<p>ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর সিদ্দিক (রা.)। নবীজি (সা.) অসুস্থ হলে তিনি আবু বকর (রা.)-কে নামাজের ইমামতির দায়িত্ব দেন। এ জন্য নবীজি (সা.)-এর ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে কিরাম (রা.) তাঁকে খলিফা মনোনীত করেন। মুসলিম উম্মাহর খলিফা হওয়ার পরও তাঁর জীবন ছিল অত্যন্ত সাদাসিধে।</p> <p>তিনি রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে যতটা নির্মোহ ছিলেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য এবং পরবর্তী উম্মতের জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ। খলিফা হওয়ার পরদিনই আবু বকর সিদ্দিক (রা.) কাপড়ের বোঝা মাথায় নিয়ে বাজারের পথে রওনা হলেন। তিনি ছিলেন কাপড়ের ব্যবসায়ী। খলিফা হওয়ার আগে তিনি কাপড়েরই ব্যবসা করতেন।</p> <p>এতেই তাঁর সংসার চলত। খলিফা হওয়ার পর তিনি নিজের উপার্জনেই পরিবারের খরচ নির্বাহ করতে চাইলেন। কিন্তু ওমর (রা.) তাঁকে কাপড়ের বোঝা মাথায় নিয়ে চলতে দেখে ভাবলেন, এতে মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থ বিঘ্নিত হতে পারে। তিনি তাঁকে ব্যবসা করতে নিরুৎসাহ করলেন।</p> <p>তিনি তাঁকে আবু ওবায়দা (রা.)-এর কাছে নিয়ে গেলেন। সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বায়তুল মাল থেকে তাঁর জন্য প্রতিদিন অর্ধেক ভেড়া ও বার্ষিক দুই হাজার দিনার (স্বর্ণ মুদ্রা) বেতন নির্ধারণ করা হলো। এ ছাড়া তাঁর জন্য শীত ও গ্রীষ্মের কাপড় বরাদ্দ করা হলো। পরে এই বেতন বাড়িয়ে দৈনিক একটি ভেড়া ও বার্ষিক তিন হাজার দিনার করা হলো, এটি তাঁর প্রয়োজন ছিল। মিম্বারে দাঁড়িয়ে এ ব্যাপারে তিনি উম্মাহর সম্মতি নিলেন। তাঁদের খাবার ছিল রুটি, মাংস আর তিনি ছিলেন অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ।</p> <p>মৃত্যুর সময় তিনি যা রেখে গিয়েছিলেন তা হচ্ছে একটি দাস, একটি গামলা ও একটি চাদর। এসব তিনি পরবর্তী খলিফাকে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর তাঁর যা কিছু স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ছিল, তা বিক্রি করে বায়তুল মাল থেকে যা নিয়েছিলেন, তা ফেরত দিতে বলে গিয়ে ছিলেন। এ কথা শুনে ওমর (রা.) কেঁদে বলেছিলেন, আবু বকর (রা.) তাঁর পরবর্তীদের জন্য কঠিন দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন। খলিফা হওয়ার পরও তিনি আগে যা করতেন, তাই করেছেন। প্রতিবেশী ছোট ছোট মেয়েকে দুধ দোহন করার কাজে আগের মতোই সাহায্য করতেন।</p> <p>ওমর (রা.) এক বৃদ্ধার বাড়িতে প্রতিদিন ভোরে যেতেন ও তাঁর কাজ করে দিতেন। একদিন গিয়ে দেখলেন, কে যেন আগেই কাজগুলো করে দিয়ে গেছে। রোজই এমন হতে থাকল। তারপর একদিন ওমর (রা.) দেখতে পেলেন, কাজ শেষ করে যিনি বেরিয়ে আসছেন তিনি হচ্ছেন আবু বকর সিদ্দিক (রা.)। এমন গুণাবলির অধিকারী হয়েছিলেন বলেই রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমি যদি আমার উম্মতের ভেতর থেকে কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম, তবে অবশ্যই আবু বকরকেই গ্রহণ করতাম। কিন্তু সে আমার ভাই, সঙ্গী।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৬৫৬)</p> <p>আল্লাহ সবাইকে সঠিকভাবে দ্বিন পালনের তাওফিক দিন। আমিন।</p> <p><em>সূত্র : আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ও তারিখুল ইসলাম</em></p>