মহানবী (সা.)-এর মুখে জাহান্নামের ভয়াবহ আজাবের বিবরণ

তালহা হাসান
তালহা হাসান
শেয়ার
মহানবী (সা.)-এর মুখে জাহান্নামের ভয়াবহ আজাবের বিবরণ
প্রতীকী ছবি

মহান আল্লাহ নবী-রাসুলদের অবিশ্বাসীদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত করেছেন। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। মানুষের জন্য এটি সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি জানে না, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরোধিতা করে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন।

সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে, তা চরম লাঞ্ছনাকর।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৬৩)

নিম্নে জাহান্নামের কয়েকটি আজাব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো- 

মৃত্যুহীন শাস্তি ভোগ : জাহান্নামিদের মৃত্যু হবে না। তারা আর্তনাদ করতে থাকবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে যারা কুফরি করে তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে।

তাদের মৃত্যুর আদেশ দেওয়া হবে না এবং শাস্তিও হালকা করা হবে না, এভাবে আমি অকৃতজ্ঞদের শাস্তি দিয়ে থাকি। তারা সেখানে আর্তনাদ করে বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমাদের বের করুন, আমরা ভালো কাজ করব, আগে যা করেছি তা করব না। আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাদের এত দীর্ঘ জীবন দিইনি? তখন কেউ সতর্ক হতে চাইলে সতর্ক হতে পারত।অতএব তোমরা শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কোরো, জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।
’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ৩৬-৩৭)

শাস্তির নানা স্তর : জাহান্নামে নানা পর্যায়ে শাস্তি থাকবে। সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) আজাবের ব্যাপারে বলেন, ‘আগুন জাহান্নামিদের কাউকে উভয় টাখনু পর্যন্ত গ্রাস করবে।  কাউকে উভয় কোমর পর্যন্ত গ্রাস করবে। কাউকে কোমর পর্যন্ত গ্রাস করবে। আবার কাউকে ঘাড় পর্যন্ত গ্রাস করবে।

’ (মুসলিম হাদিস ২১৫৮৫)

সর্বনিম্ন শাস্তির ধরন : জাহান্নামের নানা স্তরের আজাবের সবচেয়ে কম শাস্তি হবে আগুনের ফিতাযুক্ত জুতা পরানো। নোমান বিন বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জাহান্নামে যাকে সবচেয়ে কম শাস্তি দেওয়া হবে তাকে জাহান্নামের দুটি জুতা পরানো হবে, যার দুই ফিতা হবে আগুনের। এর উত্তাপে মাথার মগজ টগবগ করতে থাকবে ডেগের ফুটন্ত পানির মতো। সে মনে করবে তাকে সবচেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। মূলত তাকে সবচেয়ে কম শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২১৩)

মাথায় উত্তপ্ত গরম পানি : মাথায় গরম পানি জাহান্নামিদের অন্যতম শাস্তি হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা বিবদমান দুটি পক্ষ, তারা তাদের রবের ব্যাপারে বিতর্ক করে, যারা কুফরি করে তাদের জন্য আগুনের পোশাক প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের মাথার ওপর ফুটন্ত পানি ঢালা হবে।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ১৯-২০)  

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জাহান্নামিদের মাথায় উত্তপ্ত গরম পানি ঢালা হবে। তা পেট পৌঁছে সব নাড়িভুঁড়ি গলিয়ে দেবে। এরপর তা পায়ের দিক থেকে বের হয়ে পড়বে। এটাকে ‘সাহর’ বা গলে যাওয়া বলেন। অতঃপর তা আগের মতো হয়ে পড়বে। (এভাবে শাস্তি চলতে থাকবে)। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫৮৩)

অগ্নিদগ্ধ মুখ : জাহান্নামিদের চেহারাসহ পুরো শরীর আগুন দিয়ে দগ্ধ করা হবে। আল্লাহ বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি তাদের অন্ধ, মূক ও বধির করে মুখের ওপর ভর দেওয়া অবস্থায় সমবেত করব। তাদের আবাস হবে জাহান্নাম, যখন তা স্তিমিত হবে আমি তাদের জন্য আগুনের শিখা বৃদ্ধি করব।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৯৭)

অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যাদের পাল্লা হালকা হবে তারা নিজেদের ক্ষতি করেছে। তারাই জাহান্নামে স্থায়ী হবে। আগুন  তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা সেখানে বীভৎস চেহারায় থাকবে।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১০৩-১০৪)

চামড়া নতুনভাবে গজাবে : জাহান্নামিদের চামড়া পুড়িয়ে ফেলা হবে। তা পুড়ে গেলে নতুন চামড়া হবে এবং পুনরায় তা পুড়িয়ে ফেলা হবে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা আমার নিদর্শন অস্বীকার করে আমি তাদের আগুনে পোড়াব, যখন তাদের চামড়া দগ্ধ হবে তখন সেই স্থানে নতুন চামড়া সৃষ্টি করব যেন তারা শাস্তি ভোগ করে, আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৬)

রক্ত-পুঁজ পান : অহংকারীদের অপদস্থ করে রক্ত-পুঁজ পান করানো হবে। আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন অহংকারীদের মানুষের আকৃতিতে পিঁপড়ার মতো সমবেত করা হবে। সব দিক থেকে লাঞ্ছনা তাদের আক্রান্ত করবে। জাহান্নামের বাওলাস নামের বন্দিশালায় তাদের নেওয়া হবে। কঠিন আগুন তাদের গ্রাস করবে। জাহান্নামিদের দুর্গন্ধময় পুঁজ-রক্ত ইত্যাদি তাদের পান করানো হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৯২)

বিশাল দৈহিক গঠন : জাহান্নামে কাফিরদের শারীরিক গঠন অস্বাভাবিক বড় হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জাহান্নামে কাফিরদের উভয় কাঁধের দূরত্ব দ্রুতগামী ঘোড়ার তিন দিনের পথের সমান হবে।’ অন্য বর্ণনা মতে, ‘কাফিরের একটি দাঁত উহুদ পাহাড়ের সমান হবে এবং তার দেহের চামড়া তিন দিনের দূরত্ব পরিমাণ পুরু হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫৫১)

চোখ দিয়ে রক্ত ঝরবে : সর্বদা কান্না করায় একসময় জাহান্নামিদের অশ্রু শেষ হয়ে যাবে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জাহান্নামিদের জন্য কান্না পাঠানো হবে। এরপর তারা কাঁদতে থাকবে। এক পর্যায়ে তাদের চোখের পানি শেষ হয়ে যাবে। অতঃপর তাদের চোখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকবে। ফলে তাদের মুখে বিশাল গর্তসদৃশ তৈরি হবে। তাতে নৌযান পাঠানো হলে তা অনায়াসে চলতে পারবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৩২৪)

মহান আল্লাহ সবাইকে ঈমান ও ভালো কাজের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন।
 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

যাত্রাপথে নামাজের সময় হলে যেভাবে পড়বেন

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
যাত্রাপথে নামাজের সময় হলে যেভাবে পড়বেন

আল্লাহ মুমিন নর-নারীর ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য সময় নির্ধারণ করেছেন। মুমিনের দায়িত্ব হলো যথাসময়ে ফরজ নামাজ আদায় করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা মুমিনের অবশ্য কর্তব্য।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৩)

আর নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে নামাজ আদায়ের কথা হাদিসেও এসেছে।

এ বিষয়ে অবহেলা করলে জাহান্নামের হুমকি এসেছে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি তা যথাযথভাবে পালন করবে, আর অবহেলার কারণে এর কোনোটি পরিত্যাগ করবে না, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর অঙ্গীকার করেছেন। আর যে ব্যক্তি তা (যথাযথভাবে) আদায় করবে না, তার জন্য আল্লাহর কাছে কোনো প্রতিশ্রুতি নেই।
তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দেবেন কিংবা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৪২০)

সফরকালে নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় জেনে রাখা উচিত। তা হলো- 

এক. চলন্ত জাহাজ, ট্রেন ও বিমানে নামাজ ‍পড়া

চলন্ত লঞ্চ, জাহাজ, ট্রেন ও বিমানে ফরজ নামাজ সম্ভব হলে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে রুকু-সিজদাসহ আদায় করবেন।

দাঁড়ানো যদি কষ্টকর হয়, তাহলে বসে স্বাভাবিক রুকু-সিজদা করে নামাজ আদায় করবেন। এভাবে নামাজ আদায় করতে পারলে পরবর্তী সময়ে তা পুনরায় পড়তে হবে না। 

দুই. অপারগ হলে ইশারায় পড়া এবং পরবর্তীতে কাজা করা 

আর যদি কেবলামুখী হয়ে রুকু-সিজদার সঙ্গে নামাজ আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে যেভাবে সম্ভব বসে বা ইশারায় নামাজ পড়ে নেবেন। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলে সতর্কতামূলক ওই ফরজ নামাজ পরবর্তী সময়ে আবার পড়ে নেবেন। 

তিন. পারলে যানবাহন থেকে নেমে নামাজ পড়া

আর বাসে যেহেতু সাধারণত দাঁড়িয়ে স্বাভাবিকভাবে নামাজ পড়া যায় না, তাই কাছাকাছি যাতায়াতের ক্ষেত্রে ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগে গন্তব্যে পৌঁছে নামাজ আদায় করা সম্ভব হবে না বলে মনে হলে এবং নেমে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ অথবা অসুবিধাজনক না হলে পথিমধ্যে নেমে ফরজ নামাজ পড়ে নেবেন।

চার. নামা সম্ভব না হলে ইশারায় পড়া ও পরে কাজা করা

আর দূরের যাত্রা হলে অথবা যে ক্ষেত্রে নেমে গেলে ঝুঁকি অথবা সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা থাকে সে ক্ষেত্রে বাস না থামলে সিটেই যেভাবে সম্ভব বসে বা ইশারায় নামাজ আদায় করে নেবেন এবং সতর্কতামূলক পরবর্তী সময়ে এর কাজা করে নেবেন।

পাঁচ. নামাজের জন্য যাত্রাবিরতি দেওয়া

উল্লেখ্য, দীর্ঘ যাত্রায় বাসচালকদের উচিত ফরজ নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে কোনো মসজিদে যাত্রাবিরতি করা। এ বিষয়ে বাস মালিকদেরও ইতিবাচক নির্দেশনা দিয়ে রাখা উচিত। এ ক্ষেত্রে মালিক সমিতি ও শ্রমিক সমিতিগুলো যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে। আর যাত্রীদের কর্তব্য হলো, বাসের একজন মুসল্লি নামাজ পড়তে চাইলেও তার জন্য বাস থামাতে চালককে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।(তথ্যসূত্র : ইলাউস সুনান : ৭/২১২; মাআরিফুস সুনান : ৩/৩৯৪; আদ্দুররুল মুখতার : ২/১০১)।

মন্তব্য

আজকের নামাজের সময়সূচি, ২ এপ্রিল ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
আজকের নামাজের সময়সূচি, ২ এপ্রিল ২০২৫

আজ বুধবার ২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১, ০২ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ—

জোহরের সময় শুরু ১২টা ৬ মিনিট। 

আসরের সময় শুরু - ৪টা ২৯ মিনিট।

মাগরিব- ৬টা ১৯ মিনিট।

এশার সময় শুরু - ৭টা ৩৪ মিনিট।

আগামীকাল ফজর শুরু - ৪টা ৩৫ মিনিট।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত - ৬টা ১৫ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয়- ৫টা ৪৯ মিনিটে।

সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
প্রশ্ন-উত্তর

লঞ্চে নামাজ আদায় করা যাবে কি?

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
লঞ্চে নামাজ আদায় করা যাবে কি?
সংগৃহীত ছবি

প্রশ্ন : লঞ্চ বা জাহাজ ঘাটে ভিড়ে থাকা অবস্থায় তাতে ফরজ নামাজ আদায় করা যাবে কি? এ অবস্থায় নিচে নেমে নামাজ আদায় করা আবশ্যক কি না?

- খোরশেদ আলম, বরিশাল

উত্তর : লঞ্চের কোনো অংশ জমি স্পর্শ অবস্থায় থাকলে লঞ্চে নামাজ পড়তে আপত্তি নেই; অন্যথায় নিচে নেমে নামাজ আদায় করতে হবে। (হিন্দিয়া : ১/১৫৮, নূরুল ঈজাহ : ৯৯)

সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা

মন্তব্য
প্রশ্ন-উত্তর

নিজেই নিজের স্বপ্নের ব্যাখ্যা করার বিধান কী?

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
নিজেই নিজের স্বপ্নের ব্যাখ্যা করার বিধান কী?
সংগৃহীত ছবি

প্রশ্ন : কোনো স্বপ্ন দেখে নিজেই অনুমানের ভিত্তিতে তার ব্যাখ্যা করার বিধান কী?

-আতিক, মিরপুর।

উত্তর : স্বপ্নের ব্যাখ্যা নিজে বুঝতে পারলে কাউকে বলার প্রয়োজন নেই। তা না হলে অভিজ্ঞ দ্বিনদার হিতাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যাখ্যা জেনে নেওয়া উত্তম। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ২/৫২৭)

সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ