<p>দুই যুগ আগে ফাস্ট বোলারের সঠিক পরিচর্যার বিষয়ে একদমই সচেতন ছিল না বাংলাদেশ। এ কারণে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০১ সালের ডিসেম্বরের হ্যামিল্টন টেস্টে মাশরাফি বিন মর্তুজার ছটফটানি কানেই তোলেননি তখনকার অধিনায়ক। স্বাগতিক দলের একমাত্র ইনিংসে ২৭ ওভার বোলিং করার পথে পাঁজরের চোটে কাবু এই ফাস্ট বোলার বারবারই ‘আর পারছিনে’ বলে আকুতি জানিয়েও রেহাই পাননি। অধিনায়কের মুখ থেকে ভাঙা রেকর্ডের মতো শুনেছেন, ‘তুই না করলে বোলিংটা করবে কে?’</p> <p>এখন অবশ্য পরিস্থিতি বদলেছে। ফাস্ট বোলারদের খেলানো হয় রয়ে-সয়ে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিয়ে রাখা হয় ঝরঝরে। এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের সময় বিশ্রাম পেয়ে সতেজ নাহিদ রানা জ্যামাইকার স্যাবাইনা পার্কে গতির এমন ঝড় তুলেছেন যে ধারাভাষ্যকরা স্যামুয়েল বদ্রি তো বলেই ফেলেছেন, ‘বাংলাদেশের হাতে একটি রত্নই আছে।’ মাত্র ১৬৪ রানের পুঁজি নিয়েও প্রথম ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজদের ১৮ রানের লিড পাওয়ার মূল কারিগর ২২ বছর বয়সী এই ফাস্ট বোলার।</p> <p>ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেটের স্বাদ নেওয়া তরুণ গুঁড়িয়ে দেন স্বাগতিকদের ব্যাটিং। তার আগ্রাসী বোলিংয়ের গুণমুগ্ধ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ফাস্ট বোলার ইয়ান বিশপ বহুকাল ধরেই ক্যারিবিয়ানে বাংলাদেশের ব্যাটারদের বিপর্যয় দেখে আসছেন। নাহিদ রানা এবার ‘টেবিলটা উল্টে দিয়েছেন’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।</p> <p>বোলিংয়ে দুরন্ত গতির সঙ্গে বুদ্ধিরও মিশেল ঘটাতে শিখে যাওয়া এই ফাস্ট বোলারের মধ্যে সত্যিই যেন এক রত্ন ঝিলিক দিয়ে উঠছে।</p> <p>জ্যামাইকা টেস্টের দ্বিতীয় দিন নিজের তৃতীয় ওভার থেকেই গতি দিয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের কাঁপাতে শুরু করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে উঠে আসা এই ক্রিকেটার। প্রথম দুই বলে যথাক্রমে গতি ছিল ঘণ্টায় ১৫০.১ ও ১৪৯.২ কিলোমিটার। পরের তিনটি ডেলিভারির দুটিই আবার পেরোয় দেড় শর সীমা। একই ওভারের শেষ বলে ক্যারিবীয় ওপেনার মিকাইল লুইসকে তুলে নেওয়া ডেলিভারিটা ছিল ১৪৭ কিলোমিটার গতির। শুরুর ওই বোলিংয়েই জ্যামাইকা টেস্টে নাহিদের সাফল্যের বার্তা পেয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের ফাস্ট বোলিং কোচ আন্দ্রে অ্যাডামস।</p> <p>তৃতীয় দিনের খেলা শেষে তিনি বলছিলেন, ‘আমরা জানতাম যে এ রকম কিছু হচ্ছেই (৫ উইকেট)। কারণ আপনি যখন ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করে যেতে থাকবেন, এক পর্যায়ে উইকেট ধরা দেবেই।’ তবে নাহিদের আরেকটি দিকও টেনেছে অ্যাডামসকে। সেটি এই বোলারের ‘অ্যাকুরেসি’। দ্বিতীয় দিনে ৯ ওভার বোলিং করে শুধু লুইসের উইকেট পাওয়া নাহিদের পরের দিন ধরা আরো চার শিকারের মধ্যে আছে স্লোয়ারেও সাফল্য। গতি দিয়ে ক্যারিবীয় ব্যাটারদের ঝামেলায় ফেললেন যেমন, তেমনি বৈচিত্র্য যোগ করা বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়েও নজর কাড়লেন। সেই সঙ্গে মাত্র ৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে লাইন-লেংথ আর নিয়ন্ত্রণেও নিয়মিতই উন্নতির ছাপ রেখে চলেছেন নাহিদ। আর বাউন্সার কেমার রোচের কাঁধে লাগিয়ে তাকে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকে বোলিং করতে না দেওয়ার আগ্রাসন তো আছেই। সব মিলিয়েই বিশপদের বুঁদ হয়ে থাকার এক ‘প্যাকেজ’ হয়ে উঠেছেন নাহিদ!</p>