের হাত আরো নিখুঁত করা। বর্তমানে এআই দিয়ে তৈরি ছবির প্রধান সমস্যা হাতে ভুল সংখ্যার বা অস্বাভাবিক আকৃতির আঙুল চিত্রায়িত করা। কখনো আঙুল বেশি বা কম হয়, আবার কখনো দেখা যায় মানুষের একাধিক হাত জেনারেট করা হয়েছে। পায়ের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা আছে। ভি৭ সংস্করণে হাত এবং আঙুল আরো নিখুঁতভাবে জেনারেট করা হবে। এ ছাড়াও হাতের বলিরেখা, ত্বকের গঠন আরো মানসম্মতভাবে জেনারেট করবে মিডজার্নি। কাচ ও সিরামিকের বস্তুর ছবি তৈরিতেও আরো বাস্তবসম্মত টেক্সচার দিতে পারবে এটি।

ব্যবহারকারীর প্রম্পট আরো নিখুঁতভাবে বুঝতে পারবে মিডজার্নি ভি৭। ড্রাফট মোড নামের আরেকটি নতুন ফিচারও যোগ করা হয়েছে। উচ্চ রেজল্যুশনের ছবি তৈরির আগে যাচাই করার জন্য কম রেজল্যুশনের ছবি তৈরিতে এটি ব্যবহৃত হবে। ড্রাফট মোডে ছবি জেনারেট করা যাবে ১০ গুণ বেশি গতিতে। ড্রাফট মোডের পাশাপাশি থাকছে টার্বো ও রিলাক্স নামে আরো দুটি মোড। টার্বো মোডে দ্রুত এবং কম সময়ে ছবি তৈরি করা যাবে। কিন্তু এতে খরচ হবে বাড়তি ক্রেডিট। রিলাক্স মোডে ক্রেডিট খরচ হবে কম, তবে তার গতি বেশ ধীর। নতুন মডেলে তৈরি করা যাবে ব্যক্তিগত প্রোফাইল। ব্যবহারকারীদের ২০০টি ছবি যাচাই করে নিজস্ব প্রোফাইল তৈরি করে দেবে মিডজার্নি। প্রোফাইল নিজের মনের মতো সাজাতে পারবে ব্যবহারকারীরা।

ভবিষ্যতে আরো বেশ কিছু ফিচার যুক্ত করার কথা ভাবছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আগামী দুই মাসের মধ্যে আরো কয়েকটি ফিচার যুক্ত হতে পারে। এর মধ্যে আছে ইমেজ আপস্কেলিং এবং রিটেক্সচারিং ফিচার। স্থিরচিত্রের বাইরে থ্রিডি অবজেক্ট জেনারেটর ও ভিডিও তৈরি করবে মিডজার্নি, তবে সেটি সময়সাপেক্ষ। সিইও ডেভিড হোলজ বলেছেন, ব্যবহারকারীদের প্রম্পট নিয়ে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন। যাতে ব্যবহারকারীদের নির্দেশনা বুঝতে মিডজার্নি এআই ভুল না করে।

কপিরাইট ভঙ্গের দায়ে মিডজার্নির বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা করেছে কপিরাইটের মালিকরা। কপিরাইটযুক্ত কাজের ওপর তাদের এআইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া ন্যায্য কি না তা নিয়ে চলছে বিতর্ক। শুধু তাই নয়, মিডজার্নি চাইলে শিল্পীদের স্বাক্ষরও জেনারেট করে। একে কপিরাইট ভঙ্গের পরিষ্কার নিদর্শন বলছেন শিল্পীরা।

নতুন মডেল আসার পরও চ্যাটজিপিটি বা ডাল-ই-এর মতো বিপুল পরিমাণ ব্যবহারকারী পাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে যাচ্ছে। সময়ই বলে দেবে মিডজার্নির নতুন সংস্করণ কতটা জনপ্রিয়তা পায়।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ফিরে এলো ‘ডায়ার উলফ’

    এক অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে ডালাসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কলোসাল বায়োসায়েন্স। প্রায় ১২ হাজার ৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত প্রাণী ডায়ার উলফকে ফিরিয়ে এনেছে তারা। বিজ্ঞানের এক নতুন মাইলফলক স্থাপন বলা হচ্ছে একে। বিলুপ্ত প্রাণীটির ফেরার গল্প শোনাচ্ছেন সাদিয়া আফরিন হীরা
শেয়ার
ফিরে এলো ‘ডায়ার উলফ’
দুই ডায়ার উলফ শাবক রোমুলাস ও রেমাস। ছবি : সংগৃহীত

ডায়ার উলফ

হিমযুগে দাপিয়ে বেড়ানো এক শিকারি প্রাণী ডায়ার উলফ। শক্তিশালী এই প্রাণীটি ছিল মাংসাশী ও স্তন্যপায়ী প্রজাতির। ধারণা করা হয়, ১২ হাজার ৫০০ বছর আগে এটি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। শুরুতে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, ডায়ার উলফ হয়তো আধুনিক ধূসর নেকড়ের পূর্বপুরুষ।

তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় এর জিন পরীক্ষা করে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। ডায়ার উলফ ও ধূসর নেকড়ে একই গোষ্ঠীর সদস্য নয়, বরং তারা বিবর্তনের দুটি স্বতন্ত্র শাখা। দেহের আকৃতি ও শক্তিতে বর্তমান ধূসর নেকড়েকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল ডায়ার উলফ। শক্তিশালী চোয়াল এবং মজবুত দেহ গঠন এদের বরফ যুগের অন্যতম ভয়াল শিকারিতে পরিণত করেছিল।
জলবায়ু পরিবর্তন, শিকারের অভাব ও মানবপ্রজাতির আগমন ছিল ডায়ার উলফের বিলুপ্তির অন্যতম কারণ।

 

পরীক্ষাগারে প্রাচীন ডিএনএ

উত্তর আমেরিকায় পাওয়া গেছে ডায়ার উলফের ১৩ হাজার বছরের পুরনো একটি দাঁত এবং ৭২ হাজার বছরের পুরনো এক খুলি। কলোসাল বায়োসায়েন্সের বিজ্ঞানীরা এ থেকে প্রাচীন ডিএনএ সংগ্রহ করেছেন। দুটি নমুনা থেকে গবেষকরা পর্যাপ্ত ডিএনএ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন।

তৈরি হয় দুটি ডায়ার ওলফের পূর্ণাঙ্গ জেনোম। এখান থেকেই ডায়ার উলফের পুরো জেনোমের নকশা সফলভাবে সিকোয়েন্স করেছেন গবেষকরা।

জেনোমটি কইওটি, শিয়াল, ঢোলে কুকুর এবং অন্যান্য নেকড়ের প্রজাতির সঙ্গে তুলনা করা হলেও, ধূসর নেকড়ের সঙ্গে ডিএনএ ৯৯.৫ শতাংশ মিলে যায়। এ থেকেই গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন যে ডায়ার উলফের বর্তমানে জীবিত সবচেয়ে কাছের আত্মীয় ধূসর নেকড়ে। 

 

গ্রে উলফের জিন সম্পাদনা

পুনরুদ্ধার করা ডায়ার উলফের জেনোম তথ্যকে ব্যবহার করে ধূসর নেকড়ের জেনোমে মোট ২০টি পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেন বিজ্ঞানীরা।

এই পরিবর্তনগুলোর মধ্যে প্রথম পাঁচটি ছিল গ্রে উলফের পশমের রং ও গঠন পরিবর্তনের লক্ষ্যে করা। বাকি ১৫টি পরিবর্তন আনা হয় সরাসরি ডায়ার উলফের ডিএনএ থেকে পাওয়া জিনোম গ্রে উলফে যুক্ত করার মাধ্যমে। এতে প্রাণীটির দেহের আকার, পেশি গঠন এবং কান-এর আকৃতি গঠন প্রণালী বদলে যায়।

যুগান্তকারী এই কাজে ব্যবহৃত হয়েছে অত্যাধুনিক সিআরআইএসপিআর-ক্যাস ৯ প্রযুক্তির যন্ত্র, যাকে প্রচলিত ভাষায় ক্রিসপার বলা হয়। ধূসর নেকড়ের নির্দিষ্ট ডিএনএ অংশ কেটে সেখানে ডায়ার উলফের অনুরূপ অংশ স্থাপনের কাজটি ক্রিসপারের মাধ্যমেই করা হয়েছে। যার ফলাফল, পৃথিবীর বুকে আবার ডায়ার উলফের আগমন। একে ক্লোনিং বলা হচ্ছে না। কেননা, পুরো ডিএনএ হুবহু ব্যবহার করে নতুন প্রাণী তৈরি করা হয়নি। বরং একে বলা যায় জেনেটিক হাইব্রিড। ধূসর নেকড়ের ডিএনএর ওপর ডায়ার উলফের কিছু বৈশিষ্ট্য সংযোজনের মাধ্যমে তৈরি নতুন একটি প্রজাতি।

কলোসাল বায়োসায়েন্সেসের প্রধান নির্বাহী বেন ল্যাম বলেছেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য শুধু পুরনো প্রজাতির পুনরুজ্জীবন করাই নয়, বরং আধুনিক প্রাণী জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার করার পথে একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করা।

রোমুলাস, রেমাস ও খালেসি

এখন পর্যন্ত মোট তিনটি ডায়ার উলফ শাবকের জন্ম হয়েছে। রোমান উপকথার দুই নেকড়ে, রমুলাস ও রেমাসের নামে ছেলে শাবক দুটির নামকরণ করা হয়েছে। মেয়ে শাবকটির নামকরণ হয়েছে গেম অব থ্রোনসের চরিত্র খালেসির নামে। কয়েকটি গৃহপালিত কুকুরকে সারোগেট মা হিসেবে ব্যবহার করে পৃথক জন্মের মাধ্যমে ২০২৪-এর ১ অক্টোবর ভূমিষ্ঠ হয় রোমুলাস ও রেমাস। এর পর ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ সালে জন্ম নেয় তাদের বোন খালেসি।

গর্ভাবস্থার সময় মা কুকুরদের রাখা হয়েছিল কলোসালের নিজস্ব প্রাণী পরিচর্যাকেন্দ্রে। জন্মের সময় যাতে কোনো জটিলতা না হয়, তাই পূর্বপরিকল্পিতভাবেই সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে প্রতিটি শাবক। এখনই তারা প্রায় চার ফুট লম্বা এবং ওজন ৮০ পাউন্ড। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর প্রাণীগুলো ছয় ফুট লম্বা ও ১৫০ পাউন্ড পর্যন্ত ওজনের হতে পারে। এরই মধ্যে রোমুলাস, রেমাস এবং খালিসির মধ্যে আদিম বন্য আচরণ দেখা যাচ্ছে। মাত্র দুই সপ্তাহ বয়সেই তারা নেকড়ের মার্কামারা ডাক (হাউলিং) শুরু করেছিল। লুকিয়ে শিকার করার চেষ্টা করত শুরু থেকেই। পাতা বা যেকোনো নড়াচড়া করা জিনিসের পেছনে ছুটত।

শাবক তিনটির জন্ম এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানী ও সাধারণ জনমনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তবে অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, আসল ডায়ার উলফের সঙ্গে বর্তমান প্রাণীগুলোর উল্লেখযোগ্য তফাত আছে। ২০২১ সাল থেকে কলোসাল বায়োসায়েন্সেস বিলুপ্ত প্রাণী পুনঃজীবিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।  প্রতিষ্ঠাতা ড. শাপিরো বলেন, আমরা মর্ফোলজিক্যাল স্পিসিজ কনসেপ্ট ব্যবহার করছি, অর্থাৎ যদি এই প্রাণীটি যদি বিলুপ্ত কোনো প্রাণীর মতো দেখতে হয়, তাহলে একে সেই প্রাণী হিসেবেই গণ্য করা হবে। ম্যামথ, ডোডো এবং তাসমানিয়ান টাইগারের মতো অন্যান্য বিলুপ্ত প্রাণী পুনঃজীবিত করার জন্যও কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

এআই কনটেন্টের হতশ্রী চিত্র নেপথ্যে কী?

    ছবি, ভিডিও ও লেখা তৈরির এআই সেবা আমূলে বদলে দিয়েছে ইন্টারনেটকে। মেধা ও শ্রম খাটিয়ে মানসম্মত কনটেন্ট নয়, এসব নির্মাতারা বেছে নিচ্ছেন ব্রুট ফোর্স সিস্টেম। এআই কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়ত এমন সব মানহীন কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে, যেগুলো ভাইরাল হয়ই। এতে নির্মাতাদের আয় হচ্ছে ঠিকই, তবে বঞ্চিত হচ্ছে দর্শক ও পাঠক। এআই কনটেন্টের বর্তমান হতশ্রী চিত্র তুলে ধরেছেন এস এম তাহমিদ
শেয়ার
এআই কনটেন্টের হতশ্রী চিত্র নেপথ্যে কী?

ইন্টারনেট ও অ্যালগরিদম

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফরম অথবা রেডিটের মতো লিংক শেয়ার ও পোস্ট করার ফোরামপ্রতিটি সেবাই ব্যবহারকারীদের প্রাসঙ্গিক পোস্ট দেখাতে নিজস্ব অ্যালগরিদম ব্যবহার করে। অন্যরা কোন কনটেন্ট বা পোস্ট বেশি দেখছে ও শেয়ার করছেতার ওপর ভিত্তি করে সেটিকে নিজস্ব স্কোর দেয় এসব অ্যালগরিদম। এই স্কোর নির্ধারণ করে, পোস্টটি কোন ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছে যাবে।

সার্চ ইঞ্জিন, যেমন গুগল বা ডাকডাকগো, নিজস্ব অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ওয়েবসাইট স্কোরিং বা র‌্যাংকিং করে থাকে।

ব্যবহারকারীরা কিছু সার্চ করলে সেটার কি-ওয়ার্ড মিলিয়ে ওয়েবসাইট বের করে দেয় সার্চ ইঞ্জিন। কিন্তু ফলাফল তালিকার শীর্ষে থাকবে কোন ওয়েবসাইট, সেটা নির্ধারিত হয় কি-ওয়ার্ডের পাশাপাশি অন্যান্য আরো কিছু জিনিস বিবেচনা করে দেওয়া স্কোরের ওপর ভিত্তি করে।

অ্যালগরিদমের স্কোরিং সিস্টেম বেশ জটিল, কি-ওয়ার্ড বা প্রাসঙ্গিকতার বাইরে আরো অনেক ক্ষেত্রের ওপরই নির্ভর করে পোস্ট বা ওয়েবসাইটের র‌্যাংকিং। এ প্রক্রিয়া কিভাবে কাজ করে তা সরাসরি জানার উপায় নেই।

পাশাপাশি প্রতিনিয়ত এসব অ্যালগরিদমে পরিবর্তন করা হয়। এতে করে অ্যালগরিদম ফাঁকি দিয়ে ভাইরাল হওয়ার সুযোগ থাকে না।

ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট নির্মাতারা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) আর কনটেন্টের ট্রেন্ডের ওপর রীতিমতো গবেষণা চালান। এসইও, কি-ওয়ার্ড এবং ট্রেন্ড বিশেষজ্ঞরা কাজ করেন প্রতিটি মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে।

সফল কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে চাইলে অ্যালগরিদমের হালচাল বোঝা খুব জরুরি। এতকিছুর পরও একটা সময়ে গিয়ে অনেক নির্মাতা আর ট্রেন্ড ধরতে পারেন না, ফলে শেষ হয়ে যায় তাঁর ক্যারিয়ার।

অন্যদিকে অতি সূক্ষ্মভাবে প্রত্যেক পাঠক ও দর্শকের মনোভাব বদলে দেয় অ্যালগরিদম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একই মতাদর্শের পোস্ট এবং কমেন্ট ব্যবহারকারীদের সামনে তুলে ধরে, সার্চ ইঞ্জিন ভিন্ন মতাদর্শী ওয়েবসাইট ও সংবাদমাধ্যমের পোস্ট র‌্যাংকিংয়ে নিচে নামিয়ে দেয়। নতুন ওয়েবসাইট বা কনটেন্ট চ্যানেল তৈরি করার সময় তাই নির্মাতাদের চেষ্টা করতে হয় র‌্যাংকিংয়ে ওপরের দিকে থাকা সাইট বা চ্যানেলের আদলে নিজেদেরটাও সাজাতে।

নইলে পাঠক বা দর্শক টানা একপ্রকার অসম্ভব।

তাই এত দিন পর্যন্ত অনলাইনে কনটেন্ট নিয়ে কাজ করার মূল মন্ত্র ছিল ট্রেন্ড ধরে সে অনুযায়ী কনটেন্ট তৈরি করা। এর পরও জনপ্রিয়তা পাওয়া ছিল অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার। ভাইরাল হয়ে বাজিমাত করার সুযোগ পেতেন খুব কম নির্মাতা।

 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আগমন

লিখিত কনটেন্ট বা মাল্টিমিডিয়াদুটিই তৈরিতে বেশ অনেকটা সময়ের প্রয়োজন। বিষয় নির্ধারণ, তথ্য সংগ্রহ, লেখার ধরন বা স্ক্রিপ্ট ঠিক করা এবং চূড়ান্ত সম্পাদনাসবটা মিলিয়ে দিন থেকে মাসও পার হয়ে যেতে পারে। তত দিনে ট্রেন্ড হয়তো শেষও হয়ে যেতে পারে। শর্ট ভিডিও বানাতে অবশ্য এতটা সময় ব্যয় হয় না, তাই টিকটক বা ইউটিউব শর্টস নিয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা দ্রুতই ট্রেন্ড ধরে দর্শক টানতে পারেন।

লেখার জন্য এআইয়ের ব্যবহার দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। বিষয়বস্তু বুঝিয়ে দিলেই হাজার শব্দের আর্টিকল কয়েক মিনিটেই লিখে দিচ্ছে এআই, এসইও এবং কি-ওয়ার্ড অপটিমাইজেশন করার কাজেও এআই পারদর্শী। ভিডিও তৈরির বিভিন্ন সেবা, যেমনওপেন এআইয়ের সোরা (ঝড়ত্ধ) সেবা কাজে লাগিয়ে শর্ট ভিডিও তৈরিতে এখন আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগে না।

কনটেন্ট তৈরির পাশাপাশি সেগুলো ছড়িয়ে দিতেও এআই কাজে লাগাচ্ছেন নির্মাতারা। একাধিক বট অ্যাকাউন্ট তৈরি করে একই কনটেন্ট প্রতিটি প্ল্যাটফরমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন, সেগুলো শেয়ার করছেন, ভাইরাল হওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে দিচ্ছেন নিজের কনটেন্ট। কয়েক বছর আগেও এ ধরনের কাজের জন্য তৃতীয় বিশ্বের কনটেন্ট ফার্ম ব্যবহৃত হতো, এখন একটি কম্পিউটার আর কয়েকটি এআই সেবাই যথেষ্ট।

ব্রুট ফোর্সের যুগ

ব্রুট ফোর্স শব্দের অর্থ সঠিক উপায় না মেনে গায়ের জোরে সমস্যা সমাধান করা। একটি মানসম্মত ভিডিও তৈরি করে এক লাখ ভিউ পাওয়ার চেয়ে এক হাজার মানহীন কিন্তু ভাইরাল ভিডিও তৈরি করে প্রতিটিতে ১০ হাজার ভিউ পাওয়াটাকে বলা হচ্ছে অ্যালগরিদমকে ব্রুট ফোর্স করা।

কনটেন্ট তৈরি সহজ হয়ে যাওয়ায়, মানের চেয়ে পরিমাণের দিকেই নজর দিচ্ছে প্রতিটি নির্মাতা। প্রতিদিন কয়েক শ আর্টিকল আর ভিডিও পোস্ট করতে পারলে অন্তত একটি তো ভাইরাল হবেই। ড্যানিয়েল বিটন প্রতিদিন কয়েক শ ভিডিও তৈরি করে ইউটিউব, মেটা এবং টিকটকে আপলোড করেন। ফলে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই তিনি হয়েছেন মিলিয়নেয়ার। প্রতি মাসে শুধু ইউটিউব শর্টস থেকেই তাঁর আয় বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০ লাখ টাকার ওপরে। এ ছাড়াও মেটা এবং টিকটক থেকে প্রায় সমপরিমাণ আয় হয় তাঁর। এখন তিনি নতুন নির্মাতাদের আয় করার সহজ তরিকাও বাতলে দিচ্ছেন। তাঁর মার্কেটিং ই-মেইলে তিনি দর্শকদের সরাসরি সিরিয়াল কিলারদের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, সিরিয়াল কিলারদের যেমন আছে নিজস্ব উদ্ভট চিন্তাধারা, যা দেখে তাদের সহজেই ধরা যায়, তেমনি শর্ট ভিডিওতে আসক্ত দর্শকদেরও চিন্তা-ভাবনার নির্দিষ্ট ধরন আছে। এআই কাজে লাগিয়ে সহজেই বের করা যায় কোন ধরনের ভিডিও এখন ভাইরাল হবে, প্রয়োজন শুধু এআই দিয়ে তা তৈরি করার। এভাবে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভাইরাল ভিডিও তৈরি করেই যাব, প্ল্যাটফরমগুলোও আমাদের থামাবে না।

বিটনের সহকর্মী মুসা মোস্তফাও একই কথা বলেছেন। তাঁর মতে, ইউটিউব বা টিকটকে সুপারস্টার হওয়ার জন্য যত সময় ও বিনিয়োগ প্রয়োজন, তা নতুনদের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। অনেক নতুন নির্মাতা সময় নিয়ে চমৎকার স্ক্রিপ্ট তৈরি করেন, চড়ামূল্যের ক্যামেরা কিনে সেট তৈরি করে বানান ভিডিও, অথচ ভিডিও দেখে হয়তো বেশি হলে এক-দেড় লাখ দর্শক। বেশির ভাগ চ্যানেলের দর্শকসংখ্যা হাজারেই আটকে থাকে। অথচ মানহীন হলেও যারা প্রতিদিন কয়েক শ ভিডিও পোস্ট করছে, দিনশেষে তাদের আয় মানসম্মত চ্যানেলের চেয়ে অনেক বেশি।

 

কেন এই চাহিদা

মানহীন কনটেন্ট কেন ভাইরাল হচ্ছে? এ প্রশ্ন প্রায় সবার। একে ফাস্টফুডের সঙ্গে তুলনা করেছেন বেশ কিছু কনটেন্ট নির্মাতা। খিদে পেলেই যেমন সব সময় পাঁচতারা রেস্টুরেন্টের সেরা খাবার খেতে হবে এমন কোনো কথা নেই, তেমনি কনটেন্ট স্ক্রল করার জন্য সেরা মানের ভিডিওরও নেই প্রয়োজন। শর্টস বা টিকটক দেখাকে সিগারেট ফুঁকার সঙ্গে তুলনা করেছে অনেকে, একঘেয়ে কাজের ফাঁকে কয়েক মিনিট বিরতির জন্য লাখ টাকা বাজেটের শৈল্পিকতার চেয়ে রঙচঙে চটকদার ভিডিওই বেশি কাজের।

লিখিত কনটেন্টের ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু আলাদা। পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে এবং উসকে দেয়এমন লেখাই দ্রুত ভাইরাল হয়। সে ক্ষেত্রে লেখাটি বস্তুনিষ্ঠ কি নাসেটাও পরীক্ষা করে না পাঠক। এআই কাজে লাগিয়ে এমন পোস্ট তৈরি করা কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। তবে লিখিত কনটেন্টের জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়নত কমছে, তাই সবার লক্ষ্য ভিডিও তৈরি। কয়েক বছর আগেও প্রতিটি প্ল্যাটফরমের চেষ্টা ছিল মানসম্মত কনটেন্ট তুলে ধরার। ব্যবহারকারীদের চাহিদা বদলে যাওয়ায় প্ল্যাটফরমের অ্যালগরিদমও বদলে গেছে। যত বেশি ভিউ তত বেশি আয়, এই মর্মেই কাজ করছে অ্যালগরিদম। ফলে বিজ্ঞাপনদাতাদের ওপরও চাপ কমেছে অনেকটা। এআই কনটেন্টের মাধ্যমে তারা দ্রুত ট্রেন্ড অনুযায়ী পণ্য ও সেবার প্রচারণা চালাচ্ছে। এ বছর আমাদের দেশেও এআইয়ে তৈরি বিজ্ঞাপনচিত্রের ব্যবহার দেখা গেছে।

 

ভবিষ্যৎ

মেটা, টিকটক এবং গুগলপ্রতিটি প্রতিষ্ঠান নিজেরাই এআই কনটেন্ট তৈরির সেবা নিয়ে কাজ করছে। বিজ্ঞাপনদাতাদের কাজ শুধু কেমন বিজ্ঞাপন চাই সেটা বলা, বাকি কাজ করবে এআই। ব্যবহারকারীরা এআইয়ের তৈরি কনটেন্ট দেখবে, শেয়ার করবে, সেটা নিয়ে এআই বটদের সঙ্গে বিতর্কে মেতে উঠবেঅন্তত মেটার প্রতিটি প্ল্যাটফরম নিয়ে মার্ক জাকারবার্গের চাওয়া এমনটাই। মেটার চলমান এআই ইনফ্লুয়েন্সার এবং বট প্রোফাইল তৈরির প্রজেক্টগুলো অন্তত এমনটাই নির্দেশ করছে। শর্ট ভিডিওর প্রতি আসক্ত ব্যবহারকারীদের অসীম চাহিদা মেটাতে এআই কনটেন্টের জনপ্রিয়তা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে সন্দেহ নেই। এআইয়ের সাইবার দুনিয়ায় মানুষের স্থান আসলেই আছে কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।

মন্তব্য

নিঃসঙ্গতা বাড়ায় চ্যাটবট

অলকানন্দা রায়
অলকানন্দা রায়
শেয়ার
নিঃসঙ্গতা বাড়ায় চ্যাটবট

আপনি কি কখনো একা অনুভব করেন? যখন মনে হয় মন খুলে কথা বলার মতো কেউ নেই। তখন কি চুপি চুপি ফোনটা হাতে তুলে চ্যাটজিপিটিকে ‘হাই!’ বলেন? আপনিও হয়তো অনেকের মতোই ভাবছেন, ‘এআই তো অন্তত শুনছে, বিরক্তও করছে না।’ এই বন্ধুত্ব কি নিঃসঙ্গতার ওষুধ, না এর আসক্তি?

ওপেনএআই আর এমআইটি মিডিয়া ল্যাব মিলে ঠিক এই প্রশ্ন ঘিরেই চালিয়েছে এক বিশাল গবেষণা। কয়েক হাজার ব্যবহারকারীর প্রায় চার কোটি চ্যাটজিপিটি ইন্টারঅ্যাকশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা যা পেয়েছেন, তা একটু চিন্তা করার মতো।

দুটি পৃথক গবেষণা চালানো হয়েছে—প্রথমটিতে ছয় হাজার হেভি ইউজারকে পর্যবেক্ষণ করা হয়, যারা চ্যাটজিপিটির অ্যাডভান্সড ভয়েস মোডে তিন মাস প্রচুর সময় কাটিয়েছে। দ্বিতীয়টিতে ৯৮১ জন অংশগ্রহণকারীকে ২৮ দিন ধরে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ মিনিট চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করতে বলা হয়। এরপর মানসিক অবস্থা মাপা হয় তাদের।

প্রাথমিক ফলাফল, যারা আগে থেকেই একা ছিল, তারা যত বেশি এআই ব্যবহার করেছে, ততই তাদের একাকিত্ব বেড়েছে।

অন্যদিকে যারা স্রেফ এটা টুল হিসেবে আবেগ ছাড়াই ব্যবহার করেছে, তাদের মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়নি। গবেষকরা বলছেন, এটা ঠিক সোশ্যাল মিডিয়ার মতোই এক দুষ্টচক্র। যারা একা বোধ করে, তারাই এআইকে সঙ্গী করে—হয়ে পড়ে নির্ভরশীল। কমিয়ে দেয় সামাজিক মেলামেশা, বাড়ে একাকিত্ব।
এভাবেই একসময় মনে হয় ‘মানুষ বুঝবে না, মেশিনই ভালো’।

একটা দারুণ ব্যাপার বেরিয়ে এসেছে ভয়েস মোড নিয়ে। শুরুতে উপকারী মনে হলেও ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে বরং একাকিত্ব আরো বাড়ে। এক ধরনের আবেগিয় নির্ভরতাও তৈরি হয়। চ্যাটবটের কণ্ঠ মানুষের মতোই, তাই মানব মস্তিষ্ক একে রক্ত মাংসের মানুষ হিসেবেই কল্পনা করে নেয়।

যুক্তরাজ্যের সারি ইনস্টিটিউট ফর পিপল-সেন্টারড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক ড. অ্যান্ড্রু রোগয়স্কি বলেছেন, যন্ত্র যদি মানুষের মতো কথা বলে, যন্ত্রকে রক্ত মাংসের মানুষ ভাববে ব্যবহারকারী। তখন মানুষের মনে হবে চ্যাটবট নয়, সময় কাটাচ্ছি আপনজনের সঙ্গে।

কিছু ভয়ংকর ঘটনাও এ থেকে ঘটেছে, যেমন—২০২৩ সালে এক বেলজিয়ান ব্যক্তি জিপিটি ৪ চ্যাটবটের সঙ্গে দীর্ঘ কথোপকথনের পর আত্মহত্যা করে বসে। তাই খেয়াল রাখতে হবে, চ্যাটবট ব্যবহার যাতে মানবিক সম্পর্কের বিকল্প না হয় দাঁড়ায়।

 

মন্তব্য

স্মার্টফোনের সঙ্গী-সাথী

    নতুন ফোন কেনার সঙ্গে চাই এর নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় কভার ও গ্লাস। অনেক ফোনের সঙ্গে এখন চার্জারও দেওয়া হয় না, আলাদা করে কিনে নিতে হয়। ফোনের সঙ্গে আনুষঙ্গিক কী কী কেনা উচিত, পরামর্শ দিচ্ছেন ইসহাক হিরক
শেয়ার
স্মার্টফোনের সঙ্গী-সাথী
এখন স্মার্টফোনের সঙ্গে আলাদা করে কিনতে হয় চার্জার ছবি : সংগৃহীত

ডিসপ্লে প্রোটেক্টর

ফোন কেনার পর প্রথমেই ডিসপ্লের সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত। আধুনিক স্মার্টফোনের ডিসপ্লে সুরক্ষায় গরিলা গ্লাস বা ড্রাগনটেইলের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলেও অল্প ধুলাবালিতেও সহজেই ডিসপ্লেতে দাগ পড়তে পারে। বাজারে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে আড়াই হাজার টাকার দামি গ্লাসও পাওয়া যাচ্ছে। মূল্যের এ বিশাল তফাত কেন—তা সহজেই বেশির ভাগ ক্রেতা বুঝে উঠতে পারে না।

  ব্র্যান্ডের পাশাপাশি এর স্বচ্ছতা, গ্লাসটি কতটা শক্ত, আঙুলের ছাপ নিরোধী ওলিওফোবিক কোটিং আছে কি না—এর ওপরও দাম নির্ভর করছে।  একেবারে কম বাজেটের গ্লাসগুলো শুধু হালকা দাগ থেকেই সুরক্ষা দেবে, অল্প আঘাতেই ফোনের স্ক্রিনসহ ফেটে যেতে পারে। তাই অন্তত নাইনএইচ হার্ডনেসের গ্লাস ব্যবহার করা উচিত। ডিসপ্লের মধ্যেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর থাকলে গ্লাস কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে সেন্সরের কর্মপ্রক্রিয়ায় সমস্যা করে কি না।
ফোনের ডিসপ্লেতে কার্ভ থাকলে ইউভি গ্লুযুক্ত প্রোটেক্টর ব্যবহার করার পরামর্শ দেন অনেক বিক্রেতা। এ ধরনের প্রোটেক্টর পরবর্তী সময় বদল করা কঠিন, তাই না কেনাই ভালো। শখের স্মার্টফোনটি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা অনেকটাই বদলে দেবে মানসম্মত প্রোটেক্টর, তাই এটি কেনার সময় অন্তত ৫০০ টাকা বাজেট রাখা উচিত।

 

ক্যামেরা প্রোটেক্টর

প্রায় সব স্মার্টফোনের ক্যামেরাই বডি থেকে একটু উঁচু হয়ে থাকে, যেটাকে বলা হয় ক্যামেরা বাম্প।

ফোন ডেস্কে কিংবা ব্যাগে রাখলে এতে ঘষা লেগে দাগ পড়ার সম্ভাবনা আছে। তাই উচিত ক্যামেরা প্রোটেক্টর ব্যবহার করা। বাজারে বেশির ভাগ প্রচলিত মডেলের জন্য ক্যামেরা প্রোটেক্টর পাওয়া যায়, দাম শুরু ১০০-১৫০ টাকা থেকে। তবে খেয়াল রাখতে হবে প্রোটেক্টরের জন্য যাতে ক্যামেরার মান নষ্ট না হয়, কিছু অর্থ সাশ্রয় করার বিনিময়ে ঘোলা ছবি একেবারেই কাম্য নয়।

 

কভার বা কেস

স্মার্টফোন সুরক্ষায় একটা জিনিস না হলেই নয়, সেটা হচ্ছে কভার বা কেস।

বাজারে হরেক রকমের কভার রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী কভারের ধরন বেছে নেওয়া উচিত।

 

সিলিকন কভারকে জাতীয় কভার বলা যায়। স্মার্টফোনের বক্সেই এ ধরনের কেস সরবরাহ করে অনেক নির্মাতা। এ ধরনের কভার ফোনের ডিজাইনকে দৃশ্যমান রাখে, তবে খুব একটা শক-প্রোটেকশন দেয় না ও বেশিদিন ব্যবহারের পর রং পরিবর্তন হয়ে যায়। দামও অবশ্য কম, ১০০-৩৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।

 

রাবার ও টিপিইউ কভার : সিলিকনের চেয়ে শক্ত ও টেকসই, শক শোষণ করতে পারে, ফোন হাত থেকে পড়লে ভালো প্রটেকশন দেয়। এটাও দামে সস্তা ও হালকা। এ ছাড়াও কাস্টোমাইজড ডিজাইনের অভাব নেই এই কভারের। ২৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে মিলবে।

রাগেড কভার : এই ধরনের কভার আপনার ফোনকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিতে সক্ষম। ১০-১২ ফুট উচ্চতা থেকেও ফোন রক্ষা পেতে পারে। এই ধরনের কভার একটু ভারী ও মোটা হয়ে থাকে, আর দামও তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে যারা খুব রাফটাফ ফোনকে ব্যবহার করেন এবং আপনার ফোনের সর্বোচ্চ সুরক্ষা চান তাঁদের জন্য এই ধরনের কভার একেবারে পারফেক্ট। এর জন্য খরচ হবে হাজার টাকার ওপর।

 

চার্জার

এখন বেশির ভাগ ফোনের সঙ্গে চার্জ করার অ্যাডাপ্টার দেওয়া হয় না। আইফোন, পিক্সেল বা স্যামসাং গ্যালাক্সি সিরিজের ক্ষেত্রে ইউএসবি পাওয়ার ডেলিভারি বা পিডি সমর্থিত চার্জার নেওয়া উচিত। এ মডেলের ফোনগুলো পিডি চার্জার ব্যবহারে অনেক দ্রুত চার্জ হয়। ডিভাইসের প্রয়োজন অনুযায়ী ভোল্টেজ ও এম্যাম্পিয়ার প্রদান করে পিডি চার্জার। তবে অনার, শাওমি, অপ্পো বা ওয়ানপ্লাসের মতো ফোনের চার্জিং সিস্টেম আলাদা, তাই সেসব ডিভাইসের সঙ্গে কাজ করে এমন চার্জারই কেনা উচিত, নইলে দ্রুত চার্জিং কাজ করবে না।

অ্যাপল ডিভাইস ব্যবহারকারীদের মনে রাখতে হবে, চার্জার ও ক্যাবল অবশ্যই ‘মেড ফর আই’ বা এমএফআই সার্টিফায়েড হতে হবে। চার্জার ও ক্যাবলের জন্য বাজেট রাখা উচিত অন্তত দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা। খেয়াল রাখতে হবে, চার্জার ও ক্যাবলে টাকা বাঁচানো যেন ডিভাইসের ক্ষতির কারণ না হয়।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ