<p>মুসলিম নারীর নিত্যদিনের পোশাক বোরকা ও হিজাব। ঘরের বাইরে চলাফেরার সময় পর্দা রক্ষার জন্য নারীরা বোরকা ও হিজাব পরিধান করে থাকে। তরুণ প্রজন্মের নারীদের ভেতর এর জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে বোরকা ও হিজাবের শরয়ি মানদণ্ড জানা না থাকায় অনেকেই এমন বোরকা ও হিজাব পরিধান করেন, যাতে পর্দার প্রয়োজন পূরণ হয় না।</p> <p><strong>যেমন হবে বোরকা ও হিজাব</strong></p> <p>শরিয়তের দৃষ্টিতে বোরকা ও হিজাবে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো পাওয়া আবশ্যক। যেমন—</p> <p>১. পুরো শরীর ঢেকে রাখা : নারী এমন বোরকা পরিধান করবে, যাতে তার পুরো শরীর ঢেকে থাকে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের (সর্বাঙ্গ আচ্ছাদনকারী পোশাক) একটা অংশ নিজেদের ওপর ঝুলিয়ে দেয়। যেন তাদেরকে (স্বাধীন নারী হিসেবে) চেনা সহজতর হয়। ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৯)</p> <p>আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘পরপুরুষকে সাজসজ্জার কোনো কিছু দেখাবে না। তবে যা লুকিয়ে রাখা সম্ভবপর নয় সেটা ছাড়া।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)</p> <p>২. কারুকাজ খচিত না হওয়া : নারীর ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের সাধারণ নির্দেশ হলো, ‘তারা যেন তাদের সাজসজ্জা প্রকাশ না করে।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩১)</p> <p>আয়াতে নারীর শারীরিক সৌন্দর্যের মতো তার পোশাকসহ অন্যান্য সৌন্দর্য গোপন রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং নারী পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষক নকশাদার পোশাক পরবে না। এ ব্যাপারে আলেমরা নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করেন। নবী (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কোরো না (তাদের পরিণতি জিজ্ঞাসার যোগ্য নয়) : যে ব্যক্তি দল ত্যাগ করে ইমাম বা রাষ্ট্রপ্রধানের অবাধ্য অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, যে দাসী বা দাস পালিয়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, যে নারীর স্বামী তার পার্থিব জীবনোপকরণের ব্যবস্থা করে সফরে বেরিয়েছে, সে চলে যাওয়ার পর স্ত্রী নিজের রূপ-সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়িয়েছে। এদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কোরো না।’ (মুসতাদরাকে হাকেম : ১/১১৯)</p> <p>৩. কাপড়ের বুনন ঘন হওয়া : ইসলাম নারীদের ঘন বুননের পোশাক পরিধান করার নির্দেশ দেয় এবং স্বচ্ছ কাপড় পরতে নিষেধ করে। নবীজি (সা.) বলেন : ‘শেষ যুগে আমার উম্মতের এমন কিছু নারী আসবে, যারা পোশাক পরা সত্ত্বেও উলঙ্গ।...তোমরা তাদেরকে অভিশাপ কোরো। কেননা তারা অভিশাপেরই উপযুক্ত।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২১২৮)</p> <p>আল্লামা ইবনে আবদুল বার (রহ.) বলেন, নবী (সা.) বোঝাতে চাচ্ছেন, যেসব নারী এমন হালকা কিছু পরিধান করে, যা শরীরকে আচ্ছাদিত না করে আরো ফুটিয়ে তোলে; এমন নারীরা নামেমাত্র পোশাক পরিহিতা, প্রকৃতপক্ষে তারা উলঙ্গ। (তানভিরুল হাওয়ালিক : ৩/১০৩)</p> <p>৪. ঢিলেঢালা হওয়া : নারীর পোশাক এতটুকু ঢিলেঢালা হওয়া আবশ্যক, যাতে তার শরীরের অবয়ব প্রকাশ না পায়। বোরকা ঢিলেঢালা না হলে উদ্দেশ্যই অর্জিত হয় না। উসামা বিন জায়েদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে একটি মোটা মিসরীয় পোশাক উপহার দিলেন। পোশাকটি আমি আমার স্ত্রীকে পরতে দিলাম। রাসুল (সা.) আমাকে বললেন : তুমি সেই মিসরীয় পোশাকটি পরছ না কেন? আমি বললাম : আমি আমার স্ত্রীকে দিয়েছি। তিনি বললেন : তাকে আদেশ দেবে যাতে করে এই পোশাকের নিচে একটি শেমিজ পরে। কেননা আমার আশঙ্কা হচ্ছে এই পোশাক তার হাড্ডির আকৃতি ফুটিয়ে তুলবে। (আল আহাদিসুল মুখতারা : ১/৪৪১)</p> <p>৫. সুগন্ধি মাখানো না হওয়া : নারীদের জন্য ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সুগন্ধি ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। ‘যে নারী সুগন্ধি মেখে (পুরুষ) জনসমষ্টির পাশ দিয়ে গমন করে, যাতে করে তার সুগন্ধি তাদের নাকে লাগে, সে নারী ব্যভিচারী (তুল্য)।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১০৬৫)</p> <p>৬. খ্যাতি অর্জনের জন্য না হওয়া : খ্যাতি বা সুনামের জন্য বোরকা বা অন্য কোনো পোশাক পরিধান করবে না। কেননা মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার জন্য পোশাক পরবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন, অতঃপর তাকে আগুনে জ্বালাবেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬০৭)</p> <p><strong>হিজাব ও বোরকার উপকারিতা</strong></p> <p>শরিয়ত নারীকে বোরকা ও হিজাব পরিধানের নির্দেশ দিয়েছে, যা নারীর জীবনে নিম্নোক্ত কল্যাণ বয়ে আনে। যেমন—</p> <p>১. নৈতিক জীবনের নিশ্চয়তা : পর্দার বিধান মানুষকে নৈতিক জীবনের নিশ্চয়তা দেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বৃদ্ধা নারী, যারা বিয়ের আশা রাখে না, তাদের জন্য অপরাধ নেই, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের বহির্বাস খুলে রাখে, তবে (নৈতিক জীবনযাপনের জন্য) এটা থেকে তাদের বিরত থাকাই উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৬০)</p> <p>২. পবিত্র জীবনের নিশ্চয়তা :  শরয়ি পর্দা পালন মানুষের জীবনকে পবিত্র করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা স্ত্রীদের কাছে কোনো কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৩)</p> <p>৩. রোগাক্রান্ত হৃদয়ের জন্য নিরাপত্তা : যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, তাদের জন্য পর্দার বিধান সুরক্ষাস্বরূপ। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তাহলে পরপুরুষের সঙ্গে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বোলো না, যাতে অন্তরে যার ব্যাধি আছে, সে প্রলুব্ধ হয় এবং তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩২)</p> <p>৪. দোষত্রুটির অন্তরাল : পর্দা মানুষের দোষত্রুটির জন্য অন্তরালস্বরূপ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে নারী নিজের ঘর ছাড়া অন্যত্র তার কাপড় খুলে ফেলে আল্লাহ তার থেকে (দোষত্রুটির) অন্তরাল সরিয়ে দেন।’ (সামিউস সগির, হাদিস : ২৯৫৫)</p> <p>৫. আল্লাহভীতি অর্জনের মাধ্যম : পর্দার বিধান পালন ও শালীন জীবনযাপনের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহভীতির জীবন অর্জন করতে পারে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আদম সন্তান! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদের পোশাক দিয়েছি এবং তাকওয়ার পোশাক—এটাই সর্বোত্কৃষ্ট।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৬)</p> <p>আল্লাহ সবাইকে সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করে চলার তাওফিক দিন। আমিন।</p>