<p>ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের আয়োজনে শুরু হলো ১৮তম কেন্দ্রীয় বার্ষিক নাট্যোৎসব। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ১১ দিনব্যাপী এই উৎসব শুরু হয়। ৩ থেকে ১৩ ডিসেম্বর টিএসসি মিলনায়তনে প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মঞ্চস্থ হবে নাটক। উদ্বোধনী সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান।</p> <p>বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা এবং কলা অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।</p> <p>‘বুকের ভিতর দারুণ ঝড়, আজ সৃষ্টি-সুখে উল্লাস কর’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত উৎসবে স্নাতক সমাপনী সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের নির্দেশনায় মোট ১৮টি নাটক মঞ্চস্থ হবে বলে জানান বিভাগের চেয়ারপার্সন কাজী তামান্না হক সিগমা।</p> <p>তিনি বলেন, ‘আমাদের সামষ্টিক জীবনে দ্রোহ, সাম্য, সম্প্রীতি ও সংহতির এক বহুত্ববোধক বাংলাদেশের রূপকল্প তুলে ধরা হবে এ উৎসবে’। ঢাবি কেন্দ্রীয় বার্ষিক নাট্যোৎসব এবার আঠারো বছর পূর্ণ করছে এবং বিভাগেরও তিন দশক পূর্তি হচ্ছে বলেও জানান চেয়ারপার্সন।</p> <p>উৎসবের উদ্বোধনী সন্ধ্যায় বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হবে ইসলাম উদ্দিন পালাকারকে। এসময় পালাকার ‘কমলা রানীর সাগর দীঘি’ পরিবেশন করেন।</p> <p>উৎসবের তৃতীয় দিনে থাকছে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শেখ রাহাতুল ইসলামের নির্দেশিত নাটক ‘হুয়েগো দে দামাস’। কিউবান নাট্যকার হুলিয়ো মাতাসের এই নাটকটি অনুবাদ করেছেন সৌম্য সরকার।</p> <p>‘হুয়েগো দে দামাস’ নাটকটি একটি জটিল মনস্তত্বের প্রকাশ। নাটকটি ত্রিশোর্ধ্ব তিন বান্ধবী ফ্লোরেনহেল, এরনেসতিনা এবং চেলেসতেকে নিয়ে। প্রায় ১২ বছর পর তাদের দেখা হয়, পুরো বাসা জুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজমান। ফ্লোরেনহেল যখন বাসায় প্রবেশ করে তখন থেকেই বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। হাসিঠাট্টার মাঝেই চেলেসতে, এরনেসতিনা ও ফ্লোরেনহেলকে ছোটখাটো শারীরিক এবং মানসিক আঘাত করতে শুরু করে। ফ্লোরেনহেল বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লে উভয়ে  পরিবেশকে আবার শান্ত করে। ধীরে ধীরে চেলেসতে তার পূর্বের দিনের কাহিনী স্মরণ করতে থাকে, যেখানে ফ্লোরেনহেল তাদের কাছে দোষী। ফ্লোরেনহেল তার এসব কথা শুনে আরো বেশি বিব্রত বোধ করে এবং চলে যেতে চায়। ফ্লোরেনহেলকে তারা আবারও স্বাভাবিক করতে চায় এবং সবাই মিলে ওয়াইন খায়। কিন্তু তারা ফ্লোরেনহেলের ওয়াইনে কিছু একটা মিশিয়ে দেয় যার ফলে সে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ঘটনাটি একটি করুণ পরিণতির মধ্য দিয়ে শেষ হয়। নাটকে অভিনয়ে কাজ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ৩ বর্ষের শিক্ষার্থী মন্দিরা গোলাপ, ঊর্মি আক্তার সোমা, সাইলিনা বিশ্বাস পূর্বা। লাইট অপারেটরে ফরহাদ হোসেন এবং রায়হান উল্লাহ।</p> <p>নাটকের নির্দেশক শেখ রাহাতুল ইসলাম বলেন, মানুষের মাঝে মানসিক দ্বন্দ্ব, আত্মকেন্দ্রিকতার প্রভাব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে বিষয়টি নিয়েই নাটিকটির কাহিনী। যা নিজের হতে পারে না তা অন্যেরও হতে পারে না, এই পরশ্রীকাতর মনোভাব সুখ, শান্তিকে দুষ্প্রাপ্য করেছে। সহজ-সরল চিন্তার প্রলেপেই হয় জটিলতার সূত্রপাত। সুযোগ সন্ধানী কার্যকলাপ অন্যের স্বপ্নকে পায়ে মাড়ায় আর সেই দুর্বিষহ দুঃস্বপ্নই অন্যের জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়। সমাজে প্রতিশোধপরায়ণতার মধ্য দিয়েই আত্মতুষ্টির পথ খোঁজে ব্যর্থ মানুষ।</p>