<p>ইসলামে পবিত্রতা অর্জন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দৈনন্দিন জীবনে গোসল শুধু শারীরিক পরিচ্ছন্নতার উদ্দেশ্যে নয়, বরং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ এবং ইবাদতের একটি অংশ হিসেবে গণ্য। তাই কোরআন-হাদিসের আলোকে গোসলের জরুরি বিধান জানা নারী-পুরুষ সবার একান্ত প্রয়োজন।</p> <p><strong>কোরআনে গোসলের নির্দেশ</strong></p> <p>আল্লাহ তাআলা নামাজের প্রস্তুতির জন্য ছোট নাপাকির জন্য অজু এবং বড় নাপাকি থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসলের নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআনে এসেছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা যখন নামাজের জন্য উঠবে তখন নিজেদের চেহারা ও কনুই পর্যন্ত হাত ধুয়ে নেবে, মাথা মাসেহ করবে এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত করো)। তোমরা যদি অপবিত্র অবস্থায় থাকো, তাহলে নিজেদের দেহ (গোসলের মাধ্যমে) ভালোভাবে পবিত্র করে নেবে।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৬)</p> <p>অপবিত্র অবস্থায় নামাজ পড়া বৈধ নয়। তাই সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে, (...আর গোসল ফরজ হওয়া অবস্থায় তোমরা (নামাজের) কাছেও যেয়ো না, যতক্ষণ না গোসল করো...। (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪৩)</p> <p><strong>চার কারণে গোসল ফরজ</strong></p> <p>শরিয়তে গোসল চার প্রকার। ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব। আর চার কারণে গোসল ফরজ হয়—</p> <p>এক. স্বামী-স্ত্রী মিলন করলে কিংবা অন্য কোনো কারণে উত্তেজনার সঙ্গে বীর্যপাত ঘটলে গোসল ফরজ। (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৬)</p> <p>দুই. ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে গোসল ফরজ হয়। (বুখারি, হাদিস : ২৭৮)</p> <p>তিন. নারীদের হায়েজ শেষ হলে গোসল ফরজ হয়। (বুখারি, হাদিস : ৩১৪)</p> <p>চার. (সন্তান প্রসবের পর) নিফাসের রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে গোসল ফরজ। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৫)</p> <p><strong>তিন কারণে গোসল ওয়াজিব</strong></p> <p>এক. কোনো মুসলমান মৃত্যুবরণ করলে জীবিতদের ওপর তাকে গোসল দেওয়া ওয়াজিব। (মুসলিম, হাদিস : ২০৪৭)</p> <p>দুই. মাইয়েতকে গোসল দেওয়ার পর গোসলদাতার ওপর গোসল করা ওয়াজিব। তবে কেউ কেউ এটাকে সুন্নত বলেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১৪৭)</p> <p>তিন. কোনো কাফির ইসলাম গ্রহণ করলে তার ওপর গোসল করা ওয়াজিব। (নাসায়ি, হাদিস : ১৮৮)</p> <p><strong>চার কারণে গোসল করা সুন্নত</strong></p> <p>এক. জুমার দিন জুমার নামাজের জন্য গোসল করা সুন্নত। (বুখারি, হাদিস : ৮৫০)</p> <p>দুই. ঈদের দিন ঈদের নামাজের জন্য গোসল করা সুন্নত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩১৫)</p> <p>তিন. হজ ও ইহরাম বাঁধার জন্য গোসল করা সুন্নত। (তিরমিজি, হাদিস : ৮৩০)</p> <p>চার. হাজিদের জন্য আরাফার ময়দানে অবস্থানকালে গোসল করা সুন্নত। (সুনানুল কুবরা, হাদিস : ৫৯১৯)</p> <p><strong>গোসলের সুন্নত তরিকা</strong></p> <p>গোসল করার সুন্নত তরিকা হলো প্রথমে পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে গোসলের নিয়ত করা। ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পাঠ করা। পৃথকভাবে উভয় হাত কবজিসহ ধৌত করা। শরীর বা কাপড়ের কোনো স্থানে নাপাকি লেগে থাকলে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করা। অতঃপর অজু করে সমস্ত শরীর ধৌত করা।</p> <p>আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন ফরজ গোসল করতেন, তখন তিনি দুই হাত ধৌত করতেন এবং নামাজের অজুর মতো অজু করতেন। তারপর গোসল করতেন। পরে তাঁর হাত দিয়ে চুল খিলাল করতেন। চামড়া ভিজেছে বলে যখন তিনি নিশ্চিত হতেন, তখন তাতে তিনবার পানি ঢালতেন। তারপর সমস্ত শরীর ধুয়ে ফেলতেন। আয়েশা (রা.) আরো বলেছেন, ‘আমি ও রাসুলুল্লাহ (সা.) একই পাত্র থেকে গোসল করতাম। আমরা একসঙ্গে তা থেকে আঁজলা ভরে পানি নিতাম।’ (বুখারি, হাদিস : ২৭০)</p>