<p style="text-align:justify">সম্প্রতি তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘যারা মিডিয়ায় নিষিদ্ধ সংগঠন, গণহত্যার আসামি ও ফ্যাসিস্টদের প্রচার-প্রচারণা করার সুযোগ করে দেবে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’</p> <p style="text-align:justify">ফ্যাসিস্ট ও নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রচারণা বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টার হুঁশিয়ারি নিয়ে নানা আলোচনা ও বিতর্ক দেখা যাচ্ছে। </p> <p style="text-align:justify">নাহিদ ইসলামের এই ঘোষণা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যায় কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কারণ গত জুলাই-অগাস্ট মাসে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অংশগ্রহণে যে মাসব্যাপী আন্দোলন হয়েছিল, সেখানের অন্যতম প্রধান দুই দাবি ছিল ‘বাকস্বাধীনতা ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠন’।</p> <p style="text-align:justify">কিন্তু তথ্য উপদেষ্টার ফেসবুক পোস্ট থেকে সেই দুই দাবির প্রতিফলন ঘটছে না বলেন মনে করেন বিশ্লেষক ও মানবাধিকারকর্মীদের কেউ কেউ।</p> <p style="text-align:justify">মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘এখনো সেই একই ধরনের ঘটনা আমরা প্রত্যাশা করি না। গণতান্ত্রিকভাবে, সুষ্ঠু স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম চলুক, আমরা তা চাই।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সমন্বয়কদের দেখে অনেকের চোখ টাটাচ্ছে : রনি" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/09/1731148262-c9518faf759e4f8ed761d38c25cd8251.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সমন্বয়কদের দেখে অনেকের চোখ টাটাচ্ছে : রনি</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/Politics/2024/11/09/1444596" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্যকে মিডিয়ার জন্য হুমকি বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন। তিনি বলেন, ‘এখানে শুধু নিষিদ্ধ সংগঠনের কথা বলা হয়নি। ফ্যাসিস্ট বা গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের কথাও বলা হয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">নাহিদ ইসলামের বলা ‘নিষিদ্ধ সংগঠন, গণহত্যার আসামি ও ফ্যাসিস্ট’ সম্বন্ধে আইনে আসলে কী আছে? এ বিষয়ে আইনজ্ঞ ও মানবাধিকারকর্মীরাই বা কী বলছেন?</p> <p style="text-align:justify">বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, নাহিদ ইসলামের ওই ঘোষণা আসলে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি। তার ওই ঘোষণাকে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেওয়া বিভিন্ন ঘোষণা বা সেই আমলে হওয়া বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করতেও দেখা যাচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">কেউ কেউ এই প্রশ্ন করছেন, স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে উঠে আসা একজন তথ্য উপদেষ্টা কেন এমন ঘোষণা দেবেন, যা আসলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিপরীতে যায়?</p> <p style="text-align:justify">প্রচার-প্রচারণা দিয়ে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন? এর অর্থ কি এমন যে গণমাধ্যম তাদের কোনো খবর প্রচার করতে পারবে না? নাকি, ওই তিন শ্রেণির কারো সঙ্গে কোনো কিছু নিয়েই কথা বলতে পারবে না গণমাধ্যম?</p> <p style="text-align:justify">এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে নাহিদ ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তবে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।</p> <p style="text-align:justify">তার ফেসবুক পোস্টে তিনি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কথা লিখেছেন। বলেছেন, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি সুশীল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিককর্মীদের দিয়ে ফ্যাসিবাদের বয়ান ও বৈধতা তৈরি করে।</p> <p style="text-align:justify">তার মতে, এই দলের কুখ্যাত প্রপাগান্ডিস্টরা (অপপ্রচারকারীরা) নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নৃশংস খুনি নেতাদের জনপরিসরে হাজির করেছে। তারপর এখন সেটিকে নরমালাইজ (স্বাভাবিক) করতে বিভিন্ন মিডিয়া প্ল্যাটফরম ও সাংবাদিকরা উদ্যোগ নিচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">এসব করে কোনো লাভ হবে না জানিয়ে তিনি আরো যোগ করেন, ‘রক্তের ওপর দিয়ে আওয়ামী লীগের পতন ঘটেছে। আওয়ামী সিম্পেথাইজাররা এটা যত দ্রুত মেনে নেবে…তত মঙ্গল।’</p> <p style="text-align:justify">আইনজীবী থেকে শুরু করে মানবাধিকারকর্মী কিংবা শিক্ষক, অনেকেই মনে করছেন যে নাহিদ ইসলামের এমন বক্তব্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অন্তরায়।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="আ. লীগ মাঠে নামলে কী হবে জানালেন আসিফ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/09/1731145453-62bf1edb36141f114521ec4bb4175579.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>আ. লীগ মাঠে নামলে কী হবে জানালেন আসিফ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/09/1444583" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নাহিদ ইসলামের ওই বক্তব্য মিডিয়ার জন্য হুমকি। এখানে শুধু নিষিদ্ধ সংগঠনের কথা বলা হয়নি। যারা ফ্যাসিস্ট বা গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের কথাও বলা হয়েছে। মিডিয়ার ওপর খবরদারি, হুমকি তৈরি করা বা মিডিয়ার স্বাধীনতাকে হস্তক্ষেপ করা যাবে না। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডেও যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাকে বলতে দিতে হবে।’</p> <p style="text-align:justify">বেসরকারি চ্যানেল একুশে টেলিভিশনে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের ‘মিথ্যা, বানোয়াট ও উসকানিমূলক’ বক্তব্য প্রচারের অভিযোগে ২০১৫ সালে তারেক রহমানসহ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবদুস সালাম ও দুজন সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়েছিল।</p> <p style="text-align:justify">সেই ঘটনাকে মনে করিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘টক শো নিয়ে এ রকম ঘটনা তো এর আগেও আমরা ইটিভিতে তারেক জিয়ার বক্তব্য প্রচারের পর দেখেছি। কিন্তু এখনো সেই একই ধরনের ঘটনা আমরা প্রত্যাশা করি না। গণতান্ত্রিকভাবে, সুষ্ঠু স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম চলুক, আমরা তা চাই।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>নিষিদ্ধ সংগঠনের ব্যাপারে যা আছে আইনে</strong></p> <p style="text-align:justify">গণমাধ্যমে ‘নিষিদ্ধ সংগঠন, গণহত্যার আসামি ও ফ্যাসিস্টদের প্রচার’ নিয়ে আলাপ-আলোচনা বা তর্ক-বিতর্কের সূত্রপাত যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী একজন বাংলাদেশি সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের সঞ্চালিত একটি টক শোকে ঘিরে।</p> <p style="text-align:justify">সেই অনুষ্ঠানেই গত ৭ নভেম্বর রাতে অতিথি হিসেবে যুক্ত থাকার কথা ছিল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের। কিন্তু সাদ্দাম হোসেনের অতিথি হয়ে আসার ঘোষণার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা বিষয়টিকে ঘিরে ফেসবুকে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন।</p> <p style="text-align:justify">এক পর্যায়ে নিজের ব্যক্তিগত প্রফাইল থেকে সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে প্রগ্রাম স্থগিতের ঘোষণা দেন খালেদ মুহিউদ্দীন। স্থগিতের কারণ হিসেবে সেখানে আইনি জটিলতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="আ. লীগকে কোনো কর্মসূচি করতে দেওয়ার সুযোগ নেই : প্রেসসচিব" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/09/1731137166-41a6a4713de13f25da1f42efd5ad983d.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>আ. লীগকে কোনো কর্মসূচি করতে দেওয়ার সুযোগ নেই : প্রেসসচিব</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/09/1444550" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">কী ধরনের জটিলতা আছে, জানতে একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলা হয়। তারা সবাই বলেছেন, যেসব আইনের ভিত্তিতে গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি হয়, সেই আইনগুলোই প্রশ্নবিদ্ধ।</p> <p style="text-align:justify">প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির দাবির মুখে গত ২৩ অক্টোবর রাতে ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯’-এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।</p> <p style="text-align:justify">ওই সময় ওই দাবি বাস্তবায়নের জন্য তারা সরকারকে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু তাদের এক সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি। সময় শেষ হওয়ার আগেই সরকার তাদের দাবি মেনে নেয়।</p> <p style="text-align:justify">এ ক্ষেত্রেও ঠিক তেমন চিত্রই দেখা গেছে। সমন্বয়করা ওই টক শোর বিষয়ে আপত্তি জানানোর পর সরকারের তরফ থেকে তথ্য উপদেষ্টাও একই ধরনের ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">নিষিদ্ধ সংগঠনের বক্তব্য প্রচারের ক্ষেত্রে ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪’, ‘পেনাল কোড ১৮৬০’-এর একাধিক ধারা এবং ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯’-এর অধীনে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার বা জটিলতা তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">যে আইনের অধীনে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হলো, তার ধারা ৯ অনুযায়ী, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ১৮-এর অধীন কোনো নিষিদ্ধ সত্তাকে সমর্থন করিবার উদ্দেশ্যে কাহাকেও অনুরোধ বা আহ্বান করেন, অথবা নিষিদ্ধ সত্তাকে সমর্থন বা উহার কর্মকাণ্ডকে গতিশীল ও উৎসাহিত করিবার উদ্দেশ্যে কোনো সভা আয়োজন, পরিচালনা বা পরিচালনায় সহায়তা করেন, অথবা বক্তৃতা প্রদান করেন, তাহা হইলে তিনি অপরাধ সংঘটন করিবেন।’</p> <p style="text-align:justify">শুধু তাই নয়, ‘যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নিষিদ্ধ সত্তার জন্য সমর্থন চাহিয়া অথবা উহার কর্মকাণ্ডকে সক্রিয় করিবার উদ্দেশ্যে কোনো সভায় বক্তৃতা করেন অথবা রেডিও, টেলিভিশন অথবা কোনো মুদ্রণ বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে কোনো তথ্য সম্প্রচার করেন, তাহা হইলে তিনি অপরাধ সংঘটন করিবেন।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও যুদ্ধ ছড়ানোর ঝুঁকি নিয়ে ইরানের হুঁশিয়ারি" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/09/1731154714-22166c445cedd060e68c4c0dcdb545af.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও যুদ্ধ ছড়ানোর ঝুঁকি নিয়ে ইরানের হুঁশিয়ারি</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/world/2024/11/09/1444629" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">এখানে সত্তা মানে মূলত সংগঠনই। ২০০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি অবস্থার মধ্যে যে অধ্যাদেশ জারি করেছিলো, পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তা ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন’ হিসাবে সংসদে পাশ হয়। ২০১৩ সালে এই আইনের সংশোধনের সময় এই শব্দগত পরিবর্তন করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">এই আইনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার এই আইন দিয়েই বিরোধী দলকে মিছিল-আন্দোলন করতে দিতো না।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি এও বলেন, ‘সংগঠন নিষিদ্ধ হলেও ব্যক্তি নিষিদ্ধ হতে পারে না, সে যত ঘৃণিত হোক না কেন। তবে কেউ দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর এরকম প্রচার করাটা সুপ্রিম কোর্টের আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘আর, সংগঠন নিষিদ্ধ হলে সংগঠনের কোনো ব্যক্তি সংগঠন সংক্রান্ত কথা না বলে নিজস্ব কথা বলতে পারবেন। কিন্তু এখানে সমস্যা হলো, ছাত্রলীগের একজন নেতা ছাত্রলীগ সম্বন্ধেই বলবেন। তাই সে নিষিদ্ধের মাঝে পড়ে যাচ্ছে। চাইলে সে অন্য কিছু বলতে পারবে। কিন্তু সে দলীয় কর্মকাণ্ডকে জাস্টিফাই করে কিছু বলতে পারবো না। যদি কোনো ব্যক্তি এমন কোনো কর্মকাণ্ড করে, যা সন্ত্রাসের পর্যায়ে পড়ে এবং তিনি যদি তার বক্তব্যে এমন কিছু বলেন যা প্রচার হলে দেশের শৃঙ্খলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে…সেরকম হলে পেনাল কোডের অধীনেও অপরাধ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’</p> <p style="text-align:justify">‘পেনাল কোড, ১৮৬০’ - এর ধারা ১২১ (ক), বিশেষত ১২৪ (ক) - তে রাষ্ট্রদ্রোহের কথা বলা আছে।</p> <p style="text-align:justify">১২৪ (ক) ধারার নাম-ই ‘সিডিশন’ বা বিদ্রোহপূর্ণ আচরণ বা বিদ্রোহ। এই ধারায় বলা আছে যে কোনো ব্যক্তি যদি কোনোভাবে আইনসঙ্গতভাবে প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা বা অবজ্ঞা সৃষ্টি করে; অথবা, সৃষ্টি করার চেষ্টা করে; অথবা, সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তৈরি করতে অন্যকে প্ররোচিত করে বা প্ররোচিত করার চেষ্টা করে, তাহলে তার সেই কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে।</p> <p style="text-align:justify">আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ‘কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের বা সংগঠনের কর্মীর বক্তব্য প্রচার করলে সেটি ঘিরে জনআক্রোশের সৃষ্টি হতে পারে। অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। তাই, এই ধরনের (নিষিদ্ধ সংগঠনের) বিষয়গুলো সাংবাদিক বা অন্য কোনো ব্যক্তি সামনে আনলে সেও (ওই অপরাধের) সহযোগী হয়ে যেতে পারে।’</p> <p style="text-align:justify">আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঠিক এই কাছাকাছি কারণে বা সরকারের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো বক্তব্য প্রচারের কারণে অনেকের নামে মামলা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">রইলো বাকি ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪’। এই আইনের ধারা তিনের কারণে আইনি জটিলতা হতে পারে। এতে রাষ্ট্র-বিরোধী কার্যকলাপের সংজ্ঞা হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং প্রতিরক্ষা বিরোধী কার্যকলাপ, বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষতি সাধন, জন নিরাপত্তা বিরোধী কাজ করা, জনসাধারণের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা-সহ নানা বিষয়।</p> <p style="text-align:justify">এছাড়াও, জনগণের মধ্যে বা জনগোষ্ঠীর কোনো অংশের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করা, দেশের আইন ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় বাধা দেওয়া এবং দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করা রাষ্ট্র-বিরোধী কার্যকলাপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।</p> <p style="text-align:justify">‘বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী কিছু কার্যকলাপ প্রতিহত করার জন্য’ ১৯৭৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি এই আইন করা হয়। পাকিস্তানের নিরাপত্তা আইন ১৯৫২, জন নিরাপত্তা অর্ডিন্যান্স ১৯৫৮ এবং ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ তফসিলি অপরাধ (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশকে প্রতিস্থাপনের জন্য আইনটি পাশ করা হয়েছিলো।</p> <p style="text-align:justify">আহসানুল করিম বলেন, ‘এই আইন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও কোনো সরকারের আমলেই সেই আইনকে বাতিল করা হয়নি। বরং, যে যখন ক্ষমতায় এসেছে, এই আইনটি তার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এই আইনগুলোতে দেশের শান্তিশৃঙ্খলার কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে। এটি আসলে কী? উত্তরে আহসানুল করিম বলেন, ‘পাবলিক পিস (জনগণের শান্তি) কী, তা আবার সরকার ঠিক করবে।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>দ্বন্দ্ব ও দ্বিমত যেখানে</strong></p> <p style="text-align:justify">নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, গণহত্যার আসামি ও ফ্যাসিস্টদের প্রচার প্রচারণা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু আইনজীবীরা বলছেন, গণহত্যার আসামিরা সাক্ষাৎকার দিতে পারবেন না, আইনে এমন কিছু নেই এবং, আইনে ফ্যাসিস্ট বলে কোনো শব্দ নাই।</p> <p style="text-align:justify">আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ‘গণহত্যার আসামি হলে ইন্টার্ভিউ দেওয়া যাবে না, তা না। এর আগে হাইকোর্ট এক আদেশে বলেছিলো, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কোসো রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে পারবে না।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে যাবে না ভারত" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/09/1731154147-02aa8d9337e4c2446daccc6ea262fdf2.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে যাবে না ভারত</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/sport/2024/11/09/1444625" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">ফ্যাসিস্ট প্রসঙ্গে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রচার করে, তৈরি করে না। এখন, একটি ফ্যাসিস্ট সংগঠন কোথাও গিয়ে মিছিল করলো। সেই মিছিলের সংবাদ পরিবেশন করাটা সংবাদমাধ্যমের কাজ। সেই সংবাদ প্রচার না করা তথ্য গোপন হয়ে গেল।’</p> <p style="text-align:justify">তাই, ‘এখানে এই পার্থক্য বোঝা দরকার যে কোনটা অপরাধের উদ্দেশ্যে কাজ, কোনটা সংবাদমাধ্যমের কাজ। সংবাদমাধ্যম যদি এমন কোনো কর্মকাণ্ড প্রচার করে, যা থেকে বোঝা যায় যে তা খবর তৈরির চেষ্টা করছে বা কাউকে সহযোগিতা করছে, তাহলে সেই সংবাদমাধ্যম আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব।’</p> <p style="text-align:justify">প্রায় কাছাকাছি ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন। তিনি গণহত্যা প্রসঙ্গে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘গণহত্যায় জড়িত থাকার দল আরো আছে আমাদের দেশে। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে… আওয়ামী লীগ যা করেছে, ছাত্রলীগ যা করেছে, তাদের বিচারের জন্য হলেও তাদেরকে আলোচনায় আনতে হবে। তাদের যে কর্মকাণ্ড, তাদের জবাবদিহির জন্য মিডিয়ায় তাদের বক্তব্য শুনতে হবে। তা না করে (নাহিদ ইসলামের) এই ধরনের ঘোষণা বাকস্বাধীনতা বা সংবাদ মাধ্যমের ওপর হুমকিস্বরূপ।’</p> <p style="text-align:justify">মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলছেন, ‘নিষিদ্ধ বা ফ্যাসিস্টদের সংগঠনের কারো ওপরও যদি অবিচার মামলা অত্যাচার নিপীড়ন হয়, সেই ব্যাপারে মানবাধিকার কর্মীরা কথা বলবে, সাংবাদিকরা তথ্য প্রচার করবে, এটা একেবারেই স্বাভাবিক। এখানে আইন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত করার সুযোগ নেই।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘যখন কাউকে নির্যাতন করা হয় বা হুমকি দেওয়া হয়, সেটিও তো ফ্যাসিস্টসুলভ কার্যক্রম। সেক্ষেত্রে সরকারের কোনো পর্যায় থেকেই এই ধরনের কথাবার্তা প্রত্যাশা করছি না আমরা মানবাধিকার কর্মীরা। গত অগাস্ট মাসে যে গণঅভ্যুত্থান, এটি তো কথা বলার জন্যই। এটি তো স্বাধীনতা ভোগ করার জন্যই। কোনোভাবে স্বাধীনতাকে সীমিত করা বা মানুষের কণ্ঠরোধ করার জন্য এই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়নি।’</p>