ছাত্রদের গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, ‘নতুন দল করেছ ভালো কথা। কিন্তু দল করে যদি হুমকি-ধমকি দাও, যে এটা না হলে ওটা হবে না, ওটা না হলে এটা হবে না। তাহলে আমরা যে এত দিন দল করে, এত বড় একটা দল তৈরি করছি, তাহলে কি আমরা চুপ করে বসে থাকব? বিএনপি চুপ করে বসে থাকবে না।’
শনিবার (৮ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৯তম কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সভার আয়োজন করে উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম।
আরো পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘ভারতের ইতিহাস জানেন কিনা? আসামে একবার উন্নয়ন হচ্ছিল না। তখন কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল। তখন আসামের ছাত্ররা আন্দোলন করে সেখানকার কংগ্রেস সরকারের পতন ঘটিয়েছিল।
পরে অসম অধিকার পরিষদ নামে একটি ছাত্র পরিষদ করেছিল। তারা নির্বাচন করে নিরঙ্কুশ জয় লাভ করেছিল। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে তারা সরকার বেশিদিন চালাতে পারেনি। ৯ মাস কি এক বছর বয়স হয়েছিল, তারপরে সেই সরকারেরও পতন হয়েছিল। সুতরাং এটা নয় যে পৃথিবীর ইতিহাসে ছাত্ররা সরকার গঠন করেননি। কিন্তু ছাত্ররা চালাতে পারেননি। আপনারা (ছাত্ররা) রাজনৈতিক দল করেছেন। কিংস পার্টি বললে, আপনারা বলেন জিয়াউর রহমান কিংস পার্টি করেছিলেন। জিয়াউর রহমানের ম্যান্ডেট লাগেনি, এই কথা বললে ভুল হবে। তিনি জনগণের কাছে গেছেন। হ্যাঁ-না ভোট করেছেন। তারপর তিনি এই দেশে রাজনৈতিক দল বিএনপি গঠন করেছেন। যা আজকে দেশের সবচেয়ে বড় দল। যে দলের একটি কর্মীও নির্যাতনের মুখে ভয় পায় না, দল ছেড়ে অন্য কোথাও যায় না। এটা একদিনে হয়নি। তাই জিয়াউর রহমানের সঙ্গে এই দলের তুলনা করলে আপনারা (এনসিপি) ভুল করবেন। এতে আপনারাও নতুন করে চিন্তা করা শিখবেন না। আপনারা জিয়া হয়ে যাননি। যাদের কথা ছিল দেশের মানুষকে আলো দেখাবে, যাদের দেশের মানুষ ভোট দিয়েছিল, ২৫ মার্চ রাতে যখন পাকিস্তান হানাদার বাহিনী দেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, তখন তারা কেউ নাই। আওয়ামী লীগের পালিয়ে যাওয়ার যে অভ্যাস তা ওই রাতেই শুরু হয়েছে। ৭১ সালে তারা পালিয়ে ভারতে চলে গেল। তখন বাংলাদেশের সাত কোটি মানুষকে রক্ষা করার কোনো লোক ছিল না। সেই সময় এক মেজর স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। অন্ধকারের মধ্যে জিয়াউর রহমান আলো দেখিয়েছিলেন।’
পহেলা বৈশাখের সঙ্গে ধর্মের কোনো দ্বন্দ্ব নেই মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আজকে আমি খুব আতঙ্কিত হই। যে এ দেশে মানুষ আমরা, আমাদের যে মাটি সংস্কৃতি আছে, সেটার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি আমরা। জিয়াউর রহমান সাহেব যখন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, পহেলা বৈশাখের মধ্যরাতে রমনা বটমূলে গেছেন, উদযাপন করেছেন। কেননা এটা আমাদের মাটি থেকে অনুষ্ঠানটি উঠে এসেছে। গ্রাম-গঞ্জেও এই অনুষ্ঠান পালিত হয়। আমাদের কৃষকও এই অনুষ্ঠান পালন করে। এর সঙ্গে ধর্মের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। প্রত্যেকটি দেশের নাগরিক তাদের নৃতাত্ত্বিক সংস্কৃতি আছে। সুতরাং এ জিনিসগুলোকে বন্ধ করার যে অপচেষ্টা চলছে। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের মধ্যে অস্থিতিশীলতা তৈরি করা, ঘোলা পানি তৈরি করা, যাতে আবার পতিত সরকার ঘোলা পানিতে প্রবেশ করতে পারে।
আরো পড়ুন
নারী ও শিশু ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে মশাল মিছিল
আগামী নির্বাচন বিএনপির জন্য অনেক কঠিন হবে জানিয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘তারেক রহমান বলেছেন, আগামী দিনের নির্বাচন বিএনপির জন্য সবচেয়ে কঠিন হবে। আমিও বলছি, সবচেয়ে কঠিন হবে। আমাদের নানা শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। কেউ ধর্মের ট্যাবলেট বেচছে, কেউ খেলাফতের ট্যাবলেট বেচছে, নানাজন নানা ট্যাবলেট দিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের মন নেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাংলাদেশে মানুষ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেওয়া জাতীয়তাবাদকে বিশ্বাস করে। যাকে বলে সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে থাকা।’
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিম, জিয়া শিশু-কিশোর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, উপদেষ্টা মো. আবুল কাশেম, সদস্যসচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন প্রমুখ।