<p>আমাদের জীবনে দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের অন্যতম হাতিয়ার হলো দোয়া। দোয়ার মাধ্যমেই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। কখনো কখনো আল্লাহর কাছে সবিনয় নিবেদনের মধ্য দিয়ে আমাদের অনেক দুর্লভ বস্তুও সহজলভ্য হয়ে যায়; আবার কখনো কখনো শত দোয়ার ফলেও আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হয় না। ফলে আমরা হতাশ হয়ে পড়ি; এক রাশ অভিযোগ-অনুযোগ নিয়ে আল্লাহর সঙ্গে অভিমান করে দোয়া করা ছেড়ে দিই।</p> <p>দোয়া কবুল হওয়া সম্পর্কে আমাদের এই ভুল ধারণার প্রধান কারণ হলো আমাদের অধৈর্যতা। আল্লাহ আমাদের শুধু দোয়া করার নির্দেশই দেননি, বরং দোয়া করার পাশাপাশি ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশও দিয়েছেন—এ কথা আমরা রীতিমতো ভুলে যাই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫৩)</p> <p>অর্থাৎ আল্লাহর সাহায্য পেতে হলে সর্বাবস্থায় তাঁর কাছে দোয়া করাটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ধৈর্য ধারণ করাটাও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় আমাদের দোয়া কবুল না হলে আমরা ভাবি, আল্লাহ হয়তো আমার ডাকে সাড়া দেন না। ফলে নিজেকে সর্বদা হীন ভাবতে শুরু করি।</p> <p>এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন আমার বান্দারা আমার ব্যাপারে প্রশ্ন করে, আমি তো কাছেই আছি। আমি সাড়া দিই প্রার্থনাকারীর প্রার্থনায়; তাদেরও উচিত আমার ডাকে সাড়া দেওয়া এবং আমাকে বিশ্বাস করা, যাতে তারা সুপথ পায়।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৬)</p> <p>অর্থাৎ আল্লাহর সুপথ পেতে হলে সর্বদা তাঁর প্রতি বিশ্বাস এবং সুধারণা রাখা জরুরি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার বান্দা আমার প্রতি যেমন ধারণা করে আমি তার প্রতি তেমন।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৪০৫)</p> <p>আল্লাহর কাছে যা চাই তা-ই যে পেতে হবে—তেমনটা আমাদের লক্ষ্য থাকা উচিত না, বরং যেকোনো প্রয়োজনে আল্লাহর কাছে চাওয়াটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমরা দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে এতটাই মত্ত হয়েছি যে কোনটা আমাদের জন্য কল্যাণকর আর কোনটা অকল্যাণকর সে ব্যাপারে উদাসীন। ফলে আল্লাহর কাছে কাঙ্ক্ষিত বস্তু না পেলেই আমরা ভাবি—সব শেষ হয়ে গেছে।</p> <p>কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের ভালো-মন্দ সব ব্যাপারেই অবগত। তিনি বলেন, ‘হয়তো তোমরা যা অপছন্দ করো তা-ই তোমাদের জন্য কল্যাণকর আর যা তোমরা পছন্দ করো, সেটা হতে পারে অকল্যাণকর। বস্তুত আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২১৬)</p> <p>কাজেই আল্লাহর কাছে দোয়া করার পর কাঙ্ক্ষিত বস্তু না পেলে অধৈর্য হওয়া উচিত না, বরং ধরে নেওয়া উচিত যে এটা আমাদের জন্য কল্যাণকর ছিল না। আল্লাহর কাছে হাজারো আকুতির বিনিময়েও যদি দোয়া কবুল না হয়, তবে ধরে নিতে হবে আল্লাহ আখিরাতে এই দোয়ার উত্তম প্রতিদান দেবেন। আল্লাহ বান্দার কোনো ভালো কাজকেই প্রতিদানহীন রাখেন না।</p> <p>রাসুল (সা.)-এর এক হাদিসে এসেছে, শেষ বিচারের দিন আল্লাহর এক বান্দার সামনে পুরস্কারের বিশাল এক পাহাড় নিয়ে আসা হবে। বান্দা বলবে, ‘ইয়া আল্লাহ! এগুলো কার?’ আল্লাহ বলবেন, ‘এগুলো তোমার।’ বান্দা কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইবে না এতগুলো পুরস্কার তার। কারণ সে জানে দুনিয়ায় থাকতে এগুলো পাওয়ার মতো আমল সে করেনি। আল্লাহ বান্দাকে বলবেন, ‘তোমার মনে আছে, তুমি আমার কাছে অনেক দোয়া করতে দুনিয়ায়। সেই দোয়াগুলোর কিছু জবাব আমি দিয়েছিলাম, কিছু দিইনি। জবাব না দেওয়া দোয়াগুলোর বদলে আমি তোমাকে এই পুরস্কার দিচ্ছি।’ বান্দা তখন আফসোস করে বলবে, ‘ইয়া আল্লাহ! কেন আপনি দুনিয়ায় আমার কিছু দোয়া কবুল করেছিলেন! আপনি যদি একটা দোয়াও কবুল না করতেন তাহলে আমি আজ কতগুলো পুরস্কার পেতাম!’ (মুসনাদে ইমাম আহমাদ, হাদিস : ১১১৩৩)</p> <p>যখনই আল্লাহর কাছে দোয়া করতে করতে আমরা হতাশ হয়ে পড়ি, তখনই মহানবী (সা.)-এর এই হাদিসটি আমাদের স্মরণ করা উচিত। তাই দোয়া কবুল নিয়ে হতাশ না হয়ে ধৈর্যের সঙ্গে দোয়া চালিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ধৈর্যের সঙ্গে দোয়া করার তৌফিক দান করুন। আমিন।</p>