<p>মহান আল্লাহ নবী-রাসুলদের অবিশ্বাসীদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত করেছেন। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। মানুষের জন্য এটি সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি জানে না, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরোধিতা করে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে, তা চরম লাঞ্ছনাকর।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৬৩)</p> <p>নিম্নে জাহান্নামের কয়েকটি আজাব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো- </p> <p><strong>মৃত্যুহীন শাস্তি ভোগ : </strong>জাহান্নামিদের মৃত্যু হবে না। তারা আর্তনাদ করতে থাকবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে যারা কুফরি করে তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে। তাদের মৃত্যুর আদেশ দেওয়া হবে না এবং শাস্তিও হালকা করা হবে না, এভাবে আমি অকৃতজ্ঞদের শাস্তি দিয়ে থাকি। তারা সেখানে আর্তনাদ করে বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমাদের বের করুন, আমরা ভালো কাজ করব, আগে যা করেছি তা করব না। আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাদের এত দীর্ঘ জীবন দিইনি? তখন কেউ সতর্ক হতে চাইলে সতর্ক হতে পারত।অতএব তোমরা শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কোরো, জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ৩৬-৩৭)</p> <p><strong>শাস্তির নানা স্তর : </strong>জাহান্নামে নানা পর্যায়ে শাস্তি থাকবে। সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) আজাবের ব্যাপারে বলেন, ‘আগুন জাহান্নামিদের কাউকে উভয় টাখনু পর্যন্ত গ্রাস করবে।  কাউকে উভয় কোমর পর্যন্ত গ্রাস করবে। কাউকে কোমর পর্যন্ত গ্রাস করবে। আবার কাউকে ঘাড় পর্যন্ত গ্রাস করবে।’ (মুসলিম হাদিস ২১৫৮৫)</p> <p><strong>সর্বনিম্ন শাস্তির ধরন : </strong>জাহান্নামের নানা স্তরের আজাবের সবচেয়ে কম শাস্তি হবে আগুনের ফিতাযুক্ত জুতা পরানো। নোমান বিন বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জাহান্নামে যাকে সবচেয়ে কম শাস্তি দেওয়া হবে তাকে জাহান্নামের দুটি জুতা পরানো হবে, যার দুই ফিতা হবে আগুনের। এর উত্তাপে মাথার মগজ টগবগ করতে থাকবে ডেগের ফুটন্ত পানির মতো। সে মনে করবে তাকে সবচেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। মূলত তাকে সবচেয়ে কম শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২১৩)</p> <p><strong>মাথায় উত্তপ্ত গরম পানি : </strong>মাথায় গরম পানি জাহান্নামিদের অন্যতম শাস্তি হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা বিবদমান দুটি পক্ষ, তারা তাদের রবের ব্যাপারে বিতর্ক করে, যারা কুফরি করে তাদের জন্য আগুনের পোশাক প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের মাথার ওপর ফুটন্ত পানি ঢালা হবে।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ১৯-২০)  </p> <p>আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জাহান্নামিদের মাথায় উত্তপ্ত গরম পানি ঢালা হবে। তা পেট পৌঁছে সব নাড়িভুঁড়ি গলিয়ে দেবে। এরপর তা পায়ের দিক থেকে বের হয়ে পড়বে। এটাকে ‘সাহর’ বা গলে যাওয়া বলেন। অতঃপর তা আগের মতো হয়ে পড়বে। (এভাবে শাস্তি চলতে থাকবে)। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫৮৩)</p> <p><strong>অগ্নিদগ্ধ মুখ : </strong>জাহান্নামিদের চেহারাসহ পুরো শরীর আগুন দিয়ে দগ্ধ করা হবে। আল্লাহ বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি তাদের অন্ধ, মূক ও বধির করে মুখের ওপর ভর দেওয়া অবস্থায় সমবেত করব। তাদের আবাস হবে জাহান্নাম, যখন তা স্তিমিত হবে আমি তাদের জন্য আগুনের শিখা বৃদ্ধি করব।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৯৭)</p> <p>অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যাদের পাল্লা হালকা হবে তারা নিজেদের ক্ষতি করেছে। তারাই জাহান্নামে স্থায়ী হবে। আগুন  তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা সেখানে বীভৎস চেহারায় থাকবে।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১০৩-১০৪)</p> <p><strong>চামড়া নতুনভাবে গজাবে :</strong> জাহান্নামিদের চামড়া পুড়িয়ে ফেলা হবে। তা পুড়ে গেলে নতুন চামড়া হবে এবং পুনরায় তা পুড়িয়ে ফেলা হবে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা আমার নিদর্শন অস্বীকার করে আমি তাদের আগুনে পোড়াব, যখন তাদের চামড়া দগ্ধ হবে তখন সেই স্থানে নতুন চামড়া সৃষ্টি করব যেন তারা শাস্তি ভোগ করে, আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৬)</p> <p><strong>রক্ত-পুঁজ পান : </strong>অহংকারীদের অপদস্থ করে রক্ত-পুঁজ পান করানো হবে। আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন অহংকারীদের মানুষের আকৃতিতে পিঁপড়ার মতো সমবেত করা হবে। সব দিক থেকে লাঞ্ছনা তাদের আক্রান্ত করবে। জাহান্নামের বাওলাস নামের বন্দিশালায় তাদের নেওয়া হবে। কঠিন আগুন তাদের গ্রাস করবে। জাহান্নামিদের দুর্গন্ধময় পুঁজ-রক্ত ইত্যাদি তাদের পান করানো হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৯২)</p> <p><strong>বিশাল দৈহিক গঠন : </strong>জাহান্নামে কাফিরদের শারীরিক গঠন অস্বাভাবিক বড় হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জাহান্নামে কাফিরদের উভয় কাঁধের দূরত্ব দ্রুতগামী ঘোড়ার তিন দিনের পথের সমান হবে।’ অন্য বর্ণনা মতে, ‘কাফিরের একটি দাঁত উহুদ পাহাড়ের সমান হবে এবং তার দেহের চামড়া তিন দিনের দূরত্ব পরিমাণ পুরু হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫৫১)</p> <p><strong>চোখ দিয়ে রক্ত ঝরবে :</strong> সর্বদা কান্না করায় একসময় জাহান্নামিদের অশ্রু শেষ হয়ে যাবে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জাহান্নামিদের জন্য কান্না পাঠানো হবে। এরপর তারা কাঁদতে থাকবে। এক পর্যায়ে তাদের চোখের পানি শেষ হয়ে যাবে। অতঃপর তাদের চোখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকবে। ফলে তাদের মুখে বিশাল গর্তসদৃশ তৈরি হবে। তাতে নৌযান পাঠানো হলে তা অনায়াসে চলতে পারবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৩২৪)</p> <p>মহান আল্লাহ সবাইকে ঈমান ও ভালো কাজের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন।<br />  </p>