<p>ঈমানের মূল হলো নবীপ্রেম। যে যত বেশি নবীপ্রেমে নিজেকে বিলীন করে দিয়েছে, নবীপ্রেমে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছে, সে তত বেশি আল্লাহকে পেয়েছে। সাহাবিদের জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সব সাহাবির মনেই নবীজির প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা ছিল। ছিল নবীজিকে দেখার ব্যাকুলতা।</p> <p>তাফসিরে মাজহারিতে মুসলিম, আবু দাউদ ও নাসায়ির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রবিয়া বিন কাব আসলামি (রা.)-কে একদিন রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে রবিয়া! তোমার কোনো ইচ্ছা থাকলে আমাকে বলো। আমি দোয়া করব। তুমি যা চাইবে তাই পাবে।’ </p> <p>রবিয়া বলল, ‘ওগো নবী আমার! আমি আপনার পাগল। আপনাকে এক মুহূর্ত না দেখে থাকতে পারি না। আপনি দোয়া করেন আমি যেন জান্নাতেও আপনার কদমে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারি।’ </p> <p>নবীজি বলেন, ‘হে রবিয়া ভেবে বলো এটাই কি তোমার চাওয়া?’ রবিয়া বলল, ‘জি হুজুর! এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোনো চাওয়া হতে পারে না।’ নবীজি মুচকি হেসে বললেন, ‘তাহলে বেশি বেশি সিজদা করো, যেন তোমার জন্য আমি সুপারিশ করতে পারি।’ (তাফসিরে মাজহারি, তৃতীয় খণ্ড, ১৬৬-পৃষ্ঠা)</p> <p>নবুয়তি নুর পেতে হলে নবীজিকে (সা.) ভালোবাসতে হয়। রাসুল (সা.) একাধিক হাদিসে ঘোষণা করেছেন, ‘কেউ যদি তার জীবন, সম্পদ, স্ত্রী-পুত্র ও মা-বাবার চেয়ে আমি নবীকে বেশি না ভালোবাসে তাহলে সে ব্যক্তি ঈমানদার হতে পারবে না।’</p> <p>এক বর্ণনায় এসেছে, নবীজি (সা.) ওমর (রা.)-কে বলেন, ‘হে ওমর! তুমি কি আমাকে তোমার জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসো?’ জবাবে ওমর বললেন, ‘হে নবী! আমি আমার সম্পদ, সন্তান, মা-বাবা সবার চেয়ে আপনাকে বেশি ভালোবাসি। তবে আমার জীবনের চেয়ে বেশি এখনো আপনাকে ভালোবাসতে পারেনি।’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘তাহলে মুমিন হতে তোমার এখনো অনেক দেরি আছে।’ এ কথা শুনে ওমর (রা.) বলেন, ‘হুজুর! এ মুহূর্ত থেকে জীবনের চেয়েও আপনাকে বেশি ভালোবাসি। রাসুল (সা.) বলেন, এবার তুমি মুমিন হতে পেরেছো।’</p> <p>শুধু ওমরই (রা.) নয়, বরং সব সাহাবি রাসুল (সা.)-কে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবেসেছেন। আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুল (সা.) দুপুরে আমাদের ঘরে বিশ্রাম নিতে এলে আমার মা উম্মে সুলাইম হুজুরের জন্য বিছানা করে দিতেন। দয়াল নবী যখন ঘুমিয়ে পড়তেন তখন উম্মে সুলাইম নবীজির ঘাম ও চুল মোবারক আলাদা করে সংগ্রহ করতেন।’ অনেক বছর পর যখন আনাস (রা.) মৃত্যুর দুয়ারে, তিনি অসিয়ত করে বললেন, ‘আমার ইন্তেকালের পর রাসুলের ঘাম আমার কাফনে মেখে দিয়ো। তার অসিয়ত অনুযায়ী মৃত্যুর পর রাসুলের ঘাম তার কাফনে মেখে দেওয়া হলো।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯২৫)</p> <p>সাহাবায়ে কিরাম রাসুল (সা.)-কে কেমন ভালোবাসতেন তার একটি উদাহরণ পাওয়া যায় আবু জুহাইফ (রা.)-এর বর্ণনায়। তিনি বলেন, ‘আমি তাবুক অভিযান থেকে ফেরার পথে রাসুলকে (সা.) একটি লাল তাঁবুতে দেখেছি। বেলাল (রা.)-কে দেখলাম একটি পাত্রে রাসুলের অজুর অবশিষ্ট পানি নিয়ে এলেন। সে পানি নেওয়ার জন্য সাহাবিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। কে কার আগে নবীজির অজুর পানি নেবে! কেউ সে পানি খাচ্ছে। কেউ গায়ে মাখছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, যারা রাসুলের অজুর পানি পায়নি তারা এমন মানুষের হাতের সঙ্গে হাত, বুকের সঙ্গে বুক মিলাচ্ছে যারা পানি পেয়েছ।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৫২১)</p> <p>উরউয়া বিন মাসুদ বলেছেন, আমি অনেক রাজা-বাদশাহর দরবারে প্রতিনিধিত্ব করেছি। কায়সার, কিসরা ও নাজাশির দরবারে গিয়েছি। আল্লাহর কসম! মুহাম্মদের সাহাবিরা তাঁকে যেভাবে ভালোবাসে অন্য কোনো রাজা-বাদশাহর অনুসারীরা তাদের মনিবকে সেভাবে ভালোবাসতে দেখিনি।</p> <p>মুহাম্মাদ (সা.) থুতু ফেললে সে থুতু কে নেবে এ নিয়ে প্রতিযোগিতা লেগে যায়। কারো হাতে যদি থুতু পড়ে সে সঙ্গে সঙ্গে তা গায়ে মাখবে, চেহারায় মাখবে, খেয়ে ফেলবে। তিনি কোনো আদেশ দিলে তা সঙ্গে সঙ্গে পালনের জন্য সবাই ছোটোছুটি শুরু করে দেয়। তিনি অজু করলে সে পানি পাওয়ার জন্য সাহাবিদের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। তিনি যখন কথা বলেন সাহাবিরা নিশ্চুপ হয়ে শুনতে থাকেন। সাহাবিরা তাঁর সঙ্গে বেয়াদবি হবে এই ভয়ে বাঁকা চোখে তাকাতেও সাহস করে না। (বুখারি, হাদিস : ২৫৮২)</p> <p> </p>