<p>বিচারক হিসেবে লোভের বশবর্তী হয়ে দুর্নীতিমূলক, বিদ্বেষাত্মক ও বেআইনি রায় দেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অসত্য ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রায় সৃষ্টি করার অভিযোগও আনা হয়েছে এই মামলায়।</p> <p>গতকাল মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় এই মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন। আজ বুধবার (২৮ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মামলার বাদী।</p> <p>সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। সে সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট এই রিট খারিজ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়।</p> <p>সে রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।</p> <p>মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘২০১১ সালের ১০ মে সংক্ষিপ্ত রায়ে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে মত দিলেও পরে এই মত পরিবর্তন করে দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। সংক্ষিপ্ত রায়ের প্রায় ১৬ মাস পর ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।</p> <p>এজাহারে আরো বলা হয়েছে, সংক্ষিপ্ত রায়ের পর আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলের নেতাদের সমন্বয়ে ১৫ সদস্যের সংবিধান সংশোধনী কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ২০১১ সালের ৩০ মে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গেলে শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের সুপারিশ করেন। আসামি এ বি এম খায়রুল হক শেখ হাসিনার কথায় প্রভাবিত হয়ে এবং অবসর পরবর্তী ভালো পদায়নের লোভে সংক্ষিপ্ত রায়ে দেওয়া মত পরিবর্তন করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। এভাবে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করায় তিনি দণ্ডবিধির ২১৯ ধারায় অপরাধ করেছেন। তাঁর এমন বেআইনি রায়ের মাধ্যমে শেখ হাসিনা দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয় এবং একতরফা, পাতানো ও ভোট কারচুপির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পর পর তিনবার সরকার গঠনের সুযোগ পায়। </p> <p>এজাহারে বলা হয়েছে, এ বিএম খায়রুল হক লোভের বশবর্তী হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক তরফা নির্বাচনের সহযোগিতা করে। এর পুরস্কার হিসেবে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর এ বি এম খায়রুল হককে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়। </p> <p>গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পারিয়ে দেশ ছাড়ার পর আসামি খায়রুল হকও আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।</p> <p> মামলার এজাহারে খাইরুল হকের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২১৯ ধারার পাশাপাশি ৪৬৬ ধারার অপরাধের অভিযোগও আনা হয়েছে। দণ্ডবিধির এ দুই ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছর। বিচারে এ বি এম খায়রুল হকের অপরাধ প্রমাণিত হলে তাঁর এই সাজা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাদী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।</p> <p>একই অপরাধের অভিযোগে গত ২৬ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে খায়রুল হকের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়। ফতুল্লা মডেল থানায় মামলাটি করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী ভূঁইয়া।</p>