বিভিন্ন বছরে বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ ইউনিয়নের রামগাতী গ্রামের তিন সহোদর। তাঁরা হলেন খ্যাতনামা লেখক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বাংলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জুলফিকার মতিন, সাবেক রাষ্ট্রদূত বীর মুক্তিযোদ্ধা ইখতিয়ার চৌধুরী ও প্রথিতযশা সাংবাদিক ইমতিয়ার শামীম।
উপজেলার রামগাতী গ্রামের প্রয়াত শিক্ষাবিদ, কবি চৌধুরী ওসমান ও প্রয়াত হামিদা সুলতানার ছেলে তাঁরা। তাঁদের মধ্যে অধ্যাপক জুলফিকার মতিন সদ্য ঘোষিত ২০২৩ সালের সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।
আজ বুধবার বাংলা একাডেমি ঘোষিত পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকায় জুলফিকার মতিন পেয়েছেন প্রবন্ধে এই পুরস্কার।
এর আগে ২০২০ সালে ইমতিয়ার শামীম কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমির পুরস্কার অর্জন করেন। ২০২২ সালে বাংলা একাডেমির পুরস্কার লাভ করেন একই পরিবারের আরেক ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা কূটনীতিক ইখতিয়ার চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ভ্রমণকাহিনিতে সাহিত্য পুরস্কার।
১৯৪৬ সালের ২৪ জুলাই অধ্যাপক জুলফিকার মতিন রামগাতী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে স্নাতকসহ (সম্মান) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি রাবিতে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
চাকরি থেকে অবসরের আগে তিনি বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্য নাটক ‘স্বৈরিণী স্বদেশ তুই’ (১৯৭২)। তা ছাড়া কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ও নাটক মিলে তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০টিরও বেশি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ইখতিয়ার চৌধুরী ১৯৫৪ সালের ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। ইখতিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি করতেন এবং কয়েকটি দেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সর্বশেষ তিনি স্পেনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে অবসরে যান। এ ছাড়া জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন ইখতিয়ার। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি অর্জনে ইউনেসকো সদর দপ্তর প্যারিসে বাংলাদেশের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি থাকাকালীন কূটনৈতিক লড়াইয়ের ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে অবদান রাখেন। উপন্যাস, গল্প, ভ্রমণকাহিনিসহ তাঁর প্রকাশিত মোট গ্রন্থের সংখ্যা ৩৯টি।
ইমতিয়ার শামীম ১৯৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘ডানাকাটা হিমের ভেতর’। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত হন। বর্তমানে তিনি দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকায় উপসম্পাদক। ২০২০ সালে কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া ইমতিয়ার শামীমের গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও শিশুতোষ রচনা মিলে মোট প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৪৪টি।
অধ্যাপক জুলফিকার মতিন সাহিত্য পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘এই পুরস্কার আমাদের ভাইদের সাহিত্যচর্চা এবং এই অঙ্গনে আমাদের অবদানের একটি স্বীকৃতি বলে আমি মনে করি।’
উল্লাপাড়ার রামগাতী গ্রামের চৌধুরী পরিবার থেকে তিন ভাই পর্যায়ক্রমে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাওয়ায় উল্লাপাড়ার মানুষ অত্যন্ত আনন্দিত বলে জানান। তাঁদের সংশ্লিষ্ট সলপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী শওকাত ওসমান বলেন, ‘উল্লিখিত তিন প্রথিতযশা লেখক উল্লাপাড়ার গর্ব। আমরা তিন ভাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।’
উল্লাপাড়া সরকারি আকবর কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামীম হাসান বলেন, ‘সলপের চৌধুরী পরিবার সাহিত্যচর্চা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। এই পরিবারের তিন কৃতি সন্তান বাংলা একাডেমির পুরস্কার পাওয়ায় আমরা সবাই আনন্দিত।’