যে জন্মেছে সে মরবেই। যার সূচনা হয়েছে তার সমাপ্তি ঘটবেই। এটা খোদা পাকের শাশ্বত চিরন্তন বিধান। এ অমোঘ বিধানের কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন নেই।
যে জন্মেছে সে মরবেই। যার সূচনা হয়েছে তার সমাপ্তি ঘটবেই। এটা খোদা পাকের শাশ্বত চিরন্তন বিধান। এ অমোঘ বিধানের কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন নেই।
প্রত্যেক প্রাণীকে মরতে হবে। ছারপোঁকা থেকে শুরু করে প্রাণওয়ালা যত সৃষ্টিজীব আছে সবাইকে মৃত্যুর অবশ্যম্ভাবী স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। ইন্তেকালের কবল থেকে জগতের কোন তাবৎ পরাশক্তি কোন প্রযুক্তি কাউকে বাঁচাতে পারবে না।
এই আয়াতের তাফসীরে ব্যাখ্যাকারগণ বলেন, প্রত্যেক প্রাণওয়ালা প্রাণীই মরণশীল। বেলা শেষে সূর্য যেমন সব পাঠ চকিয়ে বিদায়ী হয়। তাকে বিদায় নিতে হয় । দিবাকরের অস্ত পথ যেমন কেউ রুখতে পারে না।
কখন কোন মানুষের বা প্রাণীর তিরোধান হবে এটা কেউ জানেনা। দুনিয়াতে আগমনের পরিক্রমা সিরিয়াল আছে, প্রথমে দাদা পরে পিতা তারপর নাতি। কিন্তু যাবার কোন সিরিয়াল নেই। যখন যার ডাক আসে তাকে তখনি পরপারে চলে যেতে হবে। সামন্য সময়ের ফুরসৎ দেয়া হবে না। কুরআনে পঠিত হয়েছে, “যখন কারো কর্ম-সময় পূর্ণ হয়ে যাওয়ার মুহূর্ত এসে পড়ে, তখন আল্লাহ তাকে কখনই অধিক অবকাশ দেন না”। সূরা মুনাফিকুন ১১।
মৃত্যু কাউকে জানান দিয়ে আসে না। কোন সময় বা স্থান কাল নির্ধারিত জায়গা ধরে উপস্থিত হয় না। মানুষ জানে না কার মৃত্যু কোথায় কোন জমিনে হবে। আল্লাহ বলেন, “কোন প্রাণীই জানেনা আগামিকাল সে কী উপার্জন করবে। এবং কেউ জানেনা তার মৃত্যু হবে কোন জমিনে”। সূরা লোকমান ৩৪।
দুনিয়ার জগত হলো ক্ষণস্থায়ী। একদিন জগত নির্মূল নাশ হয়ে যাবে। পৃথিবী তার অস্তিত্ব হারাবে। পৃথিবীতে কোন মানুষের চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে না। এই ধ্বংসশীল দুনিয়াতে মানুষও ধ্বংসশীল। আদম জাতিও ক্ষণস্থায়ী। একজন মুসাফির ভবঘুরে যেমন আপন ঠিকানাবিহীন পথ প্রান্তরে ঘুরে বেড়ায়, তার চলতে পথে কোন নির্ধারিত বাসস্থান থাকে না, তেমনি দুনিয়াতে মানবজাতির পরোক্ষ কোন বাসস্থান নেই। যা আছে তা ক্ষণস্থায়ী। দুনিয়ার ময়দানে মানব হল মুসাফির। পৃথিবীর পথে সে হল বাউণ্ডুলে পথিক। তার হায়াতের নির্ধারিত সময়ের ভেতর পূঁজি সংগ্রহ করে পথ চলতে হবে। মুসাফির হয়ে পথের পাথেয় যোগাড় করতে হবে। ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত, ‘“তিনি বলেন রাসুল সাঃ আমার বাহুমূলে ধরলেন। তারপর বললেন, “দুনিয়াতে এভাবে কাটাও যেন তুমি মুসাফির বা পথিক”। হযরত ইবনে উমর বলেন, যখন সন্ধ্যা হয়ে যায় সকাল বেলার অপেক্ষা করো না। আর যখন সকাল হয়ে যায় সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। সুস্বাস্থের দিনগুলোতে রোগব্যাধির প্রস্তুতি নাও। আর জীবদ্ধশায় থাকাকালীন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করো”’। বোখারি ৬৪১৬।
এ কথা যখন দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট, কোরআন হাদিস তার প্রমাণ বহন করে যে, মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। সবাইকে মৃত্যুর উন্মুক্ত দরজায় প্রবেশ করতে হবে। তা আমাদের মম চিত্তকে পরিশুদ্ধ করা প্রয়োজন। কবরে সুখে থাকার উপকরণ সংগ্রহ করা লাযেম। মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করা দরকার । প্রত্যেকটা কাজের প্রারম্ভে করোটিতে মৃত্যু নামক বাস্তব শব্দের চিত্র আঁকা অতিজরুরি। হাদিসে বিধৃত হয়েছে, আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাঃ বলেছেন- (দুনিয়ার) স্বাদ গন্ধকে বিলুপ্তকারী মৃত্যুকে তোমরা বেশি বেশি স্মরণ করো। তিরমীযি ২৩০৭।
নশ্বর পৃথিবীর শাশ্বত চিরন্তন সত্য হলো মৃত্যু। মৃত্যুর চেয়ে অপরিবর্তনীয় অনড় শব্দ জগতের অভিধানে খুব কম। আখেরে সবাইকে জগত ছেড়ে পরপারে যেতে হবে এটা স্বাভাবিক। সুতরাং ধরার সব পাঠ শেষ করে ইসলামী জীবন ধারণ করে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মৃত্যুর প্রহর গুণা বুদ্ধিমানের কাজ।
মুমিনের সব কাজ ইবাদতের অংশ। তাই ঘুম ও সজাগ সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর স্মরণ জরুরি। ঘুমানোর সময় ও ঘুম থেকে উঠার পর কী দোয়া পড়তে হবে রাসুল (সা.) তা শিখিয়েছেন।
হুজাইফা বিন আল ইয়ামান (রা.) বলেছেন, নবী করিম (সা.) যখন বিছানায় ঘুমাতে যেতেন তখন তিনি বলতেন,
«باسْمِكَ اللَّهُمَّ أمُوتُ وأَحْيَا»
উচ্চারণ : বিসমিকা আল্লাহুম্মা আমুতু ওয়া আহইয়া।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ, তোমার নামেই আমি মারা যাব এবং জীবিত হব। ’
এবং যখন তিনি ঘুম থেকে জাগ্রত হতেন তখন তিনি পড়তেন,
«الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا، وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ»
উচ্চারণ : ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর। ’
‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি (ঘুমের মতো) মৃত্যুর পর আমাদেরকে জীবিত করলেন, আর তাঁরই কাছে আমাদের সবার পুনরুত্থান। ’ (বুখারি, হাদিস নম্বর : ৬৩২৪)
ইসলামে উত্তম চরিত্রের বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। মুমিনদের জন্য বিভিন্ন গুণে চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা ঈমানের দাবি। কেননা উত্তম চরিত্র ছাড়া একজন মুমিনের ঈমান পরিপূর্ণ হতে পারে না। ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য উত্তম চরিত্র অর্জন করা অপরিহার্য।
আমাদের সমাজে মানুষের সর্বোত্তম হওয়ার বিভিন্ন মাপকাঠি আছে। বিভিন্নজনের কাছে ভিন্ন মাপকাঠিতে ভিন্ন ধরনের মানুষ সর্বোত্তম। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বোত্তম হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হচ্ছে উত্তম চরিত্র।
রাসুল (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি কখনো কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করেননি।
উত্তম চরিত্রের সওয়াব এত বেশি, যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। কিয়ামতের দিন মানুষের সওয়াব ও গুনাহ পরিমাপের জন্য দাঁড়িপাল্লায় ওজন করা হবে। সেদিন যে আমলের ওজন সবচেয়ে বেশি ভারী হবে তা হলো উত্তম চরিত্র। এ সম্পর্কে আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন মুমিনের দাঁড়িপাল্লায় উত্তম চরিত্রের চেয়ে বেশি ওজনের আর কোনো জিনিস হবে না। কেননা আল্লাহ অশ্লীল ও কটুভাষীকে ঘৃণা করেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০০২)
উত্তম চরিত্রের সওয়াব ওজনে সবচেয়ে বেশি ভারী হওয়ার রহস্য আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়। এক ব্যক্তি সারা দিন সাওম পালন করে এবং সারা রাত নফল সালাত পড়ে যেরূপ সওয়াব পায়, মহান আল্লাহ উত্তম চরিত্রের বদৌলতে সেরূপ সওয়াব দান করেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে (দিনে) সাওম পালনকারী ও (রাতে) নামাজ আদায়কারীর মর্যাদা লাভ করতে পারে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৮)
জান্নাতে মানুষের আমল অনুযায়ী সম্মানজনক জায়গায় অধিষ্ঠিত করা হবে। যার আমল যত ভালো হবে, সে তত বেশি সম্মানিত হবে। রাসুল (সা.) নিজে উত্তম চরিত্রবানদের জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে ঘর বরাদ্দের জিম্মাদারি নিয়েছেন। এ বিষয়ে আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ন্যায়সংগত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার। আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না, আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের জিম্মাদার এবং যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে, আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের জিম্মাদার।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০০)
আজ রবিবার ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬
ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ—
জোহর সময় শুরু- ১২টা ৩ মিনিট।
আসরের সময় শুরু - ৪টা ৩০ মিনিট।
মাগরিব- ৬টা ২৩ মিনিট।
এশার সময় শুরু - ৭টা ৩৯ মিনিট।
আগামীকাল ফজর শুরু - ৪টা ২৩ মিনিট।
আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত - ৬টা ১৯ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয়- ৫টা ৪০ মিনিটে।
সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।
প্রশ্ন : মৃত ব্যক্তির আকিকা দেওয়া জায়েজ আছে কি?
-আতিক, মিরপুর
উত্তর : আকিকা জীবিত ব্যক্তির জন্য মুস্তাহাব। মৃত ব্যক্তির আকিকা করা মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাই তাতে আকিকার সওয়াব পাওয়া যাবে না। (রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৩৬, ফয়জুল বারি : ৪/৩৩৭)
সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা
।