কক্সবাজারের টেকনাফের পাহাড়ে শুক্রুবার বিকালে পুলিশ এক সফল অভিযান চালিয়েছে। টেকনাফের হোয়াইক্যং নামক গহীন অরণ্যে পুলিশের অভিযানের সময় রোহিঙ্গা সশস্ত্র ডাকাতদলের সাথে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ৪ জন সশস্ত্র রোহিঙ্গা ডাকাত নিহত হয়েছে। পুলিশ নিহতদের নিকট থেকে ৪ টি অস্ত্র ও ৪০ হাজার পিচ ইয়াবা উদ্ধার করেছে। অল্পের জন্য রোহিঙ্গা আবদুল হাকিম ডাকাত পুলিশের হাতছাড়া হয়ে গেছে।
নিহতদের ২ জন হচ্ছে টেকনাফের পাহাড়ের দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা হাকিম ডাকাত বাহিনীর প্রধান আবদুল হাকিমের আপন সহোদর। অপর ২ জন তার বাহিনীর সদস্য। নিহত ৪ জনই রোহিঙ্গা ডাকাত বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। অল্পের জন্য ডাকাতদলের প্রধান আবদুল হাকিম (৪৮) পুলিশের হাতছাড়া হয়ে গেছে।
রোহিঙ্গা দুর্ধর্ষ হাকিম ডাকাতের দুই ভাইসহ বাহিনীর ৪ সদস্য নিহত হবার খবরে টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত জনপদের মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছে। টেকনাফের পাহাড়ে পুলিশী অভিযানে রোহিঙ্গা হাকিম ডাকাত বাহিনীর সদস্য নিহত হওয়ার সংবাদ প্রচারের পর পরই সীমান্তের লোকজন এলাকার হাটে-বাজারে জড়ো হয়ে বিস্তারিত খবরা-খবর নিতে থাকেন। টেকনাফ সীমান্তে চাওর রয়েছে যে, টেকনাফে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত 'মৌলভী' নামে পরিচিত এক ইয়াবা কারবারির সাথে দীর্ঘদিন ধরে হাকিম ডাকাত দলটির সম্পর্ক রয়েছে।
গত এক দশক ধরে রোহিঙ্গা হাকিম ডাকাত বাহিনী টেকনাফের পাহাড়ে আস্তানা স্থাপনের মাধ্যমে পুরো মিয়ানমার সীমান্ত জুড়ে অপরাধ জনক ঘটনা ঘটিয়ে আসছিল।
মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের বাসিন্দা আবদুল হাকিম মূলত নাফনদের ওপারে (আরাকান) থেকে বাংলাদেশে এক সময় ইয়াবা পাচারের কাজে জড়িত ছিল। ইয়াবা কারবারের কারণে টেকনাফ সীমান্তের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারিদের সাথে হাকিমের সখ্য গড়ে উঠে।
টেকনাফের ইয়াবা গডফাদারদের সেই সখ্যতা সূত্র ধরে পরবর্তীতে রোহিঙ্গা আবদুল হাকিম পাড়ি জমায় টেকনাফে। এখানে এসেই হাকিম বসতি স্থাপন করে। টেকনাফ সীমান্তের প্রভাবশালী ইয়াবা ডনদের সাথে হাত মিলিয়ে ইয়াবা পাচারের কাজে এক চেটিয়া প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে সে শক্তি সঞ্চয় করে। এরপর সে আরাকান থেকে নিয়ে আসে তার ৫ ভাইকেও। ভাইদের নানা ভাবে টেকনাফের প্রভাবশালীদের আত্মীয় স্বজনদের বিয়ে-শাদিরও ব্যবস্থা করে দেয়। হাকিম ডাকাতের ভাই নজির ডাকাত বিয়ে করেছে টেকনাফ সীমান্তের এক প্রভাবশালী রাজনীতিকের মামাত ভাইয়ের কন্যা। কিছুদিন আগে নজিরও ডাকাতও নিহত হয়েছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম-বার কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত পাহাড়ে অভিযান পরিচালনায় পারদর্শী পুলিশের ৪০ জন সদস্যকে গত এক মাস আগে টেকনাফের পাহাড়ে তুলে দেওয়া হয়। তাদের সাথে দেওয়া হয় আরো ২০ জনকে। ৬০ জন পুলিশের একটি চৌকস দল নিরবে টেকনাফের পাহাড়ে হাকিম ডাকাতকে বাহিনী ধরতে ওঁৎপেতে ছিলেন টানা তিন সপ্তাহ। কিন্তু গেল সপ্তাহের টানা ভারি বর্ষণে দলটি পাহাড় থেকে নেমে আসে।
শুক্রবার সকালে গোপন সুত্রে খবর পেয়ে টেকনাফে থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ খবর পেয়ে পূণরায় একদল ‘পাহাড়ে অভিযান পরিচালনায় পারদর্শী’ পুলিশের দল নিয়ে অভিযানে নেমে পড়েন। পাহাড়ের একটি অস্তানায় ঘিরে ফেলা অবস্থা থেকে হাকিম ডাকাত পুলিশের হাত থেকে অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়ে গেছে।
টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা আবদুল হাকিম ডাকাতের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা রয়েছে। হাকিম বাহিনীর অপকর্মে বাধা দিতে গিয়ে টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং নিবেদিত আওয়ামী লীগ তৃণমূল নেতা সিরাজুল ইসলাম হাকিমের হাতে নৃশংসভাবে খুনের শিকার হয়েছিলেন। এরপর থেকেই একের পর এক খুন করতে থাকে রোহিঙ্গা হাকিম ডাকাত।